Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

আইন সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব বা মতবাদ | Theories of Law

The post আইন সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব বা মতবাদ | Theories of Law first appeared on Ask Master and is written by Ask Master.

আইনের সংজ্ঞা ও প্রকৃতি সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী আইনের অর্থ নিরুপণ করেছেন, প্রকৃতি বিচার করেছেন। আইন সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব বা মতবাদগুলি (Different Theories of Law) হল — (১) বিশ্লেষণমূলক মতবাদ (The Analytical School), (২) ঐতিহাসিক মতবাদ (The Historical School), (৩) সমাজবিজ্ঞানমূলক মতবাদ (The Sociological School) এবং (৪) মার্কসীয় মতবাদ (The Marxist School)।

(১) বিশ্লেষণমূলক মতবাদ (The Analytical School):

বিশ্লেষণমূলক মতবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন বোঁদা (Bodin), হবস (Hobbes), বেন্থাম (Bentham) ও অস্টিন (Austin)। পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডের হল্যান্ড (Holland) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইলোবি (Willoughby) বিশ্লেষণমূলক মতবাদ সমর্থন করেন। বিশ্লেষণমূলক মতবাদ অনুযায়ী আইনের প্রধান বৈশিষ্ট্য দ্বিবিধ – (ক) এটা সার্বভৌম রাজনৈতিক কর্তৃত্বের দ্বারা প্রণীত এবং (খ) বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এটা প্রয়োগ করা হয়। অস্টিনের মতে, কোন রাজনৈতিক সমাজের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিম্নতম সদস্যের প্রতি আদেশ যা সাধারণ আনুগত্য লাভ করে, তাই আইন। আইনের নিপীড়নমূলক শক্তির জন্য সাধারণভাবে মানুষ আইন মান্য করে চলে। আইন ভঙ্গ করলে তার জন্য দৈহিক শাস্তিবিধানের ব্যবস্থা থাকে।

বিশ্লেষণমূলক মতবাদের সমালোচনা: আইন সম্পর্কে বিশ্লেষণমূলক মতবাদ তীব্রভাবে সমালোচিত হয়েছে। এই সমালোচনাগুলি হল—

  • অস্টিন আইনকে সার্বভৌমের আদেশ বলে গণ্য করে আইনের অন্যান্য উৎসগুলিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছেন। বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় আইন অধস্তনের প্রতি ঊর্ধ্বতনের আদেশ বলে গণ্য হয়। ধর্ম, বিচারালয়ের সিদ্ধান্ত, পণ্ডিত ব্যক্তিদের সমালোচনা, জনপ্রতিনিধি কর্তৃক রচিত আইন প্রভৃতি উপেক্ষা করায় এই মতবাদ বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন হয়ে দাঁড়ায়।
  • এই মতবাদ আইনের স্থিতিশীল প্রকৃতির ওপর মাত্রাধিক প্রাধান্য আরোপ করে, সমাজ জীবনের বিভিন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করবার প্রগতিমূলক ভূমিকার প্রয়োজন অস্বীকার করে।
  • ঐতিহাসিক মতবাদে বিশ্বাসী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলেন যে, আইন সকল ক্ষেত্রেই সার্বভৌমের আদেশ বলে গণ্য করা অযৌক্তিক। সার্বভৌমের আদেশ ছাড়া সমাজের প্রচলিত প্রথাগত আইনও সমান প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এই প্রথাগত আইনকে অস্টিন সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছেন। অস্টিনের অনুগামীরা বলেন যে, সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ আইনের রূপ গ্রহণ করবার আদেশই পরোক্ষভাবে দিয়েছেন।

(২) ঐতিহাসিক মতবাদ (The Historical School):

ঐতিহাসিক মতবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন জার্মানীর স্যাভিনী (Savigny) এবং ইংল্যাণ্ডের হেনরী মেইন (Henry Maine), ফ্রেডারিক পোলক (Frederick Pollock) ও উইলিয়াম মেইটল্যান্ড (William Maitland)। বিশ্লেষণমূলক মতবাদের ন্যায় এঁরা আইনের স্থিতিশীল প্রকৃতির ওপর গুরুত্ব আরোপ না করে বিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে আইনের বিচার করে থাকেন। আইন কোন আইন প্রণেতার ইচ্ছার ফল নয়, সুদীর্ঘকালের ধীরগতি সামাজিক অবস্থার বিবর্তনের ফল। সমাজ বিবর্তনের ধারার বিভিন্ন কারণের ফলে আইন প্রণীত হয় এবং অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে আইনের পরিবর্তন হয়।

