Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ (Muslim Family Law Ordinance, 1961)

বিবাহ এবং পারিবারিক আইন কমিশনের কতিপয় সুপারিশ কার্যকর করার জন্য প্রণীত অধ্যাদেশ৷
যেহেতু, বিবাহ এবং পারিবারিক আইন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করা দরকার ও সমীচীন৷ সেহেতু, ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবরের ঘোষণা দ্বারা রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত ক্ষমতা বলে, নিম্নলিখিত অধ্যাদেশটি প্রণয়ন ও জারী করলেন:

১৷ সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, সীমা, প্রয়োগ ও বলবতের সময় (Short title, extent, application and commencement):
এই অধ্যাদেশকে ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ নামে অভিহিত করা হবে।
ইহা সমগ্র বাংলাদেশে এবং যে যেখানেই থাকুক না কেন, বাংলাদেশের সকল মুসলিম নাগরিকের উপর প্রযোজ্য হবে।
সরকার, সরকারী গেজেটে বিজ্ঞপ্তি মারফত যে তারিখ নির্ধারণ করবেন, সেই তারিখ হতে উহা কার্যকর হবে।
(উল্লেখ্য যে, ১৯৬১ সনের ১৫ই জুলাই তারিখ হতে এই অধ্যাদেশটি বলবত হয়েছে)

২৷ সংজ্ঞাসমূহ (Definitions): এই অধ্যাদেশে, বিষয়বস্তু বা প্রসঙ্গ হতে বিপরীত কিছু প্রতীয়মান না হলে-
(ক) সালিসী পরিষদ (Arbitration Council) বলতে চেয়ারম্যান এবং এই অধ্যাদেশে উল্লিখিত কোন বিষয়ের সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের প্রত্যেকের একজন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত পরিষদকে বুঝাবে। তবে শর্ত থাকে যে, কোন পক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে ব্যর্থ হলে অনুরূপ প্রতিনিধি ছাড়া গঠিত পরিষদই সালিসী পরিষদ হবে।
(খ) চেয়ারম্যান (Chairman) বলতে বুঝাবে-
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান;
পৌরসভার চেয়ারম্যান;
মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের মেয়র বা প্রশাসক;
সেনানিবাস এলাকায় অত্র অধ্যাদেশ অনুযায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি;
কোন ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন বাতিল করা হলে সেক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক অত্র অধ্যাদেশের অধীনে উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত ব্যক্তি।
তবে শর্ত থাকে যে,যেখানে ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভার চেয়ারম্যান একজন অমুসলমান অথবা তিনি নিজেই সালিসী পরিষদের নিকট কোন দরখাস্ত করতে চাহেন এমন হলে,অথবা অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে, উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা উহার একজন মুসলমান সদস্যকে এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্যাবলী পূরণকল্পে একজনকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।

(গ) মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন (Municipl Corporation) বলতে ১৯৮২ সালের চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অধ্যাদেশ (১৯৮২ সনের ৩৫ নং অধ্যাদেশ) অথবা ১৯৮৩ সালের ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অধ্যাদেশ (১৯৮৩ সনের ৪০নং অধ্যাদেশ), অথবা ১৯৮৪ সালের খুলনা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অধ্যাদেশ (১৯৮৪ সনের ৭২ নং অধ্যাদেশ) অনুযায়ী গঠিত মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বুঝাবে এবং নির্ধারিত এখতিয়ার সম্পন্ন হবে।

(ঘ) পৌরসভা (Paurashava) বলতে ১৯৭৭ সালের পৌরসভা অধ্যাদেশ (১৯৭৭ সনের ২৬ নং অধ্যাদেশ) অনুযায়ী গঠিত পৌরসভা বুঝাইবে এবং নির্ধারিত এখতিয়ার বুঝায়।
(ঙ) নির্ধারিত (Prescribed) বলতে ১১ ধারার অধীনে প্রণীত বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত বুঝায়।
(চ) ইউনিয়ন পরিষদ (Union Parishad) বলতে ১৯৮৩ সালের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশের (১৯৮৩ সনের ৫১ নং অধ্যাদেশ) এর অধীনে গঠিত এবং উক্ত বিষয়ে নির্ধারিত এখতিয়ার সম্পন্ন ইউনিয়ন পরিষদকে বুঝায়।

