খুঁজে ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ৬)
- জয়নাল আবেদিন
রাত্রি তখন দশটা বেজে তিরিশ মিনিট। কালো রঙের পুলিশ ভ্যানটা আজাদ কলোনির গলির মুখটায় দাঁড়ালো। কলোনির চিত্রটা এখন যেন সন্ধ্যে হয়েছে মাত্র। গাড়ি থেকে বড়বাবু, মেজবাবু, দুজন সিপাইসহ নামলো। বড়বাবু একজনকে বললে, - আরশাদের ঘর কোনটা রে ? লোকটা প্রথমটা একটু ভ্যাকাচাঁকা খেলো। বললে, - কিছু হয়েছে নাকি বাবু ? বড় বাবু একটু ধমকে দিলে, বললে - তোকে যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেইটা বল ? কি হয়েছে- কি হবে, তোর তাতে কাজ নেই ।
Related Articles
লোকটা একটু ভয় পেলো। একটু অবাকও হলো। বললে, - ঐ তো সামনের লাইট পোস্ট, বামদিকের গলির মুখের পরের ঘরটা। সামনে রিকশা রাখা থাকে।
ভেপার ল্যাম্পের আলোয় বস্তি এলাকা ঝলমলে। প্রতিটা ঘরে একটা কলবলানি। রান্নার চোঁ চাঁ শব্দ । সারা দিনের কর্মযজ্ঞ সেরে যে যার বাড়ি ফেরা ।রান্না- খাওয়া ।গৃহস্থ পরিবারের সঙ্গে বস্তি এলাকার তফাৎ এখানেই ।এখানের মানুষগুলো কিছুটা যান্ত্রিক। জীবনযাত্রা তাই স্বাভাবিক ছন্দের বাইরে। আনন্দ- উচ্ছ্বাস, মান- অভিমান, প্রকাশভঙ্গি, ছন্দ- তাল কিছু নেই ।কলহ- বিরহ, চিৎকার- চেঁচামেচি। এটাই এদের নিত্যসঙ্গী । এটাই বস্তির চরিত্র । এটাই এদের জীবনের বৈশিষ্ট্য।
সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর পেটে তরল পদার্থ ঢেলে, মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরা কিছু মানুষের দৈনন্দিন রুটিন। রাস্তায় সারমেয় কুল ও এদের চেনে মাতাল হিসাবে। রাস্তায় এ মাথা ও মাথা করে তার মাতাল হয়ে ঘরে ফেরা দেখে দেখে অভ্যস্ত এরা ।কোনদিন ভদ্র মানুষের মতো হেঁটে এলে, অচেনা লোক ভেবে সারমেয় কুল হাঁক ডাকে ঘিরে ধরে।
আজাদ কলোনি গড়ে উঠেছিলো এই রেললাইন ঘেঁষে নয় নয় করে চল্লিশ- পঁয়তাল্লিশ বছর আগে। সেই ৭০ দশকে পূর্ব পাকিস্তান- পশ্চিম পাকিস্তান যুদ্ধের সময়। অধুনা বাংলাদেশ গঠনের সময়, সেখান থেকে পালিয়ে আসা মুষ্টিমেয় কিছু পরিবার। বাঁশ খুঁটি দিয়ে পলিথিনের ছাউনি করে মাথা গোজার ঠাঁই নিয়েছিলো। প্রথমে জন মজুর খেটে, পরে পরে কেউ কেউ স্টেশন চত্বরে রিক্সা চালিয়ে দিন গুজরান করতো। সেই শুরু, তখন তো কোন নামকরণ হয়নি। রেললাইন বরাবর ফাঁকা ধু ধু জায়গা ।কেউ দেখার নেই ,বারণ করার কেউ নেই ।বহাল তবিয়াতে মানুষ নিজেদের আস্তানা গেড়েছে । আস্তে আস্তে পরিবার বেড়েছে। মানুষ বেড়েছে। নতুন নতুন ঘর করেছে । পলিথিনের বদলে টালির ছাউনি, বাঁশ - খুঁটির বদলে হয়েছে ইটের দেওয়াল।
