Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

এ.পি.জে আব্দুল কালামের জীবনী | APJ Abdul Kalam Biography in Bengali

এ.পি.জে আব্দুল কালামের জীবনী
APJ Abdul Kalam Biography in Bengali


নাম

আবুল পাকির জয়নুল-আবেদিন আব্দুল কালাম/APJ Abdul Kalam

জন্মদিন

১৫ অক্টোবর ১৯৩১

জন্মস্থান

রামেশ্বরম, রামনাথস্বামী জেলা

অভিভাবক

জয়নুল-আবেদিন (বাবা)
অশিয়াম্মা (মা)

জাতীয়তা

ভারতীয়

ধর্ম

ইসলাম

মৃত্যুদিন

২৭ জুলাই ২০১৫ (৮৩ বছর)

মৃত্যুর কারণ

হৃদরোগ জনিত সমস্যা

পেশা

অধ্যাপক
লেখক
বিমান প্রযুক্তিবিদ

ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি তথা বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক, এ.পি.জে আব্দুল কালাম হলেন সমগ্র ভারতবাসীর কাছে এক গর্ব | তাঁর অনন্য কীর্তি ও দেশত্বভাব প্রত্যেকটা মানুষের কাছে আজও এক মহান অনুপ্রেরণা | ভারতবর্ষের এই মহান বৈজ্ঞানিকের জন্ম হয় ১৫ অক্টোবর ১৯৩১ সালে, তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বারম শহরে |

তিনি কিন্তু সেখানকার এক দরিদ্র তামিল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন | তাঁর বাবার নাম ছিলো জয়নুল-আবেদিন, যিনি কিনা রামেশ্বারমের একজন সামান্য নৌকা চালক ছিলেন এবং তাঁর কাজ ছিলো প্রত্যহ হিন্দু তীর্থযাত্রীদের রামেশ্বরম ও তাঁর সংলগ্ন ধনুষ্কোডিতে পারাপার করানো আর তাঁর মায়ের নাম ছিলো অশিয়াম্মা, যিনি ছিলেন সাধারণ এক গৃহবধু |

দরিদ্র পরিবার হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই কালাম স্যারকে পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হয় | ছোটবেলায় খবরের কাগজ বিক্রি করেই তিনি নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন কিন্তু এত অভাবের পরও তিনি কখনোই তাঁর বাবা-মাকে এই বিষয়ে অভিযোগ করেননি |

Photo of DR. APJ Abdul Kalam

রামনাথপুরম স্কোয়ার্টজ ম্যাট্রিকুলেশন স্কুল থেকেই তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় | স্কুলে, তিনি ছিলেন একজন খুবই সাধারণ মানের ছাত্র কিন্তু পড়াশোনার প্রতি তাঁর মনোযোগ ছিলো খুবই গভীর, সেইসাথে ছিলেন কঠোর পরিশ্রমীও | জানা যায়, তিনি নাকি নিজের পড়াশোনাকে আরো উন্নত করার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে যেতেন এবং অঙ্ক কষতেন |

স্কুলজীবন শেষ হওয়ার পর, তারপর তিনি ভর্তি হন তিরুচিরাপল্লির সেন্ট জোসেফ কলেজে এবং সেখান থেকে ১৯৫৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক হন | এরপর ১৯৫৫ সালে তিনি চেন্নাইয়ে চলে আসেন এবং সেখানকার মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে বিমানপ্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান |

তাঁর স্কুলজীবন থেকেই স্বপ্ন ছিলো, ভারতীয় বায়ু সেনার একজন বিমান পাইলট হওয়ার কিন্তু সেই স্বপ্নকে তিনি ভবিষ্যতে পূরণ করতে একটুর জন্য ব্যর্থ হন |

তার পরিবর্তে তিনি ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থায় (DRDO) নিয়োগ হন এবং সেখানে হভারক্রাফ্ট প্রকল্পের সুন্দরভাবে পরিচালনা করেন কিন্তু DRDO-তে নিজের কাজে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তিনি পরবর্তী সময়ে সেই সংস্থাকে ছেড়ে দেন |

এরপর সাল ১৯৬২, যখন স্যার এ.পি.জে আব্দুল কালাম ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ISRO-তে যোগ দেন আর সেখানে অনেক বছর কাজে করে বিভিন্ন মহাকাশ সম্বন্ধীয় পরিকল্পনার সফলপূর্বক পরিচালনা করেন |

আরো পড়ুন: আব্দুল কালামের অমূল্য বাণী

তাঁর সেখানে সবচেয়ে বিখ্যাত অবদান ছিলো,যখন তিনি নিজের তৈরী ভারতের সর্বপ্রথম উপগ্রহ “রোহিনী” অর্থাৎ SLV3-এর সফল উৎক্ষেপন করেন এবং সেটাকে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করতে সফল হন | এছাড়াও তিনি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ISRO-এর হয়ে এমন অনেক মহাকাশ বিষয়ক কাজ করেছিলেন যার দৌলতে সেইসময় ভারত, আন্তর্জাতিক স্পেস ক্লাবের সদস্য হতে পেরেছিলো |

