Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

পেঁয়াজ কান্ড

রামায়ণে বানরকুলের রাজা হনুমান লেজে আগুন ধরাইয়া যেমন রাবণ রাজ্য জ্বালাইয়া দিয়াছিল, তেমনি পেঁয়াজের আগুনে জ্বলিতেছে সমগ্র বাংলাদেশ। কোথায় নেই পেঁয়াজের আলোচনা, পাড়ার গলির মুদির দোকান হইতে শুরু করিয়া বনেদি লোকের শয়নকক্ষ,দূতাবাস,সচিবালয় পর্যন্ত পেঁয়াজের আলোচনা চলিতেছে। বয়স্ক মুরব্বীরা আলোচনা করিতেছে যে তাঁরা বাপের জন্মেও ২৬০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনিয়া খায় নাই। কয়দিন আগে যখন একটি পেঁয়াজের খরিদ মূল্য একটি ডিমের সমান হইলো তখন একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হইল,‘ আপনি কি পেঁয়াজ দিয়া ডিম খাইবেন নাকি ডিম দিয়া পেঁয়াজ ?’। পেঁয়াজ নিয়ে সমগ্র জাতি আজ চিন্তিত। যে পেয়াঁজ রসূই ঘরের এক কোনায় অবহেলায় পড়িয়া থাকিত, সেই পেয়াঁজই এখন সর্বেসর্ব্বা-তার ঝাঁঝে সবার ত্রাহি ত্রাহি  অবস্থা। আগে যিনি এক সাথে দুই-তিন কেজি পেঁয়াজ কিনিতেন, তিনিই এখন অনেক সময় লইয়া বাছিয়া বাছিয়া নাদুস-নুদুস দেখিয়া হাফ কিলো পেঁয়াজ কিনিতেছেন। বাসায় আসিয়া বউকে বেশ বড় রকম ঝাড়ি মারিয়া বলিতেছেন,‘এই পেঁয়াজ দিয়াই সারা মাস কভার করিতে হইবে’ বউটি তখন জটিল ক্যালকুলেশন করিতে বসিল-কি ভাবে একটি পেয়াজে এক সপ্তাহ পার করিবে? অংক পরীক্ষার আগেও এতো পরিশ্রম করিতে হয় নাই বউটির ।

একেকজন আড়ৎদার প্রচুর পরিমানে পেঁয়াজ মওজুদ করিয়া, সিন্ডিকেট করিয়া আংগুল ফুলিয়া কলা গাছ হইয়া গিয়াছে। আপনি সারা জীবন পরিশ্রম করিয়া যা কামাইবেন, একজন অসাধু ব্যবসায়ী মাত্র কয়েক মাসে তার বহুগুন কামাইয়া আমাদের দিকে তাকাইয়া মুচকি মুচকি হাসিতেছেন। এই হাসির যৎসামান্য পাড়ার মুদির দোকানীর মুখে পর্যন্ত আসিয়া গিয়াছে। ভাবটা এমন যেন-দেখলেন, কি সুন্দর একটা ল্যাং মারিলাম।

কয়েকদিন আগে পাশের বাড়ীর এক ভাবীকে দেখিলাম, পেঁয়াজ কলি (পাতা) কিনিয়া বেশ আনন্দের সাথে বাড়ি ফিরিতেছেন,পেয়াঁজ কলির সাথে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পেঁয়াজ পাওয়ার সেকি আনন্দ!
ফেইসবুকের ব্যবহারকারীরা রাতের ঘুম হারাম করিয়া পেঁয়াজ বিষয়ক স্টেটাস দিয়া যাইতেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের দমন করিবার জন্য পেয়াঁজ বর্জন করার হুমকি দিতেছেন। কমেন্টে লিখিতেছেন-গত তিন সপ্তাহ ধরিয়া পেঁয়াজ কিনিতেছেন না । পেঁয়াজ ছাড়াও খাবার যথেষ্ট উপাদেয়। অনলাইনে পেয়াজের ছবি এখন ভাইরাল। বেশ কয়েকজনকে দেখিলাম পেঁয়াজের সাথে সেলফি তুলে পোষ্ট দিয়াছেন।

টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা দেশের বিভিন্ন পাইকারী ও খুচরা বাজার থেকে ঘন্টায় ঘন্টায় লাইভ প্রচার করিতেছেন। চলিতেছে চুল-চেরা বিশ্লেষণ। সাংবাদিকদের তির্যক প্রশ্নে লাজুক(?) হাসি ব্যবসায়ীদের। টক-শোতে পেঁয়াজ নিয়ে আলোচনার ঝড় বহিতেছে। আলোচকরা মুখের ফেনা তুলে ফেলছেন-আড়ৎদার,পাইকারী এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের তুলোধূনো করিতেছেন। এই সমস্যা মোকাবিলা করিবার নানা ফন্দি ফিকির বাহির করিয়া আরামে চোখ বুঁজিয়া কফি পাত্রে চুমুক দিতেছেন। আগে যাহারা রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিশ্লেষণ করিতেন-তাহারা এখন একেকজন পেঁয়াজ-বিশেষজ্ঞ।  বিমানে করিয়া পেঁয়াজ আসিয়াছে।  পেয়াঁজ আসিয়াছে সূদুর মিশর থেকে ও।  লাল-হলুদ বিশাল বিশাল পেঁয়াজ দেখিয়া আমরা প্রভূত আনন্দ পাইতেছি। কিন্তুু দাম চড়া দেখিয়া আমরা হাত-পা গুটাইয়া বসিয়া আছি। সূলভে পেঁয়াজ খাওয়ার আশা প্রায় ছাড়িয়া দিয়াছি। পেঁয়াজ খাইয়া কি লাভ? পেঁয়াজই সব নষ্টের গোড়া-এক্ষণে একটা কৌতুকের কথা মনে পড়িয়া গেল-মুরব্বীসহ পাত্র আসিয়াছে কনের বাড়িতে।  সাথে ঘটক।  ঘটককে কনের পিতা  জিজ্ঞেস করিল,

‘পাত্র কেমন?’
‘পাত্র ভাল-খালি একটু পেঁয়াজ খায়’  ঘটক বলিল।
‘ পেয়াজ খায়? তা কখন খায় ’?  কনের পিতার প্রশ্ন।
‘ এই যখন একটু মাংস খায়’ -ঘটক পান চিবাইতে চিবাইতে বলিল।
‘ বেশ-বেশ, তা মাংস কখন খায় ? ’-কনের পিতার প্রশ্ন।
‘ এই ধরেন, যখন একটু মদ-টদ খায়’ ঘটক আমতা আমতা করে বলিল।
বাহির হইয়া গেল তো থলের বিড়াল। বাহির হোক থলের বিড়াল। পেঁয়াজ ছাড়া আমাদের চলিবে না।  পেঁয়াজ ছাড়া আমরা মাংস-মাছ পাতে তুলিবো না।  কয়েকদিন চেষ্টা করিয়াছি, কিন্তু তরকারী মুখে তুলিতে অক্ষম হইয়াছি। তাই কবিগুরুর সূরে বলিতে হইতেছে-তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার মাছের দোঁ-পেঁয়াজি চাই।

শুভ সালাতিন
মিরপুর,ঢাকা
১৭/১১/১৯


This post first appeared on Focus Bangladesh, please read the originial post: here

Share the post

পেঁয়াজ কান্ড

×

Subscribe to Focus Bangladesh

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×