মমির দেশ ভয়ংকর pdf - রাজেশ বসু Momir Desh Bhoyankar pdf - Rajesh Basu book pdf download link
ধূপ ধুনো, কর্পূরের ঝাঁঝালো গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে। ধোঁয়ার জালে চোখ জলে ভর্তি। কয়েকটি কম্পমান জ্বলন্ত মোমবাতি ছাড়া ঘর প্রায় অন্ধকার। তাকাতেও পারছি না। ভীষণ গম্ভীর গলায় কে যেন পাঁচালিটাচালি জাতীয় কিছু পড়ছে। উৎকট, অদ্ভুত সব অজানা শব্দ। সঙ্গে খোল-করতাল-বাঁশি সব বাজছে একসঙ্গে। কোথায় আছি তাও অজানা, তবে অনুমান করতে পারছি। আমাকে প্রেতচর্চার কক্ষে নিয়ে আসা হয়েছে। কোমরে একটুকরো কাপড় ছাড়া খালি শরীর আমার। নীচে কিরকির করছে বালি-কাঁকর।
Related Articles
হঠাৎই মন্ত্রোচ্চারণ বন্ধ হল। ধোঁয়ার জালও কমে আসছে। এবার বুঝতে পারছি কোথায় আছি। যেমন ভেবেছিলাম, প্রেতকক্ষেই! আলখাল্লার মতো অদ্ভুত কালো পোশাক গায়ে বসে আছেন পালাদিনো। তার সামনে সারি দিয়ে শুয়ে আছি আমরা। আমরা মানে আমি, মার্ক আর একদম সামনে সেই নেৎখাহেফের মমি। কেশহীন কাপেরও আছে। সে মার্কের শরীরে লিনেন জড়াচ্ছে। মার্ক পুরোপুরি অচৈতন্য। আমি শিউরে উঠলাম। এরা মার্ককে মমি বানিয়ে ফেলছে! আমি চিৎকার করে উঠলাম। কিন্তু আওয়াজই বেরল না গলা দিয়ে।
পালাদিনো ঘসঘসে গলায় বললেন, “বাধ্য হয়ে করছি। মমি যেটা ছিল, সেটার বাকশক্তিই নেই, কী করে আমাদের ঠিক পথ দেখাবে? বরং তোমাদের মমি করলে লাভ। ওর সঙ্গে সংযোগ করে জানাতে পারবে সম্পাদকক্ষের পথ।”
অর্থাৎ মার্কের পর আমিও মমি হব এবং জীবন্ত!
প্রোফেসর ডি-সিলভা কোথায়? এমন হলে তো তাঁকেই আগে মমি বানিয়েছে এরা। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম ফের। যদিও স্বরযন্ত্র এবারেও শব্দহীন। কাপের হঠাৎ রেগে গেল। ঝুঁকে পড়ল আমার উপর। ওর বাঁ হাতে লম্বা একটা ছুরি। হাতলটা হয়তো সোনার, মোমবাতির আলোয় ঝিলিক দিয়ে উঠেছে। ছুরির ফলা বুক থেকে কয়েক সেন্টিমিটার দূরে। আমি ফের চিৎকার করে উঠলাম।
“তুতানখামেনের ছুরিটা নিলে কেন, দূষিত রক্ত লাগিয়ো না। তা ছাড়া ওটা গ্রহান্তরের ধাতুতে তৈরি। ভিনগ্রহীদের দান। তারা অখুশি হবে। বরং তুতানখামেনের মুকুটের প্রাণীটাকে নাও। বুকের উপর রেখে দিলেই হবে। যা দুর্বল হৃদযন্ত্র ওর!” বললেন পালাদিনো। হাতে একটা হাড়।
কী সব শুনছি! প্রথমে তুতানখামেনের ছুরি। এবার তার মুকুটের প্রাণী, মানে কি গোখরো? ফারাওদের মুকুটে শোভিত হত এই বিষধর সাপ। প্রজাদের মনে ভয় আর সম্ভ্রম তৈরির উদ্দেশ্যে। সেই সাপ আমার বুকে রাখা হবে এখন? আমি পালানোর চেষ্টা করলাম। পারলাম না। শরীরে এতটুকুও বল নেই। হিস করে উঠল কী! সাপ! গোখরো সাপ। কাপেরের হাতে জড়িয়ে রয়েছে। ফণার মুখ আমার দিকে। সব শক্তি দিয়ে এবার কোনওক্রমে শরীরের ঊর্ধ্বাংশটা তুললাম। কাপের মুহূর্তে সাপটা আমার দিকে ছুড়ে দিল। হিম মৃত্যুদূত হয়ে সাপটা পড়ল আমার বুকে। পালাদিনোর কী আনন্দ! হাতের হাড়টা ঠোঁটে লাগিয়ে বাঁশির মতো বাজাতে শুরু করে দিয়েছেন। কী তীক্ষ্ণ সুর! সাপটা ফের ফণা মেলে ধরেছে। আমি ফের প্রাণপণ চিৎকার করে উঠলাম। গলা দিয়ে অস্ফুট আওয়াজ বেরল মাত্র। যদিও ঘুমটা ভেঙে গেল আমার। ঘামে বিজবিজ করছে গোটা শরীর।
দুঃস্বপ্ন! দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম এতক্ষণ। কী ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন!