৩৷ অত্র অধ্যাদেশ অন্যান্য আইনের উপর প্রাধান্য লাভ করবে (Ordinance to override other laws):
অপর কোন আইন, বিধি অথবা প্রচলিত রীতিতে যাই থাকুক না কেন, এই অধ্যাদেশের বিধানাবলী কার্যকর হবে।সন্দেহ দূরীকরণের উদ্দেশ্যে, এতদ্বারা ইহা ঘোষণা করা যাচ্ছে যে, ১৯৪০ সালের সালিসী আইন, ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি এবং আদালতের কার্যধারা নিয়ন্ত্রণকারী অপর কোন আইনের কোন ব্যবস্থা সালিশী পরিষদে প্রযোজ্য হবে না।

৪৷ উত্তরাধিকার (Succession): যাহার সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে বন্টিত হবে, তার পূর্বে তার কোন পুত্র বা কন্যা মারা গেলে এবং উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি বন্টনের সময় উক্ত পুত্র বা কন্যার কোন সন্তানাদি থাকলে, তারা প্রতিনিধিত্বের হারে সম্পত্তির ঐ অংশ পাবে, যা তাদের পিতা অথবা মাতা জীবিত থাকলে পেতো।

৫৷ [বাতিল এই ধারাটি ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রেশন আইন দ্বারা বাদ দেওয়া হয়েছে]

৬৷ বহু বিবাহ (Polygamy):
(১) সালিশী পরিষদের লিখিত পূর্বানুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তি একটি বিবাহ বলবত থাকলে আরেকটি বিবাহ করতে পারবে না এবং পূর্ব অনুমতি গ্রহণ না করে এই জাতীয় কোন বিবাহ হলে তা মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রেশন) আইন, ১৯৭৪ (১৯৭৪ সনের ৫২নং আইন) অনুসারে রেজিষ্ট্রি হবে না।
(২) (১) উপ-ধারায় বর্ণিত অনুমতির জন্য নির্দিষ্ট ফিসসহ নির্ধারিত পদ্ধতিতে চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে হবে এবং আবেদনপত্রে প্রস্তাবিত বিবাহের কারণ এবং বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের সম্মতি নেওয়া হয়েছে কিনা, তা উল্লেখ করতে হবে।
(৩) উপরোক্ত (২) উপ-ধারা মোতাবেক আবেদনপত্র পাওয়ার পর চেয়ারম্যান আবেদনকারী এবং বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের প্রত্যেককে একজন করে প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে বলবেন এবং এইরূপে গঠিত সালিশী পরিষদ যদি মনে করেন যে, প্রস্তাবিত প্রয়োজন এবং ন্যায়সঙ্গত, তা হলে কোন শর্ত থাকলে উহা সাপেক্ষে, প্রার্থিত বিবাহের অনুমতি মঞ্জুর করতে পারেন।
(৪) আবেদনটি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সালিশী পরিষদ সিদ্ধান্তের কারণসমূহ লিপিবদ্ধ করবেন এবং যে কোন পক্ষ, নির্দিষ্ট ফিস জমা দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট মুন্সেফের নিকট রিভিশনের (Revision) জন্য আবেদন দাখিল করতে পারবেন এবং সালিসী পরিষদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং কোন আদালতে উহার বৈধতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।
(৫) সালিশী পরিষদের অনুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাকে-
(ক) অবিলম্বে তার বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের তাত্ক্ষণিক অথবা বিলম্বিত দেনমোহরের (Prompt or deferred dower) যাবতীয় টাকা পরিশোধ করতে হবে এবং উক্ত টাকা পরিশোধ করা না হলে উহা বকেয়া ভূমি রাজস্বের ন্যায় আদায়যোগ্য হবে।
(খ) অভিযোগক্রমে দোষী সাব্যস্ত হলে সে এক বত্সর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।

