Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

Putrada ekadashi: একাদশী পালন করছেন? জেনে নিন শাস্ত্রীয় বিধি অনুযায়ী সঠিক নিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদন: অনেকেই পঞ্জিকা দেখে নির্দিষ্ট দিনেএকাদশী পালন করেন। কিন্তু সঠিকভাবে নিয়ম না মেনে এই কাজ করলে কোনওদিনই পূরণ হবে না এই নিয়ম। একাদশীর কথা বেদের কোথাও না থাকলেও বিভিন্ন পুরাণে এর সম্পর্কে বলা আছে। শাক্ত,শৈব,বৈষ্ণব মোটামুটি প্রায় সকল সম্প্রদায়ের মধ্যেই একাদশী পালনের রীতি দেখা যায়। পুরান বলছে,শুক্ল-কৃষ্ণ প্রতি পক্ষের একাদশী তিথিতে অনুষ্ঠিত একাদশী একটি পবিত্র ব্রত। শাস্ত্রে বিভিন্ন প্রকার ব্রতের কথা আছে, এর মধ্যে একাদশী অন্যতম। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মধ্যে একাদশীর প্রচলন সর্বাধিক। শ্রাদ্ধে যেমন মুখ্যকর্ম হল দান, তেমনি একাদশী ব্রতে মুখ্যকর্মই হল উপবাস এবং সংযম।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডে বিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে একাদশী পালনের বিধিনিষেধ। অবশ্য ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ বঙ্গের বৈষ্ণবদের খুব আদরণীয় গ্রন্থ হলেও, বর্তমানে এ পুরাণে বর্ণিত একাদশী বিধির সম্পূর্ণ বিষয়গুলো খুব কমই বঙ্গদেশে অনুসরণ করতে দেখা যায়। একাদশী বিধি সম্পর্কে সেখানে বলা আছে ‘ কৃত্বা হবিষ্যং পূর্ব্বাহ্ণে ন চ ভুঙেক্ত পুনর্জ্জলম্। একাকী কুশশয্যায়াং নক্তং শয়নমাচরেৎ। ব্রাহ্ম্যে মুহূর্ত্ত উত্থায় প্রাতঃকৃত্যং বিধায় চ। নিত্যকৃত্যং বিধায়াথ ততঃ স্নানং সমাচরেৎ।। ব্রতোপবাসসঙ্কল্পং শ্রীকৃষ্ণপ্রীতিপূর্বকম্। কৃত্বা সন্ধ্যাতপর্ণঞ্চ বিধায়াহ্নিকমাচরেৎ।। নিত্যপূজাং দিনে কৃত্বা ব্রতদ্রব্যং সমাহরেৎ। দ্রব্যং ষোড়শোপচারং প্রকৃষ্টং বিধিবোধিতম্।। আসনং বসনং পাদ্যমর্ঘ্যং পুষ্পানুলেপনম্। ধূপদীপঞ্চ নৈবেদ্যং যজ্ঞসূত্রঞ্চ ভূষণম্।। গন্ধস্নানীয়তাম্বূলং মধুপর্কঃ পুনর্জলম্। ত্রতান্যাহৃত্য দিবসে ব্রতং নক্তং সমাচরেৎ। উপবিশ্যাসনে পূতো ধৃত্বা ধৌতে চ বাসসী। আচম্য শ্রীহরিং স্মৃত্বা স্বস্তিবাচনমাচরেৎ।। আরোপ্য মঙ্গলঘটং ধান্যধারে শুভক্ষণে। ফলশাখাচন্দনাক্তং বেদোক্তং মুনিভির্মুদা।

