'হ্যান্ড স্যানিটাইজার' নামটা কয়েকমাস আগেও অনেকের কাছে অপরিচিত ছিল, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু এই নামটা সকলের কাছে পরিচিত তাই নয়, অনেকে এটা ইতিমধ্যেই ব্যবহার করছেন। এমনকি সাবানের চেয়েও বর্তমানে এর চাহিদা তুঙ্গে। তবে সত্যিই কি হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে সাবানেই চেয়েও এর কার্যকারিতা বেশি? নাকি নিছকই এটা একটা মিথ হয়ে দাঁড়িয়েছে ? তাই হ্যান্ড স্যানিটাইজার সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার কি ?
হ্যান্ড স্যানিটাইজার একধরণের তরল, যা সাবান-জলের বিকল্প জীবাণুনাশক হিসাবে কাজ করে।
এটি মূলত দুই প্রকার : অ্যালকোহল সমৃদ্ধ (Alcohol based) ও নন অ্যালকোহল।
- নন অ্যালকোহলিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার: এর প্রধান উপাদান বেঞ্জালকোনিয়াম ক্লোরাইড, এই উপাদান বিষাক্ত নয় (non toxic) ও আগুন ধরায় না। তবে পরীক্ষায় দেখা গেছে নন অ্যালকোহলিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার জীবাণু ধ্বংস করতে খুব একটা কার্যকর হয় না।
- অ্যালকোহল সমৃদ্ধ (Alcohol based) হ্যান্ড স্যানিটাইজার : স্বাস্থ্যকর্মীসহ বিশ্বের প্রায় সব মানুষই জীবাণুনাশক হিসাবে অ্যালকোহল সমৃদ্ধ হ্যান্ড স্যানিটাইজারকেই বেঁচে নেন। এতে আইসোপ্রোপানল, এন-প্রোপানল, ইথানল বা এগুলোর যেকোনো দুটি উপাদানের সংমিশ্রণ থাকে। সাধারণত এই ধরণের হ্যান্ড স্যানিটাইজার জীবাণু ধ্বংসের জন্য ৬০-৯৫% অ্যালকোহল সমৃদ্ধ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে ৭০% অ্যালকোহল সমৃদ্ধ (প্রধানত ইথাইল অ্যালকোহল) হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ৩০ সেকেন্ড অবধি হাত পরিষ্কার করলে অন্তত ৯৯.৯% পর্যন্ত জীবাণু ধ্বংস হয়।
অ্যালকোহল সমৃদ্ধ হ্যান্ডস্যানিটাইজারের অসুবিধা / ক্ষতিকারক দিক :
- অ্যালকোহল সাধারণত দাহ্য পদার্থ হওয়ায় অ্যালকোহল সমৃদ্ধ হ্যান্ডস্যানিটাইজার আগুনের সংস্পর্শে আসলে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে।
- অ্যালকোহল ছাড়াও হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ট্রাইক্লোসান (TCS) নামে আরেকটি উপাদান থাকে যা একটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা সাবান, টুথপেস্ট, ডিওডোরেন্ট ও ত্বকের ক্রিম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি জীবাণু ধ্বংসে কার্যকর কিন্তু প্রতিদিন অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
- ট্রাইক্লোসান (TCS) ত্বকের গভীরে গিয়ে রক্তে মিশে অ্যালাৰ্জির প্রাদুর্ভাব ঘটাতে পারে।
- অতিরিক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহারের ফলে ত্বকের উপরিভাগ শুস্ক হয়ে যেতে পারে এবং সূর্যের আলোতে ত্বক ঝলসে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে।
- অতিরিক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহারের ফলে ত্বকের উপরিভাগ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং সূর্যের আলোতে ত্বক ঝলসে যাওয়ার বা চুলকানির অনুভূতি হতে পারে।
- ভুল করে স্যানিটাইজার মুখে দিলে শিশুদের শরীরে ফুড পয়জনিং হতে পারে।
- স্যানিটাইজারে থাকা রাসায়নিক শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় বাধা দিতে পারে।
- স্যানিটাইজার বেশি ব্যবহার করলে শরীরে হরমোনের তারতম্য দেখা দিতে পারে।
- হাতের ময়লা বা খাওয়ার পর হাতের তৈলাক্ত ভাব হ্যান্ড স্যানিটাইজার পরিষ্কার করতে পারে না। কিন্তু হাতের ময়লা বা খাওয়ার পর হাতের তৈলাক্ত ভাব ভালোভাবে পরিষ্কার না করে সেই হাত মুখে বা চোখে দিলে সংক্রমণ ঘটতে পারে।
হাতের জীবাণুনাশের ক্ষেত্রে সাবান-জল ও হ্যান্ডস্যানিটাইজারের মধ্যে কোনটি বেশি ভালো ?
হাতের ময়লা বা তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সবচেয়ে ভালো বিজ্ঞানসম্মত উপায় হলো সাবান ও জল দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ভালোভাবে হাত ধোয়া। হাতে ময়লা বা তৈলাক্ত ভাব থাকলে হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করলেও কিন্তু ভালোভাবে জীবাণু নাশ হয় না।তাই ভালোভাবে সাবান-জল দিয়ে হাত পরিষ্কার করাটাই আগে দরকার, নইলে শুধু করোনা ভাইরাস কেন, অন্য জীবাণু দ্বারা রোগাক্রান্ত হবারও সম্ভাবনা থাকে। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সবচেয়ে বড়ো সুবিধা হলো এটাকে পকেটে নিয়েও যেখানে খুশি যাওয়া যায়। তাই নিতান্তই সাবান-জল না পেলে দ্বিতীয় অপশন হিসাবে জীবাণুনাশকরূপে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
মূলত স্বাস্থ্যকর্মী ও বাইরে বিভিন্নজনের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে এমন মানুষদেরই সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়ার পর বা সাবান-জল না পেলে শুধু হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা জরুরি। । বাড়ির মধ্যে থাকলে শুধু সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুলেই যথেষ্ট।
হাত পরিষ্কারের নিয়ম সংক্রান্ত Centers for Disease Control and Prevention (CDC) এর গাইডলাইনগুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন