মুছে ফেল
- সুশান্ত সেন
মুছে ফেল স্মৃতি
বারো ঘর একটা উঠান
মুছে ফেল সারি সারি জ্যোৎস্না অনেক
পদ্মা নদীর চর
এবং খানিক বীভৎস স্মৃতিতে ঘেরা
অনুশাসনের সব কঠোর নির্দেশ।
মুছে ফেলা যায় নাকি ?
জীবন বড়ই দয়াহীন মায়াহীন
বারবার জ্যোৎস্না ভেঙে নিয়ে আসে
কঠিন মরণ,
প্রাচীন দানব, ছিঁড়ে ফেলে নাড়ি,
অসহ্য বেদনা নিয়ে পাশ ফিরে দেখি
সূচিভেদ্য অন্ধকার।
মুছে ফেলো স্মৃতি গুলি জীবনের থেকে
একটু খানিক।
মুছে ফেলা যায় না কি !!
চলা
- সুশান্ত সেন
আমার সাথে চলতে চাও ত চলো
চলো আমরা মুছে ফেলি কালিমাকে
এক টুকরো রোদ্দুর নিলে হাতে
হাত নতুন করে জেগে উঠবে নিশ্চয়ই।
জাগা ভালো , সজীবতাও ভালো
ভালো মাঠে গজিয়ে ওঠা ধান্যক্ষেত্র
জল সিঞ্চিত।
চলা হোক স্বাধীনতার চলা।
তুমি
- সুশান্ত সেন
তুমি আকাশে তুমি বাতাসে
তুমি উত্তুঙ্গ পাহাড়ে তুমি প্রকাশে
তুমি জলে তুমি স্থলে
তুমি প্রজাপতি দলে
তুমি কবীরের দোঁহাতে
তুমি প্রেমে তুমি রাতে
তুমি ডাইনে তুমি বামে
তুমি প্রেমপত্র ভরা খামে
তুমি ভাঁটায় তুমি উজানে
তুমি থাকো পাশার দানে
শুনেছি তুমি সর্বত্র
পরিব্যাপ্ত !
সেই তুমি টি কে? তুমি কে?
মেঘ ও রাখাল
- সুশান্ত সেন
কোথায় হারিয়ে যায় মেঘ ও রাখাল
কোথায় হারিয়ে যায় হাওয়া
মনের মত ত কেউ
বানায় না নরম মাংসের ঝোল অথবা পায়েস
ভ্রাতৃদ্বিতীয়া এসে গেছে।
এখন সকালে মনের ভেতরে কে যেন ঢুকে পড়ে
ছাই দিয়ে চাপা দেয় নিয়ত আগুন
জিলিপির প্যাঁচ মেরে কারা যেন
সভ্যতা খোঁচায়।
শিক মেরে আগুনের তাপ
বাড়াতেই থাকে।
এই কালে মেঘ ও রাখাল মাঠে চরায় না ধেনু
মেখে দেওয়া জাবর কাটছে
বিষণ্ণ বিকেল।
শাশ্বত প্রেমের কাছে বাঁধা নেই
মেঘ ও রাখাল।
সাত পাঁচ
- সুশান্ত সেন
সাতেও নেই পাঁচেও নেই
নেই ধরা দেওয়া জ্যোৎস্নায়
আমি জিলিপির প্যাঁচ হয়ে আছি
কে কি বললো আমার থোড়াই এসে যায়।
আমি মহান ও নই, নই বিদূষক
ফাঁপিয়ে ফাঁপিয়ে চলা, এ আমার সখ
আমি সর্ব ঘটে কাঁঠালি কলা
বিস্তর জানি ছলা কলা।
যত চেষ্টা কারো ছুটে পারবে না কিছুতেই
ডিল তরঙ্গ তুললেও
একটু পরেই পুকুর - জল নিস্তরঙ্গ হবেই।
খোঁজ
- সুশান্ত সেন
কিসের খোঁজ করছেন বাবুমশাই
সাত সমুদ্র পারে, সবুজ দ্বীপের না মায়াবী রাক্ষসের ?
কেটে যাচ্ছে বেলা, কেটে যাচ্ছে রাত্রি
উদয়াস্ত খেটেও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে কি কুমারী মাতার !
জল বলে চল -- বলে এগিয়ে যায় সময় ।
কুঁড়ে ঘরে স্বপ্ন দেখতো দুধকুমার,
স্বপ্ন দেখতো অচিন দেশের, অচিন গাঙের
স্বপ্ন দেখতো বেলাভূমিতে কুড়িয়ে পাওয়া শঙ্খ
নিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে একের পর এক
সাত সমুদ্র তেরো নদী।
স্বপ্ন দেখতো রূপকুমারীর বুকে জড়িয়ে দিচ্ছে
সাত ভরির হার, অচিন শঙ্খ ।
সবই গেল বিফলে।
এখন কি অমাবস্যা! অমাবস্যা তো চাঁদ হীন ।
খোঁজ কি করা যায় এই চাঁদ হীন রাত্রে
সবুজ দ্বীপের বা মায়াবী রাক্ষসের ?
সেই প্রশ্ন নিয়ে জেগে আছে সন্ধ্যা
অপেক্ষা করছে সময়ের।
মরীচিকা
- সুশান্ত সেন
সারাটা জীবন ধরে সন্ধানে রত
সারাটা সময় খালি হয়েছি বিব্রত
কোথায় সে সিন্ধুদেশ দিগন্ত প্রসার
মুক্ত চিন্তা অবিরত, মুক্ত সব দ্বার,
জীবনের জয়গান বিজ্ঞানের বাণী
তুচ্ছ করে যশ অর্থ, কাছে নেয় টানি
নব নব প্রশিক্ষণ, তরুণের গানে
উদ্বেলিত হয় সত্য। ঐকতানে
বেজে ওঠে জীবনের নতুন ভৈরবী,
সুখ স্বপ্নে দীপ্ত হয় দিনান্তের রবি।
সন্ধানে সন্ধানে ক্রমে বেড়ে যায় বেলা
মরু দেশে মরীচিকা আনে তার খেলা।
সারাটা জীবন তাই সন্ধানেই রত
সাফল্য কামনাই জীবনের ব্রত।
বেনামে
- সুশান্ত সেন
কে যেন দরজায় কড়া নেড়ে বলে গেল
এই বাড়িটার মালিক ত তুমি নও,
তাহলে চারপাশে বেড়াই বা দিলে কেন,
কেনই বা সাজিয়ে তুললে গোলাপ বাগান!
সেই থেকে চুপচাপ বসে ভাবছি সম্পত্তি,
আমার সম্পত্তি কি করে বেহাত হয়ে গেল
কি করেই বা আমি যুধিষ্ঠির এর মত রাজ্যচ্যুত হয়ে গেলাম।
এখন কি বনে বনে ঘুরে বেড়াতে হবে বারোটা বছর।
এদিকে শুনতে পাই জবর দখল করে কিছু দিন
কাটিয়ে দিলে পারলে, একটু আঙ্গুল
বেঁকালেই পরচা নিজের নামে করে নেওয়া যায় ।
এই রকম নিয়মই নাকি প্রচলিত ।
নামে বা বেনামে কি এসে যায় ।
আমরা
- সুশান্ত সেন
আমরা সর্বনাশ ডেকে এনেছি ।
আমরা শহরের পর শহর বানিয়ে চললাম
বড় আরো বড়, পাশাপাশি গিঞ্জি গিঞ্জি অট্টালিকা
নিজেরাই নিজেদের তারিফ করলাম
চলো প্রতিযোগিতা দুবাই বড় না সাংহাই,
ঠুসে দিলাম কোটি কোটি মানুষ কে এক ছাদের তলায় ।
বানিয়ে ফেললাম মানুষ মারার বোমা আর হাতিয়ার,
হাসির কথা ভাবলাম যার কাছে যত মানুষ
মারার কল সে তত শক্তিধর ।
প্লাস্টিকে প্লাস্টিকে ভরিয়ে দিলাম দুনিয়া
আরো কত কি উন্নতি আর উন্নতি
এই ভাবে চলতে চলতে এখন ছুটি কাটাতে
নির্জনতা খুঁজি সাজানো বন - বাংলো তে
নাহলে সমুদ্র পাড়ের বেলাভূমিতে।
সেখানেও ছোবল মারছে ক্যাসিনোর হাতছানি ।
আর ফেরা যাবে না মাতৃক্রোড়ে
আর ফেরা যাবে না শীতল গাছের নীরব ছায়ায় !
বড় দেরি হয়ে গেছে
আমরা সর্বনাশ ডেকে এনেছি ।
খাবো কি
- সুশান্ত সেন
আম টা পেড়ে খাবো কি ?
তোমার পাড়ায় যাবো কি !
গাছে গাছে দোলে আমড়া
গন্ডার ছালে ঢাকা চামড়া,
কতদিন খাই না জামরুল
কামড়ায় পাছে ভীমরুল ।
কালোজাম খেতে চাই যে
নুন এতটুকু নাই যে,
পেয়ারায় আছে ভিটামিন
একটা দুটো খেয়ে নিন।
কাঠাল খেয়ে হই চিৎপাট
নেই কারো তাতে দিকপাত
উল্টো পাল্টা বকবক
হলো কেন তোর সখ ?
সুশান্ত সেন | Susanta Sen
ভালোবাসার টান - আফছানা খানম অথৈ [গল্প | Galpo | Story] 2022
চারণভূমি - রূপশঙ্কর আচার্য্য [প্রবন্ধ | Prabandha | Article] 2022
হলুদ সাংবাদিকতা | শালীনতার মানদণ্ড | দিব্য অঙ্গ | মানুষ চাইছে অন্য কিছু | ভিটামিন-সি [কবিতা | Kobita | Poetry] 2022
নোনা জল (পর্ব - ২) - জয়নাল আবেদিন [গল্প | Galpo | Story] 2022
ইতিহাস থেকে | দূরের ছোট মাঠটা | কাকা বেঁচে গেল | মিউটেশন | পরিণতি [কবিতা | Kobita | Poetry] 2022
কবিতাগুচ্ছ - সুশান্ত সেন [কবিতা | Kobita | Poetry]