Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

মার্কসবাদে লেনিনের অবদান আলোচনা করো।

The post মার্কসবাদে লেনিনের অবদান আলোচনা করো। first appeared on Ask Master and is written by Ask Master.

মার্কসীয় চিন্তাধারায় সকল দিগদর্শন, অর্থশাস্ত্র, রাজনীতি, বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদ—গঠনমূলক দৃষ্টিতে নতুন পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে লেনিন প্রয়োগ করেন। বুর্জোয়া তাত্ত্বিক ও শোষনবাদিগণ লেনিনবাদের মধ্যে অসঙ্গতির কথা প্রচার করেন। কিন্তু লেনিন মার্কসবাদের বিশ্বদৃষ্টির ওপর গভীর আস্থাশীল হয়ে মার্কসবাদকে অধিকতর বিকশিত করে তোলেন। মার্কসীয় চিন্তাধারার এমন কোন দিক নেই যা লেনিনের রচনায় সমৃদ্ধ হয় নি। সুতরাং লেনিনবাদ (Leninism) হল মার্কসবাদের পূর্বানুবর্তন এবং অধিকতর বিকাশ। এটি হল সাম্রাজ্যবাদ ও সর্বহারার বিপ্লবের যুগের, বিশ্ব-সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার উদ্ভব ও বিকাশের যুগের, পুঁজিবাদ থেকে সাম্যবাদে মানব সমাজের উত্তরণে যুগের মার্কসবাদ (Marxism)। মার্কসবাদে লেনিনের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করা যেতে পারে।

(১) তত্ত্ব ও বাস্তব কর্মনীতির সামঞ্জস্য: লেনিনবাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল তত্ত্ব ও বাস্তবের সমন্বয়। লেনিন এই শিক্ষা দিয়েছিলেন যে মার্কসীয় তত্বের মূলসূত্রগুলিকে বাস্তব বৈপ্লবিক পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োগ করে তাদের যথার্থ্য বিচার করতে হবে। অনেকে অভিযোগ করেন যে, তত্ত্ব অপেক্ষা বাস্তব কর্মকাণ্ডের ওপর তিনি অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এই অভিযোগ যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন যা লেনিনের বিখ্যাত উক্তি — “বিপ্লবী মতাদর্শ ছাড়া বিপ্লবী আন্দোলন সফল হতে পারে না” থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।

(২) সর্বহারা বিপ্লব ও সর্বহারার প্রাধান্য সম্পর্কে লেনিনের মতামত: লেনিন সাম্রাজ্যবাদকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পূর্ব-মুহূর্ত বলে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, শিল্প-সমৃদ্ধ দেশেই যে প্রথম সর্বহারার বিপ্লব ঘটবে এমন কোন স্থিরতা নেই। সাম্রাজ্যবাদের শৃঙ্খল যেখানে সর্বাপেক্ষা দুর্বল সেখানেই বিপ্লব সংঘটিত হতে পারে। তাছাড়া লেনিনের পূর্বে মার্কসবাদিগণ বিশ্বাস করতেন যে, শিল্পে অনুন্নত দেশে বিপ্লব সমাধা হলে তা বুর্জোয়া বিপ্লবে পরিণত হবে। বুর্জোয়া বিপ্লব এবং সর্বহারার বিপ্লবের মধ্যে এক গভীর ব্যবধান রয়েছে অর্থাৎ বুর্জোয়ারা বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ধনতন্ত্রকে অধিকতর বিকশিত করবে এবং এর ফলে সর্বহারা বিপ্লব দেখা দেবে। লেনিনের মতে, বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব এবং সর্বহারার বিপ্লব একই শৃঙ্খলে আবদ্ধ। ১৯০৫ সালে রাশিয়ার প্রথম বিপ্লবের পূর্বে লেনিন তাঁর ‘দুই কৌশল’ (Two Tactics) পুস্তিকায় বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব এবং সর্বহারার বিপ্লবে সর্বহারার নেতৃত্বের কথা ঘোষণা করেন। লেনিনের বিপ্লবী নেতৃত্বে রাশিয়ার বিপ্লবে সর্বহারার ভূমিকা প্রমাণিত হয়; বিপ্লব সম্পর্কে এই দৃষ্টিভঙ্গীর দ্বারাই লেনিন শিল্পে অনুন্নত রাশিয়ার অর্থাৎ একটি দেশে বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপদান করেন।

(৩) সর্বহারার একনায়কত্ব: মার্কসের সর্বহারার একনায়কত্ব ধারণাটিকে লেনিন শ্রমিক বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে গ্রহণ করেন। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে লেনিন সর্বহারার একনায়কত্বকে প্রধান হাতিয়ার বলে মনে করেন। সর্বহারার বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত শোষক শ্রেণীর প্রতিরোধ ধ্বংস করবার জন্য বিপ্লবের সুফলগুলিকে সংগঠিত করবার জন্য এবং পরিণতিতে সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের জন্য সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্ব একান্ত অপরিহার্য। লেনিনের মতে পুঁজিবাদ থেকে সাম্যবাদে উত্তরণের অধ্যায়ে রাষ্ট্রের রূপ হবে শ্রমিক শ্রেণীর একনায়কত্ব।

শ্রমিক শ্রেণীর একনায়কত্বের প্রয়োজনীয়তা ও তার ঐতিহাসিক ভূমিকা লেনিন সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন। পুঁজিবাদী ও সামন্ততান্ত্রিক প্রতিরোধ চূর্ণ করবার জন্য শ্রমিক শ্রেণীর এক রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগমূলক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন। সাম্রাজ্যবাদ ও বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে বিপ্লবী সেনাবাহিনী গঠন করাও সর্বহারার একনায়কত্বের লক্ষ্য। সুতরাং বুর্জোয়া শাসনব্যবস্থা ও রাষ্ট্রকাঠামো ধ্বংস করে বিপ্লবের মাধ্যমে সর্বহারার শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

(৪) রাজনৈতিক দল সম্পর্কে অভিমত: মার্কস্ ও এঙ্গেলস শ্রমিক শ্রেণীর অগ্রণী বাহিনী হিসাবে রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব ও শ্রমিক বিপ্লবে রাজনৈতিক দলের ভূমিকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। লেনিনের অবদান হল যে, তিনি মার্কসের ধারণাকে নতুন ঐতিহাসিক অধ্যায়ে অধিকতর সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন এবং বিকশিত করেন। লেনিনের মতে, রাজনৈতিক দল বা পার্টি হল শ্রমিক শ্রেণীর অগ্রণী অংশ, সংগঠিত অংশ এবং শ্রমিক শ্রেণীর সর্বোচ্চ শ্রেণীবদ্ধ রূপ।

শ্রমিক শ্রেণীর অগ্রণী বাহিনীতে পরিণত হবার জন্য দলকে বিপ্লবী মতাদর্শে দীক্ষিত হতে হবে। রাজনৈতিক দল শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত এবং শ্রমিক শ্রেণীর সমস্ত অংশের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। সুতরাং শুধু শ্রমিক শ্রেণীর অগ্রবর্তী বাহিনী হলেই চলবে না, সকল অংশের সঙ্গে দলকে সংযোগ রক্ষা করতে হবে। কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা ও ঐক্যবদ্ধতার দ্বারাই দল প্রকৃতপক্ষে শ্রমিক শ্রেণীর একনায়কত্বের হাতিয়ারে পরিণত হতে পারে। সুতরাং দলীয় সংহতি ও নিয়মানুবর্তিতা শ্রমিক শ্রেণীর দলের অবশ্যই থাকবে। মার্কসের যোগ্য উত্তরাধিকারের নিদর্শন হল পার্টি সম্পর্কে লেনিনের শিক্ষা। সকল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে সেইসব পার্টির নেতৃত্বে যারা লেনিনের ভাবধারা ও সাংগঠনিক নীতি প্রকাশ্যে গ্রহণ করেছে।

(৫) জাতি সমস্যা ও উপনিবেশের সমস্যা: লেনিন মার্কসীয় মূল চিন্তাধারাকে সুসংবদ্ধ করে সাম্রাজ্যবাদের অধ্যায়ে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ ও ঔপনিবেশিক সংগ্রামের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। জাতিগত ও ঔপনিবেশিক সমস্যা লেনিনের দৃষ্টিতে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। আন্তর্জাতিক সর্বহারার বিপ্লবের প্রশ্নের সঙ্গেও জাতি সমস্যা ও ঔপনিবেশিক সমস্যা জড়িত বলে লেনিন ঘোষণা করেন।

(৬) রাষ্ট্র সম্পর্কে অভিমত: লেনিন রাষ্ট্রকে বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে মীমাংসাতীত দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের ফল বলে বর্ণনা করেছেন। রাষ্ট্র শ্রেণীশাসন ও শোষণের হাতিয়ার—সর্বহারার বিপ্লবের মাধ্যমে শ্রেণী-শোষণের অবসানে রাষ্ট্রের বিলোপ হবে। এঙ্গেলস বলেছেন যে, সর্বহারা শ্রেণী ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে শোষণযন্ত্র হিসাবে রাষ্ট্রের পতন ঘটাবে। লেনিন এঙ্গেলসের বক্তব্যকে বিশ্লেষণ করে দেখান যে, বিপ্লবের পরবর্তী অধ্যায়ে বুর্জোয়া রাষ্ট্রের বিলোপ ঘটবে এবং তার স্থানে শ্রমিক শ্রেণীর একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। “রাষ্ট্র শুকিয়ে যাবে” এই ধারণাটি পরিবর্তিত পর্যায়ে সার্থক হবে বলে লেনিন অভিমত প্রকাশ করেন। অর্থাৎ শ্রেণীহীন শোষণহীন সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলবৎ থাকবে।

(৭) গণতন্ত্র সম্পর্কে অভিমত: লেনিন গণতন্ত্রের স্বরূপ বিশ্লেষণ করে বুর্জোয়া বা পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় সংখ্যালঘিষ্ঠ ধনিক শ্রেণী গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করে। কিন্তু সর্বহারার একনায়কত্ব শোষক শ্রেণীকে নিয়ন্ত্রণ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের জন্য গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

(৮) বিপ্লবের প্রকৃতি সম্পর্কে লেনিনঃ বুর্জোয়া তাত্ত্বিকগণ হিংসা ও বিপ্লবকে সমার্থক বলে গ্রহণ করে বিপ্লবের গুরুত্ব হ্রাস করতে চান। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবসান এবং শ্রমিক শ্রেণীর একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠায় বিপ্লব অপরিহার্য বলে লেনিন স্বীকার করেন। কিন্তু তার মতে, বিপ্লব হিংসা বা ধ্বংসের তাণ্ডব নয়, সৃষ্টির মহোৎসব। শোষক শ্রেণী মেহনতী মানুষের সংগ্রামকে স্তব্ধ করবার জন্য হিংসার তাণ্ডব শুরু করে, আর এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে শ্রমিক শ্রেণী বিপ্লবে বলপ্রয়োগের আশ্রয় গ্রহণ করে। বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণ নতুন সমাজ সৃষ্টির জন্য সৃজনশীল ও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে। সেই কারণে বিপ্লব উৎপীড়িতের মহোৎসব।

(৯) সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে অভিমত: মার্কসের যুগে পুঁজিবাদের একচেটিয়া বিকাশ হয় নি। পুঁজিবাদ সম্পর্কে মার্কসীয় তত্ত্বের বিশ্লেষণ করে লেনিন বলেন যে, সাম্রাজ্যবাদ হল পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর। এই সর্বোচ্চ ও শেষ পর্যায়ে পুঁজিবাদের কিভাবে ধ্বংস হবে তার বিশ্লেষণ লেনিনই প্রথম করেন। সাম্রাজ্যবাদের এক সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞায় লেনিন একে পুঁজিবাদের একচেটিয়া স্তর বলে অভিহিত করেছেন। এই স্তরে, উৎপাদন ও পুঁজির কেন্দ্রীকরণের সহযোগে আর্থিক পুঁজি বা ফিনান্স মূলধনের প্রাধান্য বিস্তৃত হয়, পুঁজির রপ্তানি অধিক গুরুত্ব লাভ করে। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক একচেটিয়া পুঁজিপতি সংস্থাগুলি পৃথিবীর বাজার নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে শুরু করেছে এবং বৃহত্তম ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পৃথিবীকে ভাগ বাঁটোয়ারা করে নেওয়ার কাজ সমাপ্ত হয়। পুজিবাদী বিকাশের এই স্তরে অনিবার্যভাবে দেখা দেবে শ্রমিক বিপ্লব ও সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বিরুদ্ধে ঔপনিবেশিক দেশের জনগণের মুক্তি সংগ্রাম। এই বিশ্লেষণ থেকে লেনিন সিদ্ধান্ত করেন যে, সাম্রাজ্যবাদের এই সংকটের স্তরে কয়েকটি দেশে বা একটি দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংগঠন করা সম্ভব। রাশিয়ার নভেম্বর বিপ্লবের মধ্যে লেনিনের সিদ্ধান্ত বাস্তব রূপ লাভ করে।

সাম্রাজ্যবাদের অধ্যায়ে সর্বহারা শ্রেণীর সংগ্রামের নতুন পরিস্থিতিতে মার্কসীয় তত্ত্বের অধিকতর বিকাশ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে এটাই হল লেনিনের নতুন অবদান। মার্কস ও এঙ্গেলসের শিক্ষা লেনিনের হাতে অধিকতর সমৃদ্ধ হয়ে মার্কসীয় লেনিনের শিক্ষা হিসাবে সমগ্র বিশ্বে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্যে আত্মবিকাশ করেছে।

The post মার্কসবাদে লেনিনের অবদান আলোচনা করো। first appeared on Ask Master and is written by Ask Master.



This post first appeared on Ask Master, please read the originial post: here

Share the post

মার্কসবাদে লেনিনের অবদান আলোচনা করো।

×

Subscribe to Ask Master

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×