কলা কি; কলার খুটিনাটি; কলার গুণাগুন
কলা নরম ও রসালো বি৬ ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি ফল। কলার বিভিন্ন রকম ঔষধি গুন ও সহজলভ্য হওয়ায় এটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় একটি ফল। কলা সাধারণত উষ্ণ জলবায়ু পুর্ণ এলাকায় বেশি জন্মায়। পৃথিবীর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় পৃথিবীর অন্য প্রান্ত অপেক্ষা বেশি কলা উৎপন্ন হয়। তাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো কলার উৎপত্তিস্থল হিসেবে সুপরিচিত। বাংলাদেশের সাধারণত রংপুর, যশোর, জয়পুরহাট, ঝিনাইদহ,বগুড়া, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ময়মনসিংহ, চুয়াডাঙ্গাসহ বাংলাদেশের আরো অন্য সকল জেলাতেও কলা জন্মায়। বাংলাদেশের উঁচু জমিতে কলা চাষ খুবই সুবিধাজনক দেশের বিভিন্ন পাহাড়ে যেমন: বাংলা কলা,বনকলা এরকম আরো বিভিন্ন রকম বুনোকলা চাষ করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর বুকে ল্যাটিন আমেরিকার অধিকাংশ দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে বিবেচিত হলো কলা
Related Articles
সূচিপত্রঃ মানবদেহে কলার কার্যকারিতা | কলার বিশেষ ঔষধি গুণ | পুরুষের যৌন সমস্যায় কলার গুরুত্ব
- কলা কি; কলার উপকারিতা
- কলার বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
- কলার গুনাগুন, কলা গাছের বর্ণনা
- কলার ৬টি উপকারিতা
- কলা গাছের বর্ণনা; কলা কিভাবে চাষ করে??
- কলার খাদ্যগুণ তালিকা
- পুরুষের যৌন সমস্যায় কলার গুরুত্ব
- কলার চাষ, কলার চাষ কোথায় বেশি হয়?
কলার শ্রেণিবিন্যাস; কলা গাছ এর বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস
সপুষ্পক ক্যাটাগরির উদ্ভিদ (মনোকটস) কলা (মুচকিয়া) ফ্যামিলির উদ্ভিদ। কলা (musa acuminata)প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত।
কলার গুনাগুন, কলা গাছের বর্ণনা
কলার ঔষধি গুণাবলী অনেক পুষ্টি ও ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ। একটি পরিচিত ফল কলার পুষ্টিগুণ অনেক হয়ে থাকে। মানব দেহ গঠনে দৃঢ় কোষ গঠনকারী উপাদান যথা ভিটামিন খনিজ ও আমিষ জাতীয় খাদ্যের মত প্রচুর ক্যালোরি উৎপন্ন করতে সক্ষম এই কলা। তাই বলা যায় যে ক্যালরি উৎপন্নের আর একটি ভালো উৎস হলো কলা।সাধারণত একটি বড় মাপের কলা হতে ১০০ ক্যালরী পরিমাণ ক্যালোরি শক্তি বিদ্যমান থাকে। কলাতে রয়েছে সহজ যোগ্য হজমকারী শর্করা।এই জাতীয় শর্করা পরিপাক তন্ত্রকে যেকোনো খাদ্যদ্রব্য সহজে হজম করতে সাহায্য করে থাকে। কলাতে বিদ্যমান থাকা আয়রন মানবদেহের রক্তের হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে বেশ ভূমিকা রাখে বিশ্বের নানা রকম তথ্য গবেষকদের মতামতের ভিত্তিতে স্বাভাবিক রক্তচাপ ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পটাশিয়ামের উপস্থিতি খুবই অপরিহার্য বলে মনে করা হয়ে থাকে। তাছাড়া সঠিক পরিমাণে বা আদর্শ মান পটাশিয়ামের ধরে রাখতে পারলে অনেকটাই স্ত্রকে চাপ কমে যায়। আর এইরকম উপকারী আয়রন ও পটাশিয়াম কলায় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
কলার কয়েকটি উপকারিতা, মানবদেহে কলার কার্যকারিতা
- মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি
- হ্যাংওভারউপশম করা
- রক্তচাপ কমায়
- পেটের আলসারের উপশম করে
- অ্যানিমিয়া সতেজ ও সচল রাখে
- ধুমপানের আসক্তি কমায়
মনে রাখা ভালোঃ
