Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

জগদীশ চন্দ্র বসুর জীবনী | Jagdish Chandra Bose Biography in Bengali

জগদীশ চন্দ্র বসুর জীবনী
Jagadish Chandra Bose Biography in Bengali


নাম

জগদীশ চন্দ্র বসু/Jagadish Chandra Bose

জন্ম

৩০শে নভেম্বর ১৮৫৮, বিক্রমপুর, মুন্সিগঞ্জ জেলা (ব্রিটিশ ভারত)

অভিভাবক

ভগবান চন্দ্র বসু (বাবা)
সুরুজ বালা বসু (মা)

দাম্পত্য সঙ্গী

অবলা বসু

পেশা

পদার্থবিজ্ঞানী, জৈবপদার্থবিজ্ঞানী, জীববিজ্ঞানী, উদ্ভিদবিজ্ঞানী, প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং সাহিত্যিক

উল্লেখযোগ্য ছাত্রসমূহ

সত্যেন্দ্রনাথ বসু,শিশির কুমার মিত্র, দেবেন্দ্র মোহন বসু ও মেঘনাদ সাহা

আবিষ্কার

রেডিও, মিলিমিটার তরঙ্গ ক্রেসকোগ্রাফ এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান

মৃত্যু

২৩শে নভেম্বর ১৯৩৭, গিরিডি, ব্রিটিশ ভারত (বয়স ৭৮)

আজ আমরা জগদীশ চন্দ্র বসু সম্পর্কে জানবো যিনি তাঁর গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেন আপনি এবং আমার মত উদ্ভিদ দেহেও প্রাণ আছে । তিনি প্রমাণ করেন উদ্ভিদও আমাদের মত ঠান্ডা এবং গরম অনুভব করতে পারে ।

এছাড়া তিনি এমন যন্ত্র আবিষ্কার করেন যার সাহায্যে কোনো তার ছাড়াই বার্তা পাঠানো সম্ভব ছিলো, আজকের প্রজন্মে যা wireless technology নামে পরিচিত । তার গবেষণার সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করেই আজকের রেডিও, টিভি ও ইন্টারনেট কাজ করে।

তাঁর বিভিন্ন আবিষ্কার সম্পর্কে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো কিন্তু তার আগে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু সম্পর্কে কিছু তথ্য আমাদের জেনে নেওয়া দরকার ।

Early life of Jagadish Chandra Bose:

জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর তারিখে ময়মনসিংহে নামক জেলায় জন্মগ্রহণ করেন । পরাধীন থাকাকালীন ময়মনসিংহ ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্গত ছিল, কিন্তু পরে সেটা বাংলাদেশের অধীনে চলে যায় ।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর বাবার নাম ছিলো ভগবান চন্দ্র বসু, যিনি তৎকালীন সময়ে একজন ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন এবং তাঁর মায়ের নাম ছিলো সুরুজ বালা দেবী |

Education life of Jagadish Chandra Bose:

তৎকালীন ভারতবর্ষে ইংরেজি বিদ্যালয়ের শিক্ষাকে সম্মানের চোখে দেখা হত কিন্তু ভগবান চন্দ্র বসু তার ছেলেকে একজন প্রকৃত দেশ প্রেমিক হিসাবে তৈরি করতে চেয়েছিলেন । এইজন্য তিনি তার ছেলেকে গ্রামের একটি বাংলা মাধ্যমের স্কুলে ভর্তি করেন ।

কারণ তিনি মনে করতেন ইংরেজি শেখার পূর্বে আমাদের বাংলা ভাষা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান এবং দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা হওয়া উচিত ।

জগদীশ চন্দ্র বসু একটি ইন্টারভিউতে ছোটবেলার কথা স্মরণ করে বলেন- “আমাকে যেই বাংলা বিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়েছিল সেখানে আমার ডানদিকে বসতো আমাদের ড্রাইভারের ছেলে এবং বাঁদিকে বসতো এক জেলের ছেলে ছোটবেলায় এদের সাথেই আমি খেলা করতাম তাদের বলা পশু পাখি ও গাছপালার গল্প আমি খুব মন দিয়ে শুনতাম আর বোধহয় তাদের এইসব গল্প শোনার পর থেকেই আমার মনে আগ্রহ সৃষ্টি হয় গাছপালার বিষয়ে এবং এই সমস্ত বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করি”|