৭৷ তালাক (Talaq):
(১) কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে, তিনি যে কোন পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর যথাশীঘ্র সম্ভব চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে নোটিশ দিবেন এবং স্ত্রীকে উক্ত নোটিশের একটি অনুলিপি (নকল) প্রদান করবেন।
(২) কোন ব্যক্তি (১) উপ-ধারার বিধান লংঘন করলে তিনি এক বত্সর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দণ্ডনীয় হবেন।
(৩) নিম্নের (৫) উপধারার বিধান অনুসারে প্রকাশ্যে বা অন্য কোনভাবে তালাক, আগে প্রত্যাহার করা না হয়ে থাকলে, (১) উপধারা মোতাবেক চেয়ারম্যানের কাছে নোটিশ প্রদানের তারিখ হতে নব্বই দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কার্যকরী হবে না।
(৪) উপরোক্ত (১) উপধারা অনুযায়ী নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের মধ্যে পুনর্মিলন ঘটানোর উদ্দেশ্যে একটি সালিশী পরিষদ গঠন করবেন এবং উক্ত সালিসী পরিষদ এই জাতীয় পুনর্মিলনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
(৫) তালাক ঘোষণার সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে, (৩) উপধারায় বর্নিত সময়কালে অথবা গর্ভাবস্থা, যেটি পরে শেষ হয়, অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক বলবত হবে না।
(৬) অত্র ধারা অনুযায়ী তালাক দ্বারা যে স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে সেই স্ত্রী, এই জাতীয় তালাক তিনবার এইভাবে কার্যকরী না হলে, কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে বিবাহ না করে পুনরায় একই স্বামীকে বিবাহ করতে পারবে।

৮৷ তালাক ছাড়া অন্যভাবে বিবাহ-বিচ্ছেদ (Dissolution of marriage otherwise than by talaq):
যেক্ষেত্রে তালাক দেয়ার অধিকার যথাযথভাবে স্ত্রীকে অর্পণ করা হয়েছে এবং স্ত্রী সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক বা স্ত্রী তালাক ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটাতে চাহে, সেক্ষেত্রে ৭ ধারার বিধানাবলী প্রয়োজনীয় পরিবর্তনসহ যথাসম্ভব প্রযোজ্য হবে।

৯৷ ভরণ-পোষণ (Maintenance):
(১) কোন স্বামী তার স্ত্রীকে পর্যাপ্ত ভরণ-পোষণ বা খোরপোষ দানে ব্যর্থ হলে বা একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে তাহাদিগকে সমভাবে খোরপোষ না দিলে, স্ত্রী বা স্ত্রীগণ কেহ, অন্য কোন আইনানুগ প্রতিকার প্রার্থনা ছাড়াও চেয়ারম্যানের নিকট দরখাস্ত করতে পারেন। এইক্ষেত্রে চেয়ারম্যান বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্য সালিশী পরিষদ গঠন করবেন এবং ঐ পরিষদ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ বাবদ প্রদানের জন্য টাকার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে সার্টিফিকেট জারী (ইস্যু) করতে পারবেন।
(২) কোন স্বামী বা স্ত্রী নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে এবং নির্দিষ্ট ফি প্রদান পূর্বক ঐ ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট খানা পুর্নবিবেচনা জন্য সংশ্লিষ্ট মুন্সেফের নিকট আবেদন করতে পারবেন এবং তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং কোন আদালতে এই সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।
(৩) উপরের (১) অথবা (২) উপ-ধারা মোতাবেক দেয় কোন টাকা যথাসময়ে বা সময়মত পরিশোধ করা না হলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব হিসাবে আদায় করা চলবে।

১০৷ দেনমোহর (Dower):
নিকাহনামা বা বিবাহের চুক্তিতে দেনমোহর পরিশোধের পদ্ধতি নির্দিষ্টভাবে উল্লিখিত না থাকলে, দেনমোহরের সমগ্র অর্থ চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য (দেয়) বলে ধরে নিতে হবে।

১১৷ বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা (Power to make rules):

Share the post

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ (Muslim Family Law Ordinance, 1961)

×

Subscribe to পূরুষ ও শিশু নির্যাতন : আইনগত সহায়তা

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×