রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ব্যক্তিগত জীবন যথেষ্ট রহস্যময়। তার প্রেম বিয়ে আর সাবেক গোয়েন্দা জীবন নিয়ে রহসে্র শেষ নেই। সম্প্রিত তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন যে তিনি প্রেম করছেন। তবে তার প্রেমিকা অলিম্পিক জিমন্যাস্ট আলিনা কাভায়েভা কিনা তার স্পষ্ট করেননি ৬২ বছর বয়সী এই নেতা।
Related Articles
মস্কোতে বর্ষশেষ উপলক্ষ্যে বহুল প্রত্যাশিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, তিনি একজনকে ভালোবাসেন এবং তিনিও পুতিনকে ভালোবাসেন। তবে প্রেমের জন্য তিনি উন্মাদ হয়ে যাননি বলে জানান স্ত্রীকে তালাক দেয়া পুতিন। প্রেমিকার পরিচয় জানাতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে পুতিনকে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন বিপরীত লিঙ্গের জন্য তিনি সময় ব্যয় করেন কিনা। পুতিন বলেন, ‘আমি আপনাদের বলছি যে হ্যাঁ, আমি করি।’ এক বছর আগে স্ত্রী লাইউদমিলার সঙ্গে ৩০ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটনা পুতিন। এরপর থেকে তিনি দৃশ্যত ব্যাচেলর জীবন কাটাচ্ছেন।
তবে ছয় বছর আগ থেকেই বর্তমানে ৩১ বছর বয়সী কাভায়েভার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা শোনা যায়। এ ধরনের রিপোর্টের কড়া সমালোচনা করে আসছিল ক্রেমলিন। রাশিয়ার এই লৌহমানবের ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয় না। সংবাদ সম্মেলনে পুতিন দাবি করেন যে, তার সাবেক স্ত্রীর সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায়ই দেখা সাক্ষাৎও হয়। সেই সংসারে পুতিনের দুটি বয়স্কা কন্যা সন্তান রয়েছে। তবে তাদেরকেও জনসমক্ষে দেখা যায় না।
শুধু এই প্রেমের সম্পক নয় তার জীবনের নানা দিক এখনও অজানা রয়েছে। কেজিবির এই সাবেক এই গোয়েন্দা। স্কুলজীবন থেকেই পুতিন জুডো-কারাতের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে পারদর্শিতা অর্জন করেন। রুশ সিনেমায় গোয়েন্দাদের ভূমিকা দেখে পুতিন গোয়েন্দা জীবনের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং শিক্ষাজীবন শেষ করার পরপরই রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দেন ১৯৭৬ সালে। এরপর ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত পূর্ব জার্মানির ড্রেসডেনে কেজিবি এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পূর্ব জার্মানির পতনের পর পুতিনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯৯১ সালে পুতিন লেনিনগ্রাদ স্টেট ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে যোগ দেন। এখানে তিনি ছাত্র সংগঠনগুলোর ওপর নজর রাখতেন। এ সময়ই তার সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে লেনিনগ্রাদের মেয়র আনাতোলি সোবচাকের। পুতিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সোবচাক ছিলেন তার শিক্ষক।
পুতিন ১৯৯১ সালের ২০ আগস্ট কেজিবি থেকে ইস্তফা দেন এবং মেয়র সোবচাকের অধীনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বিদেশী বিনিয়োগ বিষয়ের প্রধান হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সেন্ট পিটার্সবার্গ নগর প্রশাসনের উপপ্রধান হিসেবেও কাজ করেন।
১৯৯৬ সালের মেয়র নির্বাচনে সোবচাক পরাজিত হওয়ার পর পুতিনকে মস্কোতে ডেকে পাঠানো হয়। এ সময় তাকে প্রেসিডেন্টের সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপ্রধানের পদে নিয়োগ করা হয়। ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন পুতিনকে প্রেসিডেন্সিয়াল স্টাফের উপপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৯৯৮ সালে ইয়েলৎসিন গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি’র প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন পুতিনকে। ১৯৯৯ সালের ৯ আগস্ট পুতিন প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী ও পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর পদে নিযুক্ত হন। শুধু তা-ই নয়, ইয়েলৎসিন ঘোষণা করেন যে, তিনি পুতিনকে তার উত্তরসূরি হিসেবে দেখতে চান। ১৬ আগস্ট পুতিন পূর্ণাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পার্লামেন্টের অনুমোদন পান।
এরপরই কেবল পুতিন রাশিয়ার সাধারণ মানুষের পরিচিতি লাভ করেন। এর আগে তার সম্পর্কে জনগণের কোনো ধারণা ছিল না। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ইয়েলৎসিন হঠাৎ পদত্যাগ করেন এবং সংবিধান অনুযায়ী পুতিন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হন। এরপর ২০০০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হন পুতিন। পরপর দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর তার অনুগত দিমিত্রি মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্ট পদে বসিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন পুতিন। পরের মেয়াদে তিনি আবার প্রেসিডেন্ট হন।
পুতিনের সাবেক স্ত্রী লুডমিলা ছিলেন একজন বিমানবালা। তাদের দুই মেয়ের একটির নাম মারিয়া পুতিনা ও ছোটটির নাম ইয়েকাতেরিনা পুতিনা।
This post first appeared on Amr Bangla - 24/7 Online News Portal, please read the originial post: here