ISRO-তে কাজ করার সময় তিনি দেশ-বিদেশে অনেক খ্যাতি অর্জন করেন | সেই সময় তাঁকে আমেরিকার স্পেস এজেন্সী NASA-তে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো কিন্তু সেখানে তিনি কাজ করতে রাজি হননি | এছাড়া সেইসময় তিনি ভারতের বিখ্যাত বিজ্ঞানী রাজা রামান্নার সাথে মিলে ভারতের প্রথম পারমানবিক ক্ষেপনাস্ত্র তৈরী করতে সক্ষম হন |

সাল ১৯৯৮, যখন স্যার এ.পি.জে আব্দুল কালামের নেতৃত্বেই ভারত দ্বিতীয়বারের জন্য পরমাণু বোমের সফলভাবে পরীক্ষা করতে সক্ষম হয় | যার সুবাদে তিনি সেইসময়ে হয়ে ওঠেন ভারতের সবথেকে বিখ্যাত এবং সফল পরমাণু বৈজ্ঞানিক | বর্তমানে আজ তাঁর জন্যই কিন্তু ভারত, পরমাণু হাতিয়ার নির্মান করতে সফল হতে পেরেছে | তাঁর এই মহান অবদান কখনই আমাদের ভোলার নয় |

২০০২ সালে তাঁর ভারতের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং তাঁর প্রতি জনতার সম্মানকে লক্ষ্য করে তৎকালীন এন.ডি.এ সরকার তাঁকে ভারতের রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রার্থীর হিসাবে ঘোষণা করেন | ফলস্বরূপ, সেইবছরেই তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিতও হন |

আমরা সবাই এটা জানি যে, এ.পি.জে. আব্দুল কালামের ব্যক্তিগত জীবন খুবই সহজ এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিলো । তিনি ছোট বাচ্চাদের খুবই ভালোবাসতেন এবং তাদেরকে সর্বদা এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করতেন যেগুলো তাদের ভবিষ্যতকে আরও সুন্দর বানাতে সাহায্য করতে পারে |

তিনি কখনই একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন না, কিন্তু রাজনীতিতে থাকার মাধ্যমে তিনি সর্বদা দেশের উন্নয়নের কথাই  ভাবতেন । তিনি মনে করতেন, যুবসমাজের সুন্দর উন্নতিই পারে এই দেশকে অনেক আগে এগিয়ে নিয়ে যেতে ।

তিনি এটাও চেয়েছিলেন যে, পারমাণবিক অস্ত্র নির্মানের ক্ষেত্রে ভারত একটা বড় শক্তি হিসাবে পরিচিতি পাক বিশ্বের বুকে |

তিনি বলেছিলেন: “2000 বছরের ইতিহাসে , ভারতকে 600 বছর ধরে অন্য শক্তিরাই শাসন করেছে যদি আপনি বিকাশ চান তবে দেশে শান্তির পরিস্থিতি থাকা অবশ্যক আর শান্তি, শক্তির দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হয় এই কারণে ক্ষেপনাস্ত্রকে বিকশিত করা হয়েছে যাতে দেশ, শক্তি সম্পূর্ণ হয়”

এরপর ২০০৭ সালে আব্দুল কালামের রাষ্ট্রপতি হওয়ার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় । তারপর তিনি ভারতের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রফেসর হিসাবেও নিযুক্ত হয়েছিলেন | ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ শিলং, আহমেদাবাদ এবং ইন্দোরের মতো অনেক জায়গায় এবং ব্যাঙ্গালোরে ভারতীয় বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানেও তিনি অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছিলেন|

এছাড়াও তিনি আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ারস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক হিসাবেও নিযুক্ত ছিলেন অনেক বছর ।

এবার জেনে নেওয়া যাক তাঁর কিছু অজানা তথ্য সম্পর্কে:

১. আট বছর বয়স থেকেই কালাম স্যার, ভোর ৪টেয় ঘুম থেকে উঠতেন এবং তারপর স্নান করে অঙ্ক শিখতে চলে যেতেন স্থানীয় শিক্ষকের কাছে | এত ভোরবেলায় তাঁর এই স্নান করার কারণ ছিলো, তিনি যেই শিক্ষকের কাছে পড়তেন, তিনি এমন কোনো বাচ্চাকে পড়াতেন না, যে সকালে তার কাছে স্নান না করে পড়তে আসতো |

তাছাড়া সেই শিক্ষক প্রত্যেক বছর ৫টা বাচ্চাকে বিনামূল্যে ভোরবেলা অঙ্ক শেখাতেন যার মধ্যে কালাম স্যারও ছিলেন |

২. কালাম স্যারের বাবা পেশায় একজন নৌকা চালক ছিলেন এবং  তিনি সেখানকার স্থানীয় জেলেদের নৌকা ভাড়াতে দিতেন | বাবা-মা ও পাঁচ ভাই-বোন সমৃদ্ধ, এক বিশাল পরিবারের পেট চালানোর জন্য তাঁকেও ছোটবেলা থেকে কাজ করা শুরু করে দিতে হয় |

