Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জীবনী | Atisa Dipamkara Srijnana Biography in Bengali

অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জীবনী
Atisa Dipamkara Srijnana Biography


নাম

অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান/ Atisa Dipamkara Srijnana

জন্ম

৯৮০ খ্রিস্টাব্দ, বর্তমান ঢাকা শহরের অন্তর্গত বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামে

অভিভাবক

রাজা শ্রীকল্যাণ (বাবা)
প্রভাবতী (মা)

পেশা

বৌদ্ধ অধ্যাপক

অপর নাম

আদিনাথ চন্দ্রগর্ভ

ধর্ম

বৌদ্ধ

পরিচিতির কারণ

জ্ঞান সাধক ও তিব্বতের সারমা প্রতিষ্ঠার প্রধান একজন ব্যক্তিত্ব

মৃত্যু

১০৫৪ খ্রিস্টাব্দ, চে-থঙ,  তিব্বত

বাংলা এবং বাঙালীর গর্ব “অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান”-এর কথা আজ হয়তো অনেক বাঙালীরই আর মনে নেই | প্রাচীন ভারতের শ্রেষ্ঠ সব বৌদ্ধিক গুরুদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব | কিন্তু হায়! বেশিরভাগ বাঙালীই তাঁর সম্পর্কে কোনোদিন জানার বিশেষ আগ্রহই প্রকাশ করেনি | কালের নিয়মে তিনি প্রায় হারিয়েই গেছেন তথাকথিত শিক্ষিত বাঙালী সমাজের মন থেকে |

তাঁর জীবনী সম্পর্কে আমাদের সকলেরই বিশেষভাবে জানার দরকার আছে, তাহলেই আমরা তাঁর আসল মর্ম বুঝতে পারবো |

Early life of Atisa Dipamkara Srijnana:

অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জন্মকাল নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে | তাঁর প্রকৃত জন্ম কোথায় এবং কত খ্রিষ্টাব্দে হয়েছিলো সেই নিয়ে আজও আছে বিতর্ক | মহা মহোপাধ্যায় সতীশ্চন্দ্র বিদ্যাভূষণ ও রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতানুসারে, পালযুগেই মগধের পূর্ব সীমান্তবর্তী প্রদেশ অঙ্গদেশের সামন্তরাজ্য সহোরে তাঁর জন্ম হয়েছিলো |

কিন্তু তাদের এই মত, অনেক ঐতিহাসিকবীদ তথা ইউনোস্কো এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ববৌদ্ধদের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়নি | তাঁদের সকলেরই দাবী যে, তাঁর জন্ম মগধে নয় বরং বর্তমান বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত বিক্রমপুর পরগনার বজ্রযোগিনী গ্রামে হয়েছিলো ৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে |

সেখানে নাকি আজও তাঁর বাসস্থান, “নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটে” নামে পরিচিত বলে জানা যায় |

তুমি হয়তো এটা জানলে অবাক হবে যে, তিনিও গৌতম বুদ্ধের মতোই রাজ পরিবারের সন্তান ছিলেন | গৌড়ীয় রাজ পরিবারের রাজা শ্রীকল্যাণ ও রানী প্রভাবতী দেবীই ছিলেন তাঁর বাবা ও মা |

তিনি তাঁদের পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন | তাঁর দুই ভাইদের নাম যথাক্রমে- পদ্মগর্ভ ও শ্রীগর্ভ |

অনেক ঐতিহাসিকবীদের থেকে জানা যায়, তিনি নাকি খুব অল্প বয়সেই বিয়ে করেন এবং তাঁর পাঁচ স্ত্রী ছিলো | যাদের গর্ভে মোট ৯টি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে । তবে পুন্যশ্রী নামে একটামাত্র পুত্রের নামই শুধু জানা যায় |

Education life of Atisa Dipamkara Srijnana:

অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান কিন্তু তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা তাঁর মায়ের কাছ থেকেই লাভ করেন | সেই সময় তাঁর নাম ছিলো আদিনাথ চন্দ্রগর্ভ | ছোট্ট আদিনাথ মাত্র তিন বছর বয়সেই সংস্কৃত ভাষাতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন এবং সেই সাথে মাত্র ১০ বছর বয়সের মধ্যেই বৌদ্ধ ও অবৌদ্ধ শাস্ত্রের পার্থক্য বুঝতে পারার বিরল প্রতিভা প্রদর্শন করে সবাইকে আশ্চর্য্য করে দেন |

তারপর প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি বিখ্যাত বৌদ্ধ গুরু জেত্রির কাছ থেকে  বৌদ্ধধর্ম ও শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন |

সেখানকার শিক্ষা করে তিনি এরপর পারি দেন বিহারের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে | যখনকার কথা বলছি, সেইসময় তাঁর বয়স ছিলো মাত্র ১২ বছর | সেখানে পৌঁছে তিনি আচার্য বোধিভদ্রের কাছে দীক্ষা নেন এবং দীক্ষা পাওয়ার পরেই নাম তাঁর বদলে রাখা হয় দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান |

তারপর সেখানকার শিক্ষা শেষ করে তিনি বিক্রমশীলার পন্ডিত নাঙপাদের কাছে যান তন্ত্র শিক্ষার উদ্দেশ্যে । তখন তাঁর বয়স ছিলো প্রায় ১৮ বছর | এরপর ৩ বছর সেখানে তন্ত্র সাধনা শিখে তিনি তারপর যান মগধের ওদন্তপুরীতে আচার্য শীলরক্ষিতের কাছে, উপসম্পদা দীক্ষা গ্রহণের জন্য |

তাঁর সম্পর্কে লেখা অনেক পুঁথি থেকে জানা যায় যে, তিনি নাকি ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের জন্য পশ্চিম ভারতের কৃষ্ণগিরি বিহারে গমন করেন এবং সেখানে প্রখ্যাত পন্ডিত রাহুল গুপ্তের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ।

তিনি এরপর “গুহ্যজ্ঞানবজ্র” উপাধিতে ভূষিত হন বৌদ্ধ শাস্ত্রের আধ্যাত্মিক গুহ্যাবিদ্যায় শিক্ষা গ্রহণ সম্পূর্ণ করার পর |

সাল ১০১১, যখন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান তাঁর কিছু অনুগামীসহ মালয়দেশের সুবর্ণদ্বীপে যান (বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপ) এবং সেখানকার প্রখ্যাত আচার্য চন্দ্রকীর্তির কাছে ১২ বছর থেকে বৌদ্ধশাস্ত্রের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে অধ্যয়ন করেন |

তারপর স্বদেশে ৪৩ বছর বাদে ফিরে আসার পর তিনি বিক্রমশীলার  আচার্য হিসাবে অধ্যাপনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন । বিক্রমশীলাসহ ওদন্তপুরী ও সোমপুর বিহারে দীপঙ্কর ১৫ বছর অধ্যাপক ও আচার্যের দায়িত্ব পালন করেন ।

Journey to Tibet of Atisa Dipamkara Srijnana:

বিক্রমশীলায় থাকার সময় একদিন তিব্বতের বৌদ্ধ রাজা লাঃ লামা ইয়োসি হোড তাঁকে তিব্বতে বৌদ্ধধর্মের উন্নতি কামনায় নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বর্ণোপহার ও পত্রসহ সেখানে দূত প্রেরণ করেন কিন্তু নির্লোভ অতীশ দীপঙ্কর সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন ।

এরপর রাজার মৃত্যুর পর তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র ল্হা-লামা-ব্যাং-ছুব-ওদ তিব্বতের রাজা হন এবং তাঁর কাকার শেষ ইচ্ছা পূরণের করার জন্য তিনি অতীশ দীপঙ্করকে সবিনয়ে তিব্বতে আসার জন্য অনুরোধ করে গুং-থং-পা নামে এক বৌদ্ধ উপাসককে তাঁর কাছে পাঠান |

রাজার পত্র পড়ে সেখান থেকে সব ঘটনা জানার পর তিনি অবশেষে তিব্বতে যেতে রাজি হন | তিনি এরপর দোভাষী সহ বারো জন অনুগামীকে নিয়ে প্রথমে বুদ্ধগয়া হয়ে নেপালের রাজধানীতে উপস্থিত হন এবং নেপালের রাজার অনুগ্রহে সেখানে এক বছর কাটান ।

অবশেষে ১০৪২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ও তাঁর অনুগামী সকলে তিব্বতের পশ্চিম প্রান্তের ডংরী প্রদেশে এসে উপস্থিত হন । তারপর সেখানে পৌছলে ল্হা-লামা-ব্যাং-ছুব-ওদ এক রাজকীয় সংবর্ধনার আয়োজন করে তাঁকে থোলিং বিহারে নিয়ে যান ।

তোমায় বলে রাখি, এখানেই কিন্তু অতীশ দীপঙ্কর তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ বোধিপথপ্রদীপ রচনা করেন ।

Atisa Dipamkara Srijnana & Buddhism:

তিববতে আসার পর ধীরে ধীরে থো-লিং বিহারই হয়ে ওঠে অতীশ দীপঙ্করের মূল কর্মকেন্দ্র । ঐতিহাসিকদের মুখে শোনা যায়, এই বিহারে তিনি দেবতার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন ।

আর এখান থেকেই তিনি তিববতের সর্বত্র ঘুরে ঘুরে বৌদ্ধধর্ম প্রচারও করেন । তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় তিববতে বৌদ্ধধর্মের ব্যভিচার ধীরে ধীরে দূর হয়ে যায় এবং বিশুদ্ধ বৌদ্ধ ধর্মাচার প্রতিষ্ঠিত হয় ।

