চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার শতায়ুর অধিকারী জিন্নতের নেসার পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। স্থানীয় সামাজিক সংগঠন চাঁদমুখের এক সদস্যের ফেসবুক স্ট্যাটাস সূত্রে জাতীয় একটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টিকে গরুত্বের সাথে নেন জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান।
Related Articles
জানা যায়, শতায়ুর অধিকারী বৃদ্ধা জিন্নতের নেসা। ছয় সন্তানের জননী। স্বামী ইউসুফ আলী খানের মৃত্যুর পর সন্তানদের কোলেপিঠে মানুষ করেছিলেন। সেই বুকের ধন সন্তানরা বড় হওয়ার পর এখন মায়ের কোনও খবর নেয় না। অন্য বছরের মতো এই ঈদেও প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার জুটেছিল তাঁর ভাগ্যে।
শত কষ্ট নিয়ে এমন নির্মম নিয়তিকে সঙ্গী করে বেঁচে আছেন চাঁদপুরের জয়শ্রী গ্রামের ১০৫ বছরের এই বৃদ্ধা।
জিন্নতের নেসার স্বামী ইউসুফ আলী খান পেশায় কৃষক ছিলেন। বেশ সহায় সম্পদের মালিকও ছিলেন তিনি। তিন ছেলে, তিন মেয়ে নিয়ে তাঁদের সুখের সংসার ছিল। সন্তানদের সবার বিয়ে হলে পৃথকভাবে বসবাস শুরু করেন তাঁরা। গত ৩০ বছর আগে মারা গেছেন স্বামী। তাঁর মৃত্যুর পর সন্তানদের গলার কাঁটা হন বৃদ্ধা মা জিন্নতের নেসা।
তফুরেন্নেসা, শাহানারা বেগম, রহিমা বেগম, আব্দুল জলিল, আব্দুল মজিদ এবং ইব্রাহিম খলিল- এই ছয় সন্তান জিন্নতের নেসার। ছেলেরা মায়ের কাছ থেকে দুরে সরে গেলেও মেয়েরা মায়ের খোঁজ খবর নিতেন। গত কয়েক বছরে তাও সীমিত হয়ে যায়।
বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বৃদ্ধা জিন্নতের নেসা ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলেন, বেঁচে থেকে আর কি লাভ হবে। কেউ তো আমার খবর নেয় না।
বৃদ্ধার পাশের ঘরের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য শহীদ খান বলেন, প্রতিবেশীরা যা কিছু খেতে দেন, তা নিয়েই দিন চলে যায় জিন্নতের নেসার। স্থানীয় যুবলীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম আক্রাম বলেন, ছেলে-মেয়েরা এই বৃদ্ধা মায়ের খোঁজ খবর না নিলেও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি তাঁর পাশে থাকার। কিন্তু দুধের স্বাদ তো আর ঘোলে মেটে না। কারণ, যে সন্তানদের তিনি পেটে নিয়েছেন, তারা তো কেউ পাশে নেই।
জিন্নতের নেসার এমন অবস্থা নিয়ে চাঁদপুরের সামাজিক সংগঠন চাঁদমুখের এইচ এম জাকির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি মানবিক আবেদন জানান। তারপরই বিষয়টি সবার নজরে আসে।
এই প্রসঙ্গে আজ শুক্রবার দুপুরে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে অসহায় এই বৃদ্ধার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, ‘একজন মা না খেয়ে থাকবেন, সন্তানরা তাঁর খোঁজ নেবে না- তা তো হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে আসার পর তাঁর পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রশাসন প্রস্তুত। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে সর্বশেষ খবরে জানা যায়, জিন্নতির নেসার জন্য নগদ ১০ হাজার টাকা, ৫০ কেজির এক বস্তা চাল ও আজীবন ভরণ পোষনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়াও জেলা সমাজ সেবা কার্যালয় তাহার জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছে এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতাও থাকবে।
The post ফরিদগঞ্জে শতায়ুর অধিকারী জিন্নতের নেসার পাশে জেলা প্রশাসন appeared first on Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস.