Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

সোনারগাঁওয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর

সোনারগাঁওয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন লোক কারুশিল্প জাদুঘর

বাংলাদেশের প্রাচীন রাজধানী এই সোনারগাঁওয়ে ছিলো আমাদের বাণিজ্যিক ঐতিহ্যের স্মারক মসলিন শিল্প যার রাজধানীও ছিল এই সোনারগাঁও। আমার এই চ্যানেলে আমি এর আগে আপনাদেরকে সোনারগাঁওয়ে বাংলার স্বাধীন সুলতানদের রাজধানী দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। এবং এর পরের ভিডিওতে আপনাদেরকে সোনারগাঁওয়ের পানাম নগরী দেখিয়েছিলাম।

মানে এর আগের ভিডিও দুটিতে আমাদের প্রাচীন সৌর্য্য বীর্যের বন্দনা করেছিলাম। আজকের ভিডিওতে সোনারগাঁওয়ের আর একটি নিয়ামক যোগ হবে। তা হলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কর্মযজ্ঞকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা আমাদের নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতির গৌরবময় ঐতির্য্য। হ্যাঁ বন্ধুরা। সোনারগাঁওয়ে সংরক্ষিত রয়েছে আমাদের ঐতির্যবাহী লোকজ কারুশিল্পের অনেক অনেক স্মারক-উপকরণ - শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি মহতী উদ্যোগের ফসল, একটি প্রতিষ্ঠান - যার নাম শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর।

দর্শক, আপনার মনে কি সাধ জাগে না জানতে? হাজার বছর আগে আমাদের কৃষ্টি সংস্কৃতি কেমন ছিল, আমাদের লোকরা কি কি কাজ করে জীবন নির্বাহ করতো? তাদের ঘরগুলো কেমন ছিল? কি কি উপকরণ দিয়ে তারা তাদের ঘরগুলোকে সাজাতো? কৃষি কাজে তারা কি কি হাতিয়ার ব্যবহার করতো? সে যুগে একে ওপরের  প্রাধান্য বিস্তার করার জন্য কি কি অস্ত্র ব্যবহার করতো ? তাদের আনন্দ বিনোদন বা উপাসনার ধরণ ই বা কেমন ছিল?

এসবের উত্তরই আপনি পাবেন সোনারগাঁওয়ের জাদুঘর পরিদর্শন করলে।  তাহলে আসুন আলোচনা করি,

জাদুঘরটি কেন দেখবেন? এখানে কি কি বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে

আপনার জন্য প্রদর্শনীতে থাকবে ঘরের দেয়ালে ঝুলানোর নানানরকম মনকাড়া এন্টিক যা প্রথম দেখাতেই আপনার পছন্দ হয়ে যাবে। ওই দোকান গুলোতে একবার চোখ বুলালেই আপনার মবে হবে কারু শিল্পের এই সমস্ত সামগ্রীগুলোর চাহিদা আজ ফুরিয়ে যায়নি।

মূলত সোনারগাঁওয়ের জাদুঘর ও এর ক্যাম্পাসটি শুধু আপনাকে আনন্দই দেবে না , এটি আপনাকে নিয়ে যাবে আমাদের প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সৌন্দের্য্যের এক মিলন মেলায় যেখানে আপনি আপনি খুঁজে নিতে পারবেন আপনার কয়েক পুরুষ আগেকার আপন লোকদের কৃষি সংকৃতিকে।

আর এই জাদুঘর ভ্রমণেই অনেক অনেক আলোক চিত্র, ঐতিহাসিক উপকরণ ও আপনি জেনে নিতে পারবেন সুলতানি ও ব্রিটিশ যুগের সোনারগাঁওয়ের হারানো ঐতিহ্যের পুরোনো কাহিনী। সোনারগাঁওয়ের জাদুঘরে আপনি আরো দেখবেন সেকালের কাঠের তৈরী বাহারি পালঙ্ক, শক্ত ও সুশোভিত সিন্দুক, প্রদর্শনী সামগ্রী দেখা ছাড়াও আপনি জাদুঘরে পাশেই সুসজ্জিত পরিপাটি দোকান হতে কিনতে আপনার পছন্দ সই জামদানি সহ অন্নান্ন গৃহ সামগ্রী।

