Get Even More Visitors To Your Blog, Upgrade To A Business Listing >>

আসামি হচ্ছেন বাচ্চু

ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের অর্থ লোপাটের অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায়। তার দুর্নীতির সব ধরনের প্রমাণ রয়েছে দুদকের কাছে। গতকাল বুধবার বাচ্চুকে দ্বিতীয়বারের মতো জিজ্ঞাসাবাদকালে দুদকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও জ্ঞাতসারে কর্তব্যে অবহেলা করে অসৎ উদ্দেশ্যে নিজে লাভবান হতে ও অন্যকে লাভবান করতে প্রভাব খাটিয়ে বাচ্চু জালিয়াতিপূর্ণ ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছিলেন। এতে ব্যাংকে গচ্ছিত জনগণের আমানতের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়।

দুদক জানায়, ওই সময় ব্যাংকটির সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্বরত বাচ্চু কোনোভাবেই এ অর্থ আত্মসাতের দায় এড়াতে পারেন না। এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও অসঙ্গতির প্রমাণ রয়েছে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের হাতে। তদন্ত পর্যায়ে ব্যাংক থেকে আইনসঙ্গতভাবে সব ধরনের দুর্নীতির নথিপত্র জব্দ করেছে দুদক।

বাচ্চুকে গতকাল বুধবার ফের জিজ্ঞাসাবাদকালে জালিয়াতিপূর্ণ ঋণ প্রস্তাবগুলোর সব ধরনের নথিপত্র ও প্রমাণাদি তার সামনে উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জামানতবিহীন, কোনো ক্ষেত্রে দুর্বল জামানত, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) ক্লিয়ারেন্স না থাকা, জামানতের মূল্য যাচাইয়ের রিপোর্ট না থাকা, ঋণ গ্রহীতার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা না থাকা, ঋণের টাকা ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা সম্পর্কিত মূল্যায়নপত্র না থাকা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতার ব্যবসা না থাকার নথিপত্র তাকে দেখানো হয়। এসব জানার পরও ব্যাংকটির সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হয়ে বাচ্চু ঋণ প্রস্তাবগুলোর অনুমোদন দেন। অনুমোদিত প্রতিটি ঋণ প্রস্তাবে বাচ্চুর স্বাক্ষর রয়েছে।

তদন্ত সূত্র জানায়, কেন জালিয়াতিপূর্ণ ঋণ প্রস্তাবগুলোর অনুমোদন দেওয়া হলো- তদন্ত কর্মকর্তাদের এ প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে ব্যর্থ হন বাচ্চু। এ সময় বাচ্চু সোমবারের জিজ্ঞাসাবাদের জবাবের মতো ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফখরুল ইসলামের ওপর সব দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন।

জিজ্ঞাসাবাদকালে তদন্ত কর্মকর্তারা জানতে চান, জালিয়াতিপূর্ণ ঋণ প্রস্তাব বোর্ডে উপস্থাপন করার দায়ে এমডি বা অন্য কোনো দায়িত্বশীল পদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি-না। বাচ্চু এর কোনো জবাব দিতে পারেননি। একজন চেয়ারম্যান হিসেবে জনগণের আমানতের টাকা যেন খোয়া না যায়, তার জন্য আপনি যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছেন কি-না- এ প্রশ্নের জবাব দিতেও ব্যর্থ হন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা আমার বাংলাকে বলেন, বাচ্চু ব্যাংকটির সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হওয়ার পরও অসৎ উদ্দেশ্যে প্রভাব খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ কারণে লোপাট হয়ে গেছে ব্যাংকের টাকা। বাচ্চুর ও ওই সময়ের পর্ষদ সদস্যদের অপরাধ একই পর্যায়ের। বাচ্চুসহ ওই সময়ের ১৪ জন পর্ষদ সদস্যের নাম চার্জশিটভুক্ত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, বাচ্চুকে পর্যায়ক্রমে ৫৬টি মামলার অভিযোগ সম্পর্কেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গতকাল দু’জন তদন্ত কর্মকর্তা এগুলোর মধ্যে ১৫টি মামলার অভিযোগ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর আগে ওই সময়ের পর্ষদের ১৪ পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত শেষে বাচ্চুসহ তার দুই মেয়াদের পর্ষদ সদস্যদের অনিয়ম, দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে কমিশনে প্রতিবেদন পেশ করা হবে। পরে কমিশনের অনুমোদনক্রমে আদালতে চার্জশিট পেশ করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক উচ্চপদস্থ সকর্মকর্তা আমার বাংলাকে বলেন, বাচ্চু ও তার সময়ের পর্ষদ সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব প্রমাণ দুদকের কাছে রয়েছে, তা দিয়ে তাদের চার্জশিটভুক্ত আসামি করা যাবে। জিজ্ঞাসাবাদে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে বাচ্চু যাই বলুন না কেন- তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ওইসব অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য দিতে হবে। পর্ষদের অভিযুক্ত সবাইকে আদালতের মুখোমুখি হতে হবে। এটাই জবাবদিহিতা। অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী তাকে শাস্তি পেতেই হবে।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা সাড়ে ছয় ঘণ্টা শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুদক পরিচালক জায়েদ হোসেন খান ও সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে বিশেষ টিমের সদস্যরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে উপ-পরিচালক সামছুল আলম চার মামলা ও উপ-সহকারী পরিচালক জয়নাল আবেদীন ১১ মামলার অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি উচ্চরক্তচাপের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দুদকের চিকিৎসক জ্যোতির্ময় চৌধুরী তার প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। এর আগে গত সোমবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

