Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

একটি জলাশয়ের আত্নকথন : মোহাম্মদ আবদুল হাই

জানি এখন আমাকে আর, প্রয়োজন নেই তোমার
কিন্তু প্রয়োজন ছিলো তোমার বাবার ও দাদার।
তারও পূর্বে প্রয়োজন ছিলো তার বাবার ও দাদার
কিংবা তারও বাবা ও দাদার, যা মনে নেই আমার।

মনে থেকে কি লাভ ! ঘেঁটে দেখো ইতিহাসের পাতায়
আদি-মধ্য, পাঠান-বৃটিশ, পাকিযুগ ও ৭১ কথা বলে যায় ।
ইতিহাস কথা কয় কিন্তু টলে না তোমার মন
ভ্রান্ত মোহে বিভ্রান্ত তুমি খোলসে ঢাকা আবরণ।

আচ্ছা, দেখোতো তোমার খুব নিকট কাছে
কোন সে বৃদ্ধ লাঠি ভরে হাঁটু গেঁটে চলে?
কাছে গিয়ে পাশে বসে করে নমস্কার
আস্তে করে জিজ্ঞেস করো জলাশয় কার ?

কেন তোমার চৌদ্দ গৌষ্ঠি যুগ-যুগান্তরে
পানির তরে কলসি করে ভিড়তো ঘাটের পরে ?
গরু, ছাগল, ভেড়ারপাল কিংবা বাড়ির কুত্তা
তৃষ্ণার্ত গলা ঠাণ্ডার তরে ঝাঁপিয়ে মিটাতো তেষ্টা ।

গ্রীষ্মকালে বুড়াবুড়ি আর বৌ-ঝির কোদাল
কাছা মেরে পাছা ভরে মাটি নিতো সর্বকাল।
বাড়ির যতো ঘরের ভিটে মাটি লাগে খাঁটি
আমার বুকের আস্তরণে তথায় ছিলো আঁটি ।

ভরা বর্ষায় সকাল বিকেল বড়শি গেঁথে তব
মিঠাপানির মৎস্য শিকার ছিল অভিনব।
নেংটা ছেলে শালুক কুড়ায় পোংটা মেয়ের তরে
ভালোবাসার নাও ভাসিয়ে ঘুরতো জলের ‘পরে।

শরৎ শেষে মেঘের ভেলা সফেদ ছানার মতো
কচুরিপানার জঞ্জালে ভরাট হৃদয়ে মেখে ক্ষত।
শীতের শেষে প্রতিক্ষার প্রহর গুণে দিবানিশি
দলবেঁধে মৎস্য শিকার উৎসবের কারসাজি ।

আচ্ছা, থাক ঐ সব কথা। দেখো আঁখি মেলে
পাঠান গেল, বৃটিশ গেল, পাকি গেল কবে ?
সাবধানে মোরে আঘাত করো বুকের গভীরে
বৃটিশের নিক্ষিপ্ত বোমা নিষ্ক্রিয় এ জলাশয়েই।
পাকিদের হামলা প্রতিহতে বাংলার যত দামাল
দেশিয় অস্ত্র লুকিয়ে রেখে গড়েছি সব কামাল !

স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে সব মুতে মোর গায়ে
তবুও শান্তি পাই সব আমার বাঙ্গাল বলিয়ে।

নতুন স্বপ্নে বিভোর যখন স্বাধীনতার সুখ
বিনামেঘে আঘাত হানে কুৎসিত যত মুখ।

শহরে পড়ুয়া স্মার্ট বড়ুয়া চোখে নেই কোন লাজ
আমায় নাকি ভরাট করে গড়বে অট্টালিকার সাজ।
ইটপাথরের গাঁথুনি আর লোহা লক্করের জঞ্জালে
বুকের পাঁজর ঝাঁঝরা হবে আলিশান মহলে ।

উলঙ্গ নর্তকীর স্ফুলিঙ্গ আর বেশ্যা রমনীর রাত
নব সৃষ্ট শহর হবে উভয় লিঙ্গের ফূর্তিতে মাত।

আমিতো ভাবিনি এ সব কভু, অনাচার অশিষ্ট
পাপিষ্ঠের বিষ্টায় ধ্বংসস্তূপ আজি আমার পিষ্ট!
বাঁচবো আমি ইজ্জত নিয়ে এই করেছি পণ
জান থাকতে প্রাণ দিবোনা হতে বিসর্জন !

আসে যদি প্রাণে আঘাত নব সৃষ্টের তরে
চোরাবালিতে তলিয়ে যাবে নিশ্চিত সকলেই ।

শহুরে ছিলে, শহুরে থাকো করোনা আস্ফালন
জলাশয় ছিলো, জলাশয় রবে, লক্ষ্য গেঁয়ো বিনোদন ।

লেখক- প্রাক্তন এডিসি ও ডিডিএলজি, চাঁদপুর।
বর্তমানে ডেপুটি প্রজেক্ট ডাইরেক্টর(স্মার্ট কার্ড),
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, ঢাকা

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১:০৩ পিএম, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার
ডিএইচ

The post একটি জলাশয়ের আত্নকথন : মোহাম্মদ আবদুল হাই appeared first on Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস.



This post first appeared on ChandpurTimes, please read the originial post: here

Share the post

একটি জলাশয়ের আত্নকথন : মোহাম্মদ আবদুল হাই

×

Subscribe to Chandpurtimes

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×