আনুষ্ঠানিকভাবে আইন সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের দ্বারা বলবৎ হলেও সেই আইনের পিছনে ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে বলে ঐতিহাসিক মতবাদের সমর্থকগণ স্বীকার করেন। ঐতিহাসিক মতবাদের সমর্থকগণ মনে করেন যে, সাধারণ মানুষ শাস্তির ভয়ে বা নিপীড়নমূলক শক্তির জন্য আইন মান্য করে না, সমাজ জীবনে শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে আইনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে আইন মান্য করে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আইনকে গ্রহণ না করলে তা বাস্তবে কার্যকর করা যায় না। পৃথিবীর ইতিহাসে লক্ষ্য করা যায় যে, জনগণের ব্যাপক অংশ মান্য না করলে চরম দমন-পীড়নে আইন বলবৎ করা যায় না।

ঐতিহাসিক মতবাদের সমালোচনা: ঐতিহাসিক মতবাদের গুরুত্ব এবং মূল্য অস্বীকার করা যায় না। আইনব্যবস্থার পরিবর্তন স্বাভাবিক এবং নতুন পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য সাধনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে ঐতিহাসিক মতবাদ বাস্তব সত্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিন্তু ঐতিহাসিক মতবাদের মূল্য সত্ত্বেও এর বিপক্ষে নানা সমালোচনা হয়ে থাকে।

  • ঐতিহাসিক মতবাদ আইনের ইতিহাসের ওপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করে এবং আইনের দর্শন বা নৈতিক উদ্দেশ্যকে উপেক্ষা করে।
  • আইনের পিছনে সার্বভৌমত্ব শক্তির সমর্থনকে ঐতিহাসিক মতবাদ অপেক্ষাকৃত উপেক্ষা করে। সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের দ্বারা স্বীকৃত ও বলবৎ না হলে স্বাভাবিকভাবে জনগণ আইন মান্য করে চলে না। আইনানুগত্য কেবলমাত্র জনগণের স্বেচ্ছা-সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল নয়।
  • ঐতিহাসিক মতবাদ অনেকাংশে রক্ষণশীলতাকে সমর্থন করে। রাষ্ট্র কর্তৃক সংস্কার সাধনের উদ্যোগ গ্রহণকে ঐতিহাসিক মতবাদ অবিশ্বাসের চোখে দেখে।

(৩) সমাজবিজ্ঞানমূলক মতবাদ (The Sociological School):

সমাজবিজ্ঞানমূলক মতবাদকে আইনের প্রকৃতি বিচারের অন্যতম আধুনিক মতবাদ বলে অভিহিত করা যায়। সমাজবিজ্ঞানমূলক মতবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন অস্ট্রিয়ার গাম্পলোভিজ (Gumplowicz), ফ্রান্সের দ্যুণ্ডই (Duguit), হল্যান্ডের ক্র্যাবে (Krabbe), ইংল্যাণ্ডের ল্যাস্কি (Laski) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোস্কো পাউন্ড (Roscoe Pound) ও বিচারপতি হোমস (Justice Holmes)। সমাজবিজ্ঞানমূলক মতবাদের সমর্থকগণ আধুনিক মনোবিজ্ঞান, সমাজবিদ্যা ও প্রয়োগবাদী দর্শনের তথ্যের ওপর নির্ভর করে আইনের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করেছেন। এঁদের মতে, আইন প্রকৃতপক্ষে সামাজিক শক্তির ফল এবং সামাজিক প্রয়োজন সাধনের জন্যই আইন প্রণীত হয়।

আইনের সার্থকতা বিমূর্ত তাত্ত্বিক আলোচনায় নয়, বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগের ফলাফলের ওপর। সুতরাং আইন মান্য করবার পিছনে সার্বভৌম কর্তৃত্ব বা শাস্তির ভয় অপেক্ষা সামাজিক স্বার্থসাধনের প্রয়োজনই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। আইনানুগত্য বা আইনানুবর্তিতা মূলত মানসিক অনুভূতির বিষয়। সামাজিক প্রয়োজনে সামাজিক মৌল আচরণবিধি মান্য করা সামাজিক সংহতির সহায়ক বিবেচনায় মানুষ আইন মান্য করে। আইনের স্থান রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের ঊর্ধ্বে বলে সমাজবিজ্ঞানমূলক মতবাদ প্রচার করে। দ্যুণ্ডই (Duguit) বলেন যে, সামাজিক সংহতির প্রয়োজনীয়তা এবং আইনের সমাজকল্যাণকর রূপ সম্পর্কে সচেতন হয়ে জনগণ আইন মান্য করে।

