চাঁদপুরে সাহিত্য মঞ্চের আয়োজনে সম্পন্ন হলো ভিন্নধর্মী একটি নান্দনিক অনুষ্ঠান ‘লেখক-পাটক মৈত্রীপ্রহর’। চাঁদপুরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে লেখক মঞ্চে ছিলেন, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন এবং কবি ও প্রবন্ধিক, অনুবাদক, গবেষক, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষনা অনুসদের অধ্যাপক ড. মাসুদুজ্জামান।
Related Articles
তাঁরা উপস্থিত পাঠকের সমকালিন সাহিত্য ভাবনা, কৌতুহল এবং এই দুই লেখকের সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর স্মৃতিধন্য চাঁদপুর রোটারি ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে উদ্ধোধক ছিলেন, জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মাজেদুর রহমান খান।
সাহিত্য মঞ্চের সভাপতি মাইনুল ইসলাম মানিকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আশিক বিন রহিম ও উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব নুসরাত জেরিনের যৌথ সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রজেক্টরের মাধ্যমে ১০মিনিটের একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। ৩ পর্বের এই ভিডিও ডকুমেন্টারীর ১ম ও ২য় পর্বে ছিলো আমন্ত্রিত দুই লেখকের জীবন ও কর্ম এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ৩য় পর্বে ছিলো শিল্প-সাহিত্যে চাঁদপুরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও পরিচিতি। এতে জেলার সাহিত্য চর্চার ইতিহাস, কৃতিজন, সমকালিন লেখক, সাহিত্য সংগঠন ও প্রকাশনার স্থিরচিত্র স্থান দেয়া হয়। দ্বিতীয় পর্বে শুরু হয় লেখক ভাষণ।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন তাঁর লেখক ভাষণে বলেন, আমি জীবনে অনেক জায়গায় গিয়েছি কিন্তু কোথাও গিয়ে মনে হয়নি আমি আমার জায়গায় নেই। আজকে এই অনুষ্ঠানে এসে মনে হলো যেন আমি আমার জায়গায় চলে এসেছি। কারণ, একজন লেখকের সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো পাঠকের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়া। আর সেই পাঠকের মুখোমুখি দাঁড়াবার এই অনুষ্ঠানে এসে আমি সত্যিই আনন্দিত।
তিনি বলেন, পাঠকের প্রশ্নের মুখে দাঁড়ানো এই অনুষ্ঠানে আমি এমন কিছু সঞ্চয় চাই, যে সঞ্চয় আমার লেখক জীবনের অস্তিত্বের অঞ্চলে একদম তীক্ষè হয়ে থাকবে এবং আমি মনে করবো এই জায়গাটিতে পরিসর বাড়িয়ে তৈরী করবে আমরা লেখক সত্ত্বাকে। পাঠকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশের নারীরা এখন আর কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই।
নারীরা যেন তাদের ব্যর্থতার জায়গায়কে না ঢেকে নিজের সাফল্যের চিত্র সবার মাঝে তুলে ধরতে হবে। আমাদের সন্তানদের বইমুখি করতে বাবা-মা, সমাজসহ সকলের দায়িত্ব রয়েছে। ইন্টারনেরটের যুগে নিজের সন্তানদের ইন্টারনেটের পাশাপাশি বই পড়ানো জন্য উদ্ভুদ্ধ করতে হবে।
কবি ও প্রবন্ধিক ও অনুবাদক ড. মাসুদুজ্জামান তাঁর লেখক ভাষণ ও পাঠকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, একজন লেখকের প্রতি পাঠকের নানা প্রশ্ন, কৌতুহল ও জিজ্ঞাসা থাকে। কিন্তু সবসময় এর উত্তর পাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠে না।
