Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

বোমা উপহার !

নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখ; আমার জন্যে একটি বিশেষ দিন। বরাবরের মতো সেদিনের সকালটাও একঝুড়ি আশা নিয়ে মনের উঠোনে পা রেখেছিলো। তাছাড়া সেদিন বিকেলে ছিলো চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীতে মাসিক সাহিত্য আড্ডা। তাই দিনের শুরুতেই নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে নিতে হলো। কারণ মাসিক সাহিত্য আড্ডা মানে সাহিত্য তরিকার লোকদের মিলনমেলা।

রাত্রি ৮টায় আড্ডা শেষ করে আমরা ক’জন যখন রাজপথে পা রাখলাম, তখনও আড্ডার আমাদের পায়ে পায়ে লেপ্টে রইলো। আড্ডার এই অদৃশ্য শিকল আমাদের জোড়পুকুর পাড়স্থ একাডেমী ছাড়িয়ে নিয়ে গেল’ লেকের পাড়ের অঙ্গীকার ভাস্কর্যের সামনে। সেখানে রেললাইনের পাশের শুরু হলো নৃত্যদিনের অলিখিত আড্ডা। তবে এ আড্ডার কোনো নিয়ম কানুনের বালাই নেই। চাঁদপুরে আমরা যে ক’জন সক্রিয়ভাবে সাহিত্য চর্চা করছি তাদের প্রতিদিনের আড্ডা শুরু হয় এই লেকের পাড় থেকে।

তারপর আড্ডা আমাদের নিয়ে যায় ত্রিনদী’র মোহানায়, ডাকাতিয়ার পাড়, মুখার্জি ঘাট, রঘুনাথপুর জোড়া দিঘি, দোকানঘর গুচ্ছগ্রাম, মেঘনাপাড়, জাফরাবাদসহ নানান নির্জন স্থানে। নিত্যদিনের এই আড্ডার নিয়মিত সদস্য ৫০ বসন্ত পার করা তরুণ কবি তছলিম হোসেন হাওলাদার, ইকবাল পারভেজ, মুহাম্মদ ফরিদ হাসান, রফিকুজ্জামান রণি, কবি ও গল্পকার কাদের পলাশ, মাইনুল ইসলাম মানিক।

আর যে ক’জন অনিয়মিত সিনিয়র সদস্য রয়েছেন তারা হলেন লেখক শাহাদাত হোসেন শান্ত, জসিম মেহেদী, ম. নূরে আলম পাটওয়ারী, কবির হোসেন মিঝি, শাহমুব জুয়েল। সেদিনের আড্ডায় কাদের পলাশ ছিলেন না, তিনি হরিণ শিকারে কারেন্ট জাল নিয়ে নদীতে গিয়েছিলেন। তবে নিয়মিত সদস্যদের বাকিরা সবাই ছিলেন।

আড্ডার শুরুতেই রফিক বৈরাগীর (রফিকুজ্জামান রণি) সাথে গোপন বিষয়ে বিরাগ শুরু হলো। তছলিম হোসেন হাওলাদার বৈরগী ও ইকবাল পারভেজ ভাই সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে পানি ঢালার ব্যর্থ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন।

তাদের সকল অপচেষ্টাকে ব্যর্থ করে আমি আর বৈরাগী প্রমাণ করলাম ঝগড়া ছাড়া বন্ধুত্ব বা আড্ডা ইমপসিবল!। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১১টার ঘরে। হঠাৎ নিরিহ বালক মুহাম্মদ ফরিদ হাসান মাইনুল ইসলাম মানিকের সাথে চোখে চোখে কি যেনো ইশারা দিলো। এরপর মানিক ভাই সম্পূর্ণ অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে আমার চশমাটা সামনের একটি পিলারকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারলেন। মানিক ভাইয়ের এই কর্মকান্ডে মোটেও বিচলিত হলাম না। কারণ এর আগেও তার হাত মোবারক বহুবার এহেন অপকর্ম ঘটিয়েছে।

ফরিদ হাসানের দ্বিতীয় ইশারায় মানিক ভাই এবার তার নিজের চশমাটিও ছুঁড়ে মারলেন। তারপর ফরিদ হাসান বললো- আশিক চশমাগুলো নিয়ে আসতো। সাথে সাথে আমি প্রতিউত্তরে বলে উঠলাম, তোদের এই দানবাধিকার আমি মানি না, চশমা যে ছুঁড়ে মেরেছে সে-ই তুলে আনবে। ইকবাল পারভেজ ভাই চশমাগুলো তুলে আনতে পা’ বাড়ালেন। বেছাড়া মুরুব্বি মানুষ, তাই বিষয়টা বেয়দবি ঠেকে তাই ওনাকে থামিয়ে নিরিহ আমিই চশমা কুড়াতে এগিয়ে গেলাম।

