Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

এক পায়েই খেলছেন ‘ডানা ভাঙা দেবদূত’

হে য়িয়ি তখন ১২ বছরের দুরন্ত কিশোর। চোখে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন, জাদুকরি দুটি পায়ে সেই স্বপ্নের প্রতিফলন। একদিন নজরে পড়ে গেলেন এক ফরাসি স্কাউটের। ২০০৮ সালের সেই সময়ে য়িয়ির কাছে ব্যাপারটা ছিল মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! কিন্তু সেই বৃষ্টি এসেছিল ঝড় হয়ে।

বাঁ পা ভীষণ ভোগাচ্ছিল। মাঝেমধ্যে ব্যথা অনুভব করতেন। তাই ধরনা দিলেন ডাক্তারের কাছে। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ধরা পড়ল ‘অস্টিওসারকোমা’—মানে, ক্যানসার! শিশু-কিশোরদের এ রোগটা বেশি হয়ে থাকে। ডাক্তারের পরামর্শ, বেশি দিন বেঁচে থাকার ইচ্ছে থাকলে বাঁ পা কেটে ফেলতে হবে। এ অবস্থায় ফ্রান্সে গিয়ে পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ধাওয়া করার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। য়িয়ি তাই বাঁ পা কেটে ফেললেন, কেটে গেল তাঁর ইউরোপে খেলার স্বপ্ন ঘুড়ির সুতো।

কিন্তু খেলা থামেনি। বাঁকানো পা নিয়ে জন্মানোয় ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি গারিঞ্চাকে বলা হতো ‘বাঁকানো পায়ের দেবদূত’। আর এক পা না থাকায় চায়নিজ ফুটবলভক্তদের কাছে ক্রাচের য়িয়ি এখন, ‘ডানা ভাঙা দেবদূত’। কেউ বলেন ‘এক পায়ে বলের রাজা’, কারও কাছে আবার ‘জাদুকর ছেলেটা’! পা হারিয়ে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন বিসর্জনকারীদের জন্য ২১ বছরের এই ছেলে এখন সত্যিই এক অনুপম উদাহরণ।

চায়নিজ ফুটবলভক্তদের কাছে য়িয়ির ভিডিও ভীষণ সাড়া ফেলেছেন। ভিডিওটি দেখার সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৪০ লাখ এবং তা বেড়েই চলছে। সেই ভিডিওতে শারীরিকভাবে সক্ষম প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের বোকা বানানো ছাড়াও এক পায়ে গোলও করেন ‘ক্রাচের স্ট্রাইকার’ য়িয়ি! বক্সের মধ্যে বল পেয়ে এক পা দিয়েই রিসিভ করেন দারুণভাবে। আলতো ছোঁয়ায় একটু সামনে নিয়েই চকিত শট এবং গোল। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ক্রাচে ভর দিয়েই বাইলাইন দিয়ে দুরন্ত বেগে ছুটছেন য়িয়ি। দিয়েছেন নিখুঁত পাসও।

চায়নিজ ফুটবলের কিছু উৎসাহী ভক্তের মত, জাতীয় দলের বেহাল দশা কাটানোর জবাব হতে পারেন য়িয়ি। কিন্তু জাতীয় দল দুর অস্ত, চীনের অপেশাদার লিগেও তিনি খেলার অনুমতি পাননি। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ গুয়াডংয়ে মাঝেমধ্যে ‘খ্যাপ’ খেলার ডাক পান। য়িয়ির কাছে ওটুকুই প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল। অপেশাদার লিগের আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বেশ কয়েক দফা। কিন্তু আয়োজকেরা তাঁর অনুরোধে কর্ণপাত করেননি। সংবাদ সংস্থা এএফপির কাছে য়িয়ির অনুযোগ, ‘আমি কাউকে আঘাত করি না। শুধু আয়োজকদের সঙ্গে একবার ঝামেলা হয়েছিল। অপেশাদার ম্যাচ সবাই খেলতে পারে। সবাই পারলে আমার কী সমস্যা?’

য়িয়ি প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে খেলার সুযোগ পান কালেভদ্রে। সেসব ম্যাচে মাঠে নামলে তাঁকে ফুটবল খেলার সঙ্গে আরও অনেক কিছুর মোকাবিলা করতে হয়। এই যেমন প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের আঘাত করার ‘টার্গেট’ হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচানো কিংবা কটূক্তিতে কান না দেওয়ার চেষ্টা। য়িয়ির ভাষায়, ‘তাদের ভাবখানা এমন যে পারলে আমাকে ম্যাচের প্রথম কয়েক মিনিটের মধ্যেই বের করে দেয়! চিৎকার করে বলে, এখানে কী করছ?’

সতীর্থদের প্রতি পাস বাড়ানোর মুহূর্তে য়িয়ি। ছবি: এএফপিশুধু ফুটবলের জন্য কৃত্রিম পা লাগানোর চেয়ে ক্রাচে ভর করে জীবন কাটানো বেছে নিয়েছেন য়িয়ি। বাঁ পা কোমরের বেশ কাছাকাছি থেকে কেটে ফেলায় কৃত্রিম পা লাগালে বলের নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হতো—এই ভাবনা থেকেই ক্রাচ বেছে নেওয়া। সেটাও আবার বেশ হালকা। কারণ, মাঠে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রা তাঁকে ট্যাকল করতে গিয়ে যেন ব্যথা না পান।

য়িয়ি শিক্ষা নিয়েছেন নিজের জীবন থেকে। পরিস্থিতি যা-ই হোক, কখনো হাল ছাড়তে নেই। আর তাই দুই পায়ে ভর করে হাঁটার ভাগ্যবঞ্চিতদের জন্য ‘ডানা ভাঙা দেবদূত’-এর বার্তা, ‘জীবনটাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখো। শুধুই তুমিই তোমাকে বাঁচাতে পারবে। সবার মুখের হাসি ফিরিয়ে দেওয়াই কি ভালো না?’

নিউজ ডেস্ক:
আপডেট, বাংলাদেশ ৬:৩০ পি.এম, ১৮ নভেম্বর, ২০১৭ শনিবার
এ.এস

The post এক পায়েই খেলছেন ‘ডানা ভাঙা দেবদূত’ appeared first on Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস.



This post first appeared on ChandpurTimes, please read the originial post: here

Share the post

এক পায়েই খেলছেন ‘ডানা ভাঙা দেবদূত’

×

Subscribe to Chandpurtimes

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×