কোচবিহার রাস মেলা
গত ২০১৮ সালে কোচবিহার রাস মেলায় ১০০ কোটি টাকার কেনা বেচা হয়েছিল। বাংলার কোচবিহার জেলায় মদন মোহন মন্দির সংলগ্ন মাঠে প্রতি বছর ১৫ দিনের জন্য এই মেলার আয়োজন করা হয়। ২০০ বছরের এই মেলা কে কেন্দ্র করে কোচবিহারবাসী তথা বাংলার মানুষের উৎসাহ চোখে পড়ার মত। কোচবিহার বাসীর প্রাণের ঠাকুর মদনমোহনকে ঘিরেই এই রাসমেলা।
Related Articles
কোচবিহার রাস চক্র |
উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড়ো এবং ঐতিহ্য বাহী রাসমেলা মানে অসংখ্য স্মৃতি, নানা ইতিহাস। এই মেলাকে কেন্দ্র করে মানুষের চিরাচরিত আনন্দ ও উচ্ছাস।
আসুন এই নিবন্ধ থেকে আমরা কি কি জানতে পারবো:-
কোচবিহার রাস মেলার ইতিহাস
রাস মেলায় কি কি হয়?
রাস মেলা কোথায় হয়?
কোচবিহার রাস মেলা কখন হয়?
রাস মেলার ইতিহাস
১৯১২ সালে রাস পূর্ণিমার দিন মহারাজ হরেন্দ্র নারায়ণ এই বৃহত্তম রাস মেলার উদ্বোধন করেন। রাসচক্র ঘুরিয়ে এই মেলার শুভারম্ভ করা হয়। প্রথমে মহারাজ নিজে রাসচক্র ঘুরিয়ে এই মেলার উদ্বোধন করতেন। মুসলিম পরিবার থেকে আলতাফ মিঞা এই রাসচক্র টি বংশ পরম্পরা অনুযায়ী বানিয়ে আসছেন। একটা সময় দেশ বিদেশ থেকে পসরা নিয়ে এসে এই মেলায় বিক্রি করা হতো।
কালিম্পঙএর নিরালায় কাগে ওঅন্য স্পট Offbeat Explorer Kaghey at Kalimpong
এইযুগে মহাপুরুষ মনীষীদের কিছুদরকারী বাণী এবং কেনপ্রয়োজন |
মাধ্যমিকপরীক্ষা: জেনে নিন ২০১৫সাল থেকে কারা প্রথমস্থান পেয়েছে
রাস মেলায় কি কি হয়?
রাস মেলার ঐতিহ্য হল রাসচক্র যা বর্তমানে জেলাশাসক ঘুরিয়ে মেলার শুভারম্ভ করেন। বাংলার সাধারণ একটি মেলার থেকে অনেক অনেক বৃহদংসে বড়ো এই মেলার বর্ণনা লিখে সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়।
বর্ণময় এই মেলার প্রতি বছরের জন্য আকর্ষণ হল পুতনা বোধ মূর্তি, রাসের ঝুলন এবং রাশচক্র। কি নেই এই মেলায় ম্যাজিক শো, কথা বলা পুতুল, সার্কাস একটা সময় ছিল ভ্রাম্যমান চিড়িয়াখানা। কীর্তন, পালাগান, যাত্রা একটা সময় এই মেলার ঐতিহ্য ছিল, বর্তমানে টা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে, পরিবর্তে জায়গা নিয়েছে আধুনিক গান, হিন্দি গান, চাটুল নাচ ইত্যাদি।
নতুনচমক - কেদারনাথে সোনায় বাধানোগর্ভগৃহ
শিলিগুড়িরকাছে টুকরিয়া পর্যটনের নতুনদিশা
মাকালির বিভিন্ন রূপভেদ
যেহেতু শীতের সময় তাই নেপাল, ভুটান, কাশ্মীর থেকে ব্যাবসায়ী রা পনেরো দিন আগেই চলে আসে কাশ্মীরি চাদর, ভুটানি সোয়েটার, জ্যাকেট ইত্যাদি নিয়ে। যদিও বর্তমানে শহর কি গ্রামের মানুষের কাছে যে কোনও দ্রব্য পাওয়া খুব সহজ তবুও মেলায় কেনা কাটা করার মজাটাই আলাদা।
একটা গোটা চত্বরে সুচ সুতো থেকে টিভি বাইক কি নেই এই মেলায়। তাই রাসমেলায় বেড়াতে এসে বিছানার চাদর, চিনামাটি কাপ, মরসুমি ফুলের চারা, ঘর সাজাবার জিনিস কিনে নিয়ে যেতে হয় দু হাত ভরে। মেলায় সব থেকে বেশি আনন্দ হয় শিশুদের, যদি তাঁদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় মেলার দোলনায়, পাঁপড় ভাজায়, জিলিপি ভাজায় আর আইস ক্রিমে।
রাস মেলা কোথায় হয়?
মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ (১৮৬২ - ১৯১১) এর সময় থেকে এই মেলা বৈরাগী দীঘির চারপাশে মদন মোহন মন্দিরের সামনে চলে আসে। বড়ো জায়গা প্রয়োজনের জন্য এই মেলা এখন বসে প্যারেড গ্রাউন্ড অর্থাৎ রাসমেলার মাঠে।
কোচবিহার রাস মেলা কখন হয়?
এবারের কোচবিহারের রাস উৎসব ২১১ বছরের। আগামী ৭ই নভেম্বর ২০২২ এই রাস উৎসব শুরু হবে। চলবে ২০ দিন। এবারের রাস উৎসব ১৩৩ তম। ১৯৮০ সালে মদন মোহন মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কোচবিহারের বৈরাতি দীঘির ধরে এই উৎসব পালিত হয় । এই মেলার বিশেষত্ব হল সারাদিন বেচা কেনা চলে এবং সারা রাত ভোর বেচা কেনার সাথে নাচ, গান, নাটক, সাংস্কৃতিক ও বিচিত্রা অনুষ্ঠান চলতে থাকে। এবারের মেলায় ১০০০ এর বেশি ষ্টল তৈরি হয়েছে।
শুধু মনের আনন্দ ও সংস্কৃতি কে রক্ষা করার তাগিদেই নয় কোচবিহারের রাসমেলা হয়ে উঠেছে ব্যাবসায়িক কেন্দ্রস্থল। শুধুমাত্র স্থানীয় মানুষজন ই নন বাংলার অনেক ব্যাবসায়ী এই কদিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।
সপ্নের উড়ান হিমালয় যাত্রা সফল হবে কি? দেখুন উচাই
তাজমহলের ইতিহাস ও তার সন্দর্য
এখানে কোনও জাতিভেদ নেই, কোন মন কষাকষি নেই, তাই গ্রামের দরিদ্র মানুষ ধান পাট বিক্রি করে এই মেলা দেখতে আসে এবং কটা দিন কাটিয়ে যায় নিজের সমাজ জীবনের আবদ্ধটাকে কাটিয়ে মুক্ত বিহনে ঘুরে ফেরার উদ্দেশে।
প্রতি বছরের মেলার ধরণ প্রায় এক তবু প্রাণের মদন মোহনের টানে তার দেবালয়ে দেশের সমস্ত মানুষকে একত্রিত করে মদন মোহনের দেবালয়ে টেনে নিয়ে আসার নাম ই হয়তো রাসমেলা।
This post first appeared on Offbeat Travel Blog Bengali Language., please read the originial post: here