রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের আশ্বাস দিয়ে মিয়ানমারে এক নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির সাবেক ছাত্রনেতা ও সু চির সহযোদ্ধা কো কো জি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ তার নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে দেয়া সাাৎকারে দেশটির সাবেক ছাত্রনেতা ও সু চির সহযোদ্ধা কো কো জি জানিয়েছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ তার নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। সামরিক সরকারের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এই নেতা মনে করেন, সু চি একা রোহিঙ্গা প্রশ্নের মীমাংসা করতে সম নন। সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমারে ‘জবাবদিহিতামূলক বহুদলীয় গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেন ২০ বছর কারাভোগ করা এই ছাত্রনেতা।
আশির দশকে মিয়ানমারে উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা কো কে জি ২০১৫ সালের নির্বাচনে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি থেকে প্রার্থী হবেন বলে দলের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন। সাবেক এই ছাত্রনেতা সেই সময় জানিয়েছিলেন, তিনি সু চির দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। তবে পরে তার প্রার্থিতা নিশ্চিত হয়নি। চলতি সপ্তাহে নিপ্পন ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে জাপান গিয়েছিলেন কো কো জি। এ সময় বিভিন্ন সংস্থার সাথে মিয়ানমারের সঙ্কট নিয়ে কথা বলেন তিনি। এনএইচকে দেয়া সাাৎকারে সু চির এক সময়ের এই রাজনৈতিক সহযোদ্ধা জানিয়েছেন, এখনো আনুষ্ঠানিক প্রচারাভিযান শুরু না করলেও এরই মধ্যে টোকিওতে থাকা মিয়ানমারের নাগরিকদের মধ্যে সমর্থন আদায় করতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির পর কো কো জিই মিয়ানমারের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। তিনি ‘৮৮ জেনারেল স্টুডেন্ট’ নামে একটি দলের মাধ্যমে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সামরিক সরকার পতনে তিনি অং সান সু চির সাথে কাজ করেছেন। এই আন্দোলনের কারণে প্রায় ২০ বছর কারাবন্দী থাকতে হয়েছে তাকে। পাঁচ বছর আগে মুক্তি পাওয়া এই নেতা মনে করেন, অং সান সু চি একা এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না।
Related Articles
সু চি-সেনাপ্রধানের সাথে জাতিসঙ্ঘের বৈঠক ব্যর্থ
এএফপি
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে কোনো গঠনমূলক সিদ্ধান্ত ছাড়াই মিয়ানমারে জাতিসঙ্ঘের পাঁচ দিনের সফর শেষ হয়েছে। সংস্থাটির প থেকে রাখাইন সফরকারী কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, তাদের সফরে ‘কোনো বিজয় অর্জিত’ হয়নি। ফলে মিয়ানমার থেকে শূন্য হাতে ফিরেছেন জাতিসঙ্ঘের কর্মকর্তারা।
জাতিসঙ্ঘ কর্মকর্তারা মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা সু চি এবং সেনাপ্রধান মিং অন-এর সাথে বৈঠক করলেও সেই দুই আলোচনায় রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে কোনো কার্যকর অগ্রগতি হয়নি।
২৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনীর নৃশংসতায় রাখাইন থেকে প্রায় ছয় লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসঙ্ঘের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেফ্রে ফেল্টম্যান তাদের বিষয়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি ও সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ মিন অং হাইংয়ের সাথে আলোচনা করেছেন। মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, ‘পাঁচ দিনের সফরে জেফ্রে ফেল্টম্যান মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের কাছে মহাসচিব গুয়েতেরেসের আহ্বান পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি আক্রান্ত এলাকায় মানবিক সাহায্যকর্মীদের অবাধ প্রবেশাধিকার এবং পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসন দাবি করেছেন। আমি মনে করি না যে, জেফ্রের ওই সফরে আমরা দ্রুততার সাথে কোনো বিজয় অর্জন করেছি। এটি হলো মিয়ানমার সরকারের সাথে চলমান আলোচনা।’
সফরকালে বিমানে করে জেফ্রে ফেল্টম্যানকে নিয়ে যাওয়া হয় রাখাইনে। বিমান থেকেই তিনি আগুনে পুড়ে যাওয়া গ্রামের পর গ্রাম দেখতে পান। সাংবাদিকেরা তার কাছে জানতে চান, রাখাইনে কেন সাহায্য পৌঁছে দিতে সাহায্যকর্মীদের এখনো বাধা দিচ্ছে মিয়ানমার। জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি একটি মূল্যবান প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মিয়ানমার সরকারের কাছে করতে হবে। আমরা দেখতে চাই যত দ্রুত সম্ভব সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে।’
এর আগে জাতিসঙ্ঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা জেনেভায় বলেছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তের কাছে অবরুদ্ধ হয়ে আছে ১০ থেকে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা। জাতিসঙ্ঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশনারের মুখপাত্র আন্দ্রে মাহিকিক বলেছেন, দেশ ছেড়ে যাওয়ার অথবা হত্যার হুমকি থাকা সত্ত্বেও অনেক রোহিঙ্গা এখনো তাদের বাড়িতেই অবস্থান করছেন।
This post first appeared on Amr Bangla - 24/7 Online News Portal, please read the originial post: here