দৃষ্টিনন্দন আধুনিক জাদুঘর ভবনটিতে পুরো তিনতলার সর্বত্রই রয়েছে হাতে আঁকা মনোরম চিত্র, কাঠ ও ধাতু দিয়ে বানানো চোখ জুড়ানো পক্ষ পাখালি, জীব জন্তু  ও মানুষের মূর্তি, দেয়ালচিত্র, পুরোনো যুগের বাড়ি ও সাধারণ মানুষের জীবন আলেখ্য দিয়ে সাজানো পরিপাটি নানান সব আয়োজন।     

সোনারগাঁওয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

সোনারগাঁওকে ঘিরে আমরা আমরা যা জানি, প্রাচীন কাল থেকেই সোনারগাঁও ছিল কয়েকটি  হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম শাসকদের রাজধানী। তবে এই প্রাচীন রাজধানীটি মধ্য যুগে সারা বিশ্বে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ব্যবসা বানিজ্যে সুনাম কুড়ালেও পুরো পৃথিবীতে এর প্রসিদ্ধি ছড়িয়ে পড়ে মসলিন বস্ত্র শিল্পকে কেন্দ্র করে। স্বাধীন সুলতানি আমল ও ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির বদৌলতে প্রথমে সোনারগাঁও ও পরে পানাম নগর নামে সোনারগাঁওয়ের প্রসিদ্ধি ছিল সারা বিশ্ব জুড়ে। এ কারণে অনেক অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, উন্নত রাস্তাঘাট, টলটলে সরোবর, আধুনিক আবাসন ইত্যাদি ইত্যাদি অবকাঠামো গড়ে উঠেছিল এই সোনারগাঁওয়ে।

তবে মুঘল সুবেদার ইসলাম খানের সময়ে ১৬০৮ সালে ঢাকায় রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পর সোনারগাঁয়ের গুরুত্ব ম্লান হয়ে যায়। তাছাড়া, কালের পরিক্রমায় এবং বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় গোড়ামির ফসল হিন্দু মুসলিম রায়টের কারণে এক কালের সোনারগাঁও তার গৌরবময় ঐতির্যকে হারিয়ে ফেলে। পানাম নগর ছিল সেকালের উন্নত একটি শহর - যেখানে বাংলার সবচাইতে ধনী বণিকরা বসবাস করতো। এই পানাম নগরীতে এখনো বায়ান্নটি ধ্বংসপ্রায় অট্টালিকা সেকালের প্রাচুর্যকে আজও মনে করিয়ে দেয়। শুধু কি ওই বায়ান্নটি অট্টালিকাই ছিল সোনারগাঁয়ের প্রাচুর্যের বাহক? না আরো ছিল অনেক প্রতিষ্ঠান, যেগুলো সেকালের রাজা, সুলতান ও সুবেদারদের প্রশসানিক, সামরিক, আবাসিক ও বানিজ্যিক কর্মকান্ডে ব্যাবহারিত হতো। এগুলোর অধিকাংশ ধন্যপ্রাপ্ত হলেও এখনো টিকে আছে ঈশা খাঁর ছেলে মুসা খাঁর রাজবাড়ী - যাকে আমরা বড় সর্দার বাড়ি নামে জানি।

কেন এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে?

ঢাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে প্রায় পূর্ব দিকে  ১ কিলোমিটার অভ্যন্তরে এই জাদুঘরটি এবং ধনী বণিকদের শহর পানামনগরের অবস্থান। সোনারগাঁ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার মোট চারটি উদ্দেশ্য রয়েছে; সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন এবং বাংলার  হারিয়ে যাওয়া লোকজ অতিহ্যবাহী কারুশিল্পসমূহের পুনরুদ্ধার। বাংলাদেশের অবহেলিত গ্রাম-বাংলার নিরক্ষর অথচ দক্ষ শিল্পীদের হস্তশিল্প, চিত্রকলা, জনজীবনের নিত্য ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রীর সংগ্রহ, প্রদর্শন ও সংরক্ষণের উদ্দেশ্যেই এই জাদুঘরের সৃষ্টি।

জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

পানাম নগর বাংলাদেশ সরকারের  ডিপার্টমেন্ট অফ আর্কিওলজির আওতাধীন থাকলেও সোনারগাঁওয়ের বাকি অংশটি বর্তমানে  Bangladesh Folk Art & Craft Foundation এর আওতাধীন রয়েছে। Bangladesh Folk Art & Craft Foundation এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন শিল্পাচার্য জয়নাল আবেদীন, বড় সর্দার বাড়ির সামনেই যার ১৯৭৬ সালে চিত্রিত সংগ্রাম এর ভাস্কর্য রয়েছে। এই ভাস্কর্যটিতে পরিশ্রান্ত  একজোড়া বলদের কাঠের তৈরী মালবাহী একটি garike টেনে নিতে বলদের মালিকও পেছন থেকে গাড়িটিকে ঠেলে দিয়ে  বলদ দুটিকে সাহার্য করছে। মূলত এই ভাস্কর্যটি শাশ্বত বাংলার মেহনতি মানুষের জীবন সংগ্রামের চিত্রটিকেই ফুটিয়ে তুলেছে।