দেবষট্ কং সমাবাহ্য পৃথগদ্ধ্যানৈঃ সমর্চ্চয়েৎ। পূজাং পঞ্চোপচারেণ প্রকৃষ্টেন বিচক্ষণঃ।। গণেশ্বরং দিনকরং বহ্নিং বিষ্ণু শিবং শিবাম্। সম্পূজ্য তান্ প্রণম্যাথ ব্রতং কুর্য্যাদ্ধরিং স্মরণ্।। নারাধ্য দেবষট্ কঞ্চ যদি কর্ম সমাচরেৎ। নিত্যং নৈমিত্তিকং বাপি তং সর্বং নিষ্ফলং ভবেৎ’। এর অর্থ ব্রতী পূর্বাহ্ণে হবিষ্য করে, সেদিন আর জল পর্যন্তও পান করবে না। এরপরে রাত্রে একাকী কুশশয্যায় শয়ন করবে। পরদিন ব্রাহ্মমুহূর্তে শয্যা হতে উত্থান করে প্রাতঃকৃত্য সমাপন করে।।নিত্যকৃত্য সম্পাদনপূর্বক স্নান করবে। ব্রতী, ব্রত ও উপবাসের সংকল্প ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রীতির উদ্দেশ্যে করে, এরপরে সন্ধ্যা-তর্পণাদি সম্পাদন করে আহ্নিক করবে। নিত্যপূজা সম্পাদন করে দিনের মধ্যেই ব্রতদ্রব্য আহরণ করবে ; এতে ষোড়শোপচার দ্রব্যই প্রকৃত বিধিনির্দিষ্ট। আসন,বস্ত্র, পাদ্য,অর্ঘ্য, পুষ্প, অনুলেপন, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, যজ্ঞসূত্র, ভূষণ,গন্ধ, স্নানীয়, তাম্বূল, মধুপর্ক এবং আচমনীয় ; ব্রতী এ ষোড়শোপচারের দ্রব্য সকল দিবসে আহরণ করে রাত্রিতে ব্রত করবে।এরপরে ব্রতী ধৌত পরিষ্কার বস্ত্রযুগল পরিধান করে পবিত্রভাবে আসনে উপবেশন করে আচমনপূর্বক শ্রীহরিস্মরণ ও স্বস্তিবাচন করবে।তৎপরে শুভক্ষণে ধ্যানাধারে মুনিগণ দ্বারা বেদোক্ত মঙ্গলঘট স্থাপন করে তাতে ফল,শাখা ও চন্দন প্রদান করবে।সেই ঘটে পৃথক পৃথক ধ্যান ও আবাহনে ছয় দেবতাকে পূজা করবে।ছয় দেবতারা হলেন: গণেশ, সূর্য,বহ্নি, বিষ্ণু,শিব ও শিবা। এই ছয়দেবতাকে পূজা করে প্রণামপূর্বক হরি স্মরণ করে ব্রত করবে; যদি কেহ এ ছয়দেবতাকে আরাধনা না করে ব্রতকর্ম করে, তা হলে তার নিত্য নৈমিত্তিকাদি সমস্ত কর্মই নিষ্ফল হয়। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে একাদশী ব্রতের শুরু হয়। একাদশীর পূর্বদিন দশমী তিথি থেকে। সেদিন পূর্বাহ্নে আমিষ বর্জিত ঘৃতযুক্ত আতপ চালের অন্ন একবেলা খেতে হয়। এরপরে আর কিছুই খাওয়া যাবে না। এমনকি জলও না। সেদিন স্ত্রীসহ শয়ন করা যাবে না, খাটেও শয়ন করা যাবে না।

একাদশীর দিনে সূর্যোদয়ের দুইদণ্ড পূর্বে, ব্রাহ্মমুহূর্তে কুশশয্যা থেকে উঠে প্রতিদিনের প্রাতঃকৃত্য নিত্যকৃত্য শেষ করে স্নান করতে হবে। আমরা অনেকেই জানি না যে, পূজা ব্রত এবং যজ্ঞের পূর্বে সংকল্প করতে হয়। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে হয়, হে ভগবান আমি যেন ব্রতটি সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পারি। ব্রতভ্রষ্ট যেন না হই। শ্রীকৃষ্ণের প্রীতির জন্যে ব্রতী, একাদশী ব্রত ও উপবাসের সংকল্প করবে। এরপরে বৈদিক গায়ত্রী সন্ধ্যা-তর্পণাদি সম্পাদন করে আহ্নিক করতে হবে। সাথে গৃহের দেববিগ্রহের নিত্যপূজা নিষ্ঠার সাথে সম্পাদন করতে হবে একাদশীর মধ্যেই ব্রতদ্রব্য সংগ্রহ করতে হবে। ষোড়শোপচারে দেবতাদের পূজা করতে ষোড়শোপচার দ্রব্যই বিধিনির্দিষ্ট হয়ে আছে। পবিত্র দ্রব্যগুলো হল: আসন, বস্ত্র, পাদ্য, অর্ঘ্য, পুষ্প, গায়ের সুগন্ধি অনুলেপন, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, যজ্ঞসূত্র, ভূষণ, গন্ধ, স্নানীয়, পান, মধুপর্ক এবং আচমনীয়। রাত্রিকালে সম্পন্ন ব্রতের জন্যে ব্রতীকে এ ষোড়শোপচারের সকল দ্রব্য দিবসেই সংগ্রহ।