সমাজবিজ্ঞানমূলক মতবাদের ত্রুটি: সমাজবিজ্ঞানমূলক মতবাদ অনেকাংশে আইনের প্রকৃতি বিচারে সার্থক মতবাদ বলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু সমাজবিজ্ঞানমূলক মতবাদের ত্রুটি হল যে আইনের পিছনে পিছনে বলপ্রয়োগের ভূমিকাকে এটা উপেক্ষা করেছে। তাছাড়া আইনের লক্ষ্য যে সব ক্ষেত্রে সামাজিক কল্যাণসাধন নয়, শ্রেণীস্বার্থের প্রকাশ তাও সমাজবিজ্ঞানমূলক মতবাদ ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে। শ্রেণীবৈষম্যমূলক সমাজে সামগ্রিক কল্যাণ অপেক্ষা প্রতিপত্তিশালী শ্রেণীর স্বার্থ সংরক্ষণই আইনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।

(৪) মার্কসীয় মতবাদ (The Marxist School)

সমাজের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে আইনের প্রকৃতি বিচার করা সম্ভব নয় বলে মার্কসবাদিরা বিশ্বাস করেন। আইন কখনো সমাজের অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপরে উঠতে পারে না। মার্কসীয় মতবাদ অনুযায়ী আইন সকল ক্ষেত্রে সামাজিক অর্থনৈতিক সম্পর্ককে প্রকাশ করে। মার্কসের মতে সামাজিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে গঠিত উৎপাদন সম্পর্কই অর্থনৈতিক ভিত্তি বা বুনিয়াদ। এই বুনিয়াদ বা ভিত্তির ওপরেই রাজনৈতিক বা আইনগত ওপরি-কাঠামো গড়ে ওঠে।

সুতরাং রাষ্ট্রের প্রকৃতির সঙ্গে আইনের প্রকৃতি অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত। সমাজ বিকাশের এক ঐতিহাসিক স্তরে শ্রেণী-শোষণের হাতিয়ার হিসাবে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে। রাষ্ট্র সমাজে আর্থিক দিক থেকে প্রতিপত্তিশালী শ্রেণীর স্বার্থকে সংরক্ষণ করে। শাসকশ্রেণী যে উৎপাদন সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, তাই আইনে প্রকাশিত ও বিধিবদ্ধ হয়। মার্কস ও এঙ্গেলস এর ভাষায়, “শাসকশ্রেণীর ইচ্ছাটিকেই দাঁড় করানো হয় আইনরূপে — আইন অপর কিছু নয়।” শোষণমূলক দাস মালিকানার রাষ্ট্রে, সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্রে এবং বুর্জোয়া রাষ্ট্রে আইন শ্রেণী সম্পর্কের ধারক ও বাহক হিসাবে শাসকশ্রেণীর ইচ্ছাকেই প্রকাশ করে। বুর্জোয়া শাসনব্যবস্থায় আইন বুর্জোয়া শ্রেণীর ধ্যান-ধারণা ও মতাদর্শের প্রতিফলন ছাড়া কিছু নয়। সুতরাং মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গীতে বুর্জোয়া রাষ্ট্রে আইন বুর্জোয়া শাসকশ্রেণীর ইচ্ছাকেই প্রকাশ করে থাকে, সামগ্রিক কল্যাণ আইনের উদ্দেশ্য হতে পারে না।

মার্কসীয় মতবাদ অনুযায়ী একমাত্র সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই আইন সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের প্রসার এবং শ্রমিক, কৃষক ও সর্বহারার স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারে। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ সর্বহারার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আইন ইতিহাসে প্রথম হয়ে ওঠে সমগ্র জনগণের ইচ্ছার প্রকাশরূপের দিক হতে এবং বাস্তব কার্যকারিতার ক্ষেত্রে।

সুতরাং প্রকৃতি ও উৎস বিচারে মার্কসীয় মতবাদ একান্ত বাস্তব ও বিজ্ঞানভিত্তিক বলা যায়। শ্রেণীবৈষম্যমূলক সমাজের আইনের প্রকৃতি বৈষম্যমূলক হতে বাধ্য। মার্কসীয় এই দৃষ্টিভঙ্গী আইনের প্রকৃতি বিচারে যুক্তিযুক্ত বলে গ্রহণ করা যেতে পারে।

The post আইন সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব বা মতবাদ | Theories of Law first appeared on Ask Master and is written by Ask Master.



This post first appeared on Ask Master, please read the originial post: here

Share the post

আইন সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব বা মতবাদ | Theories of Law

×

Subscribe to Ask Master

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×