Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

আমি নীল

– আপনাকে আমি গত পরশুদিন দেখেছি!
– কোথায় দেখেছেন?
– আপনি সিগারেট টানতে টানতে হাটছিলেন। আমার বাসার সামনে দিয়ে গেলেন।
– আপনার বাসা কোথায়?
– মির্জাজাঙ্গালের ওদিকে।
– আচ্ছা। হ্যা। আমার বন্ধু ওদিকে থাকে। তার বাসা ওদিকে। সেদিক থেকেই আসছিলাম।
– ওহ আচ্ছা আচ্ছা। কালকে আবার আসবেন?
– আসতে পারি। সিউর না।
– কখন আসবেন?
– সেটাও জানি না। আপনার কোনো দরকার? আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে?
– কী? নাহ তো! আমি কখন বললাম? আর আপনি এত বেশি বুঝেন কেনো? আপনার ছেলেরা মেয়েদের ভাবেনটা কি?
– এখনো কিছু ভাবি নি তো! যাই হোক, দেখতে না চাইলে নাই! আমি যাই, কাজ আছে আমার।

ফেসবুকে এজন্যেই থাকতে ইচ্ছে করে না আমার। বেশিক্ষণ থাকলেই সমস্যা। এই একটা জিনিস, চ্যাটিং। এত বাজে লাগে আমার কাছে যে বিশ্বাস করতে পারবেন না! আমার কাছে মনে হয়, কথাবার্তা বলার জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ হচ্ছে অনুভূতির প্রকাশ। যদি আপনি কথা বলার মাঝে অনুভূতিই প্রকাশ করতে পারলেন না তাহলে কথা বলেই বা কি লাভ?
যাই হোক, অনেক্ষণ হলো সিগারেট ধরাই না। একটা সিগারেট ধরানো দরকার। একটা মজার ফ্যাক্ট বলি? সিগারেটের সবচেয়ে আনন্দকর মূহুর্ত হচ্ছে সিগারেট ধরানোর মূহুর্ত আর সিগারেটের শেষ চুমুক। সেই চুমুকে যতটা শান্তি পাওয়া যায় ততটা শান্তি দুনিয়ার খুব কম জিনিসেই পাবেন। সিগারেট ধরানোর সময় যদি লাইটার ব্যবহার করেন তাহলে সিগারেট ধরানোর মূহুর্তের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। সিগারেট ধরানোর নিয়ম হচ্ছে দেশলাই দিয়ে। দেশলাইয়ের কাঠিতে আগুন ধরলে সেই আগুন দেখতে যতটা সুন্দর মনে হয় ঠিক ততটাই স্বাদ সংরক্ষিত হয় যদি সিগারেট সেই আগুনেই ধরানো যায়।
পাঠক-পাঠিকার হয়তো ভাবছেন, এত বকবক কে করছে। আর কেনো করছে? এই মানুষটার পরিচয়টা কি? বলছি, একটু অপেক্ষা করেন। আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে নিই। আপনাদের সাথে সিগারেট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমার হাতের সিগারেট নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কি আর করা!

আমি নীল। তবে শুধুই নীল না। আরিয়ান রহমান নীল। বাবা হূমায়ুন স্যারের ভক্ত ছিলেন। তারই সাথে ছিলেন হিমুর ভক্ত। বাবা চেয়েছিলেন আমিও যাতে হিমুর মতো উত্তর দিই “আমি নীল। শুধুই নীল”। কিন্তু সম্ভব হয় নি মা’র জন্যে। আমার মা’র কখনোই বাবার ওসব পাগলামী ভাল লাগতো না। মা বুঝতো না বাবার পাগলামী। আমি বড় হচ্ছিলাম। তখন ক্লাসের বইয়ের থেকে হিমু-টাইপ বই পড়িয়ে পড়িয়ে আমাকে বড় বানানো হয়েছে। শুধু হিমু টাইপের কাজ কিন্তু আমার মাঝে ঢুকিয়ে দেয়া হয় নি। আমি ছোটো থেকেই ইতিহাস, ধর্ম, অ্যাস্ট্রোলজি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ইনফরমেশন টেকনোলজি পড়ে পড়ে বড় হয়েছি। আমার সম্পর্কে একটা ছোটো তথ্য দিয়ে নিই এই ফাঁকে। আমি ৬ টা ভাষায় কথা বলতে পারি এবং ৮০ টার বেশি ধর্ম সম্পর্কে আমি একজন স্কলারের সমান জ্ঞানী!