বিকেল ৫টায় জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ থেকে বের হলে সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে জানতে বাচ্চুর কাছে নানা প্রশ্ন তুলে ধরেন। এ সময় তিনি কোনো কথা না বলে সাংবাদিকদের এড়িয়ে সামনের দিকে হাঁটতে থাকেন। কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি নিজের গাড়িতে উঠে চলে যান।

বাচ্চুর নেতৃত্বে ২০০৯-১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দুই মেয়াদের সাবেক ১৪ পরিচালক হলেন- ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কামরুন্নাহার আহমেদ, বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বোস, ফখরুল ইসলাম, সাখাওয়াত হোসেন, জাহাঙ্গীর আকন্দ সেলিম, একেএম কামরুল ইসলাম (এফসিএ), মো. আনোয়ারুল ইসলাম (এফসিএমএ), আনিস আহমেদ, একেএম রেজাউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক নিলুফার আহমেদ। এই পর্ষদের সদস্য সচিবের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম। দুদকের বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি-সংক্রান্ত ৫৬টি মামলায় তাকে আসামি করা হলেও বাচ্চুসহ সাবেক পর্ষদ সদস্যদের আসামি করা হয়নি।

বেসিক ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ হয়েছে মোট সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৫ সালের ২১-২৩ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের দুই হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদক ৫৬টি মামলা করে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে এসব মামলার তদন্ত চলছে। বাকি দুই হাজার ৪৬৩ কোটি ৩৪ লাখ পাঁচ হাজার ৬৫৯ টাকা আত্মসাতের অনুসন্ধান চলছে। এই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে শিগগির আরও মামলা করা হবে।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পরে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় নয় হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। ওই চার বছর তিন মাসে ব্যাংক থেকে মোট ছয় হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। যার মধ্যে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকাই নিয়ম ভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে।

আরেক মামলা :এদিকে বেসিক ব্যাংকের প্রায় আট কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর সংশ্নিষ্টতা খতিয়ে না দেখেই ইকসল ফুড অ্যান্ড বেভারেজের এমডি সাইফুল ইসলামসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সহকারী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে গতকাল বুধবার রাজধানীর বংশাল থানায় মামলাটি করেন।

সূত্র জানায়, আসামিরা ২০১০ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে প্রতারণা, জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের বাবুবাজার শাখা থেকে ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৩২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বাচ্চুর দুই মেয়াদে ২০০৯-১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। এবারের অভিযোগটি অনুসন্ধানকালে অর্থ আত্মসাতে বাচ্চুর অনিয়ম, দুর্নীতি আছে কি-না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ব্যাংকের বরখাস্ত ডিএমডি ও বাবুবাজার শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো. সেলিম, ইকসল ফুড অ্যান্ড বেভারেজের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান।



This post first appeared on Amr Bangla - 24/7 Online News Portal, please read the originial post: here

Share the post

আসামি হচ্ছেন বাচ্চু

×

Subscribe to Amr Bangla - 24/7 Online News Portal

Get updates delivered right to your inbox!

Thank you for your subscription

×