গ্রামের বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি তারপর কোলকাতা চলে আসেন এবং সেখানে এসে তিনি কোলকাতার বিখ্যাত স্কুল সেন্ট জেভিয়ার্সে স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুলেই তিনি পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।

এরপর এরপর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন এবং সেখানে তিনি “ন্যাচারাল সাইন্সে” ডিগ্রী লাভ করেন ।

তারপর ১৮৮৫ সালে পড়াশোনা শেষে করে পুণরায় ভারতবর্ষে ফিরে আসেন ।

Work life of Jagadish Chandra Bose:

সেইবছরই অর্থ্যাৎ ১৮৮৫ সালেই জগদীশ চন্দ্র বসু কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়ানো শুরু করেন ।

তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজের বেশিরভাগ অধ্যাপক এবং কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন ইংরেজ, যা আপনি হয়তো ভালো করেই জানেন ।

আর এটাও হয়ত জানেন যে, সেইসময় ইংরেজ অধ্যাপকদের তুলনায় ভারতীয় অধ্যাপকদেরকে অনেক কম বেতন দেওয়া হতো এবং ভারতীয়দেরকে নিচু শ্রেণীর বলে মনে করা হত।

কিন্তু আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ছিলেন প্রকৃত দেশভক্ত এবং ভারতীয় হিসাবে তিনি ছিলেন গর্বিত, আর সেইজন্যই তিনি ইংরেজ অধ্যাপক ও ভারতীয় অধ্যাপকদের মধ্যে এই ভেদাভেদের প্রতিবাদ করেন।

তিনি ইংরেজ অধ্যাপকদের থেকে কম বেতন নিতে অস্বীকার করেন।

মনে মনে জগদীশচন্দ্র বসু দৃঢ় সংকল্প করেন যে যতদিন না পর্যন্ত তাঁকে ইংরেজ অধ্যাপকদের সমান বেতন ও সম্মান না দেওয়া হবে ততদিন তিনি বেতনই গ্রহণ করবেন না ।

কারণ একই পরিমাণ পরিশ্রম করার পরেও ভারতীয়দেরকে ইংরেজদের থেকে কম বেতন দেওয়া হতো, যেই বিষয়টিকে জগদীশ চন্দ্র বসু একেবারে সহ্য করতে পারতেন না ।

আরো পড়ুন: হুমায়ুন আজাদের জীবনী

তিনি তাঁর এই জেদ শেষপর্যন্ত বজায় রাখেন এবং তিন বছর বিনা বেতনে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা চালিয়ে যান, যারফলে একসময় তিনি প্রচণ্ড অর্থ সংকটেও পড়েন।

কিন্তু তবুও তিনি বিনা বেতনে তাঁর কাজ চালিয়ে যান এবং কলকাতা শহরের বাড়ি বিক্রি করে শহরের বাইরে একটি সস্তার বাড়িতে থাকা শুরু করেন ।

অধ্যাপনার জন্য তিনি ও তাঁর স্ত্রী একইসাথে হুগলি নদী পেরিয়ে আসতেন এবং তাঁর স্বামীকে কলেজে ছেড়ে দিয়ে তাঁর স্ত্রী একাই নৌকা নিয়ে বাড়ি ফিরেও যেতেন ও আবার সন্ধ্যাবেলায় তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য নৌকা করে আসতেন কলেজের উদ্দেশ্যে । অনেক সমস্যার পরেও তিনি তার কথাই অবিচল থাকেন।

