পাঁকের বর্ম কেটে
- প্রবীর রঞ্জন মণ্ডল
গাঢ় অন্ধকার নেমে যাচ্ছে একটু একটু করে
মধ্যরাত জীবনের চোরা পথ হতে;
সাদা কুয়াশার বর্ম আঁটা মুখ
ভিজতে ভিজতে এগিয়ে যায় শেষ রাতের দিকে।
মুখোশের অন্তরালে ভেসে যায় হাসি কান্না
শেষ ধাপের কুয়াশার গভীরতা মেপে
সূচিত হয় একক একটি দিনের,
ওই বুঝি সব পাপ তাপ ধুয়ে মুছে সাফ হলো
পাঁকের বর্ম কেটে বেরিয়ে পড়ে পাঁকালের দল।
আকালে সবদিকে তাকালেও রক্ষা পেয়ে যাবে
গলায় ঝুলানো আছে মায়াবী রক্ষা কবচ।
তাই গোয়েন্দার ডেরায় ঢোকে হাসিমুখ
বুকের পাঁজরে আর
হাড়ে হাড়ে গোঁজা আছে বুকের যন্ত্রণা
কত নিরন্নের কেড়ে নেওয়া সুখ।
এ অসুখ আর ভালো হবার নয়,
একদিন দধীচির হাড়েই হবে তাদের সর্বক্ষয়;
সেই মধ্যরাতের বিভীষিকা কেটে যাওয়ার দিন
আর বেশি দূরে নয়
ওই দ্যাখো কুয়াশা ভেদ করে নিষ্পাপ সূর্য হাসছে।
রুখবার কে আছে
- প্রবীর রঞ্জন মণ্ডল
সব পাড় ভাঙা হয়েছে শুরু
বুকের মধ্যে বেশ্যা বোধের টান
সমাজের বুক করছে দুরুদুরু
সবদিকে বাজে অসাম্যের গান।
খেলা নেই তবু শুরু হয় খেল
উদ্দাম নাচে ভাঙে ধর্মের কারা
কাদের জীবন হয়ে পড়ে উদ্বেল
আশঙ্কায় ঘুমিয়ে পড়ে পাড়া।
দুর্নীতি সব নীতির বাকল পরা
রঙিন চশমায় আঁটা সমাজের চোখ
সব নাকি রাজনীতির পরম্পরা!
রুখবার কে আছে পারলে রোখো?
কূলহারা নদী
- প্রবীর রঞ্জন মণ্ডল
অদূরেই আগুন স্রোত বাঁক খায় নদী
এপার ওপার জুড়ে স্রোত খেলে যায়
সময় সুযোগ সহ খড়কুটো ভাসে
প্রবাহ জীবনধারা এমনই বয়ে চলে।
কখন যে ভাটা নামে বিরামহীন বেগে
ঘোলাজলে ফিরে আসে সুখ শান্তি আশা
বিকলাঙ্গ দিকগুলো সব ফুটে ওঠে
জেগে ওঠে দ্বীপ আর হ্রদ অশ্বক্ষুর।
বিদুরের খুদ জেনো জমে থাকে বুকে
নদী আর নদীকথা আমাদের মুখে
এখনো পলির চরে দখলদারি আমার
খুদের মহিমাটুকু বুঝও মাথা ঠুকে।
গড়ে ওঠে ঘরবাড়ি দখলের চরে
আতঙ্কের স্রোত ঢোকে প্রতি ঘরে ঘরে
এখনই মজায় মজে কূলহারা নদী
বুকের পাঁজরে তাই ইতিহাস খুঁজি।
আমার আস্তিনে
- প্রবীর রঞ্জন মণ্ডল
শুধু মনটুকু রেখে গেছি,
ঠোঁট নয়
সেটুকু দূরে রেখে বিষাদময় হও!
কার অভিসারে বয়ে চলো অস্থিময় শরীর?
