চাহিদা পূরণ
- প্রতিম ঘোষ
প্রতি জনের সুপ্ত মনে
লিপ্ত আছে ব্যথা গোপনে,
নিজ গৃহ অন্যের হয়
সঙ্গী ছেড়ে চলে যায়।
নিঃসঙ্গতা একাকীত্ব কেবলই হামলায়
একাকী দিন কাটাতে হয়।
শূন্যতা কেবল ক্রড়ে খায়
লক্ষাধিক ভাবনা নিস্তেজ হয়।
একাকীত্ব মনে আসে ভাবনা
সঠিক না পাওয়ার চেতনা।
তারই মাঝে জাগে কামনা
জাগে কিছু করার বাসনা।
খোঁজে নতুন কোন সাথী
যে মনের হবে সারথি,
বই কে কর সাথী
পাবে তুমি আশ্রয় প্রার্থী।
একা কেউ পাগল হয়
মরণের পথে অগ্রসর হয়
প্রেম কর ভালোবাসো বই
পাবে নিজের মনের খেই।
একাকী হলে আসবে আঘাত
কর কলম দিয়ে প্রতিঘাত।
বর্ণ শব্দের চোরাবালিতে ডুবে
কলম বেত্রাঘাত কর তবে,
শূন্য কাগজে কথা লিখে
শিক্ষা নাও বই দেখে
স্তব্ধ জীবন অন্তিম সাধ
ভাবো মনে সবাই নিরপরাধ।
তোমার ভুলে তুমি একাকী
হয়েও না প্রাণে দুঃখী-
শান্ত মনে অগ্রসর হও
নিজ অপরাধ বুঝে নাও,
শিক্ষার ধমনীতে জ্ঞান ধায়
মধুর গীত প্রাণে রয়।
কচিকাচা
- প্রতিম ঘোষ
ভোরের আলো ফোটার আগেই
কচিকাচারা নিত্য স্কুল যাবেই।
সাদা মোজা কালো জুতা
ব্যাগ বোঝাই বই খাতা
নীল-সাদা পোশাক গায়ে সাঁটা
পূর্বের রবির হয়নি ওঠা
হয়তো শুকতারার হয়নি ডোবা
কচিকাচাদের নিয়ে ছোটে মা-বাবা।
কচিকাচাদের শুরু গাড়ি চাপা-
স্কুলের গেটে পৌঁছনো হাপা,
হবে শুরু প্রার্থনা গীত
থাকুক গ্রীষ্ম বর্ষা শীত
কচিকাচা বোলো না বাত।
পাঠ বিনা হবে কাত
ভালো স্কুল বিনা নাই জাত
নিয়ম না মানলে সাজা
সাত সকালে স্কুল যাওয়া
সাজা কি যায় দেওয়া!
ভোরের শিশুদের শিক্ষা নেওয়া,
এইতো জীবনের চাওয়া পাওয়া।
বিনা ধনী
- প্রতিম ঘোষ
যদি সময় হয় তবে
কি বসে থাকবে!
স্বপ্নের কাঁটা জালিয়াতি হবে
স্বপ্নভঙ্গ নিষ্ঠুর রবে!
সময় কভু দাঁড়ায় না
বয়স পিছয় না।
জীবনের চাহিদা শেষ হয় না
মানসিকতা বদলায় না।
থেকো না কেউ কারো অপেক্ষায়
থেকো না কারো চিন্তায়
কামনায় রাখ নিজ দক্ষতা
পূর্ণ কর মনস্কামনা।
অর্থ মেটায় শত দায়
পর্যাপ্ত সকলের নয়!
অর্থ যদি বিচ্যুত রয়
চিন্তিত কভু নয়।
অর্থের পেছনে ছুটতে হবেই
অর্থ করতে কামাই,
আয়ের পরিধি অধিক হলেই
খরচের নিষ্পত্তি নেই।
অর্থ হতে থাকো দুরে
পাপে মন ভরে
দাও অর্থ শুধু দরকারে
ধনী হতে দুরে।
আপোস
- প্রতিম ঘোষ
প্রশ্ন করি জীবন তোরে
তুই আছিস কাহার ত্বরে
চলার পথ মগ্ন করে
বাঁধা দ্বন্দ্ব অতিক্রম করে
শত জনকে করে আপোস
তোর গতি হল শেষ।
চরম সময় মগ্ন হোস
হঠাৎ ছুটে কর্ম করিস
আসল নকল গোল্লা মেরে
থাকিস কেমন আনন্দের ঘরে
জীবন তুই আমায় মুগ্ধ কর
প্রান্ত দুয়ারে সবুর কর।
বাঁচার ঘরে ঝালোর তোল
চলার পথে ঝান্ডা দোল।
সময়ের ফাঁদ
- প্রতিম ঘোষ
কার্তিকের একাদশী রাত,
হেমন্তের হৈমন্তীর হাত
আঁধারি শরীরের সাথ,
অনন্য অপরূপ মনোহর
সৌন্দর্য সৌরভে জলধর
বাতাসে শীতল তীর,
ঘন কুয়াশার ছাতা
যায়না দেখা মাথা
শরীর জাপটে কাঁথা।
দিগন্তে একাদশীর চাঁদ
সময় ঋতু ফাঁদ
সমঝে একটু কাঁদ।
লহমায় রাতখানি
আনমনা দেহখানি
হারিয়েছে উচ্ছ্বাসখানি,
ওরে অষ্টাদশী অগ্রহায়ণ
করব সেবা নর-নারায়ণ
নবান্ন সত্ত্বর আনায়ণ।
হেমন্তের গগনে সূর্যাস্ত
জীবনের সূর্য অস্ত
উত্তাপে আচ্ছন্ন হস্ত,
মাটিতে পরেছে শিশির
দুয়ারে হয়েছে হাজির
কাঁপুনি রেখেছে নজির।
গৌরবান্বিত
- প্রতিম ঘোষ
এ পৃথিবীতে কেহ চিরদিন নাহি রয়!
পুণ্যস্থান একদিন শূন্যস্থান হয়
দুর্গম ক্ষেত্র করিতে অভিযান
পাঠান সর্বদা আমাদের ভগবান।
কতজন পারে কর্ম করতে,
নিজ জীবনের রেখা লঙ্ঘিতে
সময়ের ধারা পার হয়ে,
জীবন যায় শেষ হয়ে,
তার মাঝে উন্মুক্ত ভাবে
নিজ নিজ অবকাশে ডোবে
জীব কল্যাণে সমাজ পটে
তারাই অমর সমাজের তটে।
যোগ্য হয়ে সুভাষ যারা
দেয় সমাজে মহান তারা,
বরণীয় হয়ে স্মরণীয় এঁরা
উজ্জ্বল গগনে গ্রহ তারা।
চিতার আগুনে শরীর দগ্ধ
রয়ছে যাদের নামের সৌগন্ধ
নামাই শির তোমার শৌর্যে,
আনি গৌরব নিজ বীর্যে।
হিন্দু-মুসলমান
- প্রতিম ঘোষ
মোরা একই কলাপাতার দুই ধার হিন্দু মুসলমান।
মোরা একই বঙ্গে বাস করি হিন্দু মুসলমান।
গঙ্গা -পদ্মা নামে একই নদীর দু-ধারে
মোরা পান করি একই মার জল-পানি নামে।
গুরুদেব জন গন মন, সোনার বাঙলা নামে,
দিয়ে গেছেন স্তব বাণী মোদের চেতনাতে
রাখি জাতীয় সংগীত নামে আখ্যায়িত করে।
মোদের গৌরব মোরা কথা বলি বাংলাতে,
মোরা একই মার শরীর হতে খানা পিনা করি।
মোরা নিজেরা নিজেদের দাদা-দিদি, ভাই-বোনে সম্মান করি।
একই অঙ্গে দুটি রূপ কালি কৃষ্ণ জানি।
মোদের একই ঈশ্বর ঠাকুর আল্লার নাম ভোজী।
মোরা একই কলাপাতার দুই ধার হিন্দু মুসলমান।
মোরা একই মায়ের দুই সন্তান হিন্দু-মুসলমান।।
সম্পর্ক
- প্রতিম ঘোষ
এ জগতে ভাই-বোনের সম্পর্ক
সবচেয়ে প্রিয়,নেই তাতে কলঙ্ক।
ঝুলিতে লুকায়ে সেই সম্পর্ক,
ব্যবহার না ছড়ায়ে যেন আতঙ্ক।
বড় ছোট হেথায় সব এক
মধুর সম্মান সেথায় অবাক,
প্রেম প্রিয়জন হেথা এক
জীন বাড়ায় নিজ গৌরব।
