Related Articles
আব্দুল মজিদ :অর্থ পাচার সব দেশেই সব অর্থনীতিতে হয়। কোন দেশের আয়-ব্যয়ের মধ্যে স্বচ্চতার অভাব ও বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ না থাকলে টাকা পাচার হয়। এটা স্বাভাবিক নিয়ম যে, ‘ব্যাড মানি ড্রাইভস অ্যাওয়ে গুড মানি ফরম দ্য মার্কেট’। অর্থাৎ অর্থনীতি স্বচ্ছ ও নিয়ম-কানুনের মধ্যে চললে সেটাই হচ্ছে গুড মানি বা বৈধ আয়। কিন্তু ব্যাড মানি বা অবৈধ, অন্যায়, কিংবা অস্বচ্ছভাবে আয় বেশি হয় তখন বৈধ উপায়ে অর্জিত টাকা (গুড মানি) থাকে না। দেশের বাইরে চলে যায়। এটা শুধু অর্থের ক্ষেত্রেই নয়। এ প্রবণতা সমাজের সর্বত্র রয়েছে। কোনো অর্থনীতিতে যদি অবৈধ উপায়ে আয়ের সুযোগ থাকে এবং অর্জিত অর্থ বিনিয়োগ না করা যায়, তা হলে ওই অর্থ কোনো না কোনোভাবে দেশ থেকে বের হবে।
সমকাল :জিএফআই রিপোর্টে বাংলাদেশ থেকে ২০১৪ সালে ৭৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। এ তথ্য কী সঠিক বলে মনে করেন?
আব্দুল মজিদ :রিপোর্টের তথ্য সঠিক কি-না এ বিষয়ে তর্কে যাওয়ার দরকার নেই। কারণ, রিপোর্টটি ধারণার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। পাচারের পরিমাণ যে অঙ্কই হোক না কেন, এটা অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ক্ষতি। দেখা যাচ্ছে অর্থনীতিতে কর্মকাণ্ড হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা সঠিক হিসাবে আসছে না। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, বাকিটা কোথায় গেল ? দেশের অর্থনীতির আকার অনুযায়ী, কর-জিডিপির অনুপাত হওয়ার কথা কমপক্ষে ১৬ শতাংশ। এখন আছে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। পার্থক্য প্রায় ৫ শতাংশ। তার মানে, অর্থনীতিতে কর্মকাণ্ড চললেও ৫ শতাংশ কর আদায় হচ্ছে না। এ টাকা অন্য দেশে চলে যাচ্ছে।
সমকাল :অর্থ পাচারে কী ধরনের প্রভাব পড়ে?
আব্দুল মজিদ :নানাবিধ প্রভাব রয়েছে। টাকা পাচার হলে বৈষম্য বাড়ে। এটা অর্থনীতিতে বড় সমস্যা তৈরি করে। কেউ সৎ পথে পরিশ্রম করে আয় রোজগার করছেন, আবার কেউ দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, কর ফাঁকিসহ নানা অবৈধ পন্থায় টাকা কামাচ্ছেন। এতে করে আর্থিক বিশৃঙ্খলা ও ব্যবসায় অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। এ ছাড়া অর্থ পাচারের ফলে সামষ্টিক অর্থনীতি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।
সমকাল :বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার বেশি কেন?
আব্দুল মজিদ :সাধারণত পাশাপাশি দুটি দেশের মধ্যে একটির অর্থনীতি বড়, আরেকটি ছোট হলে সেখানে পাচার বেশি হবে। কারণ, জিনিসপত্রের দামের পার্থক্যের ফলে চোরাচালান হয়। ভারতের অর্থনীতি বড়। বাংলাদেশের অর্থনীতি তুলনামূলক তার চেয়ে ছোট। দেখা গেছে, আমাদের যে পরিমাণ অভ্যন্তরীণ চাহিদা তার চেয়ে কম উৎপাদন হয়। ফলে ভারত থেকে পণ্য আসছে। সীমান্তে নজরদারি দুর্বল। সমকাল :অর্থ পাচার প্রতিরোধে প্রচলিত আইন সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
আব্দুল মজিদ :আইনগুলো আরও সক্রিয় এবং কার্যকর করতে হবে। বাংলাদেশের একজন নাগরিক মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগ করেছেন। তার পরিচয় কী, কত টাকা নিয়ে গেছেন, টাকার উৎস কী- এ সম্পর্কে তদন্ত হয়নি। বিষয়গুলো নজরদারি করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।
সমকাল :টাকা পাচার বন্ধে ট্রান্সফার প্রাইসিং আইন করেছে এনবিআর অনেক আগে। এখনও তা কার্যকর করতে পারেনি। কেন?
আব্দুল মজিদ :আমি মনে করি এ আইনটি কার্যকর করা খুবই জরুরি। এটা করতে পারলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পণ্যমূল্যে মিথ্যা ঘোষণা দেওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যাবে। প্রচলিত আইনে সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে ট্রান্সফার প্রাইসিং আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। কী কারণে এটি এখনও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না তা আমার বোধগম্য নয়।
সমকাল :টাকা পাচারের সঙ্গে কারা জড়িত?
আব্দুল মজিদ :সাধারণ মানুষ টাকা পাচার করে না। বরং টাকা আরও আনে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জন করে দেশে টাকা পাঠান। বিত্তবান, প্রভাবশালী, ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনীতিবিদরা দেশ থেকে টাকা পাচার করেন।
সমকাল :পাচার প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ নিতে হবে?
আব্দুল মজিদ :আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা আনতে হবে। বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অনেকের কাছে টাকা আছে। তিনি খাটাতে চান। কিন্তু উৎসাহিত হচ্ছেন না। কারণ, বিনিয়োগ করতে নিরাপদ পরিবেশ নেই। কিংবা বিনিয়োগ করলে রিটার্ন নাও আসতে পারে। আবার বিনিয়োগে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। অযথাই কালক্ষেপণ হয়। ফলে উদ্যোক্তা বসে থাকবে না। সে অন্য দেশে তার টাকা নিয়ে যাবে।
This post first appeared on Amr Bangla - 24/7 Online News Portal, please read the originial post: here