তো যেটা বলছিলাম! আমার কথা বার্তা কিছুটা হিমু-টাইপ হতে পারে। ওসব নিজ গুনে ক্ষমা করে দেবেন। অনেকের কাছে হিমু মানেই পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবী আর খালি পা! কিন্তু আমি ওমন নই কখনোই। ইছেও নেই ওইরকম হবার।

যাইহোক, আমার জন্ম হয় বাংলাদেশে কিন্তু আমি জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়া চলে আসি। তাই বাংলাদেশ সম্পর্কে আমার ধারণা কম থাকাটাই উচিত ছিল। কিন্তু আমি আসলে অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে যতটুকু জানি তার থেকে বেশিই জানি বাংলাদেশ সম্পর্কে। ওই যে জন্মভূমির প্রতি টান। বাবা মারা যাবার আগে আমাকে বাংলাদেশে ফিরতে মানা করেছিলেন। কারণ জিজ্ঞেস করি নি। বাবার কাছে কারণ জিজ্ঞেস করা মানে বিপদ ডেকে আনা। উনি কারণ বলতে বসলে কয়েক ঘন্টা এমনিতেই পার হয়ে যায়। তার মাঝে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা বাবার সাথে কথাও বলা যায় না। বাবা তার কয়েকদিন পরেই মারা যান। বাবা ছিলেন আমার শিক্ষক। জ্বি একমাত্র শিক্ষক যার থেকে আমি শিখিনি এমন কোনো কিছু নেই। কয়েকটা জিনিস বাদে। বাবা কেমিস্ট্রি পারতেন না। গণিতে কাঁচা ছিলেন। কিন্তু বাবার মতো শিক্ষিত মানুষ খুব কম ছিলেন। বাবার বন্ধুরা বাবার থেকেও ভালো ছাত্র ছিলেন। বাবা ছাত্রজীবনে খুব খারাপ ছাত্র থাকলেও ভবিষ্যতে বাবা এত পরিমান ঔজ্জ্বল্য লাভ করেন। তিনি উদ্যোক্তা ছিলেন, যার ফলে শেষ বয়সে সবকিছু গুছিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যান। মানে আমরা সবাই অস্ট্রেলিয়া চলে যাই। বাবার সবসময়ই ইচ্ছা ছিল প্রেম করে বিয়ে করার। কিন্তু পারেন নি। শেষ পর্যন্ত পরিবারের মতেই বিয়ে করলেন। মা’র সাথে বাবার তাই মিললো না। বাবার একটাই দুঃখ যে উনি উনার বিয়ে পরবর্তী জীবনটা ঠিকভাবে কাটাতে পারছেন না। আমার মা আমাকে সবসময় বলতেন যাতে আমি সময় পেলেই বাংলাদেশ যাই। আমি তাই বাংলাদেশে।

