শীতের সবে শুরু। স্টেশনে বসে আছি পুরুলিয়া এক্সপ্রেস এর অপেক্ষায়। ট্রেনটা লেট। ফেবুতে চক্কর দিচ্ছি একমনে,হঠাৎ “সুন্দরী ?ও সুন্দরী দাওনা কটা টাকা?” ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি বছর বারোর একটা ছেলে,শতছিন্ন স্যান্ডো গেঞ্জি আর চরম নোংরা বার্মুন্ডা পরা। ব্যাগ টা একটু চেপে ধরলাম কি জানি কখন ছৌঁ মেরে দৌড় দেবে!! পাত্তা দিলাম না। এবার সোয়েটারের হাতা টা ধরে টানলো বিরক্ত হয়ে দিলাম পাঁচটা টাকা। ছেলেটা বলল “থ্যাংকু সুন্দরী”। খুব রাগ হল। আচ্ছা ডেঁপো ছেলেতো!! ট্রেন আসছে,ওঠার সময় দেখলাম ছেলেটা বেঞ্চে বসে ডেনড্রাইট সাঁটাচ্ছে। টাকাটা ওকে দেওয়ার জন্য রাগটা হলো নিজের ওপর। ছেলেটাকে কেন জানি ভুলতে পারলাম না মনে মনে ওকে ডেনড্রাইট নামেই ডাকি। একসপ্তাহ পর, আবার আমি ,পুরুলিয়া এক্সপ্রেস,আবার ডেনড্রাইট। আজ সুন্দরী বলতেই ধমকে উঠলাম,বললাম নেশা করার জন্য টাকা পাবিনা দোকানে চল খাবার কিনে দিচ্ছি। ডেনড্রাইট হো হো করে হেসে উঠল। হাসি থামতে বলল আবার যখন পেট কাঁদবে তখনো কি তুমি থাকবে সুন্দরী ? খাবার খিদে বাড়ায়। ডেনড্রাইট খেলে অনেকখন আর খিদে পায় না। চুপ করে গেলাম।বললাম তোর কেউ নেই? ডেনড্রাইট খানিকটা চুপ,নিস্তব্ধতা ভাঙলো “আমি অনাথ। আচ্ছা সুন্দরী এমন কি কেউ থাকতে পারে যার কেউ নেই?” আমি কথা খুঁজে পেলাম না। ডেনড্রাইট বলে চলেছে “সবাই বলে আমি পাপের ফল। অথচ দেখো পাপটা যারা করেছিল অন্ধকার ঘরে আজ তারা দিব্যি আলোয়,আর আমি? জানো একবার নিয়ে গিয়েছিল একটা আশ্রমে। কদিন ভালো ছিলাম । তারপর একদিন রাত্রে দেখলাম ফুলিকে ওরা নিয়ে গেল একটা ঘরে। ভোরে দেখলাম ওই ঘরের পাশের পেয়ারা গাছ টার নিচেই ওকে.... বমির পর বমি। থাকতে পারলাম না জানো.. ট্রেনের বাঁশি।,কেমন যেন অবশ হয়ে গেছি... নাহ্ পা দুটো চলছে না......