বিসিএস লিখিত পরীক্ষার নম্বর বন্টন ও পঠিত বই সমূহ ও কৌশল :
বাংলা-২০০, ইংরেজি-২০০, বাংলাদেশ বিষয়াবলী-২০০, আন্তর্জাতিক-১০০, গণিত-৫০, মানসিক দক্ষতা-৫০, বিজ্ঞান-১০০ মিলে মোট ৯০০ মার্কের সিলেবাস নিয়ে দিতে হবে বিসিএস রিটেন।
Related Articles
"বাংলা"
যা যা বই পড়তে হবেঃ
১. ৯-১০ম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বই
২. এসিউরেন্স লিখিত গাইড
৩. মোহসীনা নাজিলার শীকর সাহিত্য সমালোচনা গাইড।
যা যা করতেই হবেঃ
√ বাংলা প্রথম পার্টে ১০০ মার্ক। প্রিলির পড়াটা এখানে কাজে লাগাতে হবে সাথে এসিউরেন্স গাইড হতে পড়ে ফেললেই এনাফ। এই পার্টে টু দ্য পয়েন্টে আনসার করতে হবে। যেমন; মাইকেলের তিনটা বইয়ের নাম চাইলে তিনটা লিখলেই ৩ মার্ক পাওয়া যাবে, রস-কস মিশাইতে গেলেই টাইম কনজিউমিং হয়ে যাবে।
√ ভাবসম্প্রসারণে কালার পেন দিয়ে কোটেশন ইউজ করলে ভালো মার্ক ক্যারি করবে। ইংলিশ ট্রান্সলেশন পড়ার সময় বাংলার অনুবাদ প্রাকটিস হয়ে যায়, আলাদা এফোর্ট দেয়ার দরকার নাই। সাহিত্য সমালোচনা ৫-৬ টাইপ পড়ে নিলে নির্ভার থাকা যাবে। যেমনঃ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক, ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক, বঙ্গবন্ধুর লেখা, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য নিয়ে প্রভৃতি। আবেদন পত্রের জন্য শুধু ফরম্যাট দেখে নিতে হবে, ঠাডা মুখস্থ করলে মাথায় ঠাডা পড়ার সম্ভাবনা প্রবল।
√ খুব দ্রুত লেখার অভ্যাস করতে হবে। ৪ ঘন্টায় ২০০ মার্ক, তার মধ্যে রচনায় ৪০ মার্ক। কাল্পনিক সংলাপটা নিজের মতো করে গুছায় লিখতে হবে। এট লিস্ট শেষ ১ ঘন্টা রচনার জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।
√ বাংলা রচনা এবং ইংলিশ কম্পোজিশনে মোট ৯০ মার্ক। একই সাথে প্রিপারেশান নেয়া যায়। যেমন আমি নোট খাতায় মোট ১২ টা টপিক ইংরেজি ভার্সনে নোট করে নিয়েছিলাম। লাইক পরিবেশ, পদ্মা সেতু, নারীর ক্ষমতায়ন..... এখন এই টপিক গুলার জন্য শুধু ডাটা, কোটেশন, গ্রাফ, টেবিল, ছক ইটিসি নোট খাতায় নোট করে রেখেছিলাম। বাংলা রচনায় বাংলায় অনুবাদ করে লিখতাম, ইংরেজি পরীক্ষার দিনে ইংলিশে। ডাটা-কোটেশন-টেবিল সমৃদ্ধ রচনা ১২-১৩ পেইজ হইলেই আদর্শমান বহন করবে। কোটেশন অবশ্যই নীল কালির কলম দিয়ে লিখতে হবে। ডেটা কোটেশন পাওয়ার সোর্সঃ BER, ডেইলি পত্রিকা, গাইড বই এবং গুগল বাবা। "Unique bcs লিখিত বাংলা রচনা ও English essay" বইটাতে একইসাথে ইম্পোর্ট্যান্ট সব টপিকস, ডাটা, কোটেশান এর কালেকশান পাওয়া যাবে।
ভালো প্রিপারেশান নিয়ে এই জায়ান্টকে মোকাবিলা করতে পারলে ১৪০-১৫০ প্রিসাস মার্ক এনে দিবে যা কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পাওয়ার অন্যতম ক্যাটালিস্ট।
"ইংরেজী"
যে বই ফলো করা যায়ঃ
১. এসিউরেন্স/ প্রফেসরস লিখিত গাইড
২. সাইফুরস+জিআরই ভোক্যাবুলারি।
৩. প্রিলির জন্য অনুসৃত বই।
যা যা করতে হবেঃ
√ প্যাসেজটা পড়ার আগে আমি ১০ টা কোয়েশ্চেন ২ বার পড়তাম। দ্যান প্যাসেজ পড়ে মূলভাবটা বুঝতাম। সহজ সাবলীল ভাষায় লিখতে হবে। গ্রামার পার্টে ম্যাক্সিমাম মার্ক আনার চেষ্টা করতে হবে। মোট ৪ ঘন্টার পরীক্ষা, ১ ঘন্টা কম্পোজিশনের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।
√ ১৫ কিংবা ২০ মার্কের একটা কোয়েশ্চেনে ১০০ ওয়ার্ডে প্যাসেজের জিস্টটা জানতে চায়। এখানে বাড়তি কথা লেখা যাবে না কিংবা নিজের মতামত দেয়া যাবে না। প্যাসেজে যা আছে তাই ১০০ ওয়ার্ডে লিখতে হবে।
√ "লেটার টু দ্য ইডিটর" বাংলার মতই।
√ অনুবাদ ও ট্রান্সলেশন খুবই ভাইটাল। গাইড এবং পত্রিকা থেকে এট লিস্ট দুটা ফিচার রোজ প্রাকটিস করতে হবে।
√ কম্পোজিশনের ট্যাকটিকটা উপরের পার্টেই ব্যবচ্ছেদ করে ফেলেছি।
আই নোটিশড, ইংলিশে প্রায় সবাই ১০০-১২০ পাওয়ার আশা নিয়ে পরীক্ষা দিতে যায়। আপনি যদি কোনমতে ১৩০-১৪০ মার্ক পাওয়ার মতো একজাম দিয়ে আসেন তবেই আপনি অমাবস্যার চাঁদ হাতে পেয়ে যাবেন।
"বাংলাদেশ বিষয়াবলী"
রেফারেন্স বইপত্র সমূহঃ
১. এসিউরেন্স/ওরাকল বাংলাদেশ গাইড (আমি ওরাকল দেখেছিলাম)
২. বাংলাদেশ ইকোনোমিক রিভিউ(আপডেটেড)
৩. দৈনিক পত্রিকা
কিছু অবশ্য কর্তব্য কর্মঃ
√ ১০ সেট প্রশ্ন থাকে (প্রতি সেটে ২-৩ টা কোয়েশ্চেন), মোট ২০০ মার্ক। ৪ ঘন্টার লেখা শুরুর আগে একটা রোডম্যাপ রেডি করে রাখতে হবে যেন ২০০ মার্কস এ টু জেড টাচ করা যায়। আমি ৩৮ বিসিএসে ১ টা সেট টাচই করতে পারিনি। তাই সাধু সাবধান।
© সংবিধান সবচেয়ে গুরুত্ববহ পার্ট। সাধু ভাষায় হুবহু লিখতে হবে না, নিজের মত করে নোট করতে হবে। ধারা ১-৪৪, ৪৮-৮২, ৮৪, ৯২-৯৬, ১০০-১০৩, ১০৮, ১১৪, ১১৭-১২৩, ১২৭, ১৩৫-১৩৯, ১৪২, ১৪৬, ১৫২, ১৫৩ এগুলা ভালোমত পড়লেই হয়ে যাওয়ার কথা।
© ১৯৪৭-৭১ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের কনসেপ্টটা ক্লিয়ার থাকতে হবে। "বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ" নামক কনফিডেন্স প্রকাশনীর বইটা পড়লে ভাইভা সহ কাভার হয়ে যাবে।
√ লেখা অবশ্যই ডাটা, কোটেশন, গ্রাফ, টেবিল, এবং ম্যাপ সমৃদ্ধ হতে হবে। কোটেশন অবশ্যই নীল কালির কলম এবং অন্যসবের জন্য পেন্সিল ব্যবহার করা যাইতে পারে।
√ ডাটা এবং কোটেশন কালেকশনের সোর্সঃ ডেইলি পত্রিকা, বিইআর, কারেন্ট এফেয়ার্স, বিভিন্ন গাইড বই এবং গুগল বাবা। আমি বাংলাদেশ বিষয়াবলী এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর জন্য কোটেশন এবং ডেটার জন্য আলাদা নোটখাতা রেডি করে রেখেছিলাম যেন পরীক্ষার আগের কয়েকদিন স্কিম থ্রু করা যায়, ইট হেল্পস।
২০ মার্কস ছেড়ে আসার পরেও আমি কনফিডেন্ট ছিলাম বাংলাতে এট লিস্ট ১৩৫/১৪০ পাবো। আর এরকম মার্কস ক্যারি করাতে পারলে আপনার জেনারেল ক্যাডার পাওয়ার বন্ধুর পথটা মসৃণ হয়ে যাবে।
"আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী"
রেফারেন্স বইসমূহঃ
১. প্রফেসরস/এসিউরেন্স গাইড (আমি প্রফেসরটা পড়েছিলাম)
২. নাইম ভাইয়ের বেসিক ভিউ
৩. কারেন্ট এফেয়ার্স
৪. দৈনিক পত্রিকা
অবশ্য পালনীয় কিছু টিপ্পনীঃ
√ ৩ ঘন্টা, ১০০ মার্কস। মোটামুটি র্যাপিডলি লিখলে টাইম নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নাই।
√ ফ্লাট আন্সার করলে মার্ক পাওয়া যাবে না। ক্রিটিক্যাল এনালাইসিস করলে ভালো মার্ক ক্যারি করবে। আই আরের কিংবা অন্য স্টুডেন্টরা চাইলে ইংলিশেও একজাম দেয়া যাবে। তবে আমি ইংলিশে একজাম দেয়ার পক্ষপাতী না।
√ ডাটা, কোটেশন, গ্রাফ, টেবিল এবং ম্যাপ দেওয়া যাবে এবং দেয়ার স্কোপ থাকলে অবশ্যই দিতে হবে। এগুলা কালেক্ট এবং এপ্লাই করার সোর্স উপরের পার্টে বলা আছে।
√ প্রব্লেম সলভিং পার্টটা আন্সার করার জন্য সার্টেইন কোন রুল আমি পাইনি। জানি না এটার জন্য কোন নিয়ম আছে কিনা! আমি নিজের মতো পয়েন্ট পয়েন্ট করে গুছিয়ে লিখেছিলাম।
আপনি জেনে অবাক হবেন যে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পায় কিন্তু আন্তর্জাতিকে পায় ৫৫-৬০ মার্কস। তবে এই সাইলেন্ট কিলার অনেককেই ৫০ মার্কের এর নিচে নামিয়ে দিয়ে সাইলেন্টলি কিল করে ফেলে। তাই বি এওয়্যার এবাউট দিস কিলার বাডি।
"গণিত"
সহায়ক বইঃ-
১. ৮ম শ্রেণীর ম্যাথ বোর্ড বই,
২. ৯-১০ম শ্রেণীর জেনারেল ম্যাথ বই
৩. ৯-১০ম শ্রেণীর হায়ার ম্যাথ বই এর অসমতা, সরলীকরণ, পরিমিতি, ত্রিকোণমিতি, সম্ভাব্যতা, স্থানাঙ্ক জ্যামিতি সহ সিলেবাসভুক্ত কিছু চ্যাপ্টার করতে হবে।
