Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

চার্জশিটে ‘গ্যাং পার্টি’র ২৬ সদস্য অভিযুক্ত

রাজধানীর উত্তরায় কিশোর আদনান কবীর (১৬) হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করেছে পুলিশ। শিগগিরই দেওয়া হবে চার্জশিট। দেশজুড়ে আলোচিত এ মামলায় ‘গ্যাং পার্টি’র ২৬ সদস্যকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, যাদের অধিকাংশের বয়স ১৫ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩০২, ৩৪১, ১৪৩ ও ৩৪ ধারায় তারা অভিযুক্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র সমকালকে এসব তথ্য জানায়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো হত্যা মামলায় একসঙ্গে এত সংখ্যক কিশোর ও তরুণের জড়িত থাকার ঘটনা দেশের ইতিহাসে এই প্রথম। আদনান হত্যায় অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে ৮ জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে। ১০ জনের বয়স ২২ বছরের নিচে। বাকিদের বয়স ২৮ বছরের মধ্যে। আদনান হত্যার মধ্য দিয়ে রাজধানীতে ‘গ্যাং কালচার’ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার দৃশ্য সামনে চলে আসে।

চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কে আদনানকে মারধর ও কুপিয়ে হত্যা করে তার বন্ধু ও সহপাঠীরা। আদনান উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। এ হত্যাকাণ্ডের পর তদন্তে উঠে এসেছে গ্যাং কালচারের চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। কিশোররা এলাকাভিত্তিক গ্যাং পার্টি বানিয়ে আধিপত্য বিস্তার করে। রাজধানীর উত্তরায় কিশোরদের এরকমই কয়েকটি গ্রুপ হচ্ছে ‘বিগবস’, ‘নাইন স্টার’ ও ‘ডিস্কো বয়েজ’। আদনান ছিল নাইন স্টার গ্রুপের সদস্য। বিগবস ভেঙে আদনান নাইন স্টার গ্রুপ তৈরিতে ভূমিকা রেখেছিল। তার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়। আদনানের বাবা কবির হোসেন উত্তরা পশ্চিম থানায় যে মামলা করেন তাতে বলা হয়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রুপিংয়ের জেরে
আদনানকে হত্যা করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. শাহ আলম সমকালকে বলেন, তদন্ত শেষ। আগামী মাসের শুরুতে আদনান হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করা হবে। এ হত্যার সঙ্গে নানাভাবে ২৬ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তারা সবাই হত্যা মিশনে নানাভাবে জড়িত। কেউ কুপিয়েছে, কেউ মারধর করেছে।

