Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

হাওরে এখন চাষের মাছ

হবিগঞ্জের হাওরে দেশি মাছের প্রাচুর্য এখন গল্পের বিষয়। এক দশকে জেলায় সার্বিক মাছের উৎপাদন বাড়লেও দেশীয় মাছের উৎপাদন কমেছে সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিক টন।

মৎস্য খাতে জড়িতরা বলছেন, বিভিন্নভাবে হাওর নষ্ট হওয়া, অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, জলাশয় সেচে মাছ ধরা এবং ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় দেশি মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে এসব প্রজাতির মাছ।

জেলেরা বলছেন, এক দশক আগেও জালে বোয়াল, চিংড়ি, শিং, মাগুর, কই, ট্যাংড়া, পুঁটি, বইচা, শোল, বাইমসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ ধরা পড়ত হাওর-বিল-নদীতে। এখান থেকে সংগৃহীত মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যেত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এমনকি বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা ‘আজমিরীগঞ্জ ফিস ইন্ডাস্ট্রি’র মাধ্যমে ইউরোপ-আমেরিকায়ও হতো রপ্তানি।

পাবদা, ঘাঘট, চাপিলা, ট্যাংড়া, চিতল, কালবাউশ, খলিশা, গুতুমসহ বেশ কিছু প্রজাতি এখন আর পাওয়া যায় না।

বানিয়াচং উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের নরেন্দ্র দাস বলেন, ‘মাছ থাকবে কীভাবে? আগের মতো হাওরে পানিই আসে না। সব জায়গায় বাঁধ দিছে। আবার জাল দিয়া মাছের ডিম পর্যন্ত মানুষে ধইরালায়।’

একই উপজেলার মাকালকাইন্দ গ্রামের অনুপম দাস বলেন, ‘আগে কত মাছ পাইতাম! জাল দিয়া একটা খেউ দিলে কত মাছ আইত! আর এখন সারা দিন মাছ মারলেও ৫০০ টাকার মাছ পাওয়া যায় না।’

হাওরে মাছ কম পাওয়ার কারণে আয় কমেছে হাওরের জেলের। নিরূপায় হয়ে অনেক জেলে পাড়ি জমিয়েছেন শহরে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় মাছের চাহিদা ৪৫ হাজার ৯২ দশমিক ১২ মেট্রিক টন। উৎপাদন ৪৯ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৪৬ মেট্রিক টন।

তবে পরিসংখ্যানের আরেকটা দিকও আছে। জেলায় প্রাকৃতিক জলাশয়ের পরিমাণ ৮১ হাজার ৬৭১ হেক্টর। এক দশক আগে (২০১২ সালে) দেশীয় মাছের উৎপাদন ছিল ৩৩ হাজার ৬৯৩ মেট্রিক টন, যা বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ১৬৭ মেট্রিক টনে।

অর্থাৎ গেল এক দশকে প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের উৎপাদন কমেছে ৭ হাজার ৫২৬ মেট্রিক টন।

বেড়েছে চাষ করা মাছের পরিমাণ। ২০১২ সালে ২৪ হাজার ২৬৪টি পুকুরের ৪ হাজার ১৯১ হেক্টর এলাকায় মাছ চাষ হতো। উৎপাদন ছিল ১৬ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন। বর্তমানে পুকুরের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৩১টিতে। উৎপাদন হচ্ছে ২১ হাজার ৮৫৩ মেট্রিক টন।

অর্থাৎ এক দশকে চাষ করা মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৫ হাজার ৭০৮ মেট্রিক টন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘হাওরের মাঝ দিয়ে সড়ক নির্মাণ হচ্ছে এবং জমিতে মাত্রাতিরিক্ত সার কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে নষ্ট হচ্ছে হাওরের পরিবেশ। এ কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ বাঁচাতে বিজ্ঞানসম্মতভাবে হাওরের উন্নয়ন করতে হবে।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হাওরে মাছের পরিমাণ বাড়াতে বর্ষা মৌসুমে নিয়মিত পোনা মাছ অবমুক্ত করছে মৎস্য অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে অবৈধ কারেন্ট জাল ও বেড়জাল বন্ধে চালানো হয় অভিযান।

‘প্রজনন মৌসুমে হাওরের জেলেদের প্রণোদনা দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ রাখার পরিকল্পনা চলছে। যদি এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয়, তাহলে দেশীয় মাছের সুদিন আবারও ফিরে আসবে।’



This post first appeared on Latest Bangla News | Online Bangla News Portal | News Bangla 24, please read the originial post: here

Share the post

হাওরে এখন চাষের মাছ

×

Subscribe to Latest Bangla News | Online Bangla News Portal | News Bangla 24

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×