কয়েক কদম সামনে বাড়াতেই আৎকে উঠলাম। দেখি লাল কসটেপ প্যাচানো দুটি প্যাকেট মাটিতে পড়ে আছে। লাল কসটেপ দেখে প্রথমেরই ধারণা করলাম বোমা-টোমা হবে হয়তো। চেঁচিয়ে খবরটা দিতেই সবাই ছুটে আসলো। হাত বাড়িয়ে প্যাকেট দু’টি বেশ ক’বার নাড়াচাড়া করলাম। মানিক ভাই চিৎকার করে বললো, আশিক এগুলোতে বোমা হবে হয়তো! দেশের যা অবস্থা, তারচেয়ে চলো সাবই পালাও।

মানিকের চিৎকারে ভয়ের ভূত সবার ঘারেই চেপে বসলো। ইকবাল ভাই চেঁচিয়ে উঠলো, আশিক সাবধান বাছা! যে কোনো মুহূর্তে ফেটে যেতে পারে। আমি অতি সাহস দেখিয়ে সাবধানে প্যাকেট দু’টো হাতে নিলাম। ফরিদ দৃর্ঘলাফে অনেকটা দূরে সরে গেল। একটা প্যাকেট খুলতে গেলে মানিক আবারো চিৎকার করে উঠলো, আশিক সাবধান! কিন্তু। হাসতে হাসতে বললাম, প্যাকেটে যদি হীরে জহরত থাকে?। -তবে ৪ জনের সমান ভাগ! আমার থেকে কথা কেড়ে নিয়ে ইকবাল ভাই উত্তর দিলো।

আমি পূনরায় বললাম যদি বোমা হয়? এবার ফরিদ বললো, তাহলে সাংবিধানিকভাবে একান্তই তোর। ছেলেটা এমন-ই, ভেবে চুপ মেরে গেলাম। কথা ছোট করে আমি আর ইকবাল ভাই দু’জনে দুটি প্যাকেট খুলতে লাগলাম। আমার হাতে থাকা প্যাকেট থেকে লাল কসটেপ ছাড়িয়ে দেখি অনেকগুলো প্রাণ ললিপপ। এবার একযোগে ১৬০ দাঁতের স্থির প্রদর্শন।

ভয় ঝেড়ে রফিক বৈরাগী বলে উঠলো কেউ হয়তো উপহারগুলো ভুলে ফেলেগেছে। ততক্ষণে ইকবাল ভাইয়ের হাতের প্যাকেটি খোলা শেষ। এই প্যাকেটের অন্তদেশ থেকে বেরিয়ে এলো ফররুখ আহমেদের ‘সাত সাগরের মাঝি’ ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রাগৈতিহাসিক’ নামে দুটি বই।

বই চুরির অল্পসল্প অভিজ্ঞতা আমার ছেলেবেলায় ছিলো। শব্দ না করে ইকবাল ভাইয়ের হাত থেকে একটা বই নিজের দখলে নিয়ে নিলাম। এবার একটা পৃষ্টা উল্টাতেই আমার চোখ দুটো কপালে উঠতে লাগলো যেনো!। সাদা পৃষ্টাটায় গোটা গোটা হাতের লেখা বালক, গত একবছর তুমি আমাদিগকে যে জ্বালান জ্বালাইছো, তা আগামীতেও অব্যাহত থাকুক, জন্মদিনের দিনে তোমাকে অনেক অনেক, অনেক শুভেচ্ছা, শুভ জন্মদিন’। এবার আর বুঝতে বাকি রইলো না আমার নান্দনিক নিষ্টুর বন্ধুরা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এই নাটক সাজিয়েছে।

আর এই বোমা নাটকের! মূল নাশকতাকারী পরিকল্পনাকারী ফরিদ হাসান। বুজলাম বন্ধুত্ব একেই বলে আর কবিরা এমনই হয়। ও হ্যাঁ যে কথা বলা হয়নি ২৫ নভেম্বর ছিলো আমার জন্মদিন।

লিখেছেন- আশিক বিন রহিম
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৪৩ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার
ডিএইচ

The post বোমা উপহার ! appeared first on Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস.



This post first appeared on ChandpurTimes, please read the originial post: here

Share the post

বোমা উপহার !

×

Subscribe to Chandpurtimes

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×