করতে হবে। এরপরে ব্রতী পরিষ্কার পরিছন্ন হয়ে পরিধেয় এবং উত্তরীয় এ দু’টি বস্ত্র শরীরে পরিধান করবে। শুদ্ধ পবিত্রভাবে আসনে উপবেশন করে আচমনপূর্বক শ্রীহরিস্মরণ ও বৈদিক স্বস্তিবাচন করবে। আচমনপূর্বক শ্রীহরিস্মরণ ও বৈদিক স্বস্তিবাচনের পরে মুনিগণ দ্বারা নির্দেশিত, পরমেশ্বরকে আহ্বান করতে বেদোক্ত মঙ্গলঘট স্থাপন করে। তাতে একটি অক্ষত ফল, আমের পল্লব সহ বিভিন্ন পবিত্র বৃক্ষের শাখা ও চন্দন শ্রদ্ধার সাথে প্রদান করবে। মঙ্গলঘটে পৃথক পৃথক ধ্যান ও আবাহনে গণেশ, সূর্য,বহ্নি, বিষ্ণু,শিব ও শিবা -এ ছয়দেবতাকে নিষ্ঠার সাথে পূজা করতে হবে। সনাতন ধর্মে অনাদি অনন্ত ব্রহ্মের উপাসনা পঞ্চমতে ও পথে বিভজিত যথা- শাক্ত, শৈব, সৌর, গাণপত্য এবং বৈষ্ণব -এ পঞ্চমতের প্রধান হল এ পঞ্চদেবতা। তাঁদের একইঘটে আহ্বান করতে হবে, কারণ তাঁরা সকলেই একই পরমেশ্বরের স্বরূপ। বিভিন্ন মতপথ নির্বিশেষে আমরা যে একজনকেই উপাসনা করি, বিষয়টি বোঝাতেই আমাদের সকল পূজার আগেই পঞ্চদেবতার পূজা করা হয়। এমনকি শ্রাদ্ধ, বিবাহ, একাদশী সহ সকল ব্রতেই পঞ্চদেবতার পূজা আগে করতে হয়। যেন আমাদের মধ্যে এক ব্রহ্মের অভেদ চিন্তা আসে। যজ্ঞস্বরূপ অগ্নিকে বলা হয়েছে, সকল দেবতার মুখ। পঞ্চদেবতার সকল পূজাতেই যজ্ঞ করতে হয়। তাই পঞ্চদেবতার সাথে যজ্ঞস্বরূপ অগ্নিকে ধরে ছয়দেবতা। বর্তমান কিছু সনাতন ধর্মাবলম্বী অজ্ঞানতাবশত নিজের উপাস্য এবং নিজ সম্প্রদায়কে বড় করতে গিয়ে ঈশ্বরের পঞ্চরূপের এ পঞ্চদেবতার মধ্যে ভেদ সৃষ্টি করে থাকে। তারা নিজেরাও জানে না, এ ভেদের মাধ্যমে তারা নিজের অজ্ঞাতসারে পাপে লিপ্ত হয়ে অধঃপতিত হচ্ছে।