Bangladesh Folk Art & Craft Foundation পরিচালিত জাদুঘরটির বর্তমান নাম - শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারু শিল্প জাদুঘর - যাকে আমরা সবাই সাধারণভাবে সোনারগাঁও জাদুঘর হিসেবে জানি। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ১২ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁয়ের ঐতিহাসিক পানাম নগরীর একটি পুরনো বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন কর্তৃক  পরিচালিত   এই জাদুঘরটি। তবে উন্মুক্ত পরিবেশে জাদুঘর সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে একটি আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত নতুন ভবন ও কারু শিল্পের উম্মুক্ত কয়েকটি শাখা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ উদ্দেশ্যে পুরাতন ভবনের সকল প্রদর্শনী সামগ্রী সাময়িক সময়ের জন্য বর্তমানকার সর্দার বাড়িতে স্থানান্তর করা হয়।  ১৯৮১ সালে ১৫০ একর জমির উপর উম্মুক্ত জাদুঘরটির কাজ শেষ হয় এবং সর্দার বাড়ি হতে কারু প্রদর্শনীর সকল সামগ্রী নতুন জাদুঘরে স্থানান্তর করা হয়।   

জাদুঘরের কি কি শাখা রয়েছে এবং কোন কোন শাখায় আপনি কি কি দেখতে পাবেন

এই জাদুগরের প্রদান আকর্ষণ দুটি, প্রথমটি হলো লোকজ স্থাপত্য কলা ব্যবহার করে নির্মিত আধুনিক তিন তলা ভবন - যেটির নাম  জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘর, আর দ্বিতীয়টি হলো বড় সর্দার বাড়ি। সোনারগাঁও জাদুঘরে আরো রয়েছে একটি পাঠাগার, ডকুমেন্টেশন সেন্টার, সেমিনার হল, কয়েকটি ক্যান্টিন, কারুমঞ্চ, গ্রামীণ পরিবেশের মতো করে তৈরী করা কয়েকটি ছায়াঘেরা উদ্যান ও বিভিন্ন রকমের বৃক্ষসজ্জিত সবুজ শ্যামল বনবনানী এবং টলটলে স্বচ্ছ গভীর পানির প্রশ্বস্ত  লেক। চাইলে আপনি পরিবার সহ সময় কাটাতে পারেন ছায়াময় বাগানগুলোতে, মাছ শিকার করতে পারেন টলটলে লেকের সরোবরে নাম মাত্র দর্শনীর বিনিময়ে। আর লেকের পাড়ে নির্দিষ্ট পরিমান  অর্থের বিনিময়ে আপনি পেয়ে যাবেন নৌকা ভ্রমণের সুবিধা - আপনার পুরো পরিবার নিয়ে। সোনারগাঁয়ের এই জাদুঘর চত্বরে আপনার সময়টি কেটে যাবে আনন্দে, ব্যাস্ততায় উল্লাস মুখর হয়ে।

সর্দার বাড়ি

জাদুঘরের আধুনিক ভবনটি পুরোপুরি স্থাপনের আগ পর্যন্ত ১৯৮০ সাল হতে এই সর্দার বাড়ি জাদুগর হিসেবে ব্যবহার হতো। মূলত সোনারগাঁও জাদুঘর কমপ্লেক্সটি একটি তিনতলা হস্তশিল্প জাদুঘর, পার্ক, লেক পাঠাগার, কারুপণ্য তৈরী প্রদর্শন ও বিক্রির দোকান, রেস্টুরেন্ট এবং হাজার বছরের ঔপনিবেশিক আমলের কিছু স্থাপনা নিয়ে গঠিত।