ওহ আচ্ছা! আমার একটা বোন আছে। জান্নাতুল ফেরদৌস সাফা। উনি মায়ের আদর্শ মেয়ে হয়েছেন। একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে হেড অফ সিকিউরিটি এনালিস্ট হিসেবে জব করছেন অস্ট্রেলিয়ায়। আমার থেকে চার বছর বড়। উনি বাংলাদেশে আসেন দু এক বছর পর পর। আমি বাংলাদেশে এসেছি প্রথম বারের মতো। লাল জুতা, পিঠে একটা ট্রাভেলিং ব্যাগ, জিন্সের প্যান্ট আর কালো শার্ট। বাংলাদেশে আসার পর আমাকে কেউ নিতে আসে নি কেনো জানেন? কারণ আমি কাউকে জানাই নি যে আমি বাংলাদেশে আসছি। আমার বোন যেখানে হেড অফ সিকিউরিটি এনালিস্ট আমি সেই কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং কোম্পানির মূল মালিকানা ছিলো বাবা’র। বাবা মারা যাবার পর বোনকে সেই কোম্পানির মালিকানা দিয়ে যাননি কারণ বাবা মেয়েদের উপর বিশ্বাস করতে পারতেন না একেবারেই। তাই আমি ছোট হলেও আমাকে দিয়ে যান সব কিছুর দায়িত্ব। এই কোম্পানিতে আমার চাকরী জীবন শুরুর পর বোনের চাকরী জীবন শুরু হয়। কারণ বোন প্রথমে অন্য আরেকটা কোম্পানিতে জব করতো। পরে মা’র ইচ্ছায় আমাদের কোম্পানিতেই চাকরী শুরু করে। যাই হোক, টাকার গন্ধ আমাকে কখনো শুঁকতে হয় নি কষ্ট করে। বাবার যা সম্পত্তি আছে তা থেকেই বসে খেতে পারতাম কিন্তু চাই নি। নিজের জ্ঞান কে কাজে লাগাতে চেয়েছি। তাই ওতো বড় দায়িত্ত্ব টা হাতে নিয়েছিলাম।

বাংলাদেশে আসার পর সবচেয়ে আনন্দের ফিলিংসটা হচ্ছে, আমি যে বাংলাদেশে আছি সেটা এখনো আমার পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের কেউ জানে না। সাফাকেও এখনো জানাই নি। সে জানলে প্রথমেই আমাকে বকাবকি শুরু করবে আর পরে আমাকে তার বাসায় থাকতে হবে, যেটা আমার পক্ষে এখন সম্ভব নয়। আমি বাংলাদেশে এসেছি দুটো কারণে। প্রথমত, আমার এক কলিগ আমাকে একটা সমস্যা বলেছে। সেই সমস্যার সমাধান করাটা জরুরী। আর দ্বিতীয়ত, আমার বাংলাদেশের বৃষ্টি দেখতে ও বৃষ্টির ঘ্রাণ নিতে ইচ্ছে করছিলো। বৃষ্টির কথায় একটা মজার ফ্যাক্ট মনে পড়লো। বিভিন্ন এলাকার বৃষ্টির ঘ্রাণ একেকরকম। আর বৃষ্টির ঘ্রাণ আপনি তখনই পাবেন যখন আপনার ভেতরে যেকোনো একটা ইমোশন কাজ করবে। সেটা হতে পারে, রাগ, দুঃখ, একাকীত্ব, ভালোবাসা, রোমান্টিকতা ইত্যাদি। যার মধ্যে ইমোশন নেই সে বৃষ্টির ঘ্রাণ পায় না। আপনাদের কাছে মনে হতে পারে যে, আমার বাবা হিমুর এত বড় ভক্ত ছিলেন কিন্তু তারপরেও তিনি কেনো ইমোশনকে মেরে ফেলতে চান নি? যেখানে হিমুর বাবা বা হিমু নিজেই বারবার ইমোশনকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে সেখানে আমার বাবা কেনো আমাকে ইমোশনকে ধরে রাখতে শিখিয়েছেন?