৪. ১১-১২ শ্রেণীর এর ম্যাথ বই এর বিন্যাস-সমাবেশ চ্যাপ্টার।
৫. ওরাকল/এসিউরেন্স গাইড (দুটাই ভালো)।
কিছু টিপ্পনীঃ
√ ১২ টি সেট থাকে, ১০ টির আন্সার করতে হয়। ১০*৫= ৫০ মার্ক। ৫০ মার্কে ৫০ পাওয়া একমাত্র সুপার হিউম্যানদের দাড়াই পসিবল। তাই কোন চ্যাপ্টারে প্রব্লেম হলে, আই মিন যদি একান্তই না পারা যায় তাহলে স্কিপ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
√ রিভিশন, রিভিশন এন্ড রিভিশন। এটিই ম্যাথে ভালো করার একমাত্র উপায়।
√ আমি কার্টেসিয়ান জিওমেট্রি চ্যাপ্টারটা টাচ করিনি। তবে এই চ্যাপ্টার থেকে ১-২ টি সেট মোটামুটি কনফার্ম।
√ ম্যাথের সুত্রগুলো ছোট্ট প্যাড খাতায় নোট করে রাখা ভালো, শেষ মুহুর্তে স্কিপ থ্রু করে নেয়া যায়।
√ জ্যামিতির উপপাদ্যের জন্য ৩০-৩৫ টা নোট করে নেয়া ভালো। কমন না পড়লেও নিজের মত করতে পারার মতো ক্যাপাবিলিটি তৈরি করতে হবে।
৫০ মার্কে ৪০ প্লাস মার্ক পাওয়াটা সুপার্ব ব্যাপার স্যাপার। তবে আমি ৩৮ বিসিএস এ ৩৭.৫ পেয়েও কাঙ্ক্ষিত জেনারেল ক্যাডারটি পেয়ে গেছি।
"মানসিক দক্ষতা"
সহায়ক উপকরণঃ
১. কমন সেন্স
২. ভোকাবুলারি নলেজ
৩. এমপিথ্রি/এসিউরেন্স গাইড
৫০ মার্ক থাকে। প্রিলির মতো ওএমআর শীটে আন্সার করতে হবে। খুব প্যানিক না করলে ইজিলি ৩০-৩৫ পাওয়া যায়। তবে সেইফ জোনে থাকার জন্য ৪০-৪৫ পাওয়ার চেষ্টা করা যায়।
"বিজ্ঞান"
সহায়ক বইঃ-
১. ৯-১০ম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান বই
২. ওরাকল গাইড।
কিছু টিপ্পনীঃ-
√ আপনি যদি পিউর আর্টস/কমার্সের স্টুডেন্ট হন তাহলে বিজ্ঞান আপনার জন্য একটা বিভীষিকার নাম। এটা থেকে উতরানোর উপায় বের করে নিতেই হবে। নাহলে জেনারেল ক্যাডার আপনার জন্য নয়।
√ একটু সময় দিয়ে নোট করে পড়লে ভালো হয়। ইফেক্টিভ হতে পারে।
√ প্রশ্নে যা চায় তাই আন্সার করতে হবে, টু দ্য পয়েন্টে। হাবিজাবি লিখলে মার্ক তো অতিরিক্ত দিবেই না সময়ও পাওয়া যাবে না।
বিজ্ঞানে ৬০-৭০ মার্ক না পাইলে জেনারেল ক্যাডার পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়। তবে কোয়েশ্চেন ফ্যাভারে থাকলে ৮০ প্লাস পাওয়া যাবে। আমি ৩৮ বিসিএস এ ৮৫+ মার্ক এক্সপেক্ট করেছিলাম।
সো, গুড পিপল, এই ছিল বিসিএস রিটেনের ওভারঅল একটা কনসেপ্ট। যা লিখলাম তা একান্তই আমার ব্যক্তিগত প্রিপারেশন ও আশেপাশের মানুষের থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতার একটা জিস্ট। আশা করি কেউ না কেউ উপকৃত হবেন। ❤️