এই বড় সর্দার বাড়ি তৈরির সময় ও মালিকানা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।  কেও কেউ বলেন, ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির যুগে ১৯০১ সালে তথা বাংলা ১৩০১ সনে  ঐশর্যকান্তি সাহা সর্দার নামে একজন জমিদার এই সর্দার বাড়িতে নির্মাণ করেন ।  তবে যেহেতু উক্ত ভবনের সাথে লাগোয়া মুসা খাঁর স্মরণে নির্মিত একটি গেইটও সেখানে  রয়েছে, - , সে কারণে অনেক ঐতিহাসিকরা মনে করে - এই ভবনটি মুসা খানই নির্মাণ করেছিলে, যা পরে ১৯০১ সালে ঐশর্যকান্তি সাহা সর্দার এটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন আনেন। তবে পানাম নগরের অন্নান্ন ভবনের মতো এই বড় সর্দার বাড়িটিও এতদিনে ধ্বংস হয়ে যেত - যদি না এটিকে বাংলাদেশ সরকার মেরামত করে নতুন রূপ দিতো। ১৯৮০ সালে এই সর্দার বাড়িটিকেই কারুশিল্প জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৯৬ সালের অক্টবর মাসে  জাদুঘরের নতুন তিনতলা  ভবনের কাজ শেষ হওয়াতে জাদুঘরের সকল প্রদর্শনীর উপকরণ সর্দার বাড়ি হতে নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হয়। এবং পরবর্তী কালে ২০২১ সালে একটি কোরিয়ান কোম্পানির বদৌলতে বড় সর্দার বাড়ি তার হারানো রূপ ফিরে পায় যা আজ সোনারগাঁওয়ের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে দর্শক নন্দিত একটি স্থাপনা হিসেবে সোনারগাঁওয়ের গৌরবমন্ডিত স্থাপনা হয়ে শোভা পাচ্ছে।   

কোরিয়ান কোম্পানি কর্তৃক ২০২১ সালে বড় সর্দার বাড়ির পূর্বরূপ পুনরুদ্ধার করা হলে এই ভবনটি সোনারগাঁও জাদুঘরের একটি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান হয়ে দাঁড়ায়।  বলতে গেলে সোনারগাঁওয়ের সবচাইতে বড় আকর্ষণই হলো বড় সর্দার বাড়ি। সে যাক বড় সর্দার বাড়ির ভেতর ও বাহিরের সুন্দর সুন্দর ছবি সম্বলিত গল্প আমরা আর একদিন আলোচনা করবো। আসুন আজ জাদুঘরের গল্পে আসি এবং জাদুঘরে আমরা কি কি দেখতে পাবো তাই আলোচনা করি।

সোনারগাঁও জাদিঘরে আপনি কি কি দেখতে পাবেন তার বিশদ বর্ণনা   

জলকেন্দ্রিক জীবিকার উপকরণ   

আধুনিক এই যুগে স্থলপথ যেমন সমৃদ্ধ, সেকালের নৌপথই ছিল যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। সোনারগাঁওয়ের জাদুঘরের তাকগুলোতে সাজানো রয়েছে রংবেরঙের কাঠের তৈরী বাহারি বাহারি সব  নৌকার model, মাঝিমাল্লাদের ব্যাবহারিত দ্রব্য সামগ্রী, মৎস ধরার নানান উপকরণ সহ নদী নালা ও মাঠে ঘটে খেতে খাওয়া  জন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অনেক অনেক উপকরণ।

গৃহস্থালি আসবাবপত্র 

শুধু কি তাই? এই জাদুঘরে আপনি দেখতে পাবেন গৃহ কাজে ব্যাস্ত গ্রামীণ বধূদের মনকাড়া মডেল, দেখবেন তাদের ব্যাবহারিত পিতল ও রুপার তৈরী মন ভোলানো সুন্দর সুন্দর অলংকার, পরিধেয় বস্ত্রের সমারোহ আর দেখবেন কাসা ও পিতল  দিয়ে তৈরী নৃত্যরতা নারীদের ছোট বড় নানান ঢঙের মডেল।

পূজা অর্চনা ও বাদ্য যন্ত্র

সেকালের সমাজগুলো ছিল হিন্দু সংকৃতি কেন্দ্রিক - যে কারণে এই জাদুঘরে স্থান পেয়েছে হিন্দু ধর্মের অনেক অনেক দেবতাদের মূর্তি - যাদের পূজা হতো সেকালের জমিদার বাড়িতে বা গ্রামের কোনো মন্দিরে। আর পূজার সামগ্রীও বা বাদ পড়বে কেন এই জাদুঘরে। দেখবেন দেবী বন্দনা সংগীতের সহায়ক বিভিন্ন প্রকার বাদ্য যন্ত্র - যেমন ঢাক, তবলা, সারিন্দা সহ আরো অনেক বাদ্য যন্ত্র।

