নিজস্ব প্রতিবেদন :“চিত্রগুপ্ত মন্দির”, মধ্যপ্রদেশের মন্দিরময় পর্যটন-শহর খাজুরাহোতে অবস্থিত ভগবান চিত্রগুপ্ত এবং ভগবান সূর্য্যদেবকে নিবেদিত একাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত একটি মন্দির। খাজুরাহোর জগদম্বী মন্দিরের সাথে এই মন্দিরের স্থাপত্যশৈলীর অনেকটা মিল রয়েছে। পূর্বমুখী এই মন্দিরটি খাজুরাহোর একমাত্র সূর্য্যমন্দির।ভারতের অন্যতম পর্যটনক্ষেত্র ‘খাজুরাহো’ শহরের প্রায় ৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ৯৫০ থেকে ১০৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে নির্মিত শৈল্পিক মন্দিরে সমৃদ্ধ মোট ২৩টি চিহ্নিত পর্যটনস্থল পশ্চিমী, পূর্বীয় ও দাক্ষিণ্য বিভাগ বা গুচ্ছে বিভক্ত। মধ্যভারতের প্রাচীন বুন্দেলখণ্ডের (বর্তমানের মধ্যপ্রদেশ) চান্দেলা রাজবংশের রাজাগণ দীর্ঘ ১০০ বছর ধরে খাজুরাহোর এইসব শিল্পসমৃদ্ধ মন্দিরগুলি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চান্দেলা রাজবংশের পতনের পর খাজুরাহোর সবগুলি মন্দির ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত ও বিস্মৃত হয়ে পড়ে। সময়ের ব্যবধানে ৮৫টি মন্দিরের মধ্যে শুধুমাত্র ২২টি মন্দির টিকে থাকে। ক্যাপ্টেন টিএস বার্ট নামক একজন ব্রিটিশ সামরিক ইঞ্জিনিয়ার প্রথম উদ্যোগী হয়ে এই মন্দিরগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
খাজুরাহোর চিত্রগুপ্ত মন্দির এখানকার পশ্চিমী মন্দিরগুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত। ১০২০-১০২৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে, বিশেষত: ১০২৩ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত শিবরাত্রির দিন প্রাচীন চান্দেলা রাজবংশীয় শাসকেরা এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে অনুমান করা হয়।
Related Articles
চিত্রগুপ্ত মন্দিরের সাথে এর কাছাকাছি অবস্থিত জগদম্বী মন্দিরের স্থাপত্যশৈলীর অনেকটাই মিল রয়েছে। চিত্রগুপ্ত মন্দিরে রয়েছে একটি বারান্দাযুক্ত প্রবেশদ্বারসহ একটি মহামণ্ডপ এবং চতুর্দিকে প্রদক্ষিণপথ সহ গর্ভগৃহ। মহামন্ডপের একটি অষ্টভুজাকৃতির ছাদ আছে, যা জগদম্বী মন্দিরের ছাদের চেয়েও অনেক বেশি অলঙ্কৃত। এসব বিষয় থেকে অনুমিত হয় যে, চিত্রগুপ্ত মন্দিরটি জগদম্বী মন্দিরের চেয়ে কিছুটা পরে নির্মিত হয়েছিল। চিত্রগুপ্ত মন্দিরের গর্ভগৃহে সাতটি অশ্বচালিত রথে স্থাপিত সূর্য্যদেবতার দন্ডায়মান এবং হাতে পদ্মফুল ধারনকৃত প্রায় ৭ ফুট উঁচু একটি মূর্তি আছে, যার আংশিক ভগ্ন। গর্ভগৃহের দরজার চৌকাঠেও একই রকম কিছুটা ছোট সূর্য্যদেবতার তিনটি মূর্তি দৃশ্যমান। মন্দিরের বাইরের দেয়ালগুলি মিথুনমূর্তি, সুরসুন্দরী এবং বিভিন্ন দেবদেবীর ভাস্কর্য দ্বারা সজ্জিত। দক্ষিণ দিকের দেওয়ালে এগারো মস্তক বিশিষ্ট শ্রীবিষ্ণুর ভাস্কর্য এবং ভগবান বিষ্ণুর দশাবতারের ভাস্কর্য রয়েছে। এছাড়াও শোভাযাত্রার দৃশ্য, মেয়েদের নাচ, হাতির লড়াই এবং শিকারের দৃশ্য ইত্যাদিও সেখানে শোভিত রয়েছে। বারান্দার চৌকাঠে সুন্দরভাবে খোদিত রয়েছে সত্তরেরও বেশি সংখ্যক তপস্বীর ভাস্কর্য।
চিত্রগুপ্ত মন্দির প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এই মন্দিরে প্রবেশের জন্য ভারতীয় এবং বিদেশীদের জন্য পৃথকহারে প্রবেশমূল্য নির্ধারিত রয়েছে। এখানকার অন্যান্য মন্দিরের মত এই মন্দিরটিও বর্তমানে UNESCO World Heritage site ‘এর অন্তর্ভূক্ত এবং ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক দপ্তর (ASI) ‘এর অধীনে সংরক্ষিত। অসংখ্য পর্যটক প্রতিনিয়ত এই মন্দির পরিদর্শন করেন। গ্রীষ্মকালে মধ্যপ্রদেশের উষ্ণ আবহাওয়া এড়িয়ে সেপ্টেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে খাজুরাহোর মন্দিরগুলি পরিদর্শন করা উত্তম। খাজুরাহোর পশ্চিমী মন্দিরগুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত চিত্রগুপ্ত মন্দির এখানকার অন্যতম একটি পর্যটন আকর্ষণ। এই মন্দিরটি জগদম্বী মন্দিরের উত্তরপাশে অবস্থিত। খাজুরাহো বাসস্ট্যান্ড থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার। খাজুরাহো শহরটি সারা ভারতের সাথে সড়ক, রেল ও বিমানযোগে উত্তমরূপে যুক্ত। খাজুরাহো বিমানবন্দর বা রেলস্টেশন খাজুরাহো শহর থেকে স্বল্প দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত। সেখান থেকে ট্যাক্সি বা ক্যাব ভাড়া করে খাজুরাহোর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে বেড়ানো যায়।