আপনার প্রতিদিনের ডায়েটের তালিকায় কলা রাখতে পারেন কারন কলাতে খুবই কম পরিমানে ফ্যাট থাকে।
কলা গাছের বর্ণনা; কলার জন্ম কোথায়? কলার ফুল
চীন ও ভারত কে কলা গাছের জন্ম স্থান হিসেবে তুলে ধরেন উদ্ভিদবিজ্ঞানী (মালান) তাছাড়া পাক-ভারত মালকে কলাগাছে উৎপত্তিস্থল হিসেবে তুলে ধরেন। আরেক বিজ্ঞানী কলাগাছ মূলত শ্রেণীভুক্ত এবং একবীজপত্রী উদ্ভিদ। সেইসাথে কলাগাছ বহুকোষী উদ্ভিদ ও বটে কলা গাছের শিকড় বা নিচের অংশ রাইজোম দ্বারা নির্মিত এবং ভূমির উপরের অংশ সিউডোস্টেম দ্বারা তৈরি। মূলত রাইজোম ও সিউডোস্টেম নিয়ে কলাগাছ গঠিত হয়। এর পাতা ও কান্ড দুটোই সবুজ বর্ণের হয়ে। থাকে কলা কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে এটি হলুদ বর্ণ ধারণ করে কলা গাছের পাতা মূলত সরল ও পত্রফলক প্রশস্ত বা চ্যাপ্টা হয়ে থাকে পাতাতে সুস্পষ্টভাবে মধ্যশিরা দেখা যায়।এবং কলাপাতায় মধ্যশিরা বিদ্যমান থাকে। কলা ফুল মূলত এক প্রতিসাম্য উভয়লিঙ্গ।
কলার গুনাগুন - কলার খাদ্যগুণ তালিকা
১০০ গ্রাম পরিমাণ কলায় বিদ্যমান খাদ্যগুণ নিচের ছকগুলোতে তুলে ধরা হলো--
উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
জল | ৭০.১% |
আমিষ | ১.২% |
ফ্যাট | ০.৩% |
খনিজ লবণ | ০.৮% |
আঁশ | ০.৪% |
শর্করা | ৭.২% |
মোট | ১০০ |
খনিজ লবণ এবং ভিটামিন
উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ক্যালসিয়াম | ৮৫ মি.গ্রাম |
ফসফরাস | ৫০ মি.গ্রাম |
আয়রণ | ০.৬ মি.গ্রাম |
ভিটামিন সি,বি কমপ্লেক্স | ৮ মি.গ্রাম |
মোট ক্যালরি | ১১৬ মি.গ্রাম |
যৌন সমস্যা সমাধানে কলা, পুরুষের যৌন সমস্যায় কলার গুরুত্ব
পুরুষের অতিরিক্ত শুক্রক্ষয় এর জন্য শরীর অতিরিক্ত হালকা ও অস্থির বোধ করে থাকে। আর এরকম অস্থিরতা বা শুক্র ক্ষয় রোধে কলাতে থাকা আয়রন ও ক্যালসিয়াম দেহের শুক্রক্ষয় রোধে ভূমিকা রাখে তা ছাড়াও শুক্রাশয় কে স্বাভাবিক রাখতে ও ঘন করতে কলার অবদান অপরিসীম বলে ধরা হয়ে থাকে।
কলার চাষ, কলা কিভাবে চাষ করে? কলার চাষ কোথায় বেশি হয়?
কলা চাষের জন্য মূলত তিনটি মৌসুমী উপযুক্ত বলে ধরা হয় কলা চাষের প্রথম মৌসুম জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। দ্বিতীয় অংশ হলো মার্চ মাস থেকে মে পর্যন্ত। এবং সর্বশেষ মৌসুম হল সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। কলা চাষের জন্য ভূমিকে ৫ থেকে ৭ বার ভালো করে চাষ দিয়ে নিতে হয়। তারপর জমিতে প্রতি তিন বিঘা তে ১২ টন সবুজ সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিটি গাছের থেকে দূরত্ব হবে ২.২ মিটার। একটি করে কলা গাছের গর্তে ৬ কেজি পরিমাণ গোবর সার ১২৫ গ্রাম খৈল ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া ২২৫ গ্রাম টিএসপি দিতে হয়। গাছ রোপন করা থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত আগাছা রোধ করে রাখতে হয়। কলাগাছ মূলত বিটল পোকা বানচিপট বানামা আক্রমণ করে থাকে। তবে এ সকল রোগ বেশি হয় যদি কলাবাগানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে পোকার আক্রমণ ও রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ম্যালাথিয়ন ও নিবাসী লিবাসিস ৫০ ইসি এবং সেভিন ৮৫ ডাব্লিউ পি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
আপনি জেনেছেন-
কলার থোর মোচার উপকারিতা,কলার মোচা/থোর রান্নার রেসিপি,উচ্চ রক্ত চাপ ও ক্লোরেস্টল কমাতে কলার থোর,কলার মুচির খারপ দিক,বিচি কলার যত ঔষধি গুনাবলি,যৌন সমস্যা সমাধানে বিচি কলা।