Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

শিক্ষক দিবস এবং কিছু কথা | Happy Teachers Day 2022 | সম্পাদকীয় কলম | সেপ্টেম্বর ১ম সংখ্যা [Editorial]

শব্দদ্বীপের অতিথি সম্পাদক

জুলাই - আগস্ট - সেপ্টেম্বর

কবি - শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ


শিক্ষক দিবস এবং কিছু কথা

- শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ


শিক্ষক নিয়ে লিখতে গিয়ে আমার বারবার মনে পড়ছে, কোন সময়ের শিক্ষকদের নিয়ে লিখব। আগের শিক্ষক না এখনকার। শুনলে যেন কেমন লাগে। শিক্ষকদের আবার সময়ে ভাগ করা যায় । এ যেন এখনকার চেনা রাজনৈতিক ঘরানার কথা। একই দলে পুরোনো ও নতুন নিয়ে কাছি টানাটানি। বাস্তবে তেমন শিক্ষা ও শিক্ষকের মধ্যে এমনটা চলছে। এই প্রসঙ্গ পরে আসছি।

শিক্ষক একাধারে কবি কালিদাস রায়। তাঁর "ছাত্রধারা" কবিতার প্রথমে বলছেন 'বর্ষে বর্ষে দলে দলে, আসে বিদ্যা মঠ তলে / চলে যায় তারা কলরবে'। এই চলে যাওয়া সম্পর্কে এখানে শেষ হয়ে যাওয়া নয়। অন্তঃসলিলার মতো প্রবাহিত ধারা। কবিতার প্রতিটি ছত্রে ছত্রে আবেগ, উচ্ছ্বাস, শ্রদ্ধা, ভক্তি চোখে পড়ার মতো।

শিক্ষার শেষ বলে কিছু হয় না। তবে শিক্ষার অনুকূল অবাধ পরিবেশ সবার কপালে আসে না। যে যতটা শেখে সেটাই তার কর্ম জীবনে চালিয়ে নেওয়ার পাথেয় হয়। শিক্ষার সঙ্গে সাময়িক বিচ্ছেদ ঘটলেও শিক্ষকের স্মৃতি মনের কোণে থেকে যায়। চলমান জীবনে পথে ঘাটে দেখা হলেই ছাত্রের মাথা শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসে। শিক্ষকের আশীর্বাদের হাত আক্ষরিক অর্থে নাও যদি মাথায় যায়, মনে মনে আশীষ হয়ে বর্ষিত হয়। ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে এমন সম্পর্কের স্বাভাবিক প্রকাশ। ছাত্রের সুকৃতিত্বে শিক্ষকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠতে কে না দেখি। সত্তর দশকের আরো আগে থেকে যখন সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতেন না। অধিকাংশ শিক্ষকের অভিশপ্ত অবসর জীবন। দু'বেলা বেশিরভাগ শিক্ষকের সেভাবে খাওয়া জুটত না। কিন্তু পথে বের হলে "মাষ্টারমশাই" ডাকে সম্মানের ঘাটতি হত সেদিনও হয়নি। বহু গুণের গুণী সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ, শিক্ষার যতই উচ্চ স্তরে থাকুক না। তিনি তো শিক্ষক। তাঁর জন্ম ৫ই সেপ্টেম্বর। পরবর্তীতে দেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। গুণমুগ্ধ অগনন ছাত্র ছাত্রী তাঁর জন্মদিন স্মরণীয় করে রেখেছেন সমগ্র শিক্ষক সমাজকে সম্মান জানিয়ে ওই দিনটিকে "শিক্ষক দিবস" পালিত হয়ে আসছে।

শিক্ষার স্তর ভেদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠা যে নামে সূচিত করি না কেন যেমন গৃহ শিক্ষার বুনিয়াদ থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মহা বিদ্যালয়, বিশ্ব বিদ্যালয়। সব ক'টিতে ছাত্র শিক্ষক ছাড়া অন্য কোন সম্পর্কের প্রভাব সেভাবে চোখে পড়ে না। এখন বোধ হয় সেই যায়গায় আর শিক্ষা দাঁড়িয়ে নেই। নেই বলেই শিক্ষক আর শিক্ষণের যায়গায় থেকে অনেকটা সরে গিয়েছে। অনেক পরিবর্তন চোখে পড়ে। তখন একজন অচেনা মানুষকে দেখে শিক্ষক শিক্ষক ভাব চেহারায় ফুটে উঠত। এখন পোশাকের স্বাধীনতায় আধুনিক মননে সেটুকুও উবে গেছে। শিক্ষকতা একটা পেশা। আর পাঁচটা জীবিকার মতই সবাই তা মনে করে। শিক্ষক চাকরি করছে ভাবলে আমার আজও মনে খটকা লাগে। একজন চাকুরে বিদ্বান হয়ে তার কাজ চালিয়ে নিতে পারেন। শিক্ষকতা করতে গেলে শিক্ষিত হতে হবে। আর একটু বিষদে বললে এরূপ বিষয়টা দাঁড়ায়। বিদ্যায় কারিগরি প্রশিক্ষণের কাজে লাগে এবং শিক্ষায় মানবিক গুণে বিকশিত করে মন। যখন শুনি শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর। সেই কারিগরি বিদ্যায় গড়া আগামীর প্রশিক্ষিতেরা অদূর ভবিষ্যতে অর্থের পাহাড় গড়তে চাইবে নাতো কী। মানুষের কল্যাণে, আর্তজনের পাশে দাঁড়াবে ভাবতে পারা যায়। যারা পারে তাদের ভিত একটু অন্য ভাবে গড় উঠবে। আমি আমার মতো মনে করি। এবার শিক্ষার ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই।

আগের শিক্ষা সর্ববিষয়ে পড়াশোনা উচ্চ স্তরের অনেকটা দূর পর্যন্ত একই থাকতো। পরবর্তীতে যে যায় প্রিয় বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন। অনেকটা নাক-কান-গলা'র বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতো। একদিক থেকে ভালোই বলব। একটা বিষয় নিয়ে পারদর্শী হওয়া । এখন শিক্ষার মধ্যে অসুবিধা এইখানে। কোনো কারণে একজন শিক্ষক না এলে, অন্য শিক্ষক চালিয়ে দিতেন। এখন সম্ভব নয়। তাই বলে বলব এখন শিক্ষার অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। আমার অতটা মনে হয়না।

এই সময়ের যে অসুবিধা আমার দৃষ্টি এড়ায় না। এখন ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ার জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষকদের কাছে দেওয়ার হিড়িক চলেছে। ছাত্রের নিজের মতো করে গুছিয়ে নেওয়া মতো সময় থাকছে না। ছুটোছুটিতে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। যেটা সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে 'শরীর চর্চা'। দেহ মনের ভঙ্গুর দশা। একটু বয়স হলেই অক্ষমতার প্রভাব চোখে পড়ার মতো।স্বাস্থ্য সম্পদ হারিয়ে অর্থ সম্পদের শ্রীবৃদ্ধিতে খুব সুখে থাকে বলে মনে হয় না।

উক্ত কথাগুলো অল্প বিস্তর সবাই জানি। তবুও জেনে বুঝে তার শিকার হই। সময় উপেক্ষা করলেও সময় ছাড়ে না। আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছেলেখেলা করতে বেশ পারি। অভিভাবকের দরদী মন কোথায় থাকে। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। যে বিদ্যায়, শিক্ষায় শিক্ষকের প্রত্যক্ষ যোগ। তাঁদের সম্মানার্থে ৭-ই সেপ্টেম্বর "শিক্ষক দিবস" রূপে স্মরণীয় করে রাখা হয়েছে। ঠিক তার উল্টাটাই সংবাদ পত্র খুললেই 'শিক্ষক দুর্নীতি' নামক বড়ো বড়ো অক্ষরে শিরোনাম নজর কাড়ার মতো। এটাই চোখে সওয়া হয়ে গেছে। সমর্থনে হুড়মুড় করে বেরিয়ে আসতে পারে পৃষ্ঠপোষক কিছু।