বাবাকে এই প্রশ্ন করেছিলাম দশম শ্রেণীতে থাকতে। বাবা উত্তর দিয়েছিলেন, “ইমোশন বা অনুভূতি আপেক্ষিক। তোমার রাগের কারণ আরেকজনের কাছে খুশির উদ্রেক ঘটাতে পারে। আবার তোমার ভালোবাসা আরেকজনের মাঝে হিংসার উৎপত্তি ঘটাতে সক্ষম। সুতরাং, ইমোশন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কারন আপেক্ষিক জিনিস পরিবর্তনশীল। আর যেটা পরিবর্তনশীল অর্থাৎ যেটা ধ্রুবক নয় সেটা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সেটা অবশ্যই এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় পরিবর্তন করা যায়।”
এই প্রশ্ন করার পর আমি ভাবছিলাম কেনো প্রশ্ন করতে গেলাম? বাবাকে প্রশ্ন করতে গেলে এই এক সমস্যা। প্রশ্নের টপিক থেকে সরে এত দূরে চলে যাবেন তিনি যে শেষমেষ মূল টপিকই ভুলে যাবেন। তারপর হয় জিজ্ঞেস করবেন যে কি প্রশ্ন করেছি নাহয় তিনি জায়গা ছেড়ে উঠে চলে যাবেন।
– প্রশ্নটা কি ছিলো?
– ইমোশন মেরে ফেলা উচিত নয় কেনো?
– হ্যা, তো যা বলছিলাম। ইমোশন মেরে ফেলা উচিত নয় কারণ এটা আমাদের সাথে মিশে আছে। একেবারে শুরু থেকেই। একটা ঘটনা বললে বুঝতে পারবে কেন আমাদের মাঝে ইমোশন একেবারে ভেতরে জুড়ে আছে। ইসলাম ধর্মানুসারে, আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করার সাথে সাথেই কিন্তু পৃথিবীর সব মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। সেখানে আমাদের শরীরের কোনো আকার ছিলো না। শুধু আমাদের স্পিরিট বা আত্মা ছিলো। যেটাকে প্যারাসাইকোলজিতে বলে ‘স্পিরিট ওয়ার্ল্ড’। তো, আদমকে সবকিছু শিক্ষা দেয়ার সময় আল্লাহ আমাদের সব আত্মাদের একই রুমে ডাকলেন। কনফারেন্সের মতো করে। সেখানে আদমকে দেখিয়ে আল্লাহ বললেন, “আদম, এই হচ্ছে তোমার সকল বাচ্চাকাচ্চা। এরাই তোমার বংশধর”। হঠাত করে আদমের চোখ পড়লো একটা ছেলের দিকে। আদম আল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন, “আল্লাহ, এই সুন্দর ছেলেটা কে? এর নাম কী?” আল্লাহ বললেন, “এ হচ্ছে দাউদ। এও তোমার মতো একজন নবী হয়ে জন্মাবে।” আদম বললেন, “সে কত বছর বাঁচবে?” আল্লাহ বললেন, “সে ৪০ বছর বাঁচবে”। আদমের সাথে সাথেই মন খারাপ হয়ে গেলো। এই প্রথম কোনো মানবের অনুভূতির প্রকাশ পেলো। আদম আল্লাহকে বললেন যে, “আল্লাহ, আমি ১০০০ বছর বাঁচবো। কিন্তু আমার ছেলে মাত্র ৪০ বছর বাঁচবে। তুমি আমার ছেলের আয়ু বাড়িয়ে দাও”। আল্লাহ বললেন, “এটা সম্ভব নয়। আয়ুর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে। কলম তুলে ফেলা হয়েছে। আর কখনো কারো আয়ু বাড়বে না, কমবে না।” আদম বললেন, “আল্লাহ, এই ব্যাপারটা খুবই খারাপ লাগছে আমার কাছে। আমি আমার ছেলেকে আমার আয়ু অর্থাৎ আমার ১০০০ বছর থেকে ৬০ বছর দান করলাম।” আল্লাহ বললেন, “ঠিক আছে। তাই-ই হোক!”
তো এই হচ্ছে মূল ঘটনা। যেটার কারণে শুরু থেকেই আমাদের মানুষের মাঝে অনুভূতি মিশে আছে। আমরা অনুভূতিকে মারতে পারবো না। নষ্ট করতে পারবো না। এটা এক ধরনের শক্তি। আর আমরা জানি যে, শক্তির কোনো ধ্বংস নেই। শক্তি অবিনশ্বর। শক্তি শুধুমাত্র এক রূপ থেকে আরেক রূপে পরিবর্তিত হতে পারে। আমরা শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। সেই অনুসারে অনুভূতি বা ইমোশনকেও মেরে ফেলা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
– বুঝলাম!

