অনেকেই অনেক রকম ভাবে কাতলা মাছ রান্না করে থাকেন। তবে অনুরোধ রইল আজকে আমাদের শেয়ার করা কাতলা মাছের রেসিটিটি আপনারা একবার হলেও চেষ্টা করবেন। খেতে খুবই সুস্বাধু লাগবে এবং আজকে আমাদের শেয়ার করা সেই রেসিপিটি হলো কাতলা মাছের রেজালা। চলুন কাতলা মাছের রেজালা রেসিপিটি শুরু করা যাক।
Related Articles
কাতলা মাছের রেজালা তৈরিতে যা যা লাগবে
কাতলা মাছের টুকরো, কাঁচা মরিচ, আদা, রসূন, পেয়াজ, কাজু বাদাম, চারমগজ (Watermelon seed), পোস্তদানা (Poppy seed), সয়াবিন তেল, তেজপাতা, শুকনো মরিচ, গোটা গোল মরিচ, মৌরি, টক দই, কেউড়া জল, ধনিয়ার গুড়া, জিরার গুড়া এবং লবন।
উপাদান প্রস্তুতি
সর্বপ্রথম আমরা কাতলা মাছের টুকরো গুলোকে একটু মেরিনেট করে নিবো। আর রান্নার সময় আমাদের তিনটি পেষ্ট এর প্রয়োজন পড়বে। তাই আমরা এক এক করে সবগুলো পেষ্ট প্রথমে তৈরি করে নিবো।
কাতলা মাছ মেরিনেশন: কাতলা মাছের রেজালা তৈরির জন্য আমরা ৫/৬ টুকরো কাতলা মাছ নিয়ে নিবো। রেজালা তৈরির আগে আমাদের কাতলা মছের টুকরোগুলোকে একবার মেরিনেট করে নিতে হবে। কাতলা মাছ গুলো মেরিনেশনের জন্য আমাদের বেশি কিছুর প্রয়োজন পড়বে না। মাছের টুকরো গুলোর সাথে সামান্য লবন মিশিয়ে কিছুক্ষন রেখে দিলেই চলবে।
এক্ষেত্রে একটি ছোট টিপস হলো, মেরিনেশনের সময় আপনারা চাইলে সামান্য লেবুর রসও ব্যবহার করতে পারেন। তবে আমরা এই রেসিপিতে যেহেতু টক দই ব্যবহার করবো, তাই আমাদের এই রেসিপির ক্ষেত্রে লেবু না দিলেও কোন সমস্যা হবে না।
প্রথম পেষ্ট তৈরি: এই পেস্টটি তৈরির জন্য আমাদের লাগবে ৭/৮ টা কাঁচা মরিচ, ১০/১২ টা রসূনের কোয়া এবং ছোট একটি আদা। এবার আমরা তিনটি উপাদান একত্রে ব্লেন্ডার পাত্রে সামান্য পানির সাহায্যে ব্লেন্ড করে নিবো। এতে করে রেডি হয়ে গেল আমাদের প্রথম পেস্টটি।
দ্বিতীয় পেষ্ট তৈরি: এই পেষ্টটি তৈরি করার জন্য আমাদের লাগবে তিনটি মিডিয়াম সাইজের পেয়াজ। পেয়াজ গুলোকে প্রথমে একটি ছুরির সাহায্যে পাতলা স্লাইস করে কেটে নিবো।
তারপর ৫/৬ কাপ পানি নিয়ে চুলায় একটি কড়াই বসিয়ে দিবো। পানিটা গরম হয়ে আসলে কড়াইতে স্লাইস করে কেটে নেওয়া পেয়াজগুলো দিয়ে দিবো এবং পেয়াজকুচি গুলো ভালোভাবে সেদ্ধ করে নিবো।
এক্ষেত্রে একটি ছোট টিপস হলো, পানি অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না। কারন পেয়াজগুলো সেদ্ধ করার সময় পেয়াজ থেকে কিছুটা পানি বের হবে। অতিরিক্ত পানি দিয়ে পেয়াজ কুচিগুলো সেদ্ধ করতে গেলে পেয়াজ সেদ্ধ হওয়ার পর পানি অবশিষ্ট থেকে যাবে এবং পরে স্টেইনারের সাহায্য পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। এভাবে কারলে কিছুটা সময় অপচয় হয়ে যাবে।
এবার পেয়াজগুলো সেদ্ধ করার পর ভালোভাবে ঠান্ডা করে নিবো এবং সেদ্ধ করে নেওয়া এই পেয়াজ কুচিগুলো একটি ব্লেন্ডারের সাহায্যে ব্লেন্ড করে নিবো। আর এতেই রেডি হয়ে গেল আমাদের দ্বিতীয় পেষ্ট।
তৃতীয় পেষ্ট তৈরি: এই পেষ্টটি তৈরি করার জন্য আমাদের লাগবে ৮/১০ টা কাজু বাদাম, এক চা চামচ চারমগজ (Watermelon seed) এবং এক চা চামচ পোস্তদানা (Poppy seed)। এই তিনটি উপাদান একটি পাত্রে নিয়ে এবং পাত্রে সামান্য পানি দিয়ে কিছুক্ষন ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ব্লেন্ডারের সাহায্যে এই উপাদানগুলোকেও ব্লেন্ড করে নিতে হবে। আর এতেই আমাদের তৃতীয় পেষ্টটা রেডি হয়ে গেল। এবার আমরা চলে যাবো মূল রান্নায়।