রাজ্য সরকার বদল হয়েছে। ডান থেকে বাম হয়েছে। গরিব সর্বহারা শ্রেণীর মানুষের জন্য সর্বহারার দল তৈরি হয়েছে। ক্ষমতা বিকেন্দ্রী করণের মাধ্যমে, গ্রামের মানুষের মধ্যে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার শাসন ক্ষমতা- উন্নয়নের ক্ষমতা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারই ফলস্বরূপ ভাসা কাঠের মতো মানুষগুলো স্থায়িত্ব পেয়েছে, রেশন কার্ড পেয়েছে, নাগরিকত্ব পেয়েছে, ভোটাধিকার পেয়েছে, ক্ষমতার অলিন্দে পাকাপাকি জায়গা করা জনদরদী নেতারা আজাদ কলোনি নামকরণে তাদের স্থায়িত্ব দিয়ে, নিজেদের ক্ষমতার স্থায়িত্ব গড়ে নিয়েছে। নয় নয় করে আজ পঁচিশ বছর হয়ে গেলো, আজাদ কলোনির বয়স। পাল পার্বণে মানুষ গুলো উৎসব মুখরিত করে তোলে এই কলোনি। বাচ্চা বড় রঙিন পোশাকে রঙিন হয়ে ওঠে। তেমনই ভোট পার্বণে পার্টির কাগজ সারা কলোনির রাস্তা, আশপাশ রঙিন হয় কাগজে কাগজে। আকাশ ঢেকে যায় রঙিন কাগজের পতাকায়।পার্বণ থাকলে সারাটা দিন মানুষ দৈনন্দিন কাজ ছেড়ে উৎসব পালনে কল্লোলিত করে তোলে কলোনি। আর বাকি দিনগুলো চেনা ছবির মতো, সারাটা দিন কলোনির মানুষ বলতে বাচ্চাকাচ্চা আর গুটিকয়েক মেয়ে লোক। বাকিরা সারাদিন রুজির টানে বাইরে থাকে। ফিরতে ফিরতে সেই রাত্রি নটা- দশটা। রান্না- খাওয়া। কলোনি এখন সন্ধ্যা রাত্রি। নিস্তব্ধ রাত্রি হতে সময়টা মধ্যরাত্রি পার হয়ে যায়।
হাঁটতে হাঁটতে গলির মুখে এসে দাঁড়ালো বড়বাবু। হাতের ইশারায় কনস্টেবল কে ভিতরে ঢুকে ডাকতে আদেশ করলেন। গলির মধ্যে ঢুকে পড়লো কনস্টেবল ভদ্রলোক। বার কয়েক হাঁক পাড়লেন , - আরশাদ- আরশাদ ?
ঘিঞ্জি ঝুপড়ি ঘরের মধ্যে থেকেই উপস্থিতির আওয়াজ এলো।
ক্ষণেকের মধ্যেই সদ্য স্নান সারা, লুঙ্গি শার্ট পরা বছর পঁয়ত্রিশের একজন লোক বের হলো ।পুলিশের উর্দিপরা কনস্টেবল বললো, - তুমি আরশাদ ?
-- হ্যাঁ, বাবু ।
কনস্টেবল বললে, - এসো, স্যার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন।
গলি থেকে বের হয়ে আরশাদ বড় বাবুর মুখোমুখি।
- তুমি আরশাদ ?
- হ্যাঁ স্যার ।
- চলো থানায় চলো। যা বলার সেখানে বলবো।
- কেন স্যার কি হয়েছে?আমার অপরাধটা কি?
- সেটা থানায় গেলেই জানতে পারবে। চলো।
পুলিশের বড়বাবু এসেছে। আরশাদ কে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এক লহমায় বস্তিতে খবরটা রটে গেলো। মুহূর্তে লোকজন বের হলো। বড়বাবু, মেজবাবু ,পুলিশের দলটাকে ঘিরে ধরলো সকলে। বস্তিতে আরশাদের ভাবমূর্তি অনেক পরিচ্ছন্ন। নেশা করে না। কারো সঙ্গে ঝগড়া-ঝাঁটিতে নেই। মানুষের উপকার ছাড়া ক্ষতি করে না। রিক্সা চালকের জীবিকা হলেও আচার-আচরণে একজন সৎ মানুষ বস্তি বাসির কাছে। বয়স্ক মনিরুদ্দীন এগিয়ে গিয়ে বড় বাবুকে বললে, - স্যার কি দোষ করেছে আরশাদ, যে ওকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন ?
- দোষ না করলে কি কাউকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, বড়বাবু একটু ধমক দেবার সুরেই বললেন।
- দোষটা কি, সেটা কি আমরা জানতে পারি স্যার । ওর নামে কি কোন ওয়ারেন্ট আছে? মনিরুদ্দীন একটু শক্ত হতে থাকে।
- সেটা কি আছে বা হবে থানায় গেলে জানতে পারবে। বড়বাবু ভিড় থেকে এগোতে চায়।
চারিদিকে একটা গুঞ্জন কোলাহল। কিছু মানুষ চায় এভাবে আরশাদকে পুলিশ নিয়ে যেতে পারে না। আমরা ওকে নিয়ে যেতে দেব না। কিছু মানুষ চায় আরে ও তো চোর ডাকাত নয়। আর কোন অপরাধ করার মতো মানুষও নয়। থানায় গেলে ভয়টাই বা কি। দেখা যাক না কি হয় ।একজন মন্তব্য করলো, তাহলে অপেক্ষা করো আমাদের পার্টির নেতা কাশীনাথ বাবুকে ডাকা হোক। সে এসে যা করার- বলার বলুক, তবে আরশাদ দাকে পুলিশ নিয়ে যাবে- তার আগে নয়।
রাতের বস্তির পরিবেশ ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকলো। আরশাদের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে কান্নাকাটি জুড়লো, যে কোন মুহূর্তে একটা অঘটন ঘটতে পারে। বড়বাবু ,মেজ বাবু উপলব্ধি করলো। পুলিশের গাড়ি না সরলে জটলা বাড়বে। যে কোন মুহূর্তে তা বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটতে পারে। বড়বাবু একটু চেঁচিয়ে বললে, - ঠিক আছে আমরা আরশাদ কে নিয়ে যাচ্ছি। তোমাদের নেতা লোকজন নিয়ে পরে থানায় এসো। কথা শেষ করে বড় বাবু ভিড় ঠেলে এগিয়ে চললেন গাড়ির দিকে। দুজন কনস্টেবল মেজ বাবু অনুসরণ করলেন বড় বাবুকে। গাড়ি চলে গেল।
কোলাহলে মুখরিত হলো বস্তির চারিদিক। মানুষ রাতের খাওয়া- বিশ্রাম ভুলে গিয়ে ক্রমশ তেতে উঠতে থাকে। বিনা অপরাধে কেন থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হবে? কি অপরাধ ?কেন জানানো হলো না ? প্রশ্নের পর প্রশ্ন যখন বস্তির আকাশে বাতাসে ঘুরপাক খেতে থাকে। বস্তির নেতা কাশীনাথ বাবু এলেন জনা কয়েক সঙ্গী নিয়ে। চেঁচামেচির মাঝেই শুনলেন বক্তব্য। ধীরস্থিরভাবে বোঝালেন সকলকে, আমি এম এল সাহেবের সাথে রাতেই কথা বলবো। যা হবার তো হয়েছে, এখন থানায় গিয়েও লাভ হবে না। কাল সকালে আমরা যাবো, একটা ফয়সালা করে নেবো। আরে বাবা এই ছেলে তো চোর- ডাকাত নয়। তাহলে চিন্তার কি আছে। দোষ না করলে তার তো সাজা হবে না। যাও- তোমরা চিন্তা করো না, রাতে খাওয়া- দাওয়া করে ঘুমাও। কাল সকালে, সকলে থানায় যাওয়া হবে। সেখানে মীমাংসা করে নেবো আমরা।
থানার সামনে কালো গাড়িটা এসে দাঁড়ালে, বড়বাবু নেমে সটান নিজের চেম্বারে ঢুকে গেলো।
আরশাদকে একটু পরেই নিয়ে গেলো দুই কনস্টেবল আর মেজবাবু। আরশাদকে সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে কনস্টেবল দুজন বেরিয়ে এলো বড় বাবুর ঘর থেকে।
- আরশাদ দুহাত জোড় করে বড়বাবুকে
বললে, - আমার অপরাধ কি স্যার। আমাকে যে ধরে নিয়ে এলেন ?
- গত পরশুদিন - মানে সোমবার রাতে, এক অসহায় মেয়েকে আশ্রয় দেবার নাম করে এনে, ফুর্তি নিয়েছিলে মনে পড়ে ? বড়বাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
প্রতিবাদের সুরে বলে আরশাদ, - কি বলছেন স্যার! ম্যাডামকে থাকার ব্যবস্থা করে দেন স্টেশন মাস্টার সাহেব। আমার ঘরে সম্মানের সঙ্গে ছিলো। উনি যদি আমার সামনে বলেন, আমি ফাঁসি যেতে রাজি।
- সত্যবাদী যুধিষ্ঠির না । বড়বাবুর হাতের রুলটার কয়েকটা ঘা পড়লো, আরশাদের পিঠে- পাছায়।
ঘটনার বিহ্বলতায় আরশাদ কুঁকড়ে গেলো। অপরাধী নয় একথা প্রমাণ করার জন্য আকুল আকুতির চেষ্টা, কোন শব্দ হয়ে মুখ দিয়ে ঝরে পড়লো না। ঝরে পড়লো দু চোখের কোন বেয়ে জলের ধারা।
_ বড় বার বেড়েছিস না। অসহায় মানুষকে সাহায্য করা , আবার বেছে বেছে মেয়েমানুষ হলে তো কথাই নেই। টাকাগুলো কি করেছিস? বড়বাবুর কর্কশ শব্দ আর হাতের রুলবাড়ি সমানে গর্জে উঠলো।
- কোন টাকা-পয়সা আমি নেইনি বাবু। এতো ছোটলোক আমি নই। অঝোর নয়নে কাঁদতে থাকে আরশাদ। মানুষকে সাহায্য করা আমার ধর্ম, তাই করি বাবু।
- তোর উপকারের ফিরিস্তি কোর্টে গিয়ে দিবি, কাল চালান দেবো তারপর বুঝে নিবি। বেল বাজালো বড়বাবু । কনস্টেবল ঢুকলো ঘরে। বড়বাবু বললে, - একে লকআপে রাখুন। রাতের খাবার দিন। মুখার্জি বাবুকে বলুন, কাল সকালে চালান হবে কাগজপত্র ঠিক করে রাখতে।
- কোন অন্যায় না করেও জেল খাটতে হবে এ কেমন বিচার স্যার ? তাহলে ইনসাফ বলে কিছু থাকবে না ?
কনস্টেবল নিয়ে গিয়ে একটা লকআপে ঢোকালে। দুজন মাঝ বয়সী লোক ভিতরে বসে। তাদের আসার কারণ জানেনা আরশাদ। চোখের জল মুছে এক কোণে গিয়ে বসলো। বাড়ির কথা, ছেলে- মেয়ের কথা, রিজিয়াকে খুব মনে পড়ছিলো তার। তারা নিশ্চয়ই কাঁদছে সারারাত। বস্তির অন্য মানুষগুলো তার এই কান্ড নিয়ে কি ভাবছে। দুচোখ ভরে গেলো জলে। কেউ কি কোন সাহায্য করবে না এই বিপদে। হায় আল্লাহ তুমি তো জানো- আমি কোন অন্যায় করিনি! শাস্তি যদি পেয়েই থাকি, অন্যায় না করেও- খোদা তুমি এর বিচার করো।
রাতের বরাদ্দ খাবার সবজি- রুটি আরশাদ মুখে তুলতে পারল না। বাড়িতে বউ-বাচ্চার কথা ভেবে। তারা হয়তো রান্না ভাত মুখে তোলেনি। বাচ্চারা সারাটা রাত না খেয়ে থাকবে আর তার মুখে খাবার উঠবে কি করে। হায়রে নসিব, সারাটা দিন পরিশ্রম করে রাত্রে বাড়ি ফিরে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে বউ বাচ্চা নিয়ে খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নেবার বদলে- বিনা দোষে থানার লকআপে রাত্রি যাপন । দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি আরশাদ।
রিজিয়া চোখের জলে বুক ভাসিয়েছে, দাঁতে কাটতে পারেনি কোন খাবার। ছেলে- মেয়েকে খাইয়ে, ঘুম দিয়ে - চুপচাপ বসে রাত্রে চোখের জলে আঁচলের কাপড় ভিজিয়েছে। বস্তি-বাসি পুরুষ- মহিলা সমবেদনা জানাতে কসুর করেনি। একটা অঘটনের সন্ধে। একটা ভুলে ভরা সন্ধে। রাত্রিকে কতোটা কলুষিত করতে পারে, এমন কোন ধারণাই এই খেটে খাওয়া গরিব গুর্বো মানুষগুলো জানতো না । অচেনা আজকের সন্ধ্যে ।কল কাকলীতে রাত্রি গহীন হলেও মানুষগুলো স্বাভাবিক হতে পারছে না। হওয়া যায় না। বস্তির আকাশ বাতাস একটা অজানা আতঙ্কে শিউরে আছে। ভেতরে ভেতরে একটা গুমোট তৈরি হচ্ছে।
- কাশিনাথ বাবু কেন সঙ্গে সঙ্গে গেলো না ? আমরা তো যেতে চেয়েছিলাম। ওসমান নামের ছেলেটা বার কয়েক বেশ ঝাঁঝের সঙ্গেই বললে।
- আসলে নেতারা আমাদের কাজে লাগায়। আমাদের কাজে লাগে না। শওকাতের ছেলেটা বেশ প্রতিবাদে সুরে বললো।
গনি খাঁন বস্তিতে একটু নেতাগুলোর কাছাকাছি থাকে। নেতাদের হয়ে তার গলার স্বর প্রশ্নের উত্তর হবার চেষ্টা করে।
- আসলে রাত্রিবেলা থানায় অনেক লোক নিয়ে যাওয়া একটু রিস্ক হয়ে যায় না। কোন অঘটন ঘটলে সামাল দেবে কে ?
- তাহলে আরশাদ ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া অঘটন নয় ? শওকতের ছেলের জিজ্ঞাসা।
- ঘটনাটা কি তা তো জানতে হবে ? না জেনে বলবে কে বলো ? গণির উত্তর।
- তাহলে বিনা দোষে লোকটা সারারাত লকআপে থাকবে ? আহার জুটবে কিনা কে জানে ! চোর না হয়ে ও চোরদের সঙ্গে রাত কাটাবে লোকটা ?
- আরে, বাবা । ঘটনাটা তো ঘটেই গেছে। কাল সকালেই সমাধান হয়ে যাবে। তাছাড়া কাশীদা তো বলেও গেলো, সকালেই আসবে। আমরা যেন তৈরি থাকি। নেতার মতোই- বোঝানোর কায়দা গণি খাঁনের।
উত্তপ্ত আবহাওয়া সহসা স্বস্তিদায়ক হয় না। সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত গুঞ্জন কোনোদিন থামে না। গুঞ্জনের স্বর আজাদ কলোনির রাতের আকাশের রং ভোরের আলো ফোটা দেখেছে। বিনিদ্র রজনী এদের কাটে পাল পার্বণের রাতে । ভোটদানের আগের রাতে। কিন্তু আজ রাত্রিটা বড়ই বিপদের। বড়ই আক্ষেপের।
সকালের আলো দেখার অপেক্ষায় থাকা আজাদ কলোনির মানুষগুলো জড়ো হতে থাকলো। ছাতিম তলায় ল্যাম্পপোস্টের গা ঘেঁষে আবেদ নস্করের চায়ের গুমটি। আজ জমজমাট ভিড়। কথার কল বলানিতে সরগরম পুরো চত্বর। একটু পরেই কাশিনাথ বাবু এসে গেলেন, সঙ্গে জনকয়েক পার্টি কর্মী । দোকানের চায়ের গ্লাস হাতে দিতেই কয়েক চুমুকে শেষ করেই- দলবল নিয়ে অভিযান থানা।
থানার সামনের চত্বর বোঝাই লোক। সকলকে চুপচাপ দাঁড়াতে বলে, কাশিনাথ কজন সঙ্গী নিয়ে থানায় ঢুকলেন।
ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখের অফিসারের টেবিলের সামনে গিয়ে কাশিনাথ বাবু বললেন, - আমি বড় বাবুর সঙ্গে দেখা করতে চাই।
- উনি একটু বেলায় আসবেন। তখন আসবেন, তাহলেই দেখা হয়ে যাবে।
- আমার দরকার এখন। গতকাল রাতে বিনা কারণে আমাদের একজন কর্মীকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। কাশিনাথকে থামিয়ে ডিউটি অফিসার বললেন, - পুলিশ কোনদিন কারণ ছাড়া কাউকে ধরে না।
- কারণটা জানতে পারি কি? এক পার্টি কর্মীর শান্ত আবেদন।
- নিশ্চয়ই জানতে পারবেন। স্যার, আসুন অফিসে। বাইরে একটু অপেক্ষা করুন।
- অপেক্ষার সময় নেই। এমএলএ শ্রীহরি সামন্ত এখনোই জানতে চেয়েছেন গ্রেফতারের কারণ। উপযুক্ত কারণ ছাড়া গ্রেপ্তার হলে, আপনাদের কপালে দুঃখ আছে। কাশীনাথের ধমক কিছুটা।
- তাই বুঝি ! কিছুটা সোজা হয়ে বসলেন ডিউটি অফিসার। আপনারা বসুন, আমি স্যারের সঙ্গে কথা বলছি, উনিতো কোয়াটারে আছেন।
মোবাইলের বোতাম টিপে কানে রাখলেন সেটা। রিং বাজার কয়েক সেকেন্ডেই ঝিনঝিন আওয়াজ , -হ্যাঁ বলুন ?
স্যার, গত রাতে যেটা এরেস্ট হয়েছে বস্তি থেকে। এমএলএ শ্রী হরি সামন্ত তার পার্টির লোক পাঠিয়েছে কারণ জানতে। ওকে নাকি বিনা কারণে ধরা হয়েছে।
- ওদেরকে ডায়েরি নাম্বার দেখে কারণ বলুন ।আর বলে দিন ,যা বলার কোর্টে গিয়ে বলতে। এগারো টায় কোর্টে চালান যাবে সব আসামিদের সঙ্গে। ঠিক আছে, বলে ফোনটা কেটে দিলেন বড় বাবু।
ডিউটি অফিসার ডাইরি বুক খুলে চোখ বোলালেন। তারপর মাথাটা তুলে কাশিনাথ বাবুকে বললেন, - নারীঘটিত ব্যাপার। আশ্রয় দেওয়ার ছলে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে এক মহিলাকে। তার স্বামীর অভিযোগ পেয়ে এই গ্রেপ্তার।
-- যে কেউ, যে কারো নামে অভিযোগ করলেই- তাহলে তাকে গ্রেফতার করবেন ? কোন ইনভেস্টিগেশন। সত্যতা যাচাইয়ের প্রয়ো