সেটুকুও বাদ দিলাম
পারলে অন্দরে ডেকে আনো প্রেমময় পুরুষ
আমার পৌরুষের অন্ধকার চিরতরে দূর করে
নতুন করে মনের বারান্দায় লিখে ফেলো
একক প্রণয়ের কবিতা।
শুধু মনটুকু নিয়ে নিলাম চিরতরে আমার আস্তিনে।
বিষাদ আগুন
- প্রবীর রঞ্জন মণ্ডল
শরীরের ভিতরে এখন জ্বলছে
চার খোঁটার আশ্রয়ে বিষাদ আগুন।
সব অহংকার পুড়ে একবারে ছাই
ওখানে নতুন বসত বাঁধবার কোনো স্থান নেই;
উপরি উপরি লোভ, ক্রোধ, মোহ সবাই
হাল ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে মস্তিষ্কে
তাদের ডানায় এখন আগুন পোড়ার গল্প।
অল্প অল্প করে ব্রহ্ম তালুতে নামছে জল
প্রবল বর্ষণ হলে সব ধুয়ে সাফ হবে
এই ভাবনার পাঁকে যাদের আঁটকে যাচ্ছে মন
তারা একবার ডানা ঝেড়ে বসে পড়ুন
আর ব্রহ্ম তালুতে ঠান্ডা হাত বুলান
অন্তত নতুন করে আশ্রয় পাক
নির্জন দ্বীপের মধ্যে ঘুরে বেড়ানো
কাম, ক্রোধ, মোহ আর অস্থির মন।
কারুময়
- প্রবীর রঞ্জন মণ্ডল
উঠে দাঁড়াও
বলো একবার
তুমি পূর্ব দিগন্তের সূর্যের মতোই
একরাশ আলো দেবে আমাকে ;
তোমার নিষ্পাপ আলোর জন্যই
কতকাল বসে আছি অনন্ত রাত জেগে।
তোমার কারুকাজ কারুমায়ার মতোই
রোশনাই ছোটায়
আমার বুকের অলিতে গলিতে
তাইতো এখনো আমার রাত জাগা।
এখনই আলো গিলে নেবো
দাঁড়াবো গিয়ে পুব দুয়োরে
অবিকল সহস্র শতাব্দী প্রাচীন স্ট্যাচুর মতো।
সবাই ছুঁয়ে দেখবে,তারিফ করবে
কেউবা ছবি নিয়ে দেবঘরে,
দেব সিংহাসনে দেবে আশ্রয়।
আমি আমার স্বপ্ন পূরণের ছবি আঁকব
কোটি কোটি মানুষের হৃদয় মন্দিরে।
শুধু তুমি একবার
উঠে দাঁড়িয়ে হাত রাখো
আমার কারুময় মাথার উপর।
উদ্দীপিত যৌবন
- প্রবীর রঞ্জন মণ্ডল
উত্থিত যৌবন
ভরা বসন্ত তোমার বুকে
লালিত হচ্ছে দীর্ঘক্ষণ।
কৃষ্ণচূড়ায় দখিনা বাতাস
মগ্ন তপস্যায় বিভোর হয়ে
সাঁতার কাটছে সারাক্ষণ।
কাল মধুমাস বাসন্তিকা রঙে
বিমুগ্ধ হয়েছে ফাল্গুন,
আগুন উদ্দীপ্ত যৌবন ছুটছে
ভ্যালেন্টাইনস ডে;
গোলাপের ছোঁয়ায় স্মৃতিচিহ্ন
ভালোবাসার রক্তিম দিন!
বসন্ত দখিনা বাতাসে জানান দিচ্ছে
এসো হাত ধরো
প্রজাপতি হয়ে ধরা দিক
নতুন জীবন।
টুকরো আশা
- প্রবীর রঞ্জন মণ্ডল
এক টুকরো আশা
ভালোবাসার মতো স্বচ্ছ কাঁচ
জুড়ে দেখি অজস্র ক্যানভাস
রাতের রজনীগন্ধার মতো
একবুক সুবাস বিলিয়ে দিচ্ছে
বাতাসের হাত ধরে।
একটুকরো আশা
অগুনতি শব্দের মতোই
নৈশব্দের নিঃসরণ ঘটিয়ে চলেছে নিরন্তর
আমার এ ভগ্ন হৃদয় জুড়ে।
তাইতো মরীচিকার মতো আশার পিছনে
ছুটে চলেছি অনন্তকাল।
দৃষ্টি রেখো
- প্রবীর রঞ্জন মণ্ডল
একটা নদী
চলতে চলতে
বাঁকের মাঝে থামল যখন,
তখন আমি
তাকিয়ে দেখি
চলতে চলতে পৌঁছে গেছি ;
যেথায় আমার যাওয়ার ছিল
অনেক কিছু পাওয়ার ছিল
সেথায় পড়ল নোঙর।
নদী তখন- - -
মুচকি হাসে
বললে আমার কানের কাছে
সময় হলে স্রোতের টানে
ফিরব আবার নতুন গানে
ভাটিয়ালি সুরে ;
সূর্য যখন যাবে পাটে
সাঁঝের প্রদীপ নেভার আগে
দৃষ্টি রেখো দূরে।
মনের রঙে
- প্রবীর রঞ্জন মণ্ডল
এসো, গাঙচরে এসে
করি বালি নিয়ে খেলা,
ঘর বানাই আপন মনে
রঙিন এক নতুন তুলির টানে।
প্রাণে জাগুক আপন গোধূলি বেলা
চাঁদের আলো ফিরে আসুক
সারা চর জুড়ে।
উড়ে যাক দু'একটি বনচরা পাখি
আঁখির মাঝে জেগে উঠুক স্বপ্ন উজাগর।
স্মৃতিসৌধ যা কিছু বানাই
সবটাই বালির ঘর;
ঠুনকো স্পর্শে ভাঙবে সবই
গড়বো তুলে নতুন চালে।
মনের থেকে মুছবে না তা
জানবে সেটি কোনো কালে!
সেই ঘরটা আমার আপন
থাকবে মনের রঙে;
ওকেই আমি আঁকব জেনো
নতুন থিমসঙে।
প্রবীর রঞ্জন মণ্ডল | Prabir Ranjan Mandal
সুভাষ নারায়ণ বসু | কবিতাগুচ্ছ ২০২২ | Subhas Narayan Basu | Bangla Kabita | International Poetry 2022
শওকত নূর | কবিতাগুচ্ছ ২০২২ | Shawkat Noor | Bangla Kabita | International Poetry 2022
ডাঃ মাধাই মিদ্যা | কবিতাগুচ্ছ ২০২২ | Dr. Madhai Middya | Bangla Kabita | International Poetry 2022
পূর্ণা গাঙ্গুলী | কবিতাগুচ্ছ ২০২২ | Purna Ganguly | Bangla Kabita | Poetry 2022
অমল ভৌমিক | কবিতাগুচ্ছ ২০২২ | Amal Bhowmik | Bangla Kabita | Poetry 2022