আজকের এই অনুষ্ঠানটি একেবারেই ভিন্নতর একটি অনুষ্ঠান। লেখককে সরাসরি পাঠকের প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার মতো এমন অনুষ্ঠান আমি আর কখনো দেখিনি। সাহিত্য মঞ্চ নামে চাঁদপুরের এই সংগঠনটি যে আয়োজন করেছে তাকে আমাদেরকে একপর্যায়ে ‘কাঠগোড়ায়’ দাঁড় করানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তরুন প্রজন্মকে সাহিত্যমূখী করতে হলে পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার থেকে যদি সবাই নিজের সন্তানকে বই পড়াতে উৎসাহিত করে তাহলে আজকের তরুন প্রজন্ম সাহিত্যমূখী হওয়া সম্ভব।
উদ্বোধকের বক্তব্যে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশের যেকোনো জেলার চেয়ে চাঁদপুর শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে। আজকের এই ব্যতিক্রমি অনুষ্ঠানটি তারই প্রমান। তিনি বলেন, আমরা যখন কাজ করি তখন অনেক কিছুই প্রকাশ করতে পারি না। আজকে এই মঞ্চে কিছু কথা প্রকাশ করার জায়গা হয়েছে।
যে মঞ্চে আমার দু’জন প্রিয় লেখক উপস্থিত আছেন। আমি বেশ কিছু গল্প পরেছি তার মধ্যে একটি হলো হোয়াইট লোটাস। এই গল্পে হোয়াইট লোটাস বা সাদা পদ্ম ফুলটিককে পানি স্পর্শ করতে পারে না। আজকে এমনই দুই মহৎ ব্যক্তি এইখানে উপস্থিত হয়েছেন, যাঁদেরকে আমার জিবদশায় দেখতে পেয়ে নিজেকে খুব গর্বিত মনে করছি।
অনুষ্ঠানে লেখকদের প্রশ্ন রাখেন, বিশিষ্ট লেখক প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা থেকে আগত জিগিসা’র সভাপতি কবি ও লেকক ইলিয়াস ফারুকী, সাধারণ সম্পাদক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা, গল্পকার মুনিরা আক্তার, কবি আব্দুর রাজ্জাক, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে পুরস্কাপ্রপ্ত নুরুনন্নাহার বকুল, আঙন এর সম্পাদক কবি ম. নূরে আলম পাটওয়ারী, বর্ণিল এর সম্পাদক কবি শাহমুব জুয়েল, তরুণ লেখক ফাতেমা আক্তার শিল্পী, আইরিন সুলতানা লিমা, ইয়াসিন দেওয়ান, শিক্ষার্থী ও সাহিত্যকর্মী রাকিবুল হাসান, মো. সালাউদ্দিন, নার্গিস তন্নি, নবনিতা রায় চৌধুরী, মহিমা লোদ প্রমুখ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদের সভাপতি রুপালী চম্পক, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যাপক রুপক রায়, চাঁদপুর লেখক পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন, ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা মহা-পরিচালক নুরুল ইসলাম ফরহাদ, লেখক ও সাংবাদিক রিফাত কান্তি সেন, শরীফুল ইসলাম, শাহরিয়ার পলাশসহ জেলা বিভিন্ন সাহিত্য, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সুধিজন।
আমন্ত্রিত অতিথিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, উদযাপন কমিটির আহবায়ক আসাদুল্লাহ কাহাফ। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্ববধায়নে ছিলেন, লায়ন মাহমুদ হাসান খান, সাহিত্য মঞ্চের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান বাবলু, যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল আহসান, অর্থ সম্পাদক ওমর ফারুক প্রিন্স, সাহিত্য সম্পাদক আল-আমিন মিয়াজী, প্রকাশনা সম্পাদক আনিস আরমান, প্রবাস বিষয়ক সম্পাদক আল আমিন, নির্বাহী সদস্য ইমরান শাকির, মারিয়া ফারজানা, বিথী নন্দী, নবনিতা রায় চৌধুরী, আল আমিন, নিঝুম খান, মো. জাহিদ, নিশা বণিকসহ সংঠনের সকল সদস্যবৃন্দ।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
The post চাঁদপুরে বর্ণাঢ্য আয়জেনে ‘লেখক-পাঠক মৈত্রী প্রহর’ সম্পন্ন appeared first on Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস.