অন্যায় কর্মের করুন পরিণতি
- রূপশঙ্কর আচার্য্য
ছোটবেলা থেকে অপু তাদের বাড়ির কিছুটা দুরে একটি পোড়ো মন্দিরে তার বাবাকে আর কয়েকজন লোককে একসঙ্গে জাকজমক করে পুজো করতে দেখত। ছোটোবেলায় শৈশবকালে অপু বুঝতে পারত না পুজো কাকে বলে? যজ্ঞ কাকে বলে? কেন ঝাঁঝর, কাঁসি, ঘন্টা বাজে? শৈশবকালে তার মনে এই ধরণের কৌতূহল থাকত, সংশয় জাগতো। কখনও মাঝে মাঝে খেলতে খেলতে ওই দৃশ্য চোখে পড়লে ছুটে এসে মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ত। মায়ের আঁচল ধরে জিজ্ঞাসা করত ওই পোড়ো মন্দিরে কয়েকজন লোকের সাথে বাবা কী করছে? ঝাঁঝর, কাঁসর বাজছে কেন? মা কিন্তু সঠিকভাবে তাকে উত্তর দিতে পারত না। কিন্তু কি করবে কৌতূহলী মনে শিশুটিকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য ধমক দিয়ে সরিয়ে দেবে? একবার দুবার তা করেছে। এর ফলে অপু যেকোন কথা যদি তা গুরুত্বপূর্ণও হয় ভয়ে তার মাকে বলতো না, মা বুঝতে পারত অপুর মনের কষ্ট, যন্ত্রণা।
Related Articles
মা তার ছোট্ট অপু কে ধমক দেওয়ার কারণে সে তার মনের মধ্যে কৌতূহল জেগে উঠলেও কৌতূহলীবশত আমাকে মানে তার নামে কোনো প্রশ্ন করত না। তাই মা কাছে ডেকে গল্পের মাধ্যমে তাকে বন্ধুর মতো স্নেহপরায়নতার মধ্য দিয়ে কৌতূহলী প্রশ্নের অপ্রাসঙ্গিক কিছু যুক্তি দিয়ে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করত।কিন্তু কখনই মূল বা আসল ঘটনা বলত না।
ধীরে ধীরে অপু বড়ো হল। সে বুঝতে পারল যে তার বাবা একজন দস্যু। ওই পোড়ো মন্দিরে মহাকালীর যাগযজ্ঞ পূজা আরাধনা করার পর তার বাবা চলে যেত একটি সুনির্দিষ্ট বড়ো দীঘির পাড়ে। যা প্রায় প্রত্যেকেরই এমনকি অপু ও অপুর মায়ের অজানা।
ওই দীঘির পাড়ের ধার দিয়ে একটি রাস্তা চলে যেত শহরের দিকে। খুব সহজেই গ্রাম থেকে সহজে শহরে যাওয়ার জন্য ওই রাস্তাটি উপযোগী ছিল। তাই প্রায় সকলেই সূর্যের আলো থাকাকালীন গ্রাম থেকে শহরে বা শহর থেকে গ্রামে যাতায়াতের জন্য ওই রাস্তাটি বা ওই বড়ো দীঘির পাড়টি ব্যবহার করত। বিকেল হয়ে যাওয়ার পরে খুবই ভয়ে ভয়ে তাড়াহুড়ো করেই রাস্তাটি অতিক্রম করতে হত। কারণ সন্ধ্যে হয়ে গেলে ওই জায়গাটি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠত। যা ছোট্ট অপুর বাবা এবং তাদের আরও সাঙ্গপাঙ্গ দস্যুবৃত্তি করা লেঠেলদের অত্যাচারে জায়গাটা আরও আরও বেশি ভয়ঙ্করী জায়গা হয়ে উঠত। সন্ধ্যের পর যদি ভুলবশত কোনো মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে যেতে থাকে বা শহর থেকে গ্রামে যাবে এমন মানুষ ঠিকানা জানে শর্টকাট রাস্তা জানে, কিন্তু জানে না সন্ধ্যের পর ওখানে এত বড়ো ভয়ংকর কিছু ঘটতে পারে। ডাকাতের, ঠ্যাঙারের মারধর এবং লুন্ঠন যে কঠিন ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে ওই স্থানে তা অনেকের অজানা থেকে যায়। যখন তারা ওই রাস্তা দিয়ে যায় তাদের ওপর চলে, অকথ্য গালিগালাজ,কঠিন মারধর, অত্যাচার। অনেকে প্রায় প্রাণের ভয়ে সমস্ত অর্থ জিনিসপত্র দিয়ে দেয়। অনেকে কষ্ট করে রোজকার করা জিনিস দিতে অগ্রাহ্য করলে প্রাণ হারায়। জায়গাটি ঠিক এইরূপ জায়গা।
অপু যখন ধীরে ধীরে বড়ো হতে শুরু করে,জ্ঞান হয়।ছয়-সাত বছর বয়স হয়,তখন বুঝতে পারে তার বাবার এই কঠিনতম অন্যায় অত্যাচারের কথা। এই কঠিনতম অসামাজিক পরিবেশে অপুর জীবনটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেই ভয়ে তার মা অপুকে এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। অপুর বাবা যখন রাত্রে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সমগ্র শরীরে রক্তমাখা রূপে এর ওর লুন্ঠন করা অর্থ, সোনা আসবাবপত্র এমনকি বাসনপত্রও সংগ্রহ করে নিয়ে আসত,সেই ছোট্ট অপুর যথেষ্ট মনেতে প্রভাব পড়ত। প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হত। যন্ত্রণা দেখা দিত। এমনকি পিতার প্রতি তার ঘৃণ্য মানসিকতা তৈরি হতে শুরু করত,যা সঠিক নয়। যা পরিবারের ক্ষেত্রেও সঠিক নয়।শিক্ষার ক্ষেত্রেও সঠিক নয়। ওই ছোট্ট শিশু ধীরে ধীরে বড়ো হতে শুরু করছে তার ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রেও সঠিক নয়।তাই বাধ্য হয়েই অপুর মা এই ডাকাতে স্বামীর কাছ থেকে গোপনে অপুকে তার আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল। এত কষ্ট যন্ত্রণা নিয়ে মায়ের কাছ থেকে আত্মীয় বাড়ি যেতে অপুর খুব কষ্ট হয়েছিল, মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বারে বারে মা বুঝিয়েছিল তোমাকে বড়ো হতে হবে। তোমাকে আদর্শ মানুষ হতে হবে। পিতার এই ছত্রছায়া তোমাকে দেওয়া যাবে না। তাহলে তোমার মধ্যে কোনোরকম মনুষ্যত্ববোধ তৈরী হবে না। বিবেক কখনও জাগরিত হবে না। তুমি নিজের ভবিষ্যৎকে তৈরী করতে পারবে না। তোমার লক্ষ্য তোমার আদর্শ ভ্রষ্ট হয়ে যাবে। তাই যতই কষ্ট হোক।তুমি মানুষের মতো মানুষ হয়ে ফিরে এসো। দেখো সোনা,তোমার যেমন আমার কাছ থেকে যেতে কষ্ট হচ্ছে, তেমন আমি মা আমি অনেক কষ্ট করে বহু যন্ত্রণা সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছি, শুধু তাই নয়। জন্মগ্রহণ করার পর থেকেই এত জ্বালা, যন্ত্রণা, পারিপার্শ্বিক সমস্যা, প্রতিবেশীদের লাঞ্ছনা,তোমার পিতার সম্বন্ধে বহু কটূক্তি, এমনকি দিনের পর দিন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমার পিতা আমার প্রতি অত্যাচার করেছে,কারণ আমি যেহেতু তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। এত কষ্ট সহ্য করে আমি যখন তোমাকে ছয়-সাত বছর বয়স পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে রাখতে পেরেছি আরো কিছুদিন যন্ত্রণা-কষ্ট সহ্য করে হলেও তোমার ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য সেই পথ দেখিয়ে দিচ্ছি।তুমি যাও,এত কঠিন কঠিন কথা অপু বুঝতে না পারলেও এইটুকু বুঝতে পেরেছিল তার মাও কষ্ট করে তাকে এই অন্ধকার জগৎ থেকে আলো দেখানোর চেষ্টা করছে এবং একজন আদর্শ মানুষ তৈরি করার চেষ্টা করছে। মা যদি কষ্ট করে আমাকে কয়েকটা দিন ভুলে থাকতে পারে, কয়েকটা দিন দূরে সরিয়ে রেখে থাকতে পারে, আমিও কিন্তু কষ্ট করে মায়ের স্বপ্নপূরণ করার চেষ্টা করব এই বলে অপু সেই আত্মীয়ের বাড়ি চলে যায়।
ধীরে ধীরে সেখানে পড়ালেখা শেখে। ভালো পরিবেশে নিজের জীবনকে গড়ে তোলার চেষ্টা করে এবং মাঝে মধ্যেই মাকে চিঠি লেখে। মা এত ভালো করে পড়তে না পারলেও একটু একটু পড়ার মধ্যে তার সন্তান কি বলতে চেয়েছে বুঝতে পারে। যেগুলো বুঝতে পারে না পাশের বাড়ির একজন শিক্ষিতা বসবাস করে,তার কাছে গিয়ে অপুর সম্বন্ধে অপু কি লিখেছে চিঠিতে তা জেনে আসে এবং পরে মনে শান্তি পায়।
একদিন অপু চিঠি লেখে মা আমি তোমার স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছি। আমি বড়ো ডিগ্রি নিয়ে এইখানে একটা ভালো চাকুরি পেয়েছি। আমি খুব শীঘ্র তোমার কাছে যাবো এবং তোমার যন্ত্রণা, কষ্ট দূর করে দেব। আর তুমি বাবাকে একটু বুঝিয়ে বলবে যেহেতু আমি চাকুরি পেয়েছি বাবা যেন এই অন্যায় কাজ হত্যা করা, মারধর করা, অসহায় পথচারী মানুষের অর্থ,জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া এই জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকে। এইগুলো অন্যায়, মহাপাপ, ছোটবেলায় আমি বুঝতে পারিনা ঠিকই, কিন্তু এখন আমি শিক্ষিত হয়েছি।একটা ভালো কাজ পেয়েছি।আমি যে স্কুলে পড়াশোনা করতাম,সেই স্কুলেই আমি ক্লার্কের চাকুরি পেয়েছি মা। তাই বাবা যেন এত বড়ো কঠিন, অন্যায় কাজগুলো থেকে বিরত থাকে। আর যেন এইসব না করে।
অপুর এই চিঠি পড়ে অপুর মায়ের চোখ দিয়ে জল বয়ে চলেছে। আনন্দে অশ্রু বয়ে চলেছে। তার মনে যথেষ্ট শান্তি এসেছে,যে না এই দৃঢ় সংকল্প করেছিলাম বলে আজ আমার সন্তান শিক্ষিত হয়েছে আমার স্বপ্নপূরণ করেছে,ক্লার্কের চাকুরী পেয়েছে। সে ফিরে আসছে, শুধু তাই নয় সে ফিরে এসে তার বাবাকে সংশোধন করবে,তার বাবাকে নতুন জীবন দেওয়ার চেষ্টা করবে এই প্রতিজ্ঞা করেছে। আমি তার মা হয়ে চেষ্টা করি তার বাবাকে পরিবর্তন করা যায় কিনা।
কিছুদিন বাদে অপু তার গ্রামে ফিরে আসে। সেই ছোটবেলায় চলে গিয়েছিল বলে অনেকে তাকে এখন চিনতে বা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল।
সে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে,পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে পরিচয় দিতে দিতে তার সোনার বাংলা,সোনার পল্লী কে প্রাণ ভরে অনুভব করল সে। গ্রামের সকলে অত্যন্ত খুশি আনন্দে গোটা গ্রাম ভোরে উঠেছে। বাড়ি ফেরার পর বাবারও মনটা খুশিতে ভোরে গিয়েছিল। অনেকদিন পরে বাড়ি ফিরেছে খোকা। সকলে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া সেরে দুপুরে বিশ্রাম নেয়। বিকেলে অপু পাড়ার দিকে তার ছোটবেলার সাথীদের সঙ্গে দেখা করতে,গল্প করতে যায়। সকলে অনেকক্ষণ গল্পগুজব করে,আনন্দ করে সময়টা কাটায়। কিছুদিন ছুটি আছে এই ভেবে সকলের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হবে,এই চিন্তায় অপু দুশ্চিন্তাহীন জীবন তৈরী করার উদ্দেশ্যে গ্রামে ফিরে যায়। আজ সে নিজের থেকে একটু আনন্দ পায় তাহলে হয়তো বাবা পরিবর্তন হলো!
এই ভেবে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে বাড়ি ফিরে। বাড়ি ফিরে এসে দেখে তার বাবা বাড়িতে নেই। মাকে জিজ্ঞাসা করতে মা বলে তুই তো তোর বাবাকে জানিস। এইরকম সময় বাবা বাড়িতে থাকে? অপুর মনটা ভেঙে যায়। তাকে তার মা খেতে দেবে বলে ডাকে।সে বলে না আমি বাবাকে খুঁজে আনি। তারপর একসঙ্গে বসে খাবো।
অপু বেরিয়ে পড়ে,রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে বাড়িরই অর্ধ-কিলোমিটার দূরে যেতেই অত্যাচারিত কঠিন মাঠ,দীঘির পাড়,সেইখানে অগ্রসর হয়। দূর থেকে দেখতে পায় দীঘির পাড় যেন জঙ্গলে ভরে গেছে আর ওই জঙ্গলের ধার দিয়ে একটি সেই বহুকালের যে পুরোনো রাস্তা কম ব্যবহার করার জন্য সেই রাস্তাটাও যেন ধীরে ধীরে জঙ্গলে পরিণত হতে চলেছে।লোকজন এখন খুব কমই ওই রাস্তা দিয়ে যায়। একান্তই যারা ওই রাস্তার ঘটনা জানে না তারা ভুল করে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে হয় সর্বস্ব ত্যাগ করতে হয় আর নাহলে সর্বস্ব রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ ত্যাগ করতে হয়। অপু দূর থেকে দেখতে পায় জ্বলন্ত আগুনের শিখা, ভালো করে একটু কাছে গিয়ে গাছের আড়াল থেকে দেখতে পায় দুজন বিড়বিড় করে মন্ত্রপাঠ করছে,আগুন জ্বলছে আর আগুনে মাঝে মাঝেই কি যেন একটা দেওয়া হচ্ছে যাতে আগুনটা দাউদাউ করে জ্বলছে। অপু জানে সেখানে তার বাবা থাকে তাই সাহস নিয়ে অগ্রসর হয়। হঠাৎ অপুকে দেখতে পেয়ে দুইজন তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। অপু বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে, যে আমি তোমাদের সর্দারের পুত্র সন্তান।ছোটবেলায় আমি বাইরে চলে গিয়েছিলাম। আজকেই সকালে এসেছি। দুপুরে একসঙ্গে আমরা খাওয়া দাওয়া করেছি। তোমাদের সর্দারকে জিজ্ঞাসা করো।তিনি নিশ্চয় চিনতে পারবেন। তাঁর সন্তানকে কি তিনি না চিনতে পারেন? ভুলে যেতে পারেন??
তারা দুজন কোনোমতেই অপুর কথা বিশ্বাস করে না। তারা মুচকি হেসে বলছে বিপদে পড়লে সবাই এই ধরণের সম্পর্ক স্থাপন করে। আমরা বিশ্বাস করি না, তোমার কাছে কী কী আছে দাও। বেশি বাড়াবাড়ি যদি করেছ তাহলে প্রাণটাও যেতে পারে। অনেক অনুরোধ করার পর একজন অপুকে গাছে বেঁধে রাখলো। আর একজন সর্দারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, যে সর্দার একজন এসেছে তেইশ-চব্বিশ বছরের যুবক, সে নাকি পরিচয় দিচ্ছে আপনার পুত্র,বাইরে থাকত, আজ এসেছে,দুপুরে নাকি আপনার সাথে দেখা হয়েছে,একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করেছেন।
এইসব কথা সর্দারের কানে প্রবেশ করেনি,কারণ সর্দার যে এখনো মায়ের আরাধনায় মেতে রয়েছে। সুরা পান করে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মাতাল হয়ে বলছে,মরণকালে সকলেই এই ধরণের কথা বলে থাকে।যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে ও আমার হাতেই মারা পড়বে। এই বলে টলতে টলতে সর্দার ছেলেটির কাছে গিয়ে হাজির।একে নিশুতি রাত। যজ্ঞকুন্ড থেকে আলো এলেও বোঝা যাচ্ছে না, আবার নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মাতাল হয়ে রয়েছে সর্দার। যার চোখ সঠিকভাবে পড়ছে না তার ছেলের দিকে। ছেলেকে চিহ্নিত করার মতো তার ক্ষমতা নেই। এসে গর্জন দিয়ে বলছে কে তোমার বাবা?মৃত্যুর পূর্বে সবাই এই ধরণের কথা বলে। যা কিছু আছে তা দাও নাহলে হত্যা করে দেবো। সে অনুরোধ করে বাবা তুমি আমাকে চিনতে পারছ না?সর্দার তো কঠিন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে,তার দিকে না তাকিয়েই চিৎকার করে নিজের হাতে থাকা ছোরাটা তার পেটে ঢুকিয়ে দিল। হাত পা বাঁধা অবস্থায় গাছের মধ্যেই ছেলেটি যথেষ্ট যন্ত্রণা, কষ্ট নিয়ে ছটফট করছে। সমগ্র রক্ত চতুর্দিকে থলকা থলকা করে ছিটকে পড়ল। ছটফট করতে করতে ছেলেটা লুটিয়ে পড়ার মতো অবস্থা। তার শরীরে একটিমাত্র হার আর ডানহাতে একটি আংটি ছিল যা তার মা তাকে দিয়েছিল। হারের মধ্যে একটি লকেট ছিল মা তারা মায়ের ছবি দেওয়া লকেট। সেই সমস্ত নিয়ে সর্দার টলতে টলতে বাড়ির দিকে রওনা দিল।
বাড়িতে গিয়ে ওইগুলোকে একধারে রেখে জামাকাপড় ছেড়ে সন্তানের কথা জিজ্ঞেস করতে থাকে। মা তার স্বামীকে দেখে তার পেছনে বোধহয় অপু আসছে এই কথা ভেবে থমকে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মাতালরূপী সর্দার, যে অপুর বাবা তার মাকে ধমক দিয়ে বলছে, খেতে দাও। কি জন্য উঁকিঝুঁকি মারছো।কি হয়েছে তোমার? চমকে গিয়ে অপুর মা বলে, খোকা কোথায়?খোকা যে তোমাকে ডাকতে গিয়েছিল তোমারই গন্তব্যস্থলে। একসঙ্গেই তো এসে তিনজনে আনন্দ করে খাওয়া দাওয়া করবে বলে তোমায় ডাকতে গিয়েছিল।
এই কথা শুনে হঠাৎ সর্দারজী চমকে গেল। কয়েক মুহূর্তের জন্য তার নেশাভঙ্গ হল।সত্যিই কি খোকা ডাকতে গিয়েছিল?
হ্যাঁ গো সত্যি বলছি, খোকা ডাকতে গিয়েছিল।
সর্দারজী তখন সেই হার আংটি নিয়ে দেখতে থাকে। হঠাৎ করে অপুর মা হারটাকে ছিনিয়ে নিয়ে এইতো খোকার হার, এইতো সেই লকেট, মা তারার লকেট, এ কী করেছ,তুমি নিজের সন্তানকে হত্যা করেছে? বহু মানুষের ক্ষতি করেছ,বহু মানুষের প্রাণ নিয়েছ। ঈশ্বর আছেন,দেখো তোমার হাতেই তোমার সন্তানের প্রাণ চলে গেল।কাতস্বরে যন্ত্রণায়,ছটফট করতে করতে মা ভূমিতে মাথা কুড়তে কুড়তে অচেতন হয়ে গেল।
হঠাৎ সর্দারজী নিজের পুত্রশোকে নিজের তরোয়ারী দিয়ে নিজের গলাটা কে কেটে ফেলল। মা যে সেই অচেতন হয়ে গেছে,আর চেতনা ফিরল না। পিতা নিজে গলা কেটে কাটা ছাগলের মতো হাত-পা নাড়তে নাড়তে ছটপট করতে করতে মৃত্যুবরণ করল।
আর শিক্ষিত অপু যাকে সকলে "অর্পণ মান্না" বলে জানে গোটা শহর। খুব ভালো পড়াশোনায়, সে একজন টপার ছাত্র। সে সেই দিঘীর পাড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় নিথর হয়ে পড়ে রইল, গ্রামবাসীরা সহ্য করতে পারল না। শোকাচ্ছন্ন হয়ে গোটা গ্রাম নিস্তব্ধ হয়ে রইল। এ কী মায়ের অর্ঘ্য? মা তো কোনোদিন চায়নি, জীবের প্রাণ নিয়ে রক্ত নিয়ে আমাকে সন্তুষ্ট করো। মা কখনও চায়না। দিনের পর দিন যে অন্যায় করে এসেছে সর্দারজী, আজ তার ফল সমগ্র পরিবার দিল। এ মহান অর্ঘ্য কোন পিতা দিয়েছে?ডাকাতে মান্না এই মহান অর্ঘ্য দিয়েছে।
রূপশঙ্কর আচার্য্য | Rupsankar Acharya
কবিগুরুর মানবতার ভাবরূপ - রূপশঙ্কর আচার্য্য | প্রবন্ধ ২০২২ | Rupsankar Acharya | Article 2022
প্রকৃত সুখী - রূপশঙ্কর আচার্য্য | Rupsankar Acharya | 2022
জীবানন্দ মহাশয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া - রূপশঙ্কর আচার্য্য | প্রবন্ধ ২০২২ | Article 2022
স্বপ্ন যখন একটা সাইকেল | সৎ সাহস - মনসুর আলি | গল্প ২০২২ | Bangla Galpo | Story 2022
ড্রাইভিংয়ের যত কেচ্ছা (কানাডা পর্ব - ১০) - অতনু দাশ গুপ্ত | গল্প ২০২২ | Canada Driving | Story 2022