মনে মনে ভাবছিলাম (আসলে ভাবছিলাম না, শপথ করছিলাম) যে, আর কোনোদিন বাবাকে কোনো প্রশ্ন করবো না। এক প্রশ্ন করতে গিয়ে আমার মধ্যে তিনি আরো একশটা জিনিস ঢুকিয়ে দিলেন।

তো, আমি জানি কি বলছিলাম? ওহ আচ্ছা! হ্যা! আমি বলছিলাম বৃষ্টির কথা। তো বৃষ্টির ঘ্রাণ নেয়ার জন্য সেই অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে এসেছি। আজকে নিয়ে পাঁচদিন হলো বসে আছি হোটেলের রুমেই। সেই মেয়ের সাথে দেখা করা দরকার। যাবো যাবো করছি কিন্তু যেতে ইচ্ছে করছে না। কারণ, বৃষ্টি পড়ছে বাইরে। স্যাঁতস্যাঁতে এই অবস্থায় আমার বাইরে বেরোতে একেবারেই ইচ্ছে করে না। জ্বি, আমি বৃষ্টির ঘ্রাণ পছন্দ করি কিন্তু বৃষ্টি নয়। অনেকটা উদ্ভট টাইপের ইমোশন আমার!
যাই হোক, আজকে সন্ধ্যার পরে যাবো ভাবছি। মেয়েটার সাথে দেখা করা দরকার। তার সমস্যা সমাধান না করলে খুবই বিপদে পড়ে যাবে সে। এই মেয়ের নাম তিন্নি। সে নাকি কি সমস্যায় ভুগছে। তিন্নির কলেজ জীবনের এক বান্ধবী অস্ট্রেলিয়াতে আমার কোম্পানিতেই কাজ করে। সেই বান্ধবীর কাছেই শুনেছি তিন্নি মেয়েটা নাকি মানসিক রোগী। কিন্তু আমি যেটা দেখেছি সেটা দেখে মনে হচ্ছে না যে তিন্নি কোনো মানসিক রোগী। দেখা যাক, মেয়ের বাসায় যাওয়া দরকার।

