মনে করা
- জয়ন্ত কুমার সরকার
প্রতিদিনের জীবনে আমরা অনেক কিছু শিখি, অনেক কিছু দেখি, কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়। ঘটে যাওয়া সবকিছু কি পরে মনে করতে পারি! কিছু ঘটনা স্মৃতিতে স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত হয়, কিছু ঘটনা ক্ষণস্থায়ী হয়। মানুষের মস্তিষ্ক একটা পুরো জীবনের সমস্ত জ্ঞান ও তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে, যা উন্নতমানের কম্পিউটারও পারে না। যে কোন কাজ করতে গেলে সর্বদাই আগের ঘটনার ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তা দিয়েই আমরা কাজ করি। অতীত মনে করতে পারি বলেই খারাপ ভালোর তফাৎ বুঝতে পারি, নিজেকে উন্নত করতে পারি। মনে করতে পারাটা স্বাভাবিক অভ্যাস, এজন্য কোন কসরত করতে হয় না, জোর করে মস্তিষ্ককে কাজ করানো যায় না। ঠিক সময়ে ঠিক কথা মনে করতে না পারলে অস্বস্তিতে পড়তে হয়, ক্ষতিও হয়। তীক্ষ্ণ স্মৃতি বুদ্ধিমত্তা প্রকাশ করে। একই বই পড়ে অনেকে পরীক্ষা দেয়, কিন্তু যার স্মৃতি তীক্ষ্ণ, সে-ই সেরা হয়। মনে করতে না পারা, ভুলে যাওয়ার জন্য কত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। নতুন কিছু শিখলে তা পরে মনের চেতন থেকে অবচেতন স্তরে চলে যায়, পরে মনে করতে চেষ্টা করলে আবার চেতন স্তরে স্মৃতির পুনরুদ্রেক ঘটে, আমরা মনে করতে পারি। 'আঙ্কেল পোজার'কে মনে আছে! তিনি কোর্ট খুলে রেখে ভুলে যেতেন, খুঁজে বেড়াতেন ঘরময়, শেষে দেখা যেত ওটার উপরেই উনি বসেছিলেন। সুকুমার রায়ের 'হারিয়ে পাওয়া' কবিতায় 'ঠাকুরদাদার চশমা কোথায়' নিয়ে হুলুস্থুল, শেষে কপাল থেকে খসে পড়ল চশমা। অ্যালজাইমার রোগের শুরু এরকমই হয়, ক্রমে স্মৃতিভ্রংশ বাড়ে, নিজের পরিবারের মানুষকে চিনতে পারেন না, খাবার খেয়ে মনে থাকে না, নিজের বাড়ি ভেবে অন্য বাড়িতে ঢুকে পড়েন। স্মৃতিভ্রমের বিড়ম্বনায় মানুষ কত অসহায় হয়ে পড়ে না ভেবে হাসির খোরাক করে ফেলি আমরা চেতনে-অবচেতনে!
হার জিত
- জয়ন্ত কুমার সরকার
হারতে হারতে যে জিতে যায় তাকেই বাজিগর বলে। হাল না ছাড়ার মনোভাব মনে চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। এই চ্যালেঞ্জ জেতার খিদেটা বাড়িয়ে দেয়। হার মানে নিছক ব্যর্থতা নয়, সামনে এগিয়ে যাওয়ার সোপান হল হার। তাই হেরে যাওয়া মানেই সব শেষ নয়, হারতে হারতেই জয় আসে। একসময় আমি হতাশ হয়েছিলাম। তখনও পড়া শেষ হয়নি, ফাইনাল ইয়ার; বাবাকে অফিস কর্তৃপক্ষ হঠাৎ জানায় চাকরী আর মাত্র একমাস। বাবা খুবই মুষড়ে পড়লেন, আমিও দিশেহারা, সংসারটা চলবে কি করে, দুম করে এমন দু:সংবাদ! জমিজমা নেই, পারিবারিক কোন ব্যবসাও নেই। চাকরী ছাড়া কোন পথ নেই আমার। টিউশানি থেকে কটা টাকা পাই, বাড়ির বড় ছেলে,কি করব ঠিক করতে পারছি না। হতাশা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। তখন আমি টাইপ-স্টেনো প্রাকটিস করতাম, বাবার অফিসের এক সহকর্মী খুব সাহায্য করছেন, চাকরীর এক্সটেনশনের জন্য। একসময় এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকে কল পেলাম। দাঁতে দাঁত দিয়ে প্রাকটিস করছি । লিখিত পরীক্ষায় সফল হয়ে ইন্টারভিউ- এ বাক পেলাম। সফল হয়েছিলাম সেদিন। আমরা শুধু রেজাল্ট দিয়েই সফলতা মাপি, রেজাল্ট খারাপ, ব্যস! সব শেষ! একবার একাডেমিক রেজাল্ট খারাপের সঙ্গে জীবনে সফল হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। হারটা লজ্জার নয়, মুষড়ে পড়ে হাল ছেড়ে দেওয়াটা লজ্জার । জিতবই আমি, এই ভাবনা মনে লালন করা, নিজের উপর বিশ্বাস রাখাটাই আমার একমাত্র কর্তব্য। কোন সাফল্যের পথই সোজা নয়। জীবনে সফল হতে হলে দীর্ঘ পরিশ্রম আর লাগাতার চেষ্টা প্রয়োজন। সাহিত্যিক মতি নন্দীর কোনি বার বার হেরেও তাই হাল ছাড়েনি, তার ক্ষীত্দা তাকে হাল ছাড়তে দেননি। দৃঢ় সাহসী মনোভাবই জয়লাভ এনে দেয়।
কুসংস্কার
- জয়ন্ত কুমার সরকার
গাড়ী চালাতে গিয়ে সামনে বিড়াল, ব্যস! শত চেষ্টাতেও ড্রাইভার গাড়ী এগিয়ে নিয়ে যাবে না। থমকে দাঁড়িয়ে ব্র্যাক গিয়ার, তারপর সামনে এগোনো। যাত্রাপথে বিড়াল মানেই অশুভ ইঙ্গিত, বিশ্বাসটা এরকমই। বিড়াল কালো হলে তো কথাই নেই। একজন মানুষের বিশ্বাস ভাঙ্গা ভীষণ শক্ত, অন্ধবিশ্বাস ভাঙ্গা তো আরও শক্ত। তেমনই পাতিলেবু-কাঁচা লঙ্কা ব্যবসায় অশুভ দৃষ্টি রোধ করে, ঘরের চৌকাঠে বসতে নেই, পরীক্ষার দিন ডিম খেলে গোল্লা পেতে হয়, ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখা অশুভ, রাত্রিবেলা কাউকে সূচ দিতে নেই,এরকম হাজারো কুসংস্কার জড়িয়ে আছে আমাদের মনে, জীবনের রোজনামচায়। শিশু বয়স থেকে মনে গেঁথে দেওয়া হয়,এটা করতে নেই,ওটা করবে না, মা-কাকীমার সাবধান বানী রক্তে মজ্জায় মিশে যায়, বিশ্বাস ক্রমে দৃঢ় হয়। অশিক্ষিত অর্ধ-শিক্ষিত গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের মনে লালিত হয় এসব ধারণা। কোনরকম যুক্তি, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছাড়াই অনেক শিক্ষিত আধুনিক প্রজন্মের মানুষও অন্ধবিশ্বাসের শিকার হন। কোন যুক্তিতে জোড়া-শালিক মঙ্গলজনক, আর কেনই বা এক শালিক অশুভ হবে বলুন তো ! এসব বিশ্বাস ক্ষতিকর নয় বলে অনেক সময় মেনে নিই আমরা। দ্বাবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান আধুনিক মানুষ যখন মঙ্গলগ্রহে বসবাসের ঠিকানা খুঁজছে, ঠিক তখনই দেশের অন্য প্রান্তে ডাইনী সন্দেহে মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। কি অদ্ভুত বৈপরীত্য!তুকতাক মন্ত্রবিদ্যা গরীবগুর্বো প্রান্তিক মানুষকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে মানুষ দিশেহারা, ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করছে ওঝা, তান্ত্রিক, ভুয়ো সাধুর অশুভ আঁতাত। একমাত্র যুক্তিবাদী বিজ্ঞান চেতনা দিয়ে মানুষের বুদ্ধির উন্মেষ ঘটাতে পারলে তবেই রেহাই মিলবে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারের করালগ্রাস থেকে।
জয়ন্ত কুমার সরকার | Jayanta Kumar Sarkar
ছেড়ে আসা গ্রাম | আমার পিতৃভূমি - নাকাইজুড়ি - জয়ন্ত কুমার সরকার | গল্প ২০২২ | Story 2022
বিষ্ণুপুরে পর্যটন - জয়ন্ত কুমার সরকার | প্রবন্ধ ২০২২ | Article 2022
আমার বেড়ানো | পণ্ডিচেরী | মহাবলীপূরম | তিরুপতিধাম | কন্যাকুমারী - জয়ন্ত কুমার সরকার | Jayanta Kumar Sarkar | Travel 2022
অপ্রত্যাশিত - মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ | গল্প ২০২২ | Bangla Galpo | Story 2022
মন - বিপাশা চক্রবর্তী | গল্প ২০২২ | Bipasha Chakraborty | Bangla Galpa | Story 2022