বউয়ের একটা আইডিয়া বদলে দিল দম্পতির ভাগ্য। দু’জনে হলেন কোটিপতি।
বউয়ের একটা আইডিয়া – কথায় বলে, প্রত্যেক সফল পুরুষের নেপথ্যে থাকেন এক জন মহিলা। কথাটা যে কতখানি সত্যি তার জ্বলন্ত উদাহরণ ইন্দোরের জৈন দম্পতি। স্ত্রী নীতির পরামর্শে আজ তাঁর স্বামী গগন কোটি টাকার মালিক। অবশ্য শুধু পরামর্শ নয়, স্বামীর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে নীতির পরিশ্রম এবং প্রতিভাও। আর সাফল্য একা গগনেরই নয়, তার ভাগীদার নীতিও। তাঁদের ভাগ্যের উড়ানের সূচনা ওমানের মাস্কট শহরে। এক সময়ে কর্মসূত্রে সেখানেই থাকতেন গগন আর নীতি।
Related Articles
স্ত্রী-কে নিয়ে একটি ফ্যাশান ব্র্যান্ডের হয়ে সেখানে চাকরি করতে গিয়েছিলেন গগন। স্বামী অফিসে বেরিয়ে গেলে একা লাগত নীতির। কী ভাবে সময় কাটাবেন ভেবে পেতেন না। নীতির আঁকার হাত ছিল চমৎকার। হঠাৎই তাঁর মনে হল, ছবি এঁকে দুপুরবেলাগুলো কাটালে কেমন হয়।
কিন্তু ছবি আঁকবেন কীসের উপর? ক্যানভাসে? নীতি বেছে নিলেন অভিনব ক্যানভাস। স্বামীর শার্টগুলোর উপরেই চালাতে লাগলেন রং-তুলি। কল্পনায় থাকা রংবেরং-এর নক্সাগুলো ফুটিয়ে তুলতে লাগলেন গগনের শার্টে।
গগন দেখলেন, তাঁর শার্টে অসাধারণ ডিজাইন করেছেন স্ত্রী। সেই শার্ট পরেই অফিস যাওয়া শুরু করলেন তিনি। গগন হয়তো ভাবতেও পারেননি, তাঁর স্ত্রীয়ের ডিজাইন করা শার্টগুলো তাঁর প্রত্যেক সহকর্মীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। শুধু তা-ই নয়, কলিগরা খোঁজ নেওয়া শুরু করলেন, কোত্থেকে এমন চমৎকার শার্ট কিনেছেন গগন। গগন যখন জানালেন, তাঁর স্ত্রী ডিজাইন করেছেন শার্টগুলো, তখন সহকর্মীরা এরকম শার্ট কেনার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন।
সেই থেকেই বিজনেস আইডিয়া এলো নীতির মাথায়। তিনি ভাবলেন, কেমন হয় যদি দু’জনে মিলে নীতির ডিজাইন করা শার্ট ব্যবসায়িক ভিত্তিতে উৎপাদন এবং বিক্রি শুরু করেন। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। ইতিমধ্যে মাস্কট ছেড়ে ইনদৌরে চলে এসেছিলেন দু’জনে। সেখানেই ‘রংরেজ’ নামে স্টার্টআপ শুরু করলেন গগন-নীতি।
সাফল্য পেতে ‘রংরেজ’-এর বেশি সময় লাগেনি। আজ রংরেজ-এর তৈরি করা শার্টের সুনাম দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু ইনদৌর নয়, যোধপুরেও খোলা হয়েছে কোম্পানির নতুন সেন্টার। শার্টের পাশাপাশি আজ গগন-নীতির স্টার্টআপ হ্যান্ডিক্রাফ্ট, বালিশ, বেডসিট এবং ইন্টিরিয়র ডেকরেটিং আইটেমও তৈরি করেন। ২০০ জনের মতো কর্মী কাজ করেন গগন-নীতির অধীনে। নীতি তাঁদের কাজকর্ম তত্ত্বাবধান করেন, হাতে ধরে কাজ শেখান। আর শার্ট এবং অন্যান্য দ্রব্যের ডিজাইন যে তিনি নিজে হাতেই করেন, তা তো বলাই বাহুল্য। উৎপাদিত দ্রব্যের বিপণনের যাবতীয় দায়িত্ব সামলান গগন।
১৫ লক্ষ টাকার পুঁজি নিয়ে স্টার্টআপ শুরু করেছিলেন নীতি আর গগন। আজ তাঁদের কোম্পানির মাসিক রোজগার দু’কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। নীতির প্রতিভা এবং আইডিয়া বদলে দিয়েছে দু’জনের জীবন।
মোদ্দাকথা হচ্ছে, এমন স্ত্রী বা সহচারিণী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। বাংলাদেশে এমন স্ত্রী খুঁজে পাওয়া প্রায় সম্ভবই নয়। কারণ, বাংলাদেশে চলছে হিন্দী সিরিয়ালের ধুম আর আধুনিক মেয়েদের লোকদেখানো ফেসবুকিং। তারা আইডিয়া দেবে কীভাবে, যদি সারাক্ষণ মাথায় উলটাপালটা জিনিস ঘোরাঘোরি করে।
The post বউয়ের একটা আইডিয়া বদলে দিল দম্পতির ভাগ্য appeared first on Muntasir Mahdi.