৩. ১৯৯২-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ছিলেন | সেইসময় বাজপায়ী সরকার দ্বিতীয়বারের জন্য ভারতের পোখরানে পরমাণু বোমের সফল পরীক্ষা করে, যার সুবাদে ভারত বিশ্বের বুকে পারমানবিক বোম নির্মানকারী দেশ হিসাবে পরিচিতি পায় |

৪. ১৯৮২ সালে কালাম স্যার, ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত হন | সেই বছর আন্না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তাঁকে “ডক্টরেট” উপাধিতে সম্মানিত করা হয় | তারপর স্বদেশী মিসাইলের উন্নতির জন্য তাঁর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয় ওই বছরেই, যেখানে তিনি সভাপতিত্বও করেন |

৫. ভারতের সর্বোচ্চ পদে নিযুক্ত হওয়ার আগে “ভারতরত্ন” সম্মানের অধিকারী হওয়া, দেশের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি ছিলেন কালাম স্যার | তাঁর আগে এই সম্মান পেয়েছিলেন- স্যার সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান ও জাকির হোসেন |

আরো পড়ুন: অটল বাজপেয়ীর জীবনী

Awards & Honors of DR. APJ Abdul Kalam

1. ১৯৮১ সাল: পদ্ম ভূষণ পুরস্কার

2. ১৯৯০ সাল: পদ্ম বিভূষণ পুরস্কার

3. ১৯৯৪ সাল: ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ডিরেক্টরস কর্তৃক “বিশিষ্ট সহকর্মী”(Distinguished Fellow) পুরস্কার

4. ১৯৯৭ সাল: ভারতরত্ন পুরস্কার ও ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার

5. ১৯৯৮ সাল: বীর সাভারকার পুরস্কার

6. ২০০০ সাল: চেন্নাইয়ের আলওয়ার গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃক “রামানুজন পুরস্কার”

7.  ২০০২ সাল: ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি

8. ২০০৭ সাল: উল্ভার্হাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক “ডক্টরেট” সম্মানে ভূষিত হওয়া

9. ২০০৮ সাল: নানইয়াং টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি কর্তৃক “ডক্টরস অফ ইঞ্জিনিয়ারিং” সম্মানে ভূষিত হওয়া

10. ২০০৯ সাল: ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি কর্তৃক আন্তর্জাতিক “ভন ক্রমান উইংস” পুরস্কার

11. ২০১০ সাল: ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক “ডক্টরস অফ ইঞ্জিনিয়ারিং” সম্মানে ভূষিত হওয়া

12. ২০১২ সাল: সাইমন ফ্রেজার ইউনিভার্সিটি কর্তৃক ““ডক্টর অফ ল” সম্মানে ভূষিত হওয়া

Death of DR. APJ Abdul Kalam:

অবশেষে, ২৭শে জুলাই, ২০১৫ সালে মেঘালয়ের শিলং শহরে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট নামক প্রতিষ্ঠানে “বসবাসযোগ্য পৃথিবী” বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় সন্ধ্যা ৬:৩০ নাগাদ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন স্যার এ.পি.জে আব্দুল কালাম ।

তাঁকে এরপর সেখান থেকে বেথানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে ভারতীয় সময় ঠিক সন্ধ্যা ৭:৪৫ মিনিটে তাঁর মৃত্যু ঘটে | তাঁর মৃত্যুর কিছু সময় পরই তাঁর মৃতদেহকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার মারফৎ শিলং থেকে গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়া হয়, আর তারপর সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় নয়া দিল্লিতে |

সবশেষে, সকলের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর তাঁর মৃতদেহকে রামেশ্বরমেই দাহ করা হয় |

স্যার এ.পি.জে আব্দুল কালাম সারা জীবন ধরে যা আয় করেছিলেন তার কিছুই তিনি নিজের জন্য সঞ্চিত রাখেননি, সব কিছুই তিনি দান করে গেছিলেন | মানবতাই ছিলো তাঁর জীবনের শেষ কথা | তাইতো, সবাইকে তিনি মিলে মিশে থাকার পরামর্শ দিয়ে গেছিলেন বার বার |

জীবনের শেষদিন পর্যন্ত শিক্ষামূলক কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন | তাঁর অবদান, কোনো ভারতবাসী কোনোদিনই ভুলতে পারবেনা | তিনি আজও আমাদের প্রত্যেকের মনের গভীরে, অমর হয়ে আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন |


আশা করি তুমি “APJ Abdul Kalam Biography in Bengali”  পড়ে নিশ্চই অনেক কিছু সুন্দর তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছো | পোস্টটা ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই একটু Comment করে তোমার মতামত আমায় জানিও | তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাতে  ভীষনভাবে সাহায্য করে |

The post এ.পি.জে আব্দুল কালামের জীবনী | Apj Abdul Kalam Biography in Bengali appeared first on Ajob Rahasya.

Share the post

এ.পি.জে আব্দুল কালামের জীবনী | APJ Abdul Kalam Biography in Bengali

×

Subscribe to মস্তিষ্কের অবচেতন ভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় |how To Unlock Subconscious Mind Power In Bangla

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×