অবশেষে একসময় ইংরেজ সরকার তাঁর সামনে নত হতে বাধ্য হয় এবং তাঁর সাথে অন্যান্য বাঙালি অধ্যাপকদেরকেও ইংরেজ অধ্যাপকদের সমান বেতন ও সম্মান দেওয়ার নিয়ম তৈরি করে । সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন এই আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর ছাত্র ।

Research Works of Jagadish Chandra Bose:

জগদীশ চন্দ্র বসু কলেজে অধ্যাপনা চলাকালীনই বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করতেন । তিনি তাঁর গবেষণার মাধ্যমে রেডিও ও অপটিক্স সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অনুসন্ধান করেন । তিনি এমন যন্ত্র আবিষ্কার করেন যার সাহায্যে কোনো তার ছাড়াই বার্তা পাঠানো এবং গ্রহণ করা যেতো ।

তাঁর দেওয়া সমস্ত সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করেই আজকের বিভিন্ন wireless technology কাজ করে । কিন্তু তাঁর এই যুগান্তকারী গবেষণার পুরো কৃতিত্বটাই চলে যায় অন্য এক বিজ্ঞানী মার্কনির কাছে ।

কারণ জগদীশচন্দ্র বসু কোনো আবিষ্কারের জন্য পেটেন্ট গ্ৰহণের বিরোধী ছিলেন । তিনি তাঁর আবিষ্কারের মাধ্যমে ব্যবসা না করে, তার সমস্ত তথ্য সবাইকে বলে দিতেন যাতে ভবিষ্যতে সেই বিষয় নিয়ে আরো গভীরভাবে গবেষণা করা যায় সেইজন্য।

এইভাবে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর কাজ নিয়ে আরও গভীরভাবে অনুসন্ধান করে মার্কনি তা নিজের নামে পেটেন্ট  রেজিস্টার করিয়ে নেয় । যারজন্যই আজ আমরা জানি রেডিওর আবিষ্কারক হিসাবে মার্কনিকে|

জগদীশ চন্দ্র বসু কিন্তু  Bio physics নিয়েও আশ্চর্যজনক তথ্য আবিষ্কার করেন। তিনি তাঁর গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেন উদ্ভিদ দেহে উদ্দীপনার আদান প্রদান ইলেকট্রনের মাধ্যমে হয়, রাসায়নিক মাধ্যমে নয় ।

তিনি মনে করতেন, আমাদের মত উদ্ভিদ দেহেও প্রাণ আছে এবং তারাও ব্যথা অনুভব করে ও সুখ-দুঃখেরও অনুভব করে ।

তিনি তাঁর এই কথাকে স্পষ্টরূপে প্রমাণ করার জন্য এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন যার সাহায্যে উদ্ভিদ দেহের স্পন্দন মাপা যায় । পরবর্তী সময়ে এই যন্ত্রটি “ক্রেসকোগ্রাফ” নামে পরিচিতি লাভ করে ।

গবেষণাকে প্রমাণ করার জন্য তিনি একটি গাছকে ব্রোমাইড নামক বিষাক্ত গ্যাসযুক্ত একটি পাত্রে রেখে দেন । এরপর তিনি লক্ষ্য করেন সেই গাছটির পালস সাধারণ জীবজন্তুর মতই অস্থির হচ্ছে ।

কখনো গাছটির স্পন্দন কমে যাচ্ছে আবার কখনও খুব বেড়ে যাচ্ছে | এইভাবেই কিছুদিন চলার পর অবশেষে একসময় ধীরে ধীরে গাছটি মারাও যাচ্ছে ।

এই পরীক্ষার পর তিনি স্থির সিদ্ধান্ত নেন যে প্রাণীদের মত উদ্ভিদ দেহেও প্রাণ আছে।

তিনি তাঁর এই তথ্যকে প্রমাণ করার জন্য বেশ কিছু বিজ্ঞানীকে আমন্ত্রণ করেন এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে একটি গাছে বিষ ঢুকিয়ে দেন। এরপর তিনি তাদের বলেন যে ধীরে ধীরে এই গাছটির পালস কমে যাবে এবং একসময় মারা যাবে । কিন্তু কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরেও তা হয় না । গাছটি তখনও আগের মতই সতেজ থাকে ।