আরও পড়ুন:
চটপটি রান্নার শর্টকাট রেসিপি | Special Chotpoti Recipe in Bengali
রমজান স্পেশাল হালিম রেসিপি | Haleem Recipe in Bengali
কাতলা মাছের রেজালা তৈরি
প্রথমে চুলায় একটি কড়াই বসিয়ে দিবো এবং কড়াইতে পর্যাপ্ত পরিমান তেল দিয়ে দিবো। রেজালা তৈরির আগে আমরা মাছগুলোকে তেলে একটু ভেজে নিবো। তেলে সামান্য লবন ছিটিয়ে দিবো যাতে ভাজার সময় মাছগুলো কড়াইতে লেগে না যায়। এবার উল্টেপাল্টে মাছগুলোকে তেলে ৬০% মতো ভেজে নিবো। অর্থাৎ মাছটা দু-এক মিনিট ভাজার পর মাছের রংটা পরিবর্তন হয়ে আসলে মাছগুলো কড়াই থেকে তুলে নিয়ে আলাদা একটি প্লেটে রাখবো।
অবশিষ্ট তেলটাতে আমরা আমাদের বাকি রান্নাটাও সেরে নিবো। তাই এই পর্যায়ে অবশিষ্ট তেলে আমরা দিয়ে দিবো ১/২ টা তেজপাতা, ৫টা শুকনো মরিচ, এক চা চামচ গোটা গোল মরিচ এবং আধা চা চামচ মৌরি। চুলার আঁচ Low তে রেখে এই মসলাটাকে ৩০/৩৫ সেকেন্ড ভুনে নিতে হবে।
মসলাটাকে একটু ভুনার পর যখন মসলাটা থেকে সুন্দর একটা সুগন্ধ বের হবে তখন দিয়ে দিবো আগে থেকে তৈরি করে রাখা পেয়াজের পেষ্ট। এবার পেয়াজের পেষ্ট আর মসলা ভালোভাবে মিশিয়ে আবারো কিছুক্ষন ভুনে নিবো। পেয়াজটা যেহেতু পেষ্ট করার আগে সেদ্ধ করে নিয়েছিলাম, সেহেতু বেশিক্ষন ভুনার প্রয়োজন পড়বে না। ২/৩ মিনিট ভুনলেই হয়ে যাবে।
পেয়াজের পেষ্টটাকে ভুনে নেওয়ার পর কড়াইতে কাঁচা মরিচ, রসূন এবং আদা দিয়ে যে প্রথম পেষ্টটা তৈরি করেছিলাম সেটা দিয়ে দিবো। একই ভাবে এই পেষ্টটাকেও সবকিছুর সাথে ভালেভাবে মিশিয়ে কিছুক্ষন ভুনে নিবো। তবে এক্ষেত্রে চুলার আঁচটা অবশ্যই Low তে রাখতে হবে।
আদা-রসূন এর কাঁচা গন্ধটা চলে গেলে কড়াইতে দিয়ে দিবো দেড় চা চামচ ধনিয়ার গুড়া, এক চা চামচ জিরার গুড়া, এবং স্বাদমতো লবন। এই মসলাগুলোকে একবার ভালোভাবে মিশিয়ে নেওয়ার পর দিয়ে দিবো আগে থেকে তৈরি করে রাখা কাজু বাদাম, চারমগজ এবং পোস্তদানার পেষ্ট। এবার সবকিছু আবারো ভালোভাবে মিশিয়ে কিছুক্ষন ভুনে নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে কাজু বাদামটা যেহেতু একদমই কাঁচা, সেহেতু ১০/১২ মিনিট ধরে ভুনতে হবে।
সবকিছু ভালোভাবে ভুনা হয়ে গেলে মসলা থেকে তেলটা ছেড়ে আসবে এবং এই পর্যায়ে ১৫০ গ্রাম মতো টক দই দিয়ে দিবো এবং ভালোভাবে মিশিয়ে নিবো। তারপর পরিমান মতো পানি দিয়ে দিবো। পানি দেওয়ার পর পুরো ঝুলটাকে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে এবং কিছুক্ষন রান্না করতে হবে। মোটামুটি ২/৩ মিনিট রান্নার পর ঝুলটা একটু ঘন হয়ে আসলে আগে থেকে ভেজে রাখা মাছগুলো কড়াইতে দিয়ে দিবো।
মাছের টুকরো গুলো যেহেতু ৬০% মতো ভেজে নিয়েছি সেহেতু বেশিক্ষন রান্নার প্রয়োজন পড়বে না। ৪/৫ মিনিট রান্নার পর দেখা যাবে মসলা থেকে তেলটা ছেড়ে আসছে এবং মাছটাও পুরোপুরি রান্না হয়ে গেছে। এতে করে আমাদের কাতলা মাছের রেজালা পুরোপুরি রেডি হয়ে গেল।
সবশেষে কাতলা মাছের রেজালার উপর সামান্য কেউড়া জল, গরম মসলা ও কয়েকটি কাঁচা মরিচের ফালি উপর থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে খাবার টেবিলে পরিবেশন করুন। আজকের এই কাতলা মাছের রেজালাটি আপনারা চাইলে পোলাও বা গরম ভাতের সাথে খেতে পারেন।
This post first appeared on বাংলা রেসিপি কালেকশন | Fmsrecipes, please read the originial post: here