নিজস্ব প্রতিবেদনঃ ‘কিসের বার কিসের তিথি, আষাঢ়ের সাত তারিখ অম্বুবাচী।’ হিন্দু ধর্মের একটি বিশেষ উৎসব হল অম্বুবাচী। লোককথা অনুসারে, আষাঢ় মাসের মৃগশিরা নক্ষত্রের তৃতীয় চরণ শেষ হলে ধরিত্রী মাতা ঋতুমতী হন। এই সময়ই পালন করা হয় অম্বুবাচী। আমরা জানি কোনও নারী রজঃস্বলা হলে, তখন তিনি সন্তান ধারণের উপযুক্ত হন। ঠিক তেমনই মনে করা হয়, বর্ষার আগমনে ধরিত্রী মাতা রজঃস্বলা হন।
Related Articles
এরপরই ফলে ফুলে ভরে যায় পৃথিবী। এই সময় মাটি কাটা, জমিতে লাঙ্গল চালানো যায় না। এই সময় সমস্ত মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে। যে কোনও শুভ কাজ যেমন, গৃহপ্রবেশ এসবও বন্ধ রাখা হয়। অম্বুবাচী ব্রতের সময় নিত্য পূজা সম্পন্ন হলেও মন্দিরের দরজা কখনও জনসাধারণের জন্য খোলা হয় না। আঞ্চলিক ভাষায় অম্বুবাচীর হরেক নাম রয়েছে। যেমন ভারতের কিছু জায়গায় অমাবতী বলেও পরিচিত এই উৎসব। আবার একাধিক স্থানে এই উৎসব, রজঃ উৎসব নামেও পালিত হয়। অম্বুবাচী শুরুর পর তিন দিন চলে এই উৎসব।
চলতি বছরে অম্বুবাচী শুরু হয়েছে ২২ জুন, বৃহস্পতিবার (বাংলা ৬ আষাঢ়) ভোর রাত ২ টো ৩২ মিনিটে। চলবে ২৬ জুন, সোমবার (বাংলা ১০ আষাঢ়) দুপুর ২ টো ৫৬ মিনিট পর্যন্ত।
অম্বুবাচীর ব্রত পালনের কিছু বিশেষ নিয়ম :
১) অম্বুবাচী চলাকালীন বিভিন্ন মন্দির ও বাড়ির ঠাকুরঘরের মাতৃ শক্তি যেমন কালী, দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, বিপত্তারিণী, শীতলা, চণ্ডীর প্রতিমা বা ছবি লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া উচিত। অম্বুবাচী শেষ হওয়ার পর দেবীর আসন পাল্টে নিন। তার পর স্নান করিয়ে পুজো শুরু করতে পারেন।
২) অম্বুবাচী চলাকালীন পুজো করার সময় মন্ত্রপাঠ করা উচিত না। শুধুমাত্র ধূপ ও প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রণাম করতে হয়।
৩) অম্বুবাচীতে গুরুপুজো করতে কোনও বাধা নেই। এমনকী গুরু প্রদত্ত মন্ত্রও অনায়াসে জপ করতে পারবেন।
৪) বাড়িতে তুলসী গাছ থাকলে তার গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করে রাখতে ভুলবেন না।
৫) কোনও শুভ কাজও এই কয়েকদিন নিষিদ্ধ থাকে। এমনকী কৃষিকাজ বন্ধ রাখা হয়। অম্বুবাচীর তিনদিন পর, ফের কোনও মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান ও চাষাবাদ শুরু হয়।
৭) প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, ঋতুকালে মেয়েরা অশুচি থাকেন। একই ভাবে মনে করা হয়, পৃথিবীও এই সময়কালে অশুচি থাকে। সেজন্যই এই তিন দিন ব্রহ্মচারী, সাধু, সন্ন্যাসী, যোগীপুরুষ এবং বিধবা মহিলারা ‘অশুচি’ পৃথিবীর উপর আগুনের রান্না করে কিছু খান না। বিভিন্ন ফলমূল খেয়ে এই তিনদিন কাটাতে হয়।