এখানে তিনি মহাযানী প্রথায় বৌদ্ধধর্মের সংস্কার সাধন করেন এবং বৌদ্ধ ক-দম্ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করেন ।

তিববতবাসীরা মহাত্মা বুদ্ধের পর তাঁকেই শ্রেষ্ঠ গুরু হিসেবে সম্মান ও পূজা করেন এবং মহাপ্রভু বা জোবো ছেনপো হিসেবেও শ্রদ্ধা করেন আজও | কিন্তু সবচেয়ে দুর্ভাগ্য এই যে, এত বড় এক মহান মনীষীকে আজ গোটা বাঙালী তথা সকল ভারতবাসী প্রায় ভুলে যেতেই বসেছে | অনেকে হয়তো আজও জানেন না, এই মানুষটা আসলে কে এবং কি তাঁর পরিচয় |

সে যাই হোক! আবার আসল কথায় ফিরে আসি |

তুমি জানলে হয়তো অবাক হবে, তিনি কিন্তু এক ধর্ম প্রচারক হওয়ার পাশাপাশি, ছিলেন একজন সৃষ্টিশীল মানুষও | তাঁর লেখা প্রচুর সব গ্রন্থ আছে |

ঐতিহাসিকদের মতে তিনি দুশোরও বেশি গ্রন্থ রচনা, অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন । তিব্বতের ধর্ম, রাজনীতি ও জীবনচর্চা বিষয়ক  এক বিশাল শাস্ত্রগ্রন্থ “তাঞ্জুর” তিনি সংকলন করেন । এছাড়াও বৌদ্ধ শাস্ত্র, চিকিৎসা বিদ্যা এবং কারিগরি বিদ্যা বিষয়েও তিনি তিব্বতী ভাষায় অনেক গ্রন্থ রচনা করেন | যারজন্য তিব্বতীরা তাকে অতীশ উপাধীতে ভূষিত করে ।

অতীশ দীপঙ্কর সংস্কৃত এবং পালি ভাষার অনেক বই তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ করেন । দীপঙ্করের রচিত গ্রন্থগলির মধ্যে চর্যাসংগ্রহপ্রদীপ, সত্যদ্বয়াবতার, মধ্যমোপদেশ, বোধিপথপ্রদীপ, সংগ্রহগর্ভ, হৃদয়নিশ্চিন্ত, বোধিসত্ত্বমণ্যাবলী, বোধিসত্ত্বকর্মা, দিমার্গাবতার, শরণাগতাদেশ, মহযানপথ সাধনবর্ণ সংগ্রহ, কর্মবিভঙ্গ, সমাধিসম্ভব পরিবর্ত, গুহ্যক্রিয়াকর্ম, চিত্তোৎপাদ সম্বরবিধিকর্ম ও বিমলরত্নলেখনা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।

এছাড়াও দীপঙ্করের আরো অনেক বই, বিখ্যাত পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী  আবিস্কার করেন ।

Nirvana of Atisa Dipamkara Srijnana:

তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মের সংস্কারের মতো শ্রমসাধ্য কাজ করতে করতে অতীশ দীপঙ্করের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে শুরু করে | তিনি সেইসময় দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন কিন্তু হিমালয়ের প্রতিকূল আবহাওয়ার কারনের জন্য তার পক্ষে আর দেশে ফিরে আসা সম্ভব হয়ে ওঠেনি |

অবশেষে ১০৫৪ খৃস্টাব্দে, মাত্র ৭৩ বছর বয়সে তিব্বতের লাসা শহরের নিকটবর্তী চে-থঙের দ্রোলমা লাখাং মন্দিরে তিনি নির্বাণলাভ করেন । বর্তমানে তাঁর সমাধিস্থল লেথান তিববতীদের তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ।

১৯৭৮ সালের ২৮ জুন দীপঙ্করের পবিত্র চিতাভস্ম চীন থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকায় আনা হয় এবং তা বর্তমানে ঢাকার ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারে সংরক্ষিত আছে ।


Buy Book:
Life and Works of Dipamkara Srijnana


আশা করি তুমি “Atisa Dipamkara Srijnana Biography Bengali” পড়ে নিশ্চই অনেক কিছু সুন্দর তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছো | পোস্টটা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই একটু Comment করে তোমার মতামত আমায় জানিও | তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাতে ভীষনভাবে সাহায্য করে |

The post অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জীবনী | Atisa Dipamkara Srijnana Biography in Bengali appeared first on Ajob Rahasya.

Share the post

অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জীবনী | Atisa Dipamkara Srijnana Biography in Bengali

×

Subscribe to মস্তিষ্কের অবচেতন ভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় |how To Unlock Subconscious Mind Power In Bangla

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×