উঠে বসলাম বিছানায়। নিকষ অন্ধকার ঘর। কোথায় আছি, ঠাহর করতেই সময় লাগল। আর তা হতেই দুঃস্বপ্নের রেশটা কেটেও যেন কাটল না। বন্দি হয়ে আছি সেই দুপুর থেকে। প্রোফেসর ডি-সিলভা বলছেন, ধৈর্য ধরতে। জানি না, কত ধৈর্য ধরব। বলছেন, ওরাকল বিফলে যাবে না। তিনি জেমস রবার্টসনের ইনস্ক্রিপশনটার কথা বলছেন নিশ্চয়ই। কিছুই বুঝতে পারছি না। তা ছাড়া তিনি যেন অন্য কোনও জগতে রয়েছেন। আশঙ্কা হচ্ছে তিনিও না পালাদিনোর মতো অন্য মানুষ হয়ে যান!
মোবাইল জ্বেলে সময় দেখলাম, রাত ঠিক একটা। শরীর ঠিক রাখতে ঘুমের প্রয়োজন। কিন্তু শোব কী, ত্রিং করে একতারা বেজে উঠল হঠাৎ! সঙ্গে-সঙ্গে মোবাইল জ্বালিয়েছি। কিন্তু শূন্য ঘর। অবশ্য আওয়াজটাও আজকে ঘরের মধ্যে হচ্ছে না। বাইরে থেকে আসছে যেন। কান খাড়া করে রইলাম। সুরের বদল হয়ে চলেছে। কিন্তু বাজছে। ধীর লয়ে বাজছে।
উঠলাম আমি। পাজামার উপরে জ্যাকেটটা পরলাম। শীত আছে যথেষ্ট। মোবাইলটা নিয়ে বেরিয়ে এলাম বাইরে। আওয়াজের মাত্রাটাও একটু যেন বাড়ল। কোন দিকে যাব? আজও একটা ছাড়া লবির সব আলো নিভে রয়েছে। মার্কের ঘরের দরজা দেখলাম বন্ধ। ওকে কি ডাকব? উঁহু, ওকে ডাকলেই বাজনা মিলিয়ে যাবে। তা ছাড়া, ওইভাবে বন্দুক দেখানোয় ও আরও চটেছে। এমনিতেই ওর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। যতটা পারি শান্ত করে রেখেছি। জোর করে দুটো সিডেটিভ খাইয়েছি। ঝরঝরে একটা ঘুম না হলে শরীর ঠিক হবে না। আর শরীর ঠিক না হলে এদের সঙ্গে লড়বই বা কীভাবে! পালাদিনোরা শেষ অবধি কত দূর যায়, আমিও দেখতে চাই। তবে সবার আগে এই শব্দরহস্য আমাকে ভেদ করতেই হবে।
রাজেশ বসু এর pdf book মমির দেশ ভয়ংকর pdf download করুন এখান থেকে। এছাড়াও সকল লেখকদের তালিকা একনজরে দেখুন এখানে। boierpathshala.blogspot.com বই পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরিই করার লক্ষ্যে নেটে পাওয়া কিছু pdf শেয়ার করে।
ডাউনলোড লিংকে কোন সমস্যা হলে বা ডাউনলোড লিংক ডেড হলে ফেসবুক পেজে (https://facebook.com/boierpathshala.official) মেসেজ করুন। লিংক আপডেট করে দেব।