———————————–

আমাদের সম্পর্কের তিন বছর চলছে। দুঃখিত! সম্পর্কের বললে ভুল হবে। বিয়ের তিন নম্বর বছর চলছে। বিয়ের আগে আমাদের সম্পর্ক ছিলো প্রায় আট বছরের। পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেও শেষমেশ আমার বাবা মেনেই নিলেন। মাকে মানানো ততটা কষ্ট হয় নি। কিন্তু বাবাকে ওতটা সহজে মানানো যাচ্ছিলো না। যাই হোক! শেষমেষ নীলকে দেখার পরে, বাবা তাকে প্রথম যে প্রশ্নটা করেছিলেন, ‘তোমার বেতন কত?’ প্রশ্ন শুনে সে খানিকটা ভড়কে গিয়েছিলো। কিন্তু আমাকে ও বাবাকে চমকে দিয়ে যখন যে কথা বলতে শুরু করলো তখন আধ ঘন্টার মধ্যেই বাবা তার হবু মেয়ে জামাইকে মেনে নিলেন।
এসব ভাবতে ভাবতেই কপালের নীল টিপটা ঠিক করে লাগালো তিন্নি। আয়নায় নিজেকে দেখে একটু হিংসেই হতে লাগলো তার। শ্যামলা গায়ের এই মেয়েটা বর হিসেবে পেয়েছে এক রাজপুত্রকে। নিজেকে মাঝে মাঝে খুবই ভাগ্যবতী বলে মনে হয় তার। নীল, তিন্নির স্বামী; কখনোই কিছুতেই দেরী করে না। কখনোই তিন্নির কথা ফেলতে পারে না নীল। তিন্নির অমান্য কখনোই হবে না সে। হয়ও নি। এমন একটা ছেলেকে নিজের আঁচলে বাধতে পেরে তিন্নির মাঝে মাঝে নিজেকেই বিশ্বাস হয় না। তিন্নির জন্মদিন হোক কিংবা ভালোবাসা দিবস, যখন তিন্নির যেটা প্রয়োজন সেটা বলার আগেই করে ফেলে নীল। কলিংবেল বাজতেই তিন্নি দৌড়ে এসে দরজা খুলে দাঁড়ালো।
নীল – ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা!
তিন্নি – অনেক ভালোবাসি তোমাকে, নীল।
নীল – সেইম টু ইউ। এই নাও তোমার গিফট। এখন চলো খেয়ে নিই তো। অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে।
তিন্নির বাবা এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।
তিন্নি – কি হয়েছে বাবা?
তিন্নির বাবা – মা তোর কি হয়েছে? কবে এসব ছাড়বি?
তিন্নি – কি হবে আমার বাবা? আমি আর নীল কত সুখে আছি দেখো!
তিন্নির বাবা – কোথায় নীল?
তিন্নি – নীল? নীল! নীল! ও মনে হয় ঘুমে। অফিস থেকে এসেছে তো তাই রেস্ট নিচ্ছে। ক্লান্ত অনেক। এই দেখো আমাকে গিফট এনে দিয়েছে।
তিন্নির বাবা গিফটের দিকে তাকিয়ে ভড়কে গেলেন। তিন্নিকে এইবার ভালোবাসা দিবসে তিনি একটা শাড়ি গিফট করেছেন। কিন্তু সেটার রঙ ছিলো হলুদ। তিন্নির হাতের এই শাড়ির রঙ নীল। এই শাড়ি কে দিলো? বাসায় তো তিনি আর তার মেয়ে ছাড়া আর কেউ থাকে না।
তিন্নির বাবা (ভীত চোখে) – এই শাড়ি তোকে নীল গিফট দিয়েছে?
তিন্নি – হ্যা বাবা।
তিন্নির বাবা – আমি তোকে যে শাড়ি গিফট করেছি সেটা কোথায়?
তিন্নি – ওই যে বিছানায় দেখো।
তিন্নির বাবা সেই শাড়ি তুলে দেখলেন, শাড়ির রঙ হলুদ। এবার তিন্নির বাবা থমকে গেলেন। ভীত চোখে তিন্নির রুমের দরজা বন্ধ করে বাইরে এসে সিগারেট ধরালেন।
আশফাক সাহেব সবকিছু ঘোল পাকিয়ে দিচ্ছেন। আসলে সবকিছু ঘোল পাকিয়ে যাচ্ছে। তিনি শুরু থেকে ভাবতে শুরু করলেন!
তার মেয়ে তিন্নি গত চার বছর ধরে ‘ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার’ নামক একটি মানসিক রোগে ভুগছে বলে তিনি জানেন। তিন্নির প্রথম সাইকিয়াট্রিস্ট তাকে এটা বলেছেন। এই রোগে, রোগীরা নাকি যেকোনো ইমোশন বা স্মৃতি থেকে যেকোনো একটি চরিত্রকে ট্রিগার করে তাকে ধরে বাঁচতে চায়। আর সেভাবেই তারা স্বপ্নের মতো একটা রাজ্য তৈরি করে যেখানে তারা নিজেদের সেই ব্যক্তিকে নিয়ে বাঁচতে পারে। সেই ডাক্তার যখন এই তত্ত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বাসা থেকে বের হতে চেয়েছেন তখনই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। তারপর অন্য আরেকজন ডাক্তার আসলেন। তিনি এসে তিন্নিকে দেখে বললেন, ‘এই মেয়ে সোল্ডারস হার্ট নামক এক ধরণের পিটিএসডি রোগে ভুগছে। এটা মানসিক রোগের মধ্যেই পড়ে। তবে খুবই ভয়ানক আর বিরল। এর চিকিৎসা প্রায় নেই বললেই চলে’। সেই ডাক্তারও বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতেই গাড়ির ট্যাংক ফেটে গিয়ে আগুনে পুড়ে মারা যান। এভাবে আরো তিনজন ডাক্তার নিয়ে আসার পরেও তিন্নির আসল রোগ কেউই ধরতে পারে নি। বরঞ্চ সেই তিন ডাক্তারও অপঘাতে মারা গেলেন।
কলিংবেল বেজে উঠলো। আশফাক সাহেবের চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটলো। সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সিগারেট ফেলে দিলেন। দরজা খুলতেই দেখলেন সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়া শুকনো মতন একটা লোক দা



This post first appeared on Muntasir Mahdi's Online Journal, please read the originial post: here

Share the post

আমি নীল

×

Subscribe to Muntasir Mahdi's Online Journal

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×