তাঁর এই কাণ্ডকারখানা দেখে সেখানে উপস্থিত সমস্ত বিজ্ঞানী তাঁকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা শুরু করেন।

জগদীশচন্দ্র বসু অবশ্য তখনও নিজের গবেষণার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন । তিনি তাদেরকে বলেন “আমার গবেষণা ভুল হতে পারে না”  এই বলে তিনি সেই বিষ ভর্তি ইঞ্জেকশনটি নিজের ওপর প্রয়োগ করতে যান।

তখন বিজ্ঞানীদের ভিড় থেকে একজন লোক বেরিয়ে এসে বলেন যে তিনি বিষ ভর্তি ইনজেকশন পাল্টে তার জায়গায় একটি জল ভর্তি ইঞ্জেকশন রেখে দিয়েছিলেন ।

আরো পড়ুন: কিশোর কুমারের জীবনী

অবশেষে এরপর তিনি সকল বিজ্ঞানীদের সামনে বিষ ভর্তি ইনজেকশন প্রয়োগ করে সফলভাবে তাঁর পরীক্ষা প্রমাণ করেন ।

বন্ধুদের অনেক বোঝানোর পর তিনি “ক্রেসকোগ্রাফ” এর পেটেন্ট রেজিস্টার করান । এটা ছিল আমেরিকাতে নেওয়া কোনো ভারতীয় বিজ্ঞানের প্রথম পেটেন্ট ।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু অনেক বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান করেন এবং বিশ্ববাসীর কাছে ভারতবর্ষের নাম উজ্জ্বল করেন ।

Awards and Honours of Jagadish Chandra Bose:

  1. Institute of electrical and electronics engineers কর্তৃক জগদীশচন্দ্র বসুকে তাদের wireless hall of fame-এ সম্মিলিত করেন।
  2. ১৯২০ সালে তাঁকে Fellow of Royal Society হিসাবে বেছে নেওয়া হয়।

Death  of Jagadish Chandra Bose:

বিজ্ঞান জগতে অশেষ অবদান রাখার পর অবশেষে ১৯৩৭ সালের ২৩শে নভেম্বর তারিখে এই মহান বিজ্ঞানী মৃত্যু বরণ করেন ।


এই দুর্দান্ত ব্লগটি লিখেছেন আমাদেরই ব্লগের একজন প্রিয় পাঠক এবং আমার বন্ধু | চলো তার সম্পর্কে একটু জেনে নিই:

হ্যালো বন্ধু, আমি অমিত মন্ডল | মন থেকে একজন লেখক। Ajob Rahasya এর মতো অন্য একটি website এ আমি আমার বিভিন্ন লেখা প্রকাশ করি। আমার websiteটি হল adisikha.com (আদি শিখা) । এই ওয়েবসাইটে আমি বিখ্যাত মানুষদের জীবনী ও উক্তি, রামায়ন ও মহাভারতের কাহিনী, সামাজিক ও ভূতের গল্প এবং অনুপ্রেরণামূলক লেখা প্রকাশ করে থাকি।

আমার এই লেখা পড়ে আপনার ভালো লাগলে কিন্তু আমার ওয়েবসাইটাও অবশ্যই ঘুরে আসবেন |


আশা করি তুমি “Jagadish Chandra Bose Biography in Bengali” পড়ে নিশ্চই অনেক কিছু সুন্দর তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছো | পোস্টটা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই একটু Comment করে তোমার মতামত আমায় জানিও | তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাতে ভীষনভাবে সাহায্য করে |

The post জগদীশ চন্দ্র বসুর জীবনী | Jagdish Chandra Bose Biography in Bengali appeared first on Ajob Rahasya.

Share the post

জগদীশ চন্দ্র বসুর জীবনী | Jagdish Chandra Bose Biography in Bengali

×

Subscribe to মস্তিষ্কের অবচেতন ভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় |how To Unlock Subconscious Mind Power In Bangla

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×