পঞ্চমতের পঞ্চদেবতাকে পূজা করে প্রণামপূর্বক শ্রীহরিকে স্মরণ করেই ব্রত আরম্ভ করতে হবে। কিন্তু কেউ যদি এ ছয়দেবতাকে আরাধনা না করে ব্রতকর্ম করে, তা হলে তার নিত্য নৈমিত্তিকাদি সমস্ত কর্মই নিষ্ফল হয়ে যায়। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের শ্রীকৃষ্ণ জন্মখণ্ডে ছাব্বিশ অধ্যায়ে আমরা সুস্পষ্টভাবে দেখলাম একাদশীর সম্পূর্ণ বিধি দেয়া, কিভাবে একাদশী ব্রত করতে হবে। ছাব্বিশ অধ্যায়ে ব্রতের নির্দেশনার ঠিক পূর্বেই বলা আছে, “ব্রতের মধ্যে একাদশী শ্রেষ্ঠ।” ব্রতের মধ্যে যেহেতু একাদশী শ্রেষ্ঠ, তাই তাকে পালন করতে হবে শাস্ত্রের আলোকে কোন মনগড়া পরিকল্পনায় নয়। যেখানেই একাদশীর কথা আছে, প্রায় প্রত্যেকটি স্থানেই উপবাসের কথা আছে, নিরাহারের কথা আছে, নিরম্বু অর্থাৎ জল পর্যন্ত খাওয়া যাবে না, সে সকল কথা আছে। আমরা শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পিতা নন্দরাজের একাদশী ব্রত অনুষ্ঠানের কথা দেখতে পাই। সেখানে সুস্পষ্টভাবে,”একাদশ্যাং নিরাহারঃ” -অর্থাৎ একাদশীতে আহার বিহীন থাকার কথা বর্ণিত হয়েছে ।নন্দ মহারাজ উপবাস থেকেই একাদশী পালন করেছিলেন। একাদশীতে সম্পূর্ণ উপবাস থাকতে হবে। সেদিন অন্ন ভোজন করলে, ওই সমস্ত পাপে লিপ্ত হতে হয়ে ইহলোকে অতিপাতকীয় পরিগনিত হয়ে ; মৃত্যু পরবর্তীতে নরকগামী হয়, কথাটি ব্রহ্মবৈবর্ত সহ বিভিন্ন পুরাণে আছে। একাদশী একটি নৈষ্ঠিক উপবাস ব্রত। কিন্তু এ পবিত্র ব্রতকে বর্তমানে অধুনা বঙ্গের কিছু মানুষ, সেদিন খাবারের উৎসব বানিয়ে ফেলেছে। যা সম্পূর্ণভাবে অশাস্ত্রীয়, বিধিবহির্ভূত।

একাদশী যেহেতু মাহাত্ম্যপূর্ণ ব্রত, পৌরাণিক শাস্ত্রানুসারে তার ফল যেহেতু মহত্তর, তাই একে পালনও করতে হবে শাস্ত্র নির্দেশিত পথে নিষ্ঠার সাথে। বর্তমানে একাদশী তিথি পালন নিয়ে বাড়বাড়ন্ত করা ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীদের একাদশী পালনের রীতিটি পর্যবেক্ষণ করবেন। তবে দেখতে পাবেন, ব্রহ্মবৈবর্ত সহ বিবিধ পুরাণে বর্ণিত একাদশীর পালনের রীতির সাথে তাদের সামঞ্জস্য কতটা এবং অন্যকে জোরজবরদস্তি করে একাদশী পালন করানো মানুষগুলো কতটা শাস্ত্র বর্ণিত একাদশী বিধিকে অনুসরণ করে চলে। শ্রীকৃষ্ণ ব্রতদিবসে ব্রহ্মহত্যাদি সমস্ত পাপই অন্নাশ্রিত থাকে। সেদিন অন্ন ভোজন করলে ঐ সমস্ত পাপে লিপ্ত হতে হয়। যে মন্দবুদ্ধি ব্যক্তি একাদশী দিনে ভোজন করে, সেই মূঢ় ঐ সমস্ত পাপপঙ্কে লিপ্ত হয়। ইহলোকে অতিপাতকীয় পরিগনিত হয়ে, অন্তে নরকগামী হয়ে থাকে। একই রকম কথা স্কন্দ পুরাণের বিষ্ণুখণ্ডে একাদশী প্রসঙ্গে বলা আছে, একাদশীর দিনে অন্নে পাপ আশ্রয় করে। সেদিন যারা অন্ন ভোজন করে তারা কেবল পাপই ভোজন করে। তাই সেদিন সকল প্রকারের অন্ন ভোজন নিষিদ্ধ।



This post first appeared on Bengali News Live, please read the originial post: here

Share the post

Putrada ekadashi: একাদশী পালন করছেন? জেনে নিন শাস্ত্রীয় বিধি অনুযায়ী সঠিক নিয়ম

×

Subscribe to Bengali News Live

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×