যারা অভিযুক্ত :সংশ্লিষ্ট সূত্রে আদনান হত্যা মামলার চার্জশিটে অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছে আলামিন ওরফে তুষার (১৫), নাফিস মোহাম্মদ আলম ওরফে ডন (১৯), রাফিউর রহমান ওরফে সিমপার্ট (১৬), পটলা বাবু (২৮), বাহাউদ্দিন শাওন ওরফে জিল শাওন (১৯), রাজিন আহমেদ হৃদয় (২০), শাকিল সরকার (১৯), শ্রাবণ (১৮), নূরে আলম (২০), করিম মিয়া (২০), তরিকুল ইসলাম (১৬), শাহরিয়ার বিন সাত্তার সেতু (২২), আক্তারুজ্জামান ছোটন (১৯), শাহীনুর রহমান (১৭), রমজান মোবারক (১৭), সেলিম খান (২৩), ইব্রাহিম হোসেন সানি (২৮), মিজানুর রহমান সুমন (২২), জাহিদুল ইসলাম জুইস (২১), নাইমুর রহমান অনিক (২২), সাদাফ (১৯), শিশির (১৬), মেহরাব (১৬), রনি মৃধা (২৭) প্রমুখ। তাদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ১৩ জন। তাদের জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে ২৬ জনের জড়িত থাকার তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে ১৮ জন কারাগারে, চার জন জামিনে ও চার জন পলাতক। পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে আদনান হত্যায় জড়িত অনিক, ডন, তুষার, সাদাফ, ছোটন ও সেতুর বিরুদ্ধে একই ধরনের অপরাধে জড়ানোর ঘটনায় একাধিক ফৌজদারি মামলা রয়েছে। গ্যাং কালচার নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে উত্তরা পশ্চিম থানায় আরও চারটি মামলা আছে।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এক দশকের বেশি সময় ধরে উত্তরায় গ্যাং কালচার শুরু হয়। তখন কাঁকড়া নামে একটি গ্রুপ বেশি সক্রিয় ছিল। ২০০৯ সাল থেকে ডিস্কো বয়েজ সক্রিয় হয়। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে পরে নাইন স্টার নামে আরেকটি গ্রুপ চালু হয়। ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের অস্ত্রের ছবি পোস্ট করে তারা শক্তিমত্তা জানান দিত। এ ছাড়া রাস্তার দেওয়ালে সাংকেতিক ভাষায় নিজ নিজ গ্রুপের পরিচয় তুলে ধরে তারা। একই সময় উত্তরায় বিগবস নামে আরেকটি পৃথক গ্যাং ছিল। ডিস্কো বয়েজ, নাইন স্টার ও বিগবস নামে তিন গ্রুপের দাপট থাকলেও উত্তরায় ছোট-বড় অন্তত ১৫টি গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্রুপের মধ্যে রয়েছে কিংস অব উত্তরা, গ্যাং অব নিউ স্টার ফ্রম উত্তরা, ব্ল্যাক ওয়ার্ল্ড উত্তরা, দাদা বয়েজ উত্তরা অ্যান্ড অল টাইম কিং টপ ভাই-ব্রাদার, ঢাকার মাস্তান, পাওয়ার বয়েজ উত্তরা ইত্যাদি। যারা এসব গ্রুপের সদস্য তাদের অধিকাংশ স্কুল-কলেজ থেকে ড্রপআউট হওয়া শিক্ষার্থী। গ্রুপের এমন সদস্যও রয়েছে, যারা টঙ্গী ও আশুলিয়া থেকে এসে উত্তরায় এই গ্যাং কালচারে জড়িয়েছে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ডিস্কো ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা এক হয়ে নাইন স্টার গ্রুপের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে। বিশেষ করে ওই গ্রুপের ‘তালাচাবি’ রাজু নামে এক সদস্যের ওপর তাদের দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ ছিল। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজু ও আদনানের ওপর তারা হামলা চালায়। রাজু পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও আদনান পালাতে পারেনি। ডিস্কো ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা তাকে এলোপাতাড়ি মারধর ও কুপিয়ে আহত করে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আদনান হত্যার ঘটনায় গ্যাং পার্টির সদস্যদের নৃশংসতা ভয়ঙ্করভাবে ফুটে ওঠে। হামলাকারীরা আদনানের হাতের রগ কেটে ফেলে। আঘাত করেছে মাথার পেছনেও। তার পেট ফুটো করা হয়। সাধারণত এলাকায় ‘হিরোইজম’ দেখানোর প্রবণতা থাকে গ্যাং পার্টির সদস্যদের। রাস্তার পাশে বসে তাদের কেউ কেউ স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে থাকে। কেউ এলাকায় বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল ও গাড়ি চালায়। এলাকায় খেলার মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও গ্রুপগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকে। এ ছাড়া অনেক সময় ছিনতাই ও মাদক ব্যবসার মতো অপরাধেও তারা জড়িয়ে পড়ে।



This post first appeared on Amr Bangla - 24/7 Online News Portal, please read the originial post: here

Share the post

চার্জশিটে ‘গ্যাং পার্টি’র ২৬ সদস্য অভিযুক্ত

×

Subscribe to Amr Bangla - 24/7 Online News Portal

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×