কাঠ ও ধাতব কারুকার্য

গ্যালারিগুলোতে কাঠ খোদাই, কারুশিল্প, পটচিত্র ও মুখোশ, আদিবাসী জীবনভিত্তিক নিদর্শন, গ্রামীণ লোকজীবনের পরিবেশ, লোকজ বাদ্যযন্ত্র, গ্রাম্য মানুষের পরিধেয় বস্ত্র ও কাঠের তৈরী খড়ম, ও পোড়ামাটির আসবাবপত্রের নিদর্শন, তামা-কাসা-পিতলের গৃহস্থালি সামগ্রীর নিদর্শন, লোহার তৈরি কারুকার্য খচিত যুদ্ধাস্ত্র সরঞ্জাম,, লোকজ সংস্কৃতির পরিচয়বাহী পুস্প খচিত অলংকারদির মডেল, সহ রয়েছে বহু কিছু দেখার মতো দ্রব্বাদী।  এখানে জাদুঘরের অংশ হিসেবে রয়েছে খোলা চত্বরে বিভিন্ন স্টলে কারুপণ্য তৈরী, প্রদর্শন ও বিক্রির ব্যবস্থা।

গৃহ নির্মাণ কলাকৌশল

আপনি কি জানেন? প্রাচীন যুগে ধনী লোকরা তাদের ঘরের বেড়া কি দিয়ে তৈরী করতো?  আধুনিক কালে আমরা আমাদের অট্টালিকার দরজা গুলো এখনো কাঠ দিয়ে তৈরী করলেও ঘরের বেড়া নির্মাণ করি কংক্রিটের দেয়াল দিয়ে। কিন্তু আগের যুগে ধনী লোকরা তাদের ঘরের বেড়া তৈরী করতো কাঠ দিয়ে। তাও শিল্পীর হাতুড়ি বাটাল দিয়ে নকশা করে করে। বাড়ির গেইট, ঘরের দরজা ও কাঠের ওই বেড়াগুলো ছিল সেকালের আভিজাত্যের প্রতীক। ঐতির্যের ওই আভিজাত্যের স্মারক নকশা খচিত গেইট, দরজা ও বেড়াগুলোর মডেলও আপনি দেখতে পাবেন সোনারগাঁওয়ের জাদুঘরের দেয়ালে স্থাপিত তাকগুলোতে।

কিভাবে যাবেন?

বাংলাদেশের যেদিক হতেই আসেন, আপনাকে প্রথমে  আসতে  হবে ঢাকা চট্টগ্রাম রোডের পূর্ব পার্শে নারায়ণগঞ্জের মোগরাপাড়া বাস স্টেশনে। সেখান থেকে হেটে অথবা রিক্সায় করে আপনি খুব সহজেই পৌঁছে যাবেন সোনারগাঁওয়ের জাদুঘর চত্বরে। পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ আপনাকে জাদুঘর চত্বরে প্রবেশ করতে দেবে। আর যদি সর্দার বাড়িটি দেখতে চান, তা হলে আপনাকে আরো একশত টাকা গুনতে হবে। চাইলে পরিবার নিয়ে একটি রাত্রিও কাটাতে পারেন আশেপাশের হোটেলে। খারাপ লাগবে না নিশ্চয়।

বিশ্ব কারু নগর সনদ প্রাপ্তি World Craft City Award Recognition

সালের অক্টোবর মাসে  বিশ্ব কারু শিল্প কাউন্সিল ২০১৯  সনে সোনারগাঁওকে বিশ্ব কারু নগর যে ইংরেজিতে ওয়ার্ল্ড ক্রাফট সিটি উপাধিতে ভূষিত হয়। উপাধিতে ভূষিত করেছে। এরকমের কারু নগর বিশ্বে আরো ছয়টি  রয়েছে। ভারতের মামল্লাপুর পেয়েছে পাথরের উপর কারুশিল্পের উৎকর্ষতার জন্য, চীনের পূক্সিন শহরটি পেয়েছে তার মুক্তার কারুপণ্যের জন্য, থাইল্যান্ডের শাখন নাখন শহরটি পেয়েছে তার কারুশিল্পে প্রাকৃতিক নীল রঙের ব্যবহার কৌশলের উৎকর্ষতার কারণে, ডেনমার্কের বোর্নহাম শহর পেয়েছে সিরামিকের কারু শিল্পের কারণে,



This post first appeared on Prof. Dr. Md. Jafar Ullah, please read the originial post: here

Share the post

সোনারগাঁওয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর

×

Subscribe to Prof. Dr. Md. Jafar Ullah

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×