আমরা গ্রামের ছেলে। বর্ষার ধান কাটা হয়ে গেল, মাঠ ফাঁকা হয়ে যায় তবে 'নাড়া' থাকে আট নয় ইঞ্চি করে। কোথাও আরো বড়ো। ধান গাছের গোঁড়া খোঁচা খোঁচা হয়ে থাকে। দুর্গম অবস্থা। অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে ঘুরপথে না গিয়ে সোজা নাড়াবাঁধা ভেঙে ওঠা। পায়ের অবস্থা রক্তাক্ত। এইভাবে পা মাড়ানিতে অস্থায়ী পথ একটা হয় বটে। কিন্তু শিক্ষা এমন অবস্থায় গড়ে উঠছে দুর্ভাগ্যজনক। নিজেদের ফুলের মতো সন্তান সন্ততিকে ওই নির্মম নাড়াবাঁধার বন্ধুর পথে শিক্ষার নামে ঠেলে দিচ্ছি। মানুষ করে গড়ে তোলার কথা ভাবি না। আমরা সন্তান সন্ততির কী ইচ্ছা অভিভাবকের কাছে গুরুত্ব নেই। তাদের যে বিষয়গুলো শেখার জন্য নির্বাচিত করি শেখার ক্ষেত্রে ভীষণ জটিল। পরবর্তী সময়ে সেই বিদ্যা দিয়ে যখন পরিষেবা দিতে চাইবে জটিলতর হয়ে উঠবে। যে পেশাগুলোর কথা মুখে আনলাম না ইঙ্গিতপূর্ণ হয়ে থাকল। তবে, তার ওপর নির্ভরশীল মানব সমাজ তথা সারা দেশ এমনকি এই বিশ্ব। এড়িয়ে কেউ থাকতে পারব না। ওই পেশার অসৎ প্রয়োগে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখে আঙুল তুললেও নামিয়ে নিতে হয়। ধরুন, ঘেঁষের গুলে তরল কাদা না দিলে চিট ধরবেনা। সোনার গহনায় খাদ না দিলে ভঙ্গুর হবে। আবার কিছু ছানার মিষ্টিতে ময়দা মেশাতে হয়। আমরা না চাইলেও ভেজালে পরোক্ষ ভাবে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। আসল দেখে আঁতকে উঠব, ভেজাল বলে।

এবার শিক্ষার বিষয়ে ফিরে আসি। আমি এই সেদিন পর্যন্ত ভাবতাম শিক্ষায় খাদ মেশানো যায় না। শিক্ষা হলো সাধনার ক্ষেত্র, জ্ঞানপীঠ। যেখানে লাভ ক্ষতির অংক মেলেনা। মহান আদর্শের যায়গা। এখন প্রায় শিক্ষাক্ষেত্রগুলো আর পাঁচটা পেশার যায়গা হয়ে গেছে। বড়ো আয়ের ক্ষেত্র। এখানে যারা করেমর্মে খাওয়ার জন্য পড়ে আছে। অধিকাংশ সরস্বতীর বরপুত্র। এখানে ঠিকমতো ধরে-করে মুদো দিতে পারলে, প্রত্যাশিত সংখ্যা পেয়ে জীবনে উতরে যাবেন। এই সময়ে আমার যদি কাঁচাপয়সা কিছু হাতে আসতো 'ডক্টরেট' করিয়ে রাখতাম। পরে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর করার চেষ্টা করতাম। বুঝেছি ভাবছেন হঠাৎ দুর্লভ বস্তুর প্রতি আমার লোভ পড়ল কেন? আমার বিশেষ করে জানা এক কবি আছেন। খুব ভালো রম্যরচনা, প্রবন্ধ লেখেন। বেশ কয়েকটি পত্রিকায় লক্ষ্য করেছেন। যতই ভালো লিখুন, সূচিপত্রের নিচে দিকে তাঁর নাম থাকবে। ওপরে তারাই যাদের নামের আগে "ড" আছে, মানে ডক্টরেট। তাঁকে রসিকতার ছলে বলতে শুনেছি,' শিবু, আমাদের নামের আগে এবার থেকে একটা করে 'ড' বসিয়ে নিতে হবে'। যাই হোক লেখাই আমার কাছে  একেকটি দর্শন। মনে করি দুধের স্বাদ ঘোলে মেঠাতে বেশ আনন্দ পাই।