মোরা এসেছি একই মাতৃ গর্ভ হতে ধরায়,
স্নেহ, মমতা আর ভালোবাসায়।
দিদি-ভাই সম্পর্ক দলিত হয়,
নিদারুণ এক অর্থ উঁকি দেয়।
শুভ্র গোলাপের মতো মোদের আচরণ,
কেন তা পাল্টে আনো মগজে,
ভাই-বোনের মাঝে শিহরণ,
কার দোষ খোঁজ মন সহজে।
এক বালিশে শুয়ে রাত্রিবাস করেছিলি,
ভাই-বোন সম্পর্ক ভুলে গেলি।
আমি অধম তুই উত্তম ছড়া বলে গেলি,
আমাদের বিচার আমরা করি হোক চুলোচুলি।
শিশুকালে মা দিত ঝগড়া থামিয়ে।
অনেক করার মাঝে থাকে যদি
একটি ভুল যাবে মর্যাদা হারিয়ে,
জীন এসে খোঁজো কে আসলে দোষী।।
জটিল সম্পদ ভালোবাসা আলাগ করে
সিঁথিতে সিঁদুর ভাই দান করে
হিসাবের খাতয় বোন হিসাব করে
সঠিক সময়ে নিজ মূর্তি ধারণ করে
অভাগার স্বর্গে কাল গ্রাস করে
চালাকের স্বর্গে মহান বাস করে
শাসন যবে প্রেম অমর্যাদা করে
কর্মফল ভোগার পথ নির্দেশ করে
ন্যায় অন্যায়ের করবে বিচার মালিক
অর্থ যখন পরাধীন জীবনের নায়ক
বোন দিচ্ছে ভাই কে ধমক
ভাই দেখায় বোনকে শুধুই চমক।
বয়সের ধারা
- প্রতিম ঘোষ
বয়স ক্রমবর্ধমান হচ্ছে
শরীরে প্রভাব পরছে
চামড়া কুঁচকে যাচ্ছে
চুলে পাক ধরছে;
আত্মা লব্ধ মনে
সেই ধারা মানে!
মন চিরতরে উজ্জ্বল
তার প্রকাশ সজল;
সে আছে সমধারাতে
চামড়া ঘেরা অন্দরেতে
তার প্রভার রূপ-রস-ঘ্রাণেতে
উৎফুল্ল জীবনের চাহিদাতে,
মন দেয় বুঝিয়ে
চোখ দিয়ে দেখিয়ে
বসন্তের রূপকে চিনিয়ে
কুহুর ডাক শুনিয়ে,
মন দেয় দমিয়ে
প্রেমের রস পালটিয়ে
বয়সের ধারা বাড়লে
মন রাখে আগলে,
প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট
সব প্রেম নিকৃষ্ট
বাড়ুক যত বয়স
ঋতুকে নিয়ে আয়েস।
দিব্যি আছি
- প্রতিম ঘোষ
আমি এখন কাটাই পথে
ঝাঁটা লাথি নিয়ে সাথে,
যে সাধ ছিল মনের প্রভাতে,
হারিয়েছি তাহা জীবনের পথে
নিরাশা গেছে দুরাশার পথে
আবেগের চুড়ায় মনের স্বাদ
বাস্তবে পেয়েছে শুষ্ক খাদ
সৌভাগ্যের সিঁড়ি খুঁজতে গিয়ে
দুর্ভাগ্য সদা রেখেছে আগলিয়ে
শিশুবেলা চিন্তাহারা সবুজের ধারা।
কিশোর বেলায় চিন্তা ধারা
জীবন কেবল আগুনে ভরা
যৌবনে জীবন উন্মাদনা ভরা
মধ্য যৌবনের জীবন ঝড়ে
শরীর মন গেল দুমড়ে,
গেলাম অজানা পথে উড়ে
পথই হল বর্তমান ঠিকানা
কাটল জীবনের সব বাসনা
ভ্রান্ত প্রাণ শান্ত করে
দিব্যি বেঁচে আছি।
প্রতিম ঘোষ | Pratim Ghosh
প্রতিম ঘোষ | কবিতাগুচ্ছ ২০২২ | Pratim Ghosh | Bangla Kabita | Poetry 2022
শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ | কবিতাগুচ্ছ ২০২২ | Shibaprasad Purakayastha | Bangla Kabita | Poetry 2022
শিশু দিবসের গ্লানি | ছোট্টবেলা | ইচ্ছে | একলা আকাশ | কবিতাগুচ্ছ ২০২২ | Bangla Kabita | Poetry 2022
ডাঃ মাধাই মিদ্যা | কবিতাগুচ্ছ ২০২২ | Dr. Madhai Middya | Bangla Kabita | Poetry 2022
নিমাই জানা | কবিতাগুচ্ছ ২০২২ | Nimai Jana | Bangla Kabita | Poetry 2022