খেলা এবং রাজনীতি:
রাজনীতির ময়দানে 'খেলা' ব্যাপারটা মোটেই নতুন কিছু নয়, বরং রাজনীতিতে বরাবরই 'খেলা' হয়ে থাকে, সেটা টাকার খেলাও হতে পারে বা জনগণের আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলাও হতে পারে।
আর দলবদল! সে তো যেকোনো খেলাতেই হয়ে থাকে। ছোটবেলায় পাড়ার ক্রিকেট খেলাতেও কেউ দলে থেকে ব্যাটিং করতে না পেলে দল বদলাতে চাইত। আবার পড়াশোনায় ভালো, এরকম কোনো তারকা প্রথমবার দলে এলে তাকে নিয়ে শুরুতে মাতামাতি হতো, অনেকে ধরেই নিত খেলাধুলো তো খুবই সোজা, তাই লেখাপড়ায় ভালো হলে, খেলাধূলায় না ভালো হওয়ার কি আছে! এরকম খেলাধূলার অনেক ব্যাপার রাজনীতিতে আগেও দেখা গেছে, আর বর্তমানে তো আরও বেশি করে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া খেলাধূলার মতো রাজনীতিতেও এখন বিনোদনটাই প্রধান হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর রাজনীতিকদের নিয়ে ফেসবুকে ট্রোল মিম শুরু হওয়ার পর থেকে তো দেশের কমেডিয়ানরা অস্তিত্ব সংকটে ভুগছেন।
যাইহোক 'খেলা' তো শুরু হয়ে গেছে কিন্তু কোনো খেলোয়াড়ই যদি না পছন্দ হয়?
তারজন্য রয়েছে
NOTA অপশন:
বর্তমানে EVM মেশিনে প্রদত্ত বিভিন্ন দলের প্রার্থীতালিকার একদম শেষে NOTA অপশন থাকে, যার পুরো কথা 'None of the Above' অর্থাৎ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীদের কাউকেই আপনার পছন্দ নয়।
NOTA এর ইতিহাস:
ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট ২০১৩ সালের ২৭ শে সেপ্টেম্বর, তাদের এক রায়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে জানায় যে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীদের কাউকেই পছন্দ না হলে জনগণ NOTA তে ভোট দিতে পারেন এবং সেজন্য EVM মেশিনে NOTA অপশন রাখতে হবে।
NOTA এর প্রতীক:
২০১৫ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর NOTA এর একটি প্রতীক প্রকাশ করা হয় যেটি হল, একটি ব্যালট পেপারের ওপর ক্রস চিহ্ন। গুজরাটের আমেদাবাদের 'ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডিজাইন' নামক সংস্থা এই চিহ্নটি ডিজাইন করেছে।
ভারতের কোথায় প্রথম NOTA এর ব্যবহার হয়েছিল:
২০১৩ সালে ছত্তিশগড়, মিজোরাম, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম EVM মেশিনে NOTA অপশন ব্যবহার হয়েছিল। প্রায় ১৫ লাখের বেশি মানুষ ওই বছর NOTA যে ভোট দিয়েছিলেন। যদিও মোট ভোটারদের নিরিখে NOTA যে ভোট দেওয়া ভোটারদের সংখ্যা ছিল ১.৫% এরও কম।
যদি NOTA তে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়ে ?
যদি আপনি ভেবে থাকেন যে, কোনো একটি এলাকায় NOTA তে বেশি ভোট পড়লে সেই এলাকায় প্রার্থী বদলে দিয়ে আবার নতুন করে নির্বাচন হবে, তাহলে আপনি খুব একটা ঠিক ভাবছেন না। NOTA ভোট বাদ দিয়ে বাকি ভোটের মধ্যে এলাকার যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন, তিনিই জয়লাভ করবেন। সুতরাং কার্যক্ষেত্রে ভোট না দেওয়া আর NOTA তে ভোট দেওয়া 'প্রায়' একই হল, হ্যাঁ NOTA তে ভোট দিলে আপনার হাতের আঙুলে কালিটা লাগবে এই যা।
কোনো কাজেই যখন লাগবে না, তখন NOTA তে ভোট দিয়ে লাভ কি ?
সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি পি. সত্যশিবমের মতে, নেতিবাচক ভোটদানের ফলে নির্বাচনের পদ্ধতিগত পরিবর্তন ঘটবে এবং রাজনৈতিক দলগুলো স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থী দিতে বাধ্য হবে। জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার যদি বিধিবদ্ধ অধিকার (Statutory Right) হয়, তাহলে অপছন্দের প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করাটাও মৌলিক অধিকার (Fundamental Right)।
৪৯ (o) এবং NOTA এর মধ্যে তফাৎ কি ?
NOTA আসার আগেও নেগেটিভ ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। সেক্ষেত্রে নির্বাচনী নিয়মের ৪৯(o) ধরা অনুযায়ী নেগেটিভ ভোট দেওয়ার কারণ ফর্ম-১৭ তে পূরণ করে প্রিসাইডিং অফিসারকে বিষয়টি জানাতে হতো। অর্থাৎ আগে কেউ নেগেটিভ ভোট দিলে বিষয়টি আর গোপন থাকতো না। কিন্তু NOTA আসার পর ওই নিয়মটি উঠে যায়। NOTA এর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র NOTA বোতাম টিপলেই হবে এবং NOTA এ ভোটদানকারীর পরিচয় গোপনই থাকবে।
কোন কোন ক্ষেত্রে পুনঃনির্বাচন হতে পারে?
সমগ্র রাজ্যে পুনঃনির্বাচন হতে পারে যদি
- রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবনতি ঘটে
- কোনো রাজনৈতিক দলই সংখ্যাগরিষ্টতা প্রমান করতে না পারে।
- সংবিধানে উল্লিখিত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের নির্দেশিকা মেনে না চলে।
একটি নির্দিষ্ট এলাকার আসনে পুনঃনির্বাচন ঘটতে পারে যদি
- যদি একই প্রার্থী একাধিক আসন থেকে জয়লাভ করেন।
- নির্বাচিত প্রার্থী যদি মারা যান।
- নির্বাচিত প্রার্থী যদি পদত্যাগ করেন।