প্রকৃত শিক্ষক যাঁরা তাঁদের সম্মান নিয়ে ভাবার এতটা আকাল ঘনিয়ে আসেনি। কিন্তু যারা নিজেরাই গড়ে ওঠেনি তারা কী করে ছাত্র সমাজ সুশিক্ষায় গড়ে তুলবেন । বকে যাওয়া ছাত্ররা শিক্ষকদের সম্মান দেবে আশা করা যায়। তবুও বলব, আমি আশাবাদী বলেই। শিক্ষার জগতে যেটুকু কালো মেঘ জমেছে সরে যাবে। আবারো ঝলমলে আকাশে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিটি  কোণে, প্রতিটি মনে। শিক্ষায় হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে আগামী দিনে। ছাত্র ও শিক্ষকের সুসম্পর্ক আবার মধুময় হয়ে উঠবে। সেটাই হবে শিক্ষক দিবসের সার্থকতা।

সম্পাদকীয় | Editorial

শিক্ষক দিবস এবং কিছু কথা | শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা বার্তা ও বাণী | শিক্ষক দিবস রচনা | শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা | শিক্ষক দিবস | শিক্ষক দিবস সম্পর্কে কিছু তথ্য | শিক্ষক দিবস নিয়ে সেরা উক্তি | শিক্ষক সম্পর্কে কিছু কথা | শিক্ষক দিবস সম্পর্কে কিছু কথা | শিক্ষক দিবসের কবিতা আবৃত্তি | শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য | শিক্ষক দিবস সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা | বিশ্ব শিক্ষক দিবস | ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস কেন পালিত হয় | শিক্ষক দিবসের স্ট্যাটাস | ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ | শিক্ষক দিবস উপলক্ষে কিছু কথা |  | সম্পাদকীয় প্রতিবেদন | উপ-সম্পাদকীয় | সমকাল সম্পাদকীয় | নয়া দিগন্ত সম্পাদকীয় | সম্পাদকীয় লেখার নিয়ম | সম্পাদকীয় ভোরের কাগজ | সম্পাদকীয় চিঠি | সম্পাদকীয় লেখার নিয়ম | সম্পাদকীয় প্রবন্ধ | শব্দদ্বীপ সম্পাদকীয় | সম্পাদকীয় কলম শব্দদ্বীপ | 

 Editorial News Articles | Editorial | Shabdodweep Editorial | July Month Editorial | editorial today 2022 | editorial format 2022 | editorial letter 2022 | editorial examples 2022 | editorial article 2022 | Teachers' Day 2022 | Happy Teacher's Day Wishes | Teachers Day Speech | Teachers Day Speech In Bengali 2022 | Teachers Day Gifts | List of Teachers' Days | World Teachers' Day | teachers' day in india | when is teachers' day 2022 | World Teachers Day 2022 | 5th September | teachers day | teachers day 2022 | teachers day gift | teachers day quotes



বিদ্রোহী কবি সম্পর্কে আমার অনুভূতি | শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ | সম্পাদকীয় কলম | আগস্ট ১ম সংখ্যা [Editorial]

পনেরই আগস্ট : আগে ও পরে | শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ | সম্পাদকীয় কলম | আগস্ট ২য় সংখ্যা [Editorial]

প্রতিষ্ঠান সাহিত্য আঁকড়ে বাঁচে : সাহিত্য স্বাতন্ত্র্য | শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ | সম্পাদকীয় কলম | জুলাই ১ম সংখ্যা [Editorial]

স্বশিক্ষিত ব্রাত্য হলে : শিক্ষিত বা প্রশিক্ষিতের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে | শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ | সম্পাদকীয় কলম | জুলাই ২য় সংখ্যা [Editorial]

মানব কল্যাণে রামকৃষ্ণ মিশন | Ramkrishna Mission - প্রবোধ কুমার মৃধা | প্রবন্ধ ২০২২ | Article 2022


This post first appeared on Shabdodweep Web Magazine, please read the originial post: here

Share the post

শিক্ষক দিবস এবং কিছু কথা | Happy Teachers Day 2022 | সম্পাদকীয় কলম | সেপ্টেম্বর ১ম সংখ্যা [Editorial]

×

Subscribe to Shabdodweep Web Magazine

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×