Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

ট্যাটুর ইতিহাস ও আমরা | ট্যাটু ব্যবহারের কিছু কারণ | History of Tattoo | Reasons for using tattoos

ট্যাটুর ইতিহাস ও আমরা

- প্রবোধ কুমার মৃধা


বাংলা উল্কি শব্দের ইংরেজি পারিভাষিক শব্দ হলো ট্যাটু (tattoo)Tattoo শব্দটির উৎপত্তি পলিনেশিয় (প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ) শব্দ tatau (তাতাউ) থেকে। শব্দটি তাহিতি দ্বীপে ব্যবহৃত 'তাউতি 'শব্দের অনুসারী বলে অনুমান, যদি ও মতান্তর আছে। 'ট্যাটু' শব্দটি ইউরোপে আমদানি করেছিলেন ক্যাপ্টেন কুক। তাহিতি দ্বীপপুঞ্জ থেকে একজন পলিনেশিয়ান নিয়ে আসেন। সময়টা ছিল ১৭৬৯ শতক। মূল পলিনেশিয় ভাষায় 'ট্যাটু' শব্দের অর্থ 'নিয়ম অনুসারে তৈরি।' পৃথক অর্থে 'আঘাত করা।'

ট্যাটুর ইতিহাস | History of Tattoo

ট্যাটুর ইতিহাস অতি প্রাচীন। শব্দটি তখন উল্কি নামে সমধিক পরিচিত ছিল। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় প্রথম 'ট্যাটু'শব্দটি ব্যবহার করেন। গবেষকদের মত অনুসারে আদিম যুগের সমাজ ব্যবস্থায় ট্যাটুর চল ছিল। তবে তা কেবল একটি অলংকার হিসেবে নয়, কোন উপজাতি, গোষ্ঠী বা টোটৈমের চিহ্নরূপে কাজ করত। বিশ্বের বহু দেশে, বিশেষ করে ভারত, পলিনেশিয়া, জাপান, চীন এবং আমেরিকায় বহু প্রাচীন কাল থেকে উল্কির প্রচলন ছিল।

ট্যাটু বা উল্কির ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যায় এই ট্যাটুর প্রচলন শুরু হয়েছিল খ্রিষ্ট জন্মের প্রায় দু'হাজার বছর আগে থেকে। প্রাগৈতিহাসিক যুগে কাঠ বা পাথরের উপর আঁকা নক্সা বা 'মার্ক' মানুষ জনকে বিমুগ্ধ করত। ফলস্বরূপ অনুরূপ নক্সা বা চিত্র আপন অঙ্গে আঁকার প্রতি উৎসাহীরা আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। মানুষের সংস্কৃতির ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে জানা যায়,মানব সভ্যতার উন্মেষলগ্ন থেকেই উল্কির ব্যবহার শুরু হয়েছিল। কয়েক দশক পিছিয়ে গিয়ে যদি 'ট্যাটু'বা উল্কির উৎস খুঁজতে চাই তাহলে দেখা যাবে,এক সময় ট্যাটু বিভিন্ন আদিবাসীদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অঙ্গ ছিল। অক্ষয় কুমার দত্তের লেখা, 'Tattoo- a tribal heritage' গ্ৰন্থে যার বিশদ বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে।

ট্যাটুর উদ্ভব সম্পর্কে প্রচলিত আছে নানা মত। সর্ব প্রথম ট্যাটু আবিষ্কৃত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৭০ ও ৩১০০ সনের দিকে। তখন কার্বনের কালিতে ডট দিয়ে আঁকা হতো। ট্যাটুর ইতিহাস ন্যূনতম ৬০,০০০ বছরের পুরনো। মিশরীয় পিরামিড খননের সময় প্রায় হাজার বছরের পুরনো মমিগুলির শুকনো ত্বকে আঁকা উজ্জ্বল ট্যাটুগুলিই সবচেয়ে প্রাচীন বলে প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা। ইতিহাস বলছে, মিশরীয়রা তখন কেবলমাত্র ফারাও ও সবচেয়ে ক্ষমতাশালী পুরোহিতদের উল্কি আঁকতেন। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে ইউরোপীয়ান-অস্ট্রিয়ান সীমান্তে আল্পস পর্বতমালায় 'ওটং' উপত্যকায় পাওয়া পুরনো নবপোলীয় যুগের 'ওটং দি আইসম্যান'-র শরীরে স্থায়ী ট্যাটুর নিদর্শন পাওয়ার পরবর্তী সময় থেকে ট্যাটুর ইতিহাসে আসে পরিবর্তন। বরফম্যানের বয়স কার্বন ডেট অনুসারে প্রায় পাঁচ হাজার দুশ'বছর ছিল, আর এর থেকে ট্যাটুর প্রাচীনত্ব বিষয়ে একটা ধারণা লাভ করা যায়। ইন্দোনেশিয়ায় ও পলিনেশিয়ায় যেখানে ভারতীয় উপজাতিদের বাস সেখানে উল্কির প্রচলন চলে আসছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে। ট্যাটুই সেখানকার সামাজিক তাৎপর্যের সর্বোত্তম নৃতাত্ত্বিক নিদর্শন। এমন কি ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গলে বসবাসকারী যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন নাগা জাতির জীবনের সঙ্গে ও ট্যাটু জড়িত ছিল।

ট্যাটু ব্যবহারের কিছু কারণ | Reasons for using tattoos:

(১) আকুপাংচার যেমন রোগ নিরাময়ের একটি পদ্ধতি রূপে গণ্য হয় (যে পদ্ধতির উদ্ভাবক ছিল চীন) তেমনি উল্কি বা ট্যাটুকে একসময় রোগ নিরাময়ের উপায় বলে লোকের বিশ্বাস ছিল।

(২) এক সম্প্রদায় থেকে আর এক সম্প্রদায়কে পৃথক করে চিহ্নিত করার তাগিদে ট্যাটুর প্রচলন ছিল।

(৩) প্রাচীন কালে লোকেরা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে তাবিজ-কবজ বা অলংকারের বিকল্প রূপে ট্যাটু ব্যবহার করতেন।

(৪) ট্যাটু প্রচলনের কারণ কেবলমাত্র সখ নয়, নিজেকে অন্যের থেকে পৃথক এবং উত্তম করে উপস্থাপনের জন্য ট্যাটু আঁকা হতো।

(৫) যুগ যুগ ধরে মানুষ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে শরীরে ট্যাটু আঁকিয়েছে। সামাজিক পদ মর্যাদার চিহ্ন হিসেবে, কখনো বা ভালোবাসার স্মারক হিসেবে। এছাড়া ও বিশ্বের বহু দেশের বহু জাতি পৃথক পৃথক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ট্যাটুর ব্যবহার করতেন। 

গ্ৰীকরা তাদের গুপ্তচরদের এনক্রিপ্ত করা উল্কিতে চিহ্নিত করে রাখতেন। রোমানরা অপরাধী এবং দাসেদের চিহ্নিত করতে উল্কির ব্যবহার চালু করেন। ধনী রোমান নাগরিকরা নিছক বিনোদনের কারণে ক্রীতদাস ট্যাটুর প্রচলন করলে রোমান সম্রাট ক্যাডিগূলা তাকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং খুশি হয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ডের 'মাউরি' উপজাতিরা মুখোশের মতো ট্যাটু ব্যবহার করতেন, যাকে বলা হতো 'মোকো।' উত্তর আমেরিকার প্রায় সমগ্ৰ উপজাতি এক‌ই রকমের একটি উল্কি ব্যবহার করতেন।

ইতিহাস বলছে দারিয়াসের সঙ্গে যুদ্ধকালে দখলিকৃত এলাকাগুলিতে ডেটা প্রেরণের উদ্দেশ্যে ট্যাটুর ব্যবহার করা হতো। ট্যাটুকে একটি ঐতিহ্যশালী শিল্প বলে জাপানিরা মনে করতেন। আইনু জাপানি মহিলারা ট্যাটুর সাহায্যে তাদের বিবাহিত জীবনের পরিচয় নির্দেশ করতেন। মুখে, ঠোঁটে , চোখের পাতায় খোদিত ট্যাটুই ইঙ্গিত করত একজন মহিলা বিবাহিতা কি না, এমনকি কতগুলি সন্তানের জননী তার ও সঙ্কেত পাওয়া সম্ভব হতো। চীনে সম্ভ্রান্তদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ট্যাটুর প্রচলন ছিল। অনেকের মতে ট্যাটু আঁকার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল চিকিৎসা।যদি ও চীনারা ট্যাটু বিরোধী ছিলেন, তবু শরীরে ড্রাগন ও সাপের ট্যাটু আঁকতেন এই বিশ্বাসে যে, ড্রাগন হলো তাদের পূর্ব পুরুষ এবং তাদের রক্ষাকর্তা। এই সমস্ত প্রাণীকে তারা দেবতার প্রতিরূপ বলে ধারণা করতেন। ট্যাটুর ভিতর দিয়ে যেমন এক ধরণের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে তেমনি ট্যাটুর মধ্যে নিহিত আছে এক রহস্যময় শক্তি। এই বিশ্বাসে থাইল্যান্ড বাসীরা শরীরে ট্যাটু আঁকাতেন।

মানব জাতির সাংস্কৃতিক ইতিহাসে ট্যাটু পদ্ধতিটি বহু পুরনো এবং প্রত্যেক জাতি কমবেশি ট্যাটুর ব্যবহার করে এসেছেন। তবে বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে ট্যাটুর প্রচলন চালু ছিল। আলতাই পর্বতমালায় খননের সময় একজন সিরিয়ান নেতার মমি প্রত্নতাত্ত্বিকেরা পেয়েছিলেন,যে মমিটি ট্যাটু দিয়ে আবৃত ছিল। ঘটনাটি খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ-৫ম শতকের। প্রাচীন ভারতে একটা লোকবিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে উল্কি মানুষের দেহের স্থায়ী অলংকার। মৃত্যুর পর যেগুলি বিক্রি করে অবলীলায় স্বর্গারোহণ সম্ভব হতো। এছাড়া পুরাকালে পরাজিত শত্রুর সংখ্যা চিহ্নিত করতে ট্যাটুর ব্যবহার করতেন। অনেক বৈষ্ণব এবং শাক্ত ভিক্ষুক,যারা নিজেদের শরীরে 'হরে কৃষ্ণ হরে রাম' বা 'হর হর মহাদেব' ইত্যাদি লেখা উল্কি এঁকে রাখতেন। বেনারস এবং পুরীতে হিন্দি ও ওড়িষা ভাষায় দেব নামাঙ্কিত বিশেষ ধরণের উল্কির চল আছে।কথা শিল্পী শরৎচন্দ্রের 'দেবদাস' উপন্যাসে দেবদাসের হাতে নামাঙ্কিত উল্কি পাঠক মাত্রেই স্মরণে রেখেছেন। 'জয়বাবা ফেলুনাথে'র সেই মছলিবাবার  হাতে এরোপ্লেন মার্কা  উল্কি দেখে ফেলুদা তাকে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। বিশ্বের প্রায় সব দেশের সাহিত্যে কমবেশি উল্কির উল্লেখ পাওয়া যায়।

আটের দশকের শেষের দিকে আমেরিকা ও ইউরোপ মহাদেশ জুড়ে ট্যাটু নিয়ে বিরাট আলোড়ন ও উন্মাদনার সৃষ্টি হয়, তার উত্তাল ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে ভারতে তথা আমাদের কলকাতা শহরে। প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বাঙালি মেয়েদের ঘাড়ের পাশে রঙিন এক জোড়া মাছ বা কলার বোন সংলগ্ন ছোট্ট একটা প্রজাপতি আঁকা উল্কি উঁকি দিতে শুরু করে। আর বাঙালি পুরুষদের ট্রাইসেপ মাস্‌লের পিছনে ফুটিয়ে তুলতে দেখা যায় জিভ বের করা একটি থ্রি-ডি-ড্রাগন।

বর্তমানে ট্যাটুর প্রচলন বিরাট ও ব্যাপক ফ্যাশনে রূপান্তরিত হয়েছে।পদ্ধতি ও প্রকরণের ক্ষেত্রে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, এসেছে বৈচিত্র্য। গোদুগ্ধ বা গোমূত্র সহযোগে কাঁটা গাছের কাঁটা দিয়ে উল্কি আঁকার যুগ পেরিয়ে ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে স্যামুয়েল ও রোমির কল্যাণে যে ইলেকট্রিক ট্যাটু মেশিন তৈরি হয়েছিল, বর্তমানে তাতে ও ঘটেছে ব্যাপক উন্নত মানের কারিগরি।

একটা সময় পোষ্য জীব-জন্তুর শরীরে ট্যাটু তথা মার্ক এঁকে চিহ্নিত করণের ব্যবস্থা ছিল। আমাদের ছাত্র জীবনের প্রথম দিকটায় অর্থাৎ পাঁচের-ছয়ের দশকের দিকে গ্ৰামে-গঞ্জে,হাটে-বাজারে ধান বা চাল জাতীয় পণ্য পরিবহনের জন্য চক্রযানের অপ্রতুলতার কারণে বল্‌দে (বলল) গরুর সাহায্য নেওয়া হতো। হাটে পৌঁছানোর পর বিশ্রামের জন্য তাদেরকে যেখানে রাখা হতো, সেখানে যা'তে স্ব স্ব বলদকে চিহ্নিত করা যায় তার জন্য প্রায় বলদের পাছায় বা মুখের এক পাশে কলকে পুড়িয়ে বা লোহার ছোট বলয় পুড়িয়ে স্থায়ী একটা বা দুটো পোড়া মার্কে চিহ্নিত করে রাখা হতো যা ছিল উল্কির নামান্তর।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য, ট্যাটুর পাশাপাশি মেহেদি/মেহেন্দি-র ব্যবহার চলে আসছে বহু প্রাচীনকাল থেকে। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় মেহেদি উদ্ভিদের রস থেকে প্রস্তুত রঞ্জক পদার্থ দিয়ে অস্থায়ীভাবে ত্বক, নখ ও চুল রঞ্জিত করার চল ছিল। পৃথিবীর বহু দেশে মেহেদির ব্যবহার রয়েছে। বয়স্ক লোকেরা মেহেদি দিয়ে সাদা ও পাকা চুল দাড়ি রং করে থাকেন।

ট্যাটু বিষয়ক কিছু জ্ঞাতব্য তথ্য:

  •  শরীরে ১০০% ট্যাটু করিয়ে 'গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে 'ঠাঁই করে নিয়েছেন গ্ৰেগরি পর ম্যাকলরেন‌ নামের এক ব্যক্তি।যিনি তাঁর কানে এবং চোখের পাতায় পর্যন্ত ট্যাটু আঁকিয়েছিলেন।
  • হরপ্রকাশ নামের ৭০বছর বয়সী এক ভারতীয় নাগরিক শরীরে ৩০৫ টি দেশের পতাকার ট্যাটু এঁকে 'গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড 'বুকে নাম তোলার বিরল সম্মান অর্জন করেন।
  • পৃথিবীর প্রাচীনতম ট্যাটু আর্টিস্ট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন ফিলিপাইনের কলিঙ্গ দেশের অধিবাসী ১০৪ বছর বয়সের এক কলিঙ্গ নারী।
  • বর্তমান বিশ্বের প্রায় ৫৮% - ৬০% নারীর শরীরে কম করে একটি ট্যাটু দেখতে পাওয়া যাবে। তুলনায় ৪১% পুরুষের শরীরে ট্যাটু দৃশ্যমান।
  • গড়ে একটি ছোট্ট ট্যাটুর মূল্য ৪৫ ডলার। বড় ট্যাটুর ক্ষেত্রে গড়ে ১৫০ ডলার।
  • বিশ্বে সর্বাধিক মূল্যবান ট্যাটুর দাম ৯ লক্ষ ২৪ হাজার ডলার।যে ট্যাটুতে কোন রকম কালির ব্যবহার নেই, মোট ৬১৩ ডায়মন্ড স্টোন দ্বারা নির্মিত। (যদিও এখন ও গ্ৰাহকহীন)
  • বিশ্বের সর্বাধিক ট্যাটু ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে প্রথম স্থান দখল করে আছে নিউজিল্যান্ড।
  • ইরান, তুর্কি, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, আফগানিস্তান প্রভৃতি বেশ কয়েকটি দেশে ট্যাটুর প্রচলন পুরোপুরি অথবা আংশিক নিষিদ্ধ আছে।
  • পৃথিবীর ধনী ট্যাটু আর্টিস্ট হলেন স্কট ক্যাম্পবেল। প্রতি ঘন্টায় তার মজুরি হাজার ডলার। তিনি সপ্তাহে একদিন ট্যাটু আঁকতেন।

বর্তমানে আমাদের দেশে ট্যাটুর ট্রেন্ড বাড়ছে ঝড়ের গতিতে। আধুনিক তরুণ প্রজন্ম ট্যাটুতে মশগুল হয়ে পড়েছে। গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের খ্যাতনামা শিল্পী, অভিনেতা, ক্রিকেটার ইত্যাদি প্রিয় নায়কদের অনুকরণে উঠতি বয়সের তরুণ -তরুণীরা ট্যাটুর প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট। সুস্থভাবে দীর্ঘ জীবন লাভের পথে যে বিষয়গুলি অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে আধুনিক সভ্য, শিক্ষিত নাগরিকবৃন্দের প্রবণতা সেই দিকেই ছুটে চলেছে প্রবল বেগে। বড়োদের দেখাদেখি নবীন প্রজন্ম ও পিছিয়ে থাকছে না। ন‌ইলে পুজো উপলক্ষে নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ বা মূল্যবান অলংকারের পরিবর্তে শরীরে পছন্দ মতো ট্যাটু বানাবার জেদ ধরে কেঁদে কেটে তা আদায় করে ছাড়ছে।জামা-জুতো-ব্যাগ-ছাতা কিছুই না, ট্যাটুই চাই! এক কথায় বর্তমান সামাজিক যাপন প্রণালীতে অল্প বয়সীদের ট্যাটু উন্মাদনার পাশাপাশি বড়োদের মধ্যে ও দেখা যাচ্ছে ট্যাটু ফোবিয়া। তারাও আজ সর্বাধুনিক এই ফ্যাশনটির নেশা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে পারছেন না। 

অধিকাংশের ধারণা ট্যাটু পাশ্চাত্য প্রভাবের বিষম ফল। কথাটাকে এককথায় মেনে নেওয়া উচিত হবে না, কারণ আমাদের সভ্যতার ইতিহাসে বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে ট্যাটু-সংস্কৃতির ধারা চলে আসছে। আর পাশ্চাত্যে ট্যাটুকে প্রচলিত ধ্যান ধারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ দেখা হয়ে থাকে, যেখানে আমাদের দেশে নিছক ফ্যাশন হিসেবে গ্ৰহণ করা হয়। অত‌এব পাশ্চাত্য প্রভাব বলে দাগিয়ে দেওয়াটা পুরোপুরি ঠিক হবে না। তবে বলা চলে, বিশ্বায়নের ফলে শিক্ষা,সভ্যতা, কালচার প্রভৃতির ব্যাপক আদান-প্রদানের দৌলতে পাশ্চাত্যের অনেক কিছুর মতো এই ট্যাটু প্রবণতার হিড়িকটা হঠাৎ বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে।হালে যে ট্যাটুগুলি সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ক্রিষ্টাল ট্যাটু, ডিক্যানাস এবং গ্লিটার ট্যাটু। যুগে যুগে শৌখিন মানুষদের যত রকম বিন্যাস প্রক্রিয়া প্রচলিত আছে, যেমন - কেশ বিন্যাস,বেশ বিন্যাস ইত্যাদি বহ প্রকার বিন্যাসের তালিকায় বর্তমানে ট্যাটুই সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় বিন্যাসের স্থান দখল করেছে।

      আধুনিক বিশ্বে ট্যাটুর কদর উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, তারা ট্যাটুতে মুগ্ধ, অভিভূত, দিশেহারা। ট্যাটু আজ শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।ট্যাটু আক্রান্তদের সংখ্যা দিন দিন চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চলেছে। বহু শিক্ষিত বেকার ছেলে মেয়ে ট্যাটু নিয়ে হাতে-কলমে শিক্ষার কাজে যুক্ত হয়ে পড়ছে। পাশ্চাত্যে যখন থেকে ট্যাটুর প্রচলন শুরু হয় তখন এর ধারক ছিলেন নাবিকগণ। ১৯৭০ শতকে এটি পশ্চিমা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। চলে আসছে সেই থেকে। একদিকে ট্যাটুর ভবিষ্যৎ অগ্ৰগতির সম্ভাবনা অতি উজ্জ্বল। অপর দিকে ট্যাটুর পরিণাম নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সতর্কবাণী, এই দুয়ের মাঝে পড়ে অনেকেই হয়তো দোলাচলে।


প্রবোধ কুমার মৃধা | Probodh Kumar Mridha


আধুনিক কবিতা ও অনুবাদ কবিতা | কবিতার অনুবাদ ও ভাবানুবাদের প্রভাব | কবিতার জনপ্রিয়তা ও পাঠক সংখ্যা হ্রাস

গদ্য অপেক্ষা কবিতার আধিক্য কেন? | কবিতার কাঠামোগত রূপান্তর | অণু কবিতা | গদ্য কবিতা | প্রচলিত কবিতা | প্রবন্ধ ২০২২ | Article 2022

কবিতা কি ও কেন এবং তার ইতিহাস - প্রবোধ কুমার মৃধা | প্রবন্ধ ২০২২ | Article 2022

শিক্ষকদের সম্মানে শিক্ষক দিবস | Teacher's Day Special 2022 | প্রবন্ধ ২০২২ | Article 2022

রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতীকের অর্থ | নক্‌শা ও তাৎপর্য | প্রবোধ কুমার মৃধা | প্রবন্ধ ২০২২ | Emblem of Ramkrishna Mission | Article 2022


ট্যাটুর ইতিহাস ও আমরা | ট্যাটুর ইতিহাস | ট্যাটু ব্যবহারের কিছু কারণ | ট্যাটু বিষয়ক কিছু জ্ঞাতব্য তথ্য | পৃথিবীর প্রাচীনতম ট‍্যাটুর ইতিহাস ও বিবরণ | ট্যাটুর ইতিহাস - অ্যাডিসন অ্যান্ডারসন | ট্যাটুর ইতিহাস | ট্যাটু করতে চান? | ট্যাটু সম্পর্কিত বিস্ময়কর যত



This post first appeared on Shabdodweep Web Magazine, please read the originial post: here

Share the post

ট্যাটুর ইতিহাস ও আমরা | ট্যাটু ব্যবহারের কিছু কারণ | History of Tattoo | Reasons for using tattoos

×